Skip to main content

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে


একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস হালে এপ্রিল ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থউত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে’ (প্রথম খণ্ড) প্রকাশক - একুশ শতক, কলকাতা আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে
উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না
আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও সারগর্ভ এই ভূমিকা পাঠের পর ভেতরের লেখাগুলো পড়ার অদম্য স্পৃহা জাগাবে পাঠক মনে এটা নিশ্চিত অন্যদিকে গ্রন্থের শেষে রয়েছে লেখক/আলোচকদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অর্থাৎ সব মিলিয়ে এক কমপ্লিট প্যাকেজ গ্রন্থে একাধারে সন্নিবিষ্ট হয়েছে কিছু নির্দিষ্ট গল্পের উপর আলোচনা আবার কিছু গ্রন্থেরও আলোচনা ভূমিকারই সূত্র ধরে উদ্ধৃত করা যায় কিছু প্রতিষ্ঠিত সত্য - ‘…উত্তরপূর্বের বাংলা ছোটগল্পের এক সমৃদ্ধ ধারা বর্তমান যেখানে অন্তত পঞ্চাশজন লেখক পাওয়া যাবে অপরিহার্য যাদের ছাড়া স্তবক সম্পূর্ণ হয় না যদিও এক দুজন কথাকার এই বিখ্যাতজনদের তোড়ায় থাকার অধিকারী কিনা সে প্রশ্নও থেকে যায় এই সংকলন গ্রন্থের অনন্যতা অন্যদিকে, কথাকারদের প্রাধান্য অস্বীকার না করেও বলা যায় বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা এক কথায় সবাইকেই সাধুবাদ জানাতে হয় এইজন্য যে প্রত্যেকের রচনায়ই নতুন থেকে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছেন ব্যাখ্যাকারেরা উত্তরপূর্বের মতো বাংলা ভাষার প্রান্তিক পরিসর থেকে উঠে আসা নবীন প্রাবন্ধিকদের এই উদ্ভাসন উৎসাহিত করবে কথাকারদের, নতুন শিক্ষার্থীদের, নবীন পাঠকদেরওভূমিকার শেষে অনালোচিত গল্পকারদের কথাও উচ্চারিত হয়েছে এবং স্বাভাবিক ভাবেই ব্যক্ত করা হয়েছে পরবর্তী পর্বে তাঁদের অন্তর্ভুক্তির প্রত্যাশা
এবার দেখা যাক গ্রন্থের অন্তর্গত অধ্যায়গুলোগুচ্ছে রয়েছে মোট বিশটি আলোচনা সুদীপ্তা পালেরবিমল চৌধুরীরভগীরথের তালা’ : এক জীবনালেখ্য’, . অজিত কুমার সিংহেরমহীউদ্দিনেরএতিমালির ইতিকথা’ : এক বিশ্লেষণী পাঠ’, . অপরাজিতা দেমাতৃত্বের বিকল্প পথে বিজ্ঞান ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব : প্রসঙ্গমুলতবি’’, সম্পাদক নিত্যানন্দ দাসেরঅখিল দত্তেরঅশ্রুনদী’ : অসহায় বাঙালির কান্না ও আত্মকথন’, . পারমিতা আচার্যেরকালীপদ চক্রবর্তীরতীর’ : সমাজ বাস্তবতার এক নগ্ন চিত্র অস্মিতা রায় লিখেছেনযান্ত্রিক সভ্যতা বনাম পাহাড়িয়া উপজাতির জীবনসংগ্রাম : প্রেক্ষিতেবুড়ো দেবতার মাচাং’’, রতীশ দাস লিখেছেনবদ্রুজ্জামান চৌধুরীরলাখ টাকার মানুষ’’, . তাপসী গুপ্ত লিখেছেন বদ্রুজ্জামান চৌধুরীর কেচ্ছাগল্প : দু-চারটি কথা’, সুনন্দা ঘোষ লিখেছেন স্বদেশ হারানোর যন্ত্রণা : প্রসঙ্গ আসরাফ আলির স্বদেশ’’, লুসী মণ্ডল লিখেছেন দুলাল ঘোষের আঁতুড়’ : নারীর অসহায়তা ও জীবন-সংগ্রামের নির্মম আখ্যান বর্ণন আছে মৈত্রেয়ী দেব লিখিত স্বপ্না ভট্টাচার্যের