Skip to main content

Posts

Showing posts from February, 2022

উদাসী ফাগুন

এমনি কোনো এক ফাল্গুনে কাল গুনে মেলেছিল আঁখি ধরা দিয়েছিল সুখ পাখি। রোদ ঝলোমল টুকটুকে লাল ফাগুন ছড়ায় আবির গুলাল নীলতনু কাঁপন ধরায় বুকে কাল থেকে আজ আজ থেকে কাল। এমনি কোনো এক ফাল্গুনে প্রথম চেয়েছে চোখ মেলে সেই চোখে আজো হাসি খেলে। উড়ুউড়ু মন টাপুর টুপুর পৌষ ছোঁয়া মেঘে উদাস দুপুর মোহনা বেলায় মিছেই ভোরাই বুক ধুকপুক আলেয়া নূপুর। এমনি কোনো এক ফাল্গুনে ধরেছিল এসে হাতে হাত আজ হারিয়ে গেছে সে রাত। কনকনে শীত লেপমুড়ি রাত নতুন সোহাগে রোজ বাজিমাত বঁধু হে আমার এত ভালোবাসা এ জীবন কেয়াবাত কেয়াবাত।

একটি বসন্ত - তোমাকে দিলাম

আমার অগু ন তি বসন্ত -ভাঁড়ার থেকে একটি নাহয় তোমাকেই দিলাম। কিংবা হৃদয়পুরের অন্দর থেকে কোনও এক সঞ্চিত বসন্ত বাহা র নতজানু হয়ে লাল গোলাপের মতো তুলে দিলাম আনত তোমার প্রসারিত হাতে আমার একটি বসন্ত তোমারই নামে । হেমন্তিকার ঝরা শেষে আস্ত শীতের ওম মাখা, ভালোবাসার নীল খামে একরাশ ভালো লাগা আমার হৃদয় জুড়ে সঞ্চিত শুভ আশা।   এর পর ই তো ঝরাপাতার পথপাশে   স্থানুবৎ আমি নতজানু হয়ে রই অনাদি অনন্ত কাল -   তুমি একরাশ ব্যর্থ ব সন্তে র মতো   আমার ভেতরে বাইরে ছড়িয়ে দাও কৃষ্ণগহ্বরের মতো রিক্ত, শূন্য আঁধার ।

উত্তরগোধূলি - অনীতা দাস ট্যান্ডন

স্বল্পবাকের কবিতা সংকলন - ‘ উত্তরগোধূলি ’   অনীতা দাস ট্যান্ডন ( কবি এভাবেই নামটি লিখেন ) উত্তরপূর্বের কবিতাবিশ্বে , বিশেষ করে বরাক উপত্যকা ও আসামের বাংলা সাহিত্য জগতে একটি পরিচিত নাম । শুধু কবিতাই নয় গদ্যের হাতটিও তাঁর যথেষ্ট পাকা বলেই জ্ঞাত । কবির ‘ উত্তরগোধূলি ’ কাব্যগ্রন্থটি বেশ কিছুদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে । ৬৪ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির দুই মলাটের ভিতরে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট পঞ্চাশটি ভাবসমৃদ্ধ কবিতা । আদ্যোপান্ত ভাবের সুস্পষ্ট প্রকাশ । গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘ সেই প্রার্থনাকে যা আমাকে তোমার সাথে বাঁধে ……’ । ‘ বাবাকে ’ শিরোনামে লিপিবদ্ধ শেষ কবিতাটি মোট সাতটি বিভাগে লিখিত , তিন পৃষ্ঠা জোড়া এক দীর্ঘ কবিতা । এর বাইরে অন্য ৪৯ টি কবিতাই স্বল্পবাকের , স্বল্পদৈর্ঘের কবিতা । স্বল্প কথায় কবি স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলেছেন গভীর মননের বিচিত্র সব অনুভূতি । নিখাদ গদ্যছন্দে লিখিত বেশ ক ’ টি কবিতা আবার অবয়বের দিক থেকেও গদ্যরূপেই সজ্জিত । অধিকাংশ কবিতায় কোথাও যেন এক পড়ন্ত বিকেলের আচ্ছন্নতার বোধ । তাই হয়তো - উত্তরগোধূলি - ধোঁয়ায় ক্লান্ত চোখ কানে কাঠ ভাঙার শব্দ পোড়া - পোড়া গন্ধ নাকে জিহ্বায় ছা

কথায় কথায় - 'কেন এমন হয় ?'

