Skip to main content

"মিঠে রোদ্দুর"

 মনোমোহন মিশ্র-এর ‘মিঠে রোদ্দুর’ - একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস


‘তুকে বইলে বইলে হায়রান হইয়ে গেলাম, তু শুইনলি নাই রে হামার বাত’। ক্ষোভের সঙ্গে তার মরদ বিরষাকে বললো রামপিয়ারী। ঝিমধরা আরক্ত চোখে এক দৃষ্টিতে রামপিয়ারীর দিকে চেয়ে রইলো বিরষা। গেলাস থেকে আরেক চুমুক দেশি সরাব গলায় ঢেলে মুচকি হেসে ঝুমুর গান ধরলো -

‘ধিতাং ধিতাং মাদলের তাল, বাইজছে গাঙের বাইরে লো,

সনৎবাবুর বুকের মাইঝে, রামপিয়ারীর মানসা লো। - - -‘

এভাবেই একটি আঞ্চলিক উপন্যাসের সূত্রপাত ঘটালেন বরাক উপত্যকা তথা তৃতীয় ভুবন কিংবা ঈশান বাংলার নামজাদা লেখক মনোমোহন মিশ্র। এবং এই ঝুমুর থেকেই শুরু। উপন্যাসের সূচনাতেই ঝুমুরের তালে তালে, সুরে সুরে পাঠকের এই যে চা বাগানের সবুজ গালিচার ফাঁকে ফাঁকে কিংবা রাস্তায় রাস্তায় - আদিবাসী অধিবাসীদের বস্তিতে বস্তিতে আগমন ঘটলো এরপর আর শেষ না দেখে ফিরে যাওয়ার কোনও সুযোগই রইল না। বস্তুত সেই সুযোগটুকু আর রাখেননি এই কৃতি লেখক। 

‘মিঠে রোদ্দুর’ লেখকের প্রথম উপন্যাস। তথ্য জানা আছে বলেই এটুকু লিখা গেলো। অন্যথা বোঝার জো নেই। একেবারেই পেশাদার ঔপন্যাসিকের ধারায় টানটান কাহিনির বুনোটে সাজানো উপন্যাস। দু’লাইনের সস্তা কবিতা কিংবা কুড়ি থেকে একশো শব্দের গল্পের সহজসাধ্য হুজুগের সময়ে আস্ত একখানা উপন্যাস লেখার মতো সাহস কিংবা এলেমটুকু সবাই দেখাতে পারেন না। মনোমোহন পেরেছেন এবং সসম্মানে জায়গা করে নিয়েছেন হাতে গোনা ঔপন্যাসিকের জগতে। 

‘যাত্রাপথ’ শিরোনামে ভূমিকায় এই উপন্যাসকার জানিয়েছেন সাহিত্য জগতে তাঁর যাত্রাপথের কথা, এবং আলোচ্য উপন্যাসের পটভূমি। চা বাগানে কেটেছে লেখকের ছোটবেলা। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পর আবার সেই চা বাগানে গিয়ে পুরোনো অনেক স্মৃতির ভারে আক্রান্ত হয়ে, গল্পের মতো অনেক কাহিনির সম্বল নিয়ে ফিরে এসেই শুরু হয় এই উপন্যাস রচনার পালা। লিখছেন - “সারা দিন চা বাগানের গল্প শুনলাম। এক অভাগিনী মেয়ের গল্পও শুনলাম। কুলির মেয়ে হলেও সুন্দরী সেই মেয়েটি বাগানের ম্যানেজারের রক্ষিতা হয়ে নাকি বিলেত চলে যায়। ক’বছর পর ফিরে আসে এক কন্যা সন্তান নিয়ে। তাদের বাগানে রেখে সাহেব ফিরে গেছেন তার দেশে। লোকনিন্দার ভয়ে নাকি মেয়েটি বাগান ছেড়ে কোথাও চলে গেছে ছোট মেয়েটিকে নিয়ে। এখন সে কোথায়, কীভাবে আছে - কেউ জানে না। সুখস্মৃতির মাঝে যেন বেসুর লেগে গেল। মন ভারাক্রান্ত হল। 

ফিরে এলাম স্মৃতি বিজড়িত চা-বাগান থেকে। কিন্তু কিছুতেই সেই অভাগিনী মেয়েটির কথা মন থেকে মুছে ফেলতে পারলাম না। কল্পনায় ভেসে উঠলো নানা চিত্রপট। কাগজ কলম টেনে নিলাম। টানা কয়েক পাতা লিখেও ফেললাম। কেন্দ্র চরিত্রে সেই অভাগিনী, চা-বাগানের সেই মেয়েটি। নাম জানা ছিল না। একটি নাম আপনা আপনি কলমে ধরা দিল। ‘রামপিয়ারী’ সেই কল্পনার মুখ্য চরিত্র। সেই শুরু এই উপন্যাসের যাত্রা।”

আবর্তসংকুল সমাজ সংসারে মানুষের জীবন সংগ্রামের ইতিবৃত্ত নিয়ে রচিত হয় উপন্যাস। উপন্যাস - জীবনের এক সুসংবদ্ধ শিল্পরূপ, যেখানে সমাজ মধ্যগত মানুষের জীবন-বাস্তবের একটি যথা সম্ভব সামগ্রিক ছবি ফুটে ওঠে। যা অনেক সময় কল্পনা হলেও এক সংযত সংঘটিত সত্য। তাই বলা যায় অপেক্ষাকৃত ব্যাপক ও জটিল মানবজীবনকে কাহিনীবদ্ধ করার প্রেরণা থেকে উদ্ভূত এক শিল্পরূপ হলো উপন্যাস। কাহিনি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে সজীব চরিত্র সৃষ্টি উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট। ভূমিকায় এই উপন্যাসের চরিত্র সম্বন্ধে লেখকের লিপিবদ্ধ তথ্যটুকু পড়েই অনুসন্ধিৎসু পাঠক যদি ভেবে থাকেন যে উপন্যাসের মূল কাহিনিটি তো জেনেই গেলাম তাহলে আর কষ্ট করে এতবড় উপন্যাস পড়ার কী প্রয়োজন তাহলে মারাত্মক ভুল করবেন। কারণ মূল কাহিনির যতটুকু ব্যাপ্তি তার এক সামান্য ভগ্নাংশমাত্রই লিপিবদ্ধ রয়েছে ভূমিকায়। 

উপন্যাস গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ উপাদান সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন অর্থাৎ উপন্যাসে থাকবে কাহিনি বা আখ্যান, চরিত্র, সংলাপ, পটভূমি ও প্রতিবেশী এবং শৈলী। কাহিনির খেইটি যদিও ভূমিকাতেই ধরিয়ে দিয়েছেন উপন্যাসকার কিন্তু সারটুকু লিপিবদ্ধ আছে দুই মলাটের মধ্যেই। ঘনঘন মোচড়ে কাহিনি এগিয়েছে তরতর করে। থেমে থাকার জো নেই পাঠকের। প্রতিটি চরিত্র যেন এসেছে কাহিনিরই প্রয়োজনে। চা বাগানের অন্তর্গত সমাজ বাইরের জগতের সঙ্গে মেলেনা। কুলি থেকে বাবু এবং ম্যানেজার, সাহেব অবধি প্রত্যেকেরই থাকে একটা আলাদা জগৎ। সেখানে ঝুমরু-মুনিয়া থেকে শুরু করে অর্জুন, ধরবাবু, স্নেহলতা, কৃষ্ণা, পিটার সাহেব এবং মেমসাহেব প্রত্যেকটি চরিত্রকে নিজস্ব সীমাবদ্ধতায় স্থাপন করার প্রয়াসে কোনও ধরণের খামতি রাখেননি লেখক। কেন্দ্রীয় চরিত্রের উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ভূমিকায় দেওয়া ইঙ্গিতের বাইরেও সেখানে সাজানো আছে পাঠক মনে অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তোলার ভরপুর রসদ। এই চমকটুকু পাঠক মনকে দোলায়িত করবে শুধুমাত্র পাঠের মাধ্যমে। পাঠ প্রতিক্রিয়া কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সেই চমকটুকু তুলে ধরা অসম্ভব এবং অনুচিতও।

সংলাপের ক্ষেত্রে উপন্যাসকার যথেষ্ট সজাগ ছিলেন। তার পরিচয় উপন্যাসের শুরুতেই ধরা দেয়। চা-বাগানের ভাষার যথার্থ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন অত্যন্ত সুচারু ভাবে। সযত্নেই হয়তো এড়িয়ে গেছেন কঠিন শব্দাবলির ব্যাবহার। তাই সংলাপ কখনো দুর্বোধ্য হয়ে ওঠেনি পাঠকের কাছে। 