সমান্তরাল’ : এক নারীর আত্মকথন. মধুমিতা সেনগুপ্তের দেবীপ্রসাদ সিংহের বাসা বদল’ : একটি বহুকৌণিক অবলোকন’, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম-এর মীনাক্ষী সেন-এর পাতালকন্যাগল্প : বিশ্লেষণের আলোকে’, . টিটন রুদ্রপালের গৌরী বর্মণের স্বাধীন বাতাসে উড়তাসে’ : একটি বিশ্লেষণাত্মক পাঠ’, . সুচরিতা চৌধুরীর কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্যের ইত্বরবানু ও মাসমিডিয়া’ : পাঠকের দৃষ্টিতে’, . পীযূষ নন্দীর স্মৃতির সোপান বেয়ে যন্ত্রণাময় ইতিহাসের কড়া নাড়া নিবিড়পাঠ : বিজয়া দেবের যাত্রাপথে’’, অনামিকা পালের দেবব্রত চৌধুরীর কাক’ : এক নিরুপায় নিঃসঙ্গ পুরুষের মৃত্যু’, দীক্ষিতা দেবাশীষ দে-‘‘আব্বাজানের হাড় : একটি প্রামাণ্য দলিল’ - দেশভাগের এক আন্তস্পর্শী অধ্যায়’, পাপিয়া নন্দীর অমিতাভ দেবচৌধুরীর ঘুমভাঙানিয়াগল্পের একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন এছাড়া রয়েছে আদিমা মজুমদার ও কথাপ্রান্তিক বিজয়া কর সোমের দুটি গল্পের উপর দুটি আলোচনা লিখেছেন যথাক্রমে মনোজকান্তি ধর ও প্রিয়তমা মজুমদার প্রতিমা পাল লিখেছেন রণবীর পুরকায়স্থের হেড়ম্বপুরের প্রীতিকথা’ : বিষয়ে বিশ্লেষণে গল্পের মধ্যে থাকা গল্পকথাটি কিছু সংক্ষিপ্ত তথা বিক্ষিপ্ত মনে হয়েছে যদিও এর মূল্যায়ন করতে পারবেন এই গ্রন্থের ভূমিকাকার স্বয়ং গল্পকার রণবীর
গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ছয়টি নিবন্ধ - সৌম্যদীপ দেব-এর অনুপ ভট্টাচার্যের গল্প ভুবন : নিরীক্ষা ও নির্মাণ’, আশিসরঞ্জন নাথের উত্তর-পূর্বের বাংলা গল্প : মিথিলেশ ভট্টাচার্য’, . শর্মিষ্ঠা সেন-এর সুনন্দা ভট্টাচার্যের গল্প - ‘ছাঁচতলায় রোদএবং আরো একটু বসেন না’ :        বিশ্লেষণের আলোকে’, ড. সূর্যসেন দেব লিখিত স্বপ্না ভট্টাচার্যের ছোটগল্পে দেশভাগ ও বিপন্ন বাঙালির আখ্যান’, অনিন্দিতা সাহার ‘’কান্তারভূষণ নন্দী-কয়েকটি মৃত্যুর অসম্পূর্ণ বিবরণ’ : একটি সমাজের প্রতিচ্ছবিও ড. অর্পিতা রায় মৌলিকের মেঘমালা দে মহন্তের গল্পের সমাজ বাস্তবতা : প্রসঙ্গ দুটি ছোটোগল্প
প্রতিষ্ঠিত গল্পকার ও আলোচক, প্রাবন্ধিকদের তথা অধ্যাপকদের পাশাপাশি প্রাক্তন ও তরুণ ছাত্র, গবেষকদের নিবন্ধ সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই গ্রন্থে এটা আশার আলো নিঃসন্দেহে বেশ কিছু নিবন্ধে কিছু বানান ও কিছু ছাপার ভুল থেকে গেলেও সার্বিক ভাবে ছাপা, বাঁধাই, অক্ষরবিন্যাস যথাযথ মানের হয়েছে বলাই যায় ছিমছাম প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে আলোক ভট্টাচার্য ১৯১ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির ব্লার্ব দুটি খালি থেকে গেলেও শেষ মলাটে সম্পাদকের সচিত্র পরিচিতি প্রাসঙ্গিক হয়েছে গ্রন্থের ভেতরে থাকা পাঠ-সহায়ক বুকমার্কপাঠকের উপরি পাওনা পাঠশেষে দ্বিতীয় খণ্ডের প্রত্যাশায় থাকবেন পাঠক এটা বলাই যায়

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৪০০ টাকা
যোগাযোগ - ৮৬৩৮২৮১৩১৬ 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়