কথায় কথায় - ‘ কেন এমন হয় ?’   বিগত শতিকার শেষ দু ’ টি দশক থেকে একবিংশ শতিকার প্রথম দশক অবধি উত্তর পূর্বের যে সকল গদ্যকার দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এ অঞ্চলের সাহিত্য আঙিনায় তাঁদের মধ্যে নিশুতি মজুমদার এক উল্লেখযোগ্য নাম । অগুনতি সাহিত্যকৃতি সৃষ্টি হয়েছে তাঁর কলম থেকে । না , থেমে থাকেনি সেই সোনার কলম আজো । কিন্তু কিছুটা অভিমানে এবং বাকিটুকু উপযুক্ত মঞ্চের অভাবে তা অনেকটাই আজ স্তিমিত । সম্প্রতি হাতে এল গুয়াহাটি ভিকি পাবলিশার্স থেকে ২০১৩ সনে প্রকাশিত তাঁর কথা সংকলন - ‘কেন এমন হয় ?’ এই গ্রন্থের পটভূমিকা জানাটা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই লেখকের ‘প্রাক্‌-কথন’কেই হাতিয়ার করা সমীচীন এবং যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হলো। লেখকের কথায় - “ভিকি পাবলিশার্সের ‘ব্যতিক্রম’ মাসিক পত্রিকায় সত্য কাহিনির ছায়া অবলম্বনে লেখা ‘কেন এমন হয় ?’ ধারাবাহিক প্রকাশ পেয়েছিল দুই বছরের অধিক সময় অর্থাৎ মার্চ ২০১০ থেকে জুলাই ২০১২ পর্যন্ত। সেই স্বতন্ত্র কাহিনিগুলিকে একত্র করে বই প্রকাশ করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ব্যতিক্রম পত্রিকার সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়া এবং প্রকাশক পিন্টুকুমার গুপ্ত। তাঁদের সদিচ্ছায় আজ ‘কেন এমন হয় ?’ নামের বইটি বৃহৎ পাঠক-পাঠি

অসহনীয় সময়ের দলিল - 'সময়ের দর্পণ'

বিশে বিশ মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির তীব্রগতির মৃত্যুথাবা গড়েছে নজির, একটি বছর নিরালা করে গেল কত পরিবার স্বজনহারা হল। বিশে বিশ বিষণ্ণতার।   এক বুক আশা নিয়ে ইতিউতি সংবাদ বিয়োগের ঘরে একটি বছর পূর্ণবিষাদ। ভালোবাসার ভাগীরথী অন্তঃসলিলা ভেতরে শুকোয় সরস্বতী। স্রোতে ভাসে যাপনের ক থ কতা চারদেওয়ালে জীবন বাজি। ...... (কবিতা - বিশের বিশ বিষময়) কিংবা - ডোমেরা আজ ক্লান্ত, শ্মশানে এত ব্যস্ততা ছিল না কখনো, মর্গ থেকে থরে থরে আসে আরো ভেসে আসে গঙ্গার স্রোতে, মৃত্যুমিছিল ঠিকানাবিহীন শেষযাত্রায় সম্মানহীন। মৃত্যু এখন সহজলভ্য বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্য। ...... (কবিতা - সময়ের দর্পণ)। হালে অতিমারীর ভয়াবহ সময়টিকে এভাবেই দুই মলাটে ধরে রেখেছেন কবি মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম তাঁর সদ্যপ্রকাশিত প্রথম কাব্য সংকলন ‘সময়ের দর্পণ’-এ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া অসম গ্রন্থমেলা, গুয়াহাটিতে উন্মোচিত হয় তাঁর এই অসামান্য সময়ের দলিল। গ্রন্থটি উন্মোচন করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দেবব্রত রায়চৌধুরী যিনি আবার অনবদ্য লেখনীতে ভূমিকাও লিখে দিয়েছেন এই গ্রন্থটির। ভূমিকাতে গ্রন্থের সারমর্ম অনেকটাই বর্ণিত হয়ে আছে। তবু কবির কবিতার রসাস্বাদনে পাতার পর

সরস্বতী বিদায়

আজীবন এক মহীরুহ ছায়া তলে কাটিয়েছি বেলা তরু মূলে প্রাণে গান ছিল মনে সুর ছিল ভবঘুরে ঘোরে মনপাখি উড়ছিল। সেই যে মহীরুহ ছুঁয়েছে আকাশ এল কোথা থেকে হাওয়া একরাশ বেলাশেষে পঞ্চভূতে হলো লীন ধ্বস্ত বেলায় তনু মনহীন প্রাণহীন। যাবার বেলায় কণ্ঠে নিয়ে গান ছুটে চলে অনন্ত ধামে মহীয়ান হাতে হাত ধরে করুণা ধারায় সরস্বতী মা ও মেয়ে অনন্ত বিদায়। বিসর্জনে মর্ত্য ফেরত সরস্বতী ভাসেন জলে মূর্তিমতী অনন্ত ভাসানে মেয়ে সরস্বতী চলে ভবঘুরের মনাকাশে চিতার আগুন জ্বলে।   ( সুরসম্রাজ্ঞীর প্রয়াণে শ্রদ্ধাঞ্জলি, ০৬ - ০২ - ২০২২ )

