কথায় কথায় - ‘কেন এমন হয় ?’
বিগত শতিকার শেষ দু’টি দশক থেকে একবিংশ
শতিকার প্রথম দশক অবধি উত্তর পূর্বের যে সকল গদ্যকার দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এ অঞ্চলের সাহিত্য
আঙিনায় তাঁদের মধ্যে নিশুতি মজুমদার এক উল্লেখযোগ্য নাম। অগুনতি সাহিত্যকৃতি সৃষ্টি হয়েছে তাঁর
কলম থেকে। না, থেমে থাকেনি সেই সোনার
কলম আজো। কিন্তু কিছুটা অভিমানে এবং
বাকিটুকু উপযুক্ত মঞ্চের অভাবে তা অনেকটাই আজ স্তিমিত।
সম্প্রতি হাতে এল গুয়াহাটি ভিকি পাবলিশার্স থেকে ২০১৩ সনে প্রকাশিত তাঁর কথা সংকলন - ‘কেন এমন হয় ?’ এই গ্রন্থের পটভূমিকা জানাটা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই লেখকের ‘প্রাক্-কথন’কেই হাতিয়ার করা সমীচীন এবং যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হলো। লেখকের কথায় - “ভিকি পাবলিশার্সের ‘ব্যতিক্রম’ মাসিক পত্রিকায় সত্য কাহিনির ছায়া অবলম্বনে লেখা ‘কেন এমন হয় ?’ ধারাবাহিক প্রকাশ পেয়েছিল দুই বছরের অধিক সময় অর্থাৎ মার্চ ২০১০ থেকে জুলাই ২০১২ পর্যন্ত। সেই স্বতন্ত্র কাহিনিগুলিকে একত্র করে বই প্রকাশ করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ব্যতিক্রম পত্রিকার সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়া এবং প্রকাশক পিন্টুকুমার গুপ্ত। তাঁদের সদিচ্ছায় আজ ‘কেন এমন হয় ?’ নামের বইটি বৃহৎ পাঠক-পাঠিকা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই বইয়ের প্রত্যেকটি কাহিনি আমার জীবনে চলার পথের অভিজ্ঞতালব্ধ বাস্তবভিত্তিক কাহিনি।
মাসিক ব্যতিক্রম-এ যখন আমার ‘কেন এমন হয় ?’ প্রকাশ হচ্ছিল তখন আমি কাহিনির বিমুগ্ধ পাঠক-পাঠিকার কাছ থেকে প্রচুর ফোন কল পেয়েছি এবং ব্যতিক্রম-এর সম্পাদকীয় দপ্তরে অগণিত চিঠি এসেছিল। কিছু এসএমএস ও চিঠি বিভিন্ন সংখ্যায় ব্যতিক্রম-এ প্রকাশও পেয়েছে। ......”।
উপরোক্ত প্রাক্-কথন থেকেই এই সিরিজের বাস্তবধর্মী কাহিনিগুলোর জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে আমাদের মনে এক অনুসন্ধিৎসা জেগে ওঠে। সেই সূত্র ধরেই এই আলোচনা। ১০২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে তেমনই মোট ২৭ টি কাহিনি। দুই থেকে চার পৃষ্ঠার প্রতিটি কাহিনি যেন জীবনের এক একটি পর্যায়ের নিদারুণ এক একটি সত্যকে তুলে ধরেছে পাঠকের দরবারে। স্বভাবতই এই গ্রন্থটিকে লেখক উৎসর্গ করেছেন - ‘মাসিক পত্রিকা ‘ব্যতিক্রম’-এর যাঁরা ধারাবাহিক ‘কেন এমন হয় ?’ পড়ে আমাকে প্রবল উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে --”।
বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতায় জীবনের নানারকমের উত্থান পতনের বিচিত্র সব ঘটনাবলির সমাহার এই কথা সংকলন। কথাকার যেন গল্পচ্ছলেই বলে গিয়েছেন একের পর এক হর্ষ-বিষাদগাথা। প্রতিটি কাহিনির শেষে স্বতঃস্ফুর্ত গরজে গল্পকারের ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে একটাই প্রশ্ন - কেন এমন হয় ?
প্রতিটি অধ্যায় শুধুমাত্র কাহিনিসর্বস্বও হয়ে থাকেনি। সফল সাহিত্যকৃতির উদাহরণস্বরূপ কাহিনির বিন্যাস ও বুনোটও চমকপ্রদ বৈকি। অযথা বাক্য সম্প্রসারণের পথে না গিয়ে কথাকার কাহিনির ঘনঘটায় আচ্ছন্ন করে রাখতে পেরেছেন পাঠককে। অথচ যেন কোনও এক নিপুণ শিল্পীর মতো প্রতিটি কাহিনির খেই ধরে রেখেছেন আদ্যন্ত। বর্ণনাবহুলও নয় আবার সংক্ষিপ্তসারও নয়, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথাকেই সাজিয়ে গুছিয়ে নিবেদন করেছেন পাঠকের দরবারে। ফলে একদিকে যেমন প্রতিটি গল্পের পাঠ শুরু হলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের পাতা থেকে পাঠকের চোখ ফেরানোর উপায় থাকে না তেমনি পরবর্তী গল্পটিও এক অমোঘ টানে টানতে থাকে মনকে। এভাবেই একের পর এক কাহিনিতে সাঁতরে বেড়াতে হয় পাঠককে।
জীবনের আশ্চর্যজনক কিছু মোড় উঠে এসেছে কাহিনিগুলির পরতে পরতে। কিছু বিধাতানির্বন্ধ বিপর্যয়, কিছু অভ্যাসজনিত অবক্ষয়। ফলতঃ এক একটি জীবনের দুঃসহ পরিণতি। শিলচরের সফল ব্যবসায়ীকে কার্বিআংলং-এর প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবিষ্কার করে কথাকার যেমন বিস্মিত তেমনি জীবন যুদ্ধের বিধ্বস্ত এক একটি পর্যায় পেরিয়ে আসা অসংখ্য ব্যক্তিজীবনের সন্ধান পেয়ে বেরিয়ে আসে সেই অমোঘ স্বগতোক্তি - কেন এমন হয় ?
সারসংক্ষেপটুকু যেন অবিকল উঠে এসেছে তাঁর শেষ কাহিনিটির শেষ পরিচ্ছেদে - “আমি হতবাক হয়ে শুনছিলাম, নিরাপদবাবুর বর্ণিত কাহিনি এবং ভাবছিলাম, এই বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি ? প্রতি মুহূর্তে এই জগৎ জুড়ে কত অকথিত কাহিনি গ্রন্থিত হচ্ছে কে তার হিসাব রাখে ? মানবজীবন বড়ই বিচিত্র, লোভের প্রবৃত্তি মানুষকে কোথায় কোন অন্ধকারে পৌঁছে দেবে কেউ আগে থেকে তার কোন হদিশ জানতে পারে না। তাই নিজেকে আয়ত্তে আনার বা সতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
আমি নিরাপদবাবুর দিকে চেয়ে স্বগতোক্তি করলাম - কেন এমন হয় ?”
পাকা বাঁধাইয়ের দুই মলাটের মধ্যেকার শব্দবিন্যাস এবং ছাপাই যথাযথ। নয়নজ্যোতি শর্মার প্রচ্ছদে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে যদিও তা আকর্ষক নিঃসন্দেহে। বানান ভুলের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। সব মিলিয়ে ‘কেন এমন হয় ?’ একটি সুখপাঠ্য কথা সংকলন।
‘কেন এমন হয় ?’
নিশুতি মজুমদার
মূল্য - ৮০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০৬৭৬০৩
সম্প্রতি হাতে এল গুয়াহাটি ভিকি পাবলিশার্স থেকে ২০১৩ সনে প্রকাশিত তাঁর কথা সংকলন - ‘কেন এমন হয় ?’ এই গ্রন্থের পটভূমিকা জানাটা খুবই প্রয়োজনীয়। তাই লেখকের ‘প্রাক্-কথন’কেই হাতিয়ার করা সমীচীন এবং যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে হলো। লেখকের কথায় - “ভিকি পাবলিশার্সের ‘ব্যতিক্রম’ মাসিক পত্রিকায় সত্য কাহিনির ছায়া অবলম্বনে লেখা ‘কেন এমন হয় ?’ ধারাবাহিক প্রকাশ পেয়েছিল দুই বছরের অধিক সময় অর্থাৎ মার্চ ২০১০ থেকে জুলাই ২০১২ পর্যন্ত। সেই স্বতন্ত্র কাহিনিগুলিকে একত্র করে বই প্রকাশ করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন ব্যতিক্রম পত্রিকার সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়া এবং প্রকাশক পিন্টুকুমার গুপ্ত। তাঁদের সদিচ্ছায় আজ ‘কেন এমন হয় ?’ নামের বইটি বৃহৎ পাঠক-পাঠিকা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই বইয়ের প্রত্যেকটি কাহিনি আমার জীবনে চলার পথের অভিজ্ঞতালব্ধ বাস্তবভিত্তিক কাহিনি।
মাসিক ব্যতিক্রম-এ যখন আমার ‘কেন এমন হয় ?’ প্রকাশ হচ্ছিল তখন আমি কাহিনির বিমুগ্ধ পাঠক-পাঠিকার কাছ থেকে প্রচুর ফোন কল পেয়েছি এবং ব্যতিক্রম-এর সম্পাদকীয় দপ্তরে অগণিত চিঠি এসেছিল। কিছু এসএমএস ও চিঠি বিভিন্ন সংখ্যায় ব্যতিক্রম-এ প্রকাশও পেয়েছে। ......”।
উপরোক্ত প্রাক্-কথন থেকেই এই সিরিজের বাস্তবধর্মী কাহিনিগুলোর জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে আমাদের মনে এক অনুসন্ধিৎসা জেগে ওঠে। সেই সূত্র ধরেই এই আলোচনা। ১০২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে তেমনই মোট ২৭ টি কাহিনি। দুই থেকে চার পৃষ্ঠার প্রতিটি কাহিনি যেন জীবনের এক একটি পর্যায়ের নিদারুণ এক একটি সত্যকে তুলে ধরেছে পাঠকের দরবারে। স্বভাবতই এই গ্রন্থটিকে লেখক উৎসর্গ করেছেন - ‘মাসিক পত্রিকা ‘ব্যতিক্রম’-এর যাঁরা ধারাবাহিক ‘কেন এমন হয় ?’ পড়ে আমাকে প্রবল উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশে --”।
বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতায় জীবনের নানারকমের উত্থান পতনের বিচিত্র সব ঘটনাবলির সমাহার এই কথা সংকলন। কথাকার যেন গল্পচ্ছলেই বলে গিয়েছেন একের পর এক হর্ষ-বিষাদগাথা। প্রতিটি কাহিনির শেষে স্বতঃস্ফুর্ত গরজে গল্পকারের ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে একটাই প্রশ্ন - কেন এমন হয় ?
