Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2022

প্রিয় কবি

সুশান্তদা বাড়ি আছেন ? জানি বাড়ি নেই , তবু - এভাবেই বলতে ইচ্ছে হয়। কলেজ রোডের সেই মায়াবী মোড় যেখানে কাটিয়েছি মূল্যবান কিছু কাল উচ্ছল যৌবন জল তরঙ্গ বিধৌত। সুশান্তদা তখন পরিচিতির বাইরে আজ আবার যখন সেই মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি একা , তাকিয়ে আছি কলেজের দিকে স্মৃতির সরণি বেয়ে , সুশান্তদা তখন হায়দরাবাদে হয়ত কোনও এক ঝলমলে প্রেক্ষাগৃহে আন্তৰ্জাতিক কবিতার আসরে কবিতা পাঠে মগ্ন - কিংবা গল্প গুজবে পাঠক পাঠিকা পরিবেষ্টিত , এবার মঞ্চে উঠবেন , মিষ্টি মধুর সম্ভাষণে ছড়িয়ে দেবেন আন্তরিকতার ছোঁয়া। এই তো আমাদের সুশান্তদা এই তো আমার কলেজ স্কোয়ার।   ওই তো আমার প্রথম প্রেম - আমার কলেজ জীবন - প্রথম ক্লাস কেমিস্ট্রি ক্লাসে সশব্দ বোমাবাজির বুক ধুকপুক ভ্রমবিলাস। শেষে ব্রহ্মচারী কবি স্যার এসে কবিতায় কবিতায় অপার প্রশান্তি।   ওই তো সেই পথ - যে পথে আটকে যেত অবাধ্য চোরা চোখ - কারা যেন হেঁটে যেত কায়াময় মায়াময় আর প্রান খুলে কথা হতো - শেকড়ের কথা - বন্ধু সুমিত্রা এক টুকরো স্বস্তি সুখ , মরুজল।   সুশান্তদা কোথায় আছেন আজ ? কবে ফিরছেন শহর শিলচর ?

সেই দেশেই আছি

একটা দেশ ছিল আমাদের আছে , এখনো আছে - একই আছে।   আছে ভুবন জোড়া ভুবন পাহাড় , পাশেই ভুবনডহর বরাক আমাদের সাত সমুদ্দুর অবাক।   বিশ কুট থেকে মালেগড় জুড়ে সাতপুরুষের ভিটে ছিল চিরি জিরির মাসতুতো বোন প্রবাহিনী সিংলা ছিল।   সবই ছিল সবই আছেন রণচণ্ডী মা ছিলেন কাঁচাকান্তি মাও আছেন।   দেশ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অনন্ত সব যোদ্ধা ছিলেন নতুন এ দেশ গড়েছিলেন কালের গ্রাসে হারিয়ে গেলেন।   আমরা ছিলাম , আমরা আছি জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়েও মনে প্রাণে সেই দেশেই আছি - প্রিয় বরাক দেশেই আছি। চোখের ধারায় অতীত রেখে মুখের হাসি বজায় রেখে বরবক্র বুকে ধরে জীবন ধারায় পা রেখেছি এ দেশেতেই জন্মেছি তাই আদ্যোপান্ত দেশেই আছি।

আমি বৃক্ষ হতে চাই

হে প্ৰভু , আমাকে বর্ষীয়ান করে দাও বৃদ্ধ করে দাও আমাকে। বর্ষার মতো বৃষ্টি ধারায় ঝরে পড়ুক যত বালখিল্য যত চপল মনের উড়ন্ত যাপন। আমি স্থিতপ্ৰজ্ঞ হতে চাই প্রভু বৃক্ষ হতে চাই , আমি মহিরুহ হতে চাই। আমার চির চঞ্চল মনের উপর আঘাত হানো প্রভু , কঠোর বজ্র হানো। আমার স্মৃতির এলবাম থেকে মুছে দাও যত সুখ যাপনের ইতিকথা বিস্মৃতি আড়ালে চলে যাক সব ভালোবাসার ইতিহাস শৈশব থেকে যৌবন জলোচ্ছ্বাস। আমি ভুলে যেতে চাই সব মসৃণ পথ চলা , ভুলে যেতে চাই সব অপাপবিদ্ধ একত্রবাসের বেলা।   সামনে আমার তুলে ধরো প্রভু অসীম অনন্ত শূন্য আকাশ এ অকাল অবকাশ , অবেলার অবসর আমাকে রেখেছে ত্রিশঙ্কু করে মন ছুটে যায় পিছন পানে রঙিন ঘুড়ির আকাশ নীলে। আমাকে সাদা কালোয় নিবিড় করো প্রভু মুছে ফেল যত রং , যত পাপবোধ অকালেই করো আবেগের নিরসন শান্ত করো প্রভু - লাগাম পরাও মনে আমার দুরন্ত তুরগে রাশ ধরো টেনে।