মাঘের মেঘ

মাঘের মেঘ এক চাঁদ আকাশ টা আলো করে রয় মেঘদল পল পল কী বা কথা কয় ? দূর থেকে এক তারা মিটি মিটি হাসে মায়াবিনী মেঘ , চাঁদ , তারা সব ভাসে। রাতভর অনাবিল অপরূপ শোভা অপলক দু ' নয়ন স্থির মনোলোভা। জলদ চাদরে চাঁদ আলাপনে মাতে এক তারা সুর ধরে একতারা হাতে।   কোন সুর বাজে তার একতারাখানি   আমি এক নির্গুণ কী বা তার জানি ?   অনিমেষ দুই চোখে নির্মোহ ক্ষণ বাকহারা চরাচর ঘোর শিহরণ। চাঁদ তারা মেঘে ঝলকায় রাতখানি ভুলে রই দেখে আবছায়া হাতছানি।   সে তো গেল কুহকিনী রাতের বাখান দিন হতে সেই মেঘদল অফুরান। ছেয়ে ফেলে চরাচর ঘোর কালো ত্রাসে চুপিচুপি বৃষ্টিরা পিছুপিছু আসে। মেঘ বৃষ্টির এই সহাবস্থান হাড় হিমে জর্জর ধরণী পরান। মাঘে মেঘে এই মহাজোট থাকে লেখা মায়েতে মেয়েতে নাকি বহু পর দেখা। কী যে এক বিভীষিকা বসুধাবাসীর মহাশীত কম্পনে সারাটি শরীর। চান নেই, নেই যত অকাজের কাজ কিম্ভুত কিমাকার পা-মাথার সাজ। খিল দোরে, বাতায়নে - লেপ কম্বল গরম চায়ের সাথে মুড়ি সম্বল।   তবু মাঝে মাঝে খুলি বাতায়ন আজ  মেলিয়া দু’চোখে দেখি চমকিত বাজ। ঘোর কালো দানো এক ঢেকে দশদিক হামলে পড়েছে যেন হিমেল অনীক। তিরতির ঝরঝর জলদানো নিয়ে কী খেলায় মেতেছ

'মাটির পৃথিবী' বই-এর আলোচনা - ৩

২০২১ এর শেষ পর্বে হাতে পেলাম উপহার হিসেবে ‘মাটির পৃথিবী’। বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যাক্তিত্ব, সুলেখক, কবি, গল্পকার,গ্রন্থ সমালোচক এবং এক আন্তরিক শিল্পকর্মী শ্রী বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মহাশয়ের কাব্য পুস্তিকা। একশত কবিতার সমাহার সেখানে। কবিতাগুলিকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন এবং বিচিত্র সব প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছে কবিতা সকল। প্রকৃতির নিবিড় রূপ , মানবহৃদয়ের রহস্যময়তা, আশা নিরাশার দোলাচল সব কিছু নিয়েই কবি রয়েছেন কবিতার পাশে। করছেন ঘর –সংসার, কবিতার সঙ্গেই। সচেতন পার্থিব যন্ত্রনার পাশেই অপার্থিব অমিয়ের হাতছানি প্রতিনিয়ত অনুভব করেন বলেই তিনি নির্বিকার ভাবে লিখে যেতে পারেন জীবনের পদাবলী। তার ‘’প্রথম কবিতা’’র অন্তিম পংক্তি ‘’…আমি কবির পায়ের পথ মাড়ানো ধুলো হব’’ বলে দিয়ে যায় কবি ও কবিতার প্রতি মগ্ন ভালোবাসার কথা। শব্দের জটিলতায় বিশ্বাসী নন কবি। সহজ সরল শব্দ চয়নে ছুঁয়ে যেতে চেয়েছেন কবিতার অবয়ব। ‘’সরল ও পাইনের সরলরেখায় সেই যে শুরু শব্দের মায়াজাল- সেই তো প্রোথিত মূল এই তো আমার প্রেম ।“ সন্নিষ্ঠ প্রেমও সরলই হয়। প্রত্যাশাবিহীন, জটিলতামুক্ত, আনন্দময়।নিজেকে নিংড়ে দেওয়া, বিলিয়ে দেওয়া। শ্রাবণের ধারার মতো নিজে