পটভূমির উল্লেখ আগেই করা হয়েছে। চা বাগানের ভেতরের আলাদা পরিবেশের নির্যাসকে পাঠকের কাছে আরোও প্রাণবন্ত করে তুলেছেন মনোমোহন। আমরা প্রায় সবাই কম বেশি এই পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু এই উপন্যাসের আদ্যোপান্ত পঠনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে এক জীবন্ত সরেজমিন। প্রাককথনেও লেখক তেমনই বার্তাটুকু দেওয়ার প্রয়াস করেছেন - “আমরা জানি চা শ্রমিকের জীবন এক ভিন্ন মাপের। গ্রামীণ পরিবেশ আর চা-বাগিচায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ - দুইয়ে মিলে এক ভিন্ন ছন্দের জীবন তাদের। সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত শ্রমিকেরা কখনও আবার বিলাসবহুল জীবনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এ অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তাদের চারিত্রিক সরলতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ সেই সাধারণ জীবনে অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলে। এই কাহিনির রামপিয়ারীও তেমনি এক নারী চরিত্র। - - - -  ‘মিঠে রোদ্দুর’এ ফুটে উঠেছে রামপিয়ারীর সহজিয়া মনের স্বপ্ন আর বাস্তব জীবনে সেই স্বপ্ন পূরণের বাধা বিপত্তির নানা ঘটনা। এই কাহিনির ঘটনাবলি এবং সব চরিত্রই কাল্পনিক - তা বলার অপেক্ষা রাখে না”। পটভূমি ও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চরিত্রের এক অপূর্ব সংমিশ্রণে তাই উপন্যাস হয়ে উঠেছে জীবন্ত এক দলিল। উপন্যাস পঠনের প্রধান শর্ত অর্থাৎ কাহিনির চলমান বিস্তৃতি বজায় রেখেছেন একশো ভাগ। পাঠক তাই পঠনসুখে হয়ে পড়ে সম্পৃক্ত। 

চমৎকার একটি মুখবন্ধ লিখে দিয়েছেন ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট অব ইণ্ডিয়ার পূর্বতন অধিকর্তা তথা সাহিত্য অকাদেমির প্রাক্তন সম্পাদক নির্মল কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে টেনে এনেছেন মুলকরাজ আনন্দের প্রখ্যাত উপন্যাস ‘Two Leaves and a Bud’ এর কথা। অর্থাৎ আমাদের সেই অতি পরিচিত শব্দবন্ধ - দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি। শ্রী ভট্টাচার্য লিখছেন - “শেষ পর্যন্ত ‘মিঠে রোদ্দুর’ উপন্যাসের প্রথম পাঠ হাতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। - - - - ঠাসবুনোট গল্পের ফাঁকে ফাঁকে লেখক খুঁজে নিয়েছেন চা বাগানের বাস্তব পরিবেশ ও সমস্যার কথা। কীভাবে ওখানে কামকাজ চলে তার হাল হকিকৎ - সব মিলিয়ে এক পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। এই আখ্যান পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে যেন ‘Two Leaves and a Bud’ এর গঙ্গু, সজনী, লীলা ও বুধুর গল্পেরই পুনরাবৃত্তি চলছে এই উপন্যাসে। আশি নব্বই বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু চা-বাগানের সাধারণ মানুষের জীবন বড় একটা পাল্টায়নি। মনোমোহনের ম্যানেজার পিটার যেন মুলকরাজ আনন্দের রেগী হান্টেরই বংশধর। এবং সেই সূত্রে লেখক মনোমোহনও মুলকরাজ আনন্দেরই উত্তরসূরি। শেষ বিচারে আমার মনে হয়েছে, সাধারণ একটি কুলি রমণীরও যে স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে, মনোমোহন এই সহজ সত্যটিই আমাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘মিঠে রোদ্দুর’ বইটিতে”।