মন ফানুসের ঈশ্বর

তোমাকে দেখব বলে তুমি আসবে বলে আমি পথ চেয়ে থাকি রোজ অজানা পথের পথিক তুমি তবু যদি পথ ভুলে কখনো … ।   এ আমার নিত্য দিনের ভালো লাগা পথে তোমার অশরীরী আনাগোনা আমার নিত্য সুখের কল্পনা । তবু …   তোমার অজানা অচেনা এ পথে আমি তোমাকে নিয়েই করি বাস । আমি সাঁঝের বেলা এমনি করেই থাকব বসে পথ চেয়ে   তুমি আসবে না জেনেও রচে যাব আমি মন ফানুসের খেলাঘর । তোমারই নামে পথের ধারে আবার আসিব ফিরে - জন্ম জন্মান্তর ।

নীরব যাপন কথা

অনন্ত কথোপকথন শেষে এক আকাশ নীরবতা। নিত্য দিনের রাশি রাশি আখ্যান এসে ভরাট হয় নীরবতা। নির্বাক কথোপকথনে ছবির মতো আসে নব নব আখ্যান - নব নব ছন্দে সুখে ও শোকে, বিষাদে আনন্দে। নীরব কথামালার আখ্যান জুড়ে সৃষ্টি হয় মহাকাব্য - কাব্যোপন্যাস। সৃষ্টি জুড়ে ছায়াময় হয়ে থাকে তার কায়া পরতে পরতে পঙ্‌ক্তি জুড়ে অনন্ত মায়া। তার আদি থেকে অন্ত, তার পথ চলা বৃত্তান্ত, সরব কথামালার অন্দরমহল জুড়ে নির্বাক চিত্র আর যাপনসুখ অনিশ্রান্ত ছদে ছন্দে মায়াময় তার স্বপ্ন আদ্যোপান্ত। নিরাকার হয়ে তাপিত হৃদয়ে আসে তার স্বপ্ন সাকার ভবিষ্যতের সাত কাহন, সুখস্বপ্নেও কেন ফিরে ফিরে আসে নীরব কথার বুক চেরা সব শোক যাপন ?

ইতিহাস কথা

অসময়ে অমন করে দাঁড়িয়ো না এসে সামনে । আমার যত নিক্তিধরা ছক যত দিন মান কালের হিসেবপত্র সব কেমন হিজিবিজি হয়ে হারিয়ে যায় মহাশূন্যে । তোমার স্পষ্ট অবয়ব কাঁপন ধরায় অঙ্গে অঙ্গে , কোথা থেকে যেন এক হাহাকার এসে মোচড় দিয়ে যায় বুকে । ইতিহাসের পাতাগুলো এক এক করে পালটে যেতে থাকে নিজে থেকে তার পাতায় পাতায় আঁকা থাকে ছবির পর ছবি , লিখা থাকে মহাকালের কথা , যাপন বেলার সাত কাহন । কথামুখ থেকে কথাশেষের ইতিবৃত্ত ।   কথাশেষের যত কথা , যত ব্যথা সব আছে সঞ্চিত - স্তরে স্তরে বাতিঘর বৃত্তান্তে - অসম যাপনের ইতিহাস ঘিরে ঘিরে ।

বুড়িমাসি ও বৌমার আলমারি

বুড়িমাসি আসছেন । অন্ধ বুড়ি। কেউ তাঁর নাম জানতো না। তিনি নিজেও কি জানতেন ? কীজানি ? সবারই তিনি - ‘ বুড়িমাসি ’ । চওড়া পথটি দু ’ দিকেই প্রায় সমান দূরত্বে গিয়ে পড়েছে দুই পাকা সড়কে । পাকা বলতে মোরাম বিছানো পথ, ধুলির স্বর্গরাজ্য। সড়ক দু’টি ধরে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দিনে গোটা চারেক বাস্ ‌ যাতায়াত করে দূরবর্তী শহরে । সময় হিসেবেই তাদের নামকরণ । ন ’ টার বাস্ ‌, বারোটার বাস্ ‌, তিনটার বাস্ ‌ কিংবা পাঁচটার বাস্ ‌ ইত্যাদি - যদিও নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা পরেই সেগুলো এসে পৌঁছতো । তাতে অবশ্য বিশেষ আপত্তির কিছু ছিল না গ্রামবাসীর । সময়ের এত অভাব তখন ছিল না বলেই হয়তো বা । লোকেদের মুখে প্রায়শঃ প্রশ্ন শোনা যেত - ‘ আজ বারোটার বাস্ ‌ ক ’ টায় এল ?’ কোনও এক উদাস দুপুরে বাস্ ‌ রাস্তা থেকে ফিরে আসার পথে দেখতে পেলাম বুড়িমাসিকে হাতে ধরে এগিয়ে নিয়ে আসছে একটি অপরিচিত ছোট্ট মেয়ে । আমার চাইতে ছোটই হবে । এর আগেও দেখেছি তাঁকে এভাবে কারো সাহায্য নিয়ে আসতে। বুড়িমাসিকে দেখেই বুঝে গেলাম তিনি আমাদের বাড়িতেই আসছেন । এই বুঝে নেওয়ার পেছনে এক গূঢ় কারণ ছিল । বুড়িমাসি অন্ধ ছিলেন। এবাড়ি ওবাড়ি টইটই করে ঘুরে বেড়ানোর ফাঁ