প্রতিটি অধ্যায় শুধুমাত্র কাহিনিসর্বস্বও হয়ে থাকেনি। সফল সাহিত্যকৃতির উদাহরণস্বরূপ কাহিনির বিন্যাস ও বুনোটও চমকপ্রদ বৈকি। অযথা বাক্য সম্প্রসারণের পথে না গিয়ে কথাকার কাহিনির ঘনঘটায় আচ্ছন্ন করে রাখতে পেরেছেন পাঠককে। অথচ যেন কোনও এক নিপুণ শিল্পীর মতো প্রতিটি কাহিনির খেই ধরে রেখেছেন আদ্যন্ত। বর্ণনাবহুলও নয় আবার সংক্ষিপ্তসারও নয়, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথাকেই সাজিয়ে গুছিয়ে নিবেদন করেছেন পাঠকের দরবারে। ফলে একদিকে যেমন প্রতিটি গল্পের পাঠ শুরু হলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের পাতা থেকে পাঠকের চোখ ফেরানোর উপায় থাকে না তেমনি পরবর্তী গল্পটিও এক অমোঘ টানে টানতে থাকে মনকে। এভাবেই একের পর এক কাহিনিতে সাঁতরে বেড়াতে হয় পাঠককে।
জীবনের আশ্চর্যজনক কিছু মোড় উঠে এসেছে কাহিনিগুলির পরতে পরতে। কিছু বিধাতানির্বন্ধ বিপর্যয়, কিছু অভ্যাসজনিত অবক্ষয়। ফলতঃ এক একটি জীবনের দুঃসহ পরিণতি। শিলচরের সফল ব্যবসায়ীকে কার্বিআংলং-এর প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবিষ্কার করে কথাকার যেমন বিস্মিত তেমনি জীবন যুদ্ধের বিধ্বস্ত এক একটি পর্যায় পেরিয়ে আসা অসংখ্য ব্যক্তিজীবনের সন্ধান পেয়ে বেরিয়ে আসে সেই অমোঘ স্বগতোক্তি - কেন এমন হয় ?
সারসংক্ষেপটুকু যেন অবিকল উঠে এসেছে তাঁর শেষ কাহিনিটির শেষ পরিচ্ছেদে - “আমি হতবাক হয়ে শুনছিলাম, নিরাপদবাবুর বর্ণিত কাহিনি এবং ভাবছিলাম, এই বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি ? প্রতি মুহূর্তে এই জগৎ জুড়ে কত অকথিত কাহিনি গ্রন্থিত হচ্ছে কে তার হিসাব রাখে ? মানবজীবন বড়ই বিচিত্র, লোভের প্রবৃত্তি মানুষকে কোথায় কোন অন্ধকারে পৌঁছে দেবে কেউ আগে থেকে তার কোন হদিশ জানতে পারে না। তাই নিজেকে আয়ত্তে আনার বা সতর্ক হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।
আমি নিরাপদবাবুর দিকে চেয়ে স্বগতোক্তি করলাম - কেন এমন হয় ?”
পাকা বাঁধাইয়ের দুই মলাটের মধ্যেকার শব্দবিন্যাস এবং ছাপাই যথাযথ। নয়নজ্যোতি শর্মার প্রচ্ছদে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে যদিও তা আকর্ষক নিঃসন্দেহে। বানান ভুলের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। সব মিলিয়ে ‘কেন এমন হয় ?’ একটি সুখপাঠ্য কথা সংকলন।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
নিশুতি মজুমদার
মূল্য - ৮০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০৬৭৬০৩
Comments
Post a Comment