শৈলীর ক্ষেত্রে কোনও ধরাবাঁধা নিয়মের কথা লিখা নেই কোথাও। উপন্যাসের উপস্থাপনা পাঠকের কাছে যত সাবলীল - বলা চলে শৈলী ততটুকুই উৎকৃষ্ট। ‘মিঠে রোদ্দুর’এর পাঠে পাঠককে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার জন্য কোনও কসরত করতে হয় না। উপন্যাসকার এই কাজটুকু এতটাই মুন্সিয়ানায় সেরেছেন যে পাঠক বুঝতেই পারে না কোথায় কোনখানে এসে সে দৃশ্যান্তরিত হয়ে গেছে। পাঠক মনের চাহিদাটি এত নিখুঁত ভাবে আরপ্ত করেছেন লেখক যে শুধুমাত্র এই অসাধারণ শৈলীর জন্যই ‘মিঠে রোদ্দুর’ হয়ে উঠেছে পাঠকের দরবারে এক অনন্য সাধারণ পরিবেশন। উপন্যাসের অন্যতম চাহিদা অর্থাৎ শর্ত হচ্ছে কাহিনির কার্যকারণ যোগসূত্র এবং সূচনা ও সমাপ্তির মধ্যে একটি আদ্যোপান্ত জীবন কথার স্পষ্ট সমাপ্তি। মনোমোহনের উপন্যাসের কেন্দ্র চরিত্র রামপিয়ারীর জীবন ধারা যেন গ্রথিত হয়েছে এক অনিবার্য যোগসূত্রের অমোঘ বন্ধনে। সমগ্র উপন্যাস জুড়ে কেন্দ্র চরিত্রের পরবর্তী পর্যায়ের অপেক্ষায় পাঠক মন থেকেছে ব্যাকুল। কাহিনি যত এগিয়েছে পাঠক মনে ততই বেড়েছে অনুসন্ধিৎসা। এর পর রামপিয়ারীর কী হলো  - এমন জিজ্ঞাসার আশু উত্তর খুঁজতে আপন খেয়ালে পাতার পর পাতা উলটে যেতে বাধ্য পাঠককুল। এই শৈলীটিই আলোচ্য উপন্যাসকে একটি সফল ও পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হিসেবে সাহিত্যের আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। 

সঙ্গতিপূর্ণ প্রচ্ছদ এঁকেছেন শুভ্রজ্যোতি ভট্টাচার্য। ১৩১ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি সমর্পিত হয়েছে উপন্যাসকারের পরমপূজ্য পিতা স্বর্গীয় মনোরঞ্জন মিশ্র-এর প্রতি। গ্রন্থের প্রকাশক পান্থজন প্রিন্টিং এণ্ড পাব্লিকেসন, নাজিরপট্টি, শিলচর, কাছাড়, আসাম।  

উপন্যাসের প্রথম দিকে কিছু পৃষ্ঠায় কিছু বানান ভুল থেকে থাকলেও পরবর্তীতে সেটুকু আর থাকেনি। সে অর্থে বানান ভুল নগণ্য এবং উপেক্ষণীয় বলাই উচিৎ তবে একটি বানান সমগ্র উপন্যাস জুড়ে বারবার ফিরে এসেছে ভুল রূপে। ‘ঘুরপাক’ শব্দটি আদ্যোপান্ত ‘ঘোরপাক’ই থেকে গেছে। 

একটি সফল প্রয়াস এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ উপন্যাসের চাহিদা অনুযায়ী আদির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চমৎকার একটা অন্ত রেখেছেন ঔপন্যাসিক মনোমোহন। মাঝে একটি জীবনের চলমান ধারা যেন ছবির মতো উপহার দিয়েছেন পাঠকের দরবারে। অর্থাৎ একটি উপন্যাসের যাবতীয় চাহিদা অটুট রয়েছে ‘মিঠে রোদ্দুর’-এ। শেষের কথায় আবারও সংলাপ এসেছে বিরষার মুখ থেকে “- - - কেমন সোন্দর রইদ উঠেছে। চল।” সেই ছন্দে উপন্যাসের নামটি ‘মিঠে রোদ্দুর’ না হয়ে ‘সোন্দর রইদ’ও হতে পারতো কি ? 


“মিঠে রোদ্দুর”

মনোমোহন মিশ্র

মূল্য - ২৫০ টাকা

যোগাযোগ - ৯০৮৫২১৩০৭৫

- - - - - - - - - - - - - - - -

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।



Comments

  1. খুব ভালো লাগলো বিস্তারিত আলোচনাটি। মুখবন্ধ এবং আলোচনাটি পড়েই মনে হচ্ছে এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস হলেও যথেষ্ট বলিষ্ঠ এবং মনোগ্রাহী। মনোমোহন মিশ্র বরাক উপত্যকার একটি প্রতিষ্ঠিত নাম । তাঁর সরস রচনা পাঠকের যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করে। অভিনন্দন জানাই লেখককে।উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করছি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়