Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2022

কথা ও কবিতা

এভাবেও চলে যায় জীবন অন্তর থেকে অন্তরান্তরে... যে হৃদয়ে কথা নেই সেখানে কবিতা আছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো।   মৌনী কবিতা যেদিন লাভা হয়ে ধেয়ে আসবে হৃদয়ের প্রান্তরে মৌন পাহাড়ের অঙ্গে অঙ্গে   সেদিন উঠবে ফুটে লক্ষ লক্ষ নীলকুরিঞ্জি ফুল।     যে ফুলের নীলাভ শোভায় ভাসবে চরাচর   দিনের কবিতা তারা হয়ে রাতে কইবে কথা, পড়বে ঝরে বেবাক মৌনতা।     এমন করেও বইবে জীবনধারা পাহাড় পেরিয়ে মোহনার দিকে হাতে হাত ধরে   কিংবা আপন আপন পথে চলবে কথারা - কবিতারই মতো   অন্তরে অন্তরে পলাশে মান্দারে।

চেনা অচেনা

চলতে চলতে পথে কে যেন চুপিচুপি এসে বলে দাঁড়াও খানিক.... চেনা মুখ তবু কেন অচেনা ?   কোন সে এক পথের মোড়ে জমেছিল কিছু মৌন কথার পাহাড় চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছিল এক শরৎ সান্ধ্য বাসরে।   হতে পারে সেই মুখ - কিংবা শুধু মরীচিকা মোহাবেশ। কতটা সংযত হলে পর শরীর থেকে মুছে যায় সব কলঙ্ক ? মুখোশের খোলসে আবদ্ধ হৃদয় কত আর সইতে পারে চেনা অচেনার দায় ? এক দিন তাই অভিসম্পাতে বিদ্ধ হয় চাঁদ কলঙ্ক লাগুক তোর গায় আঁধার নামুক অঙ্গে অঙ্গে অমাবস্যার ঘোর কালোতে হোক মুখ দেখানো দায়।   কে জানে কোন সান্ধ্য বাসরে আসে নেমে জন্ম থেকে জন্মান্তরের অকাল অমাবস্যা।   পথে আমার ফিসফিস কথামালা হাতছানি দেয় পলে পলে চেনা অচেনার ডামাডোলে।

এই তো পুজো

শরৎ এসেছে ঝেঁপে। বনে বনে নীলকুরিঞ্জি প্রতীক্ষা   চোরা খুশির দিন যাপন শারদ আবহে উতলা মন।     পড়ে আছে কত অসমাপ্ত কাজ   হাত লাগাতে ইচ্ছে করে না   'ওই দিকে যে মন পড়ে রয়,   মন লাগে না কাজে'। সেই দে-ছুট বেলা থেকে   এই একই উদ্দীপনা।   ক্যালেন্ডারের ছকে ছকে   আনমনে দিন গোনা।     সেদিন ছিল হৈ হুল্লোড়   এখন - হৃদমাঝারে।   দেহের বয়স তরতরিয়ে বাড়ে মনের বয়স এগোয় না,   এ কেমন বিড়ম্বনা ?   মন-গহিনে দিনের স্বপন এক দোটানা, এক উচাটন   মন বলে - চল একছুটে যাই শিউলিতলায়, কাশের বনে,   কুমোর পাড়ায়, মণ্ডপে মণ্ডপে।     দেহের মুখোশ পথ আগলে দাঁড়ায়   বলে - সামলে চলো খানিক এ তুমি আর আগের তুমি নও, স্থিতপ্ৰজ্ঞ হও একটুখানি বোঝো -     এই তো কারো পুজো।

বাকি সব মিছে কথা

সেদিন...... পাইনই তো শুধু ছিল না ।   সবুজ চায়ের গালিচা ছিল পূর্ণিমা রাতে জোছনা ছিল নিয়ন আলোয় উদ্ভাসিত চাঁদপানা এক মুখ ছিল ।   সাগর জলের লহর জুড়ে   প্রসারিত দু ' টি হাত ছিল ,   নীরব মুখের ভাষা জুড়ে   কৃষ্ণ ডাগর আঁখি ছিল ।   পাশাপাশি কিংবা মুখোমুখি বসে প্রশ্রয়ে প্রেম লুকিয়েছিল ।   বনানীর বুকে , বুক ধুকপুকে থরে থরে প্রেম গচ্ছিত ছিল ।     সবটুকু থাকা একাকার হয়ে গরজ হয়ে , ভালোবাসা হয়ে   মিশে গেছে একখানে...   এই তো আমার প্রেম   বাকি সব মিছে কথা ।

ভ্রমবিলাস

কোথায় যে কোন সাঁঝবেলাটি   রং মেখে দেয় জীবন পথে।   এ রং মুছে যাবার জলরং কথা নয় পরতে পরতে রং বিভ্রম কথা কয়।   পথে ভিজে ভিজে মন একসা হলেও তাপিত হৃদয়ে মধুর সমীর বয়। বুকের গভীরে একটুকু ঠাঁই পেতে বিছাই কুসুম হাওয়ার পথে পথে।   কে যে কার মনগগনে   রং মেখে যায় সন্ধ্যা জুড়ে   কোন হাওয়াতে ছড়ায় যে কোন রঙিন মনের ভ্রমবিলাস,   কেউ জানে না, জানে শুধু প্রহর জাগা রাতপাখি আর গভীর রাতের কৃষ্ণ আকাশ। যে আকাশের তারায় তারায় সঞ্চিত সব রঙিন ইতিহাস - আর সন্ধ্যা রাগে চোখের তারায়   পলক জোড়া অথৈ সর্বনাশ।

এ সোনার মাটি

কবিতাই পারে আস্ত একটি পাহাড় কিনতে ছিনিয়ে নিতে নদীর মালিকানা এ সোনার মাটি মানুষে মানুষে গিয়েছে ভরি মেয়েটি কোথায় রাখবে দু'টি পা ? চোখে তার অধরা স্বপ্নসুখ হাতছানি দেয় একটুকু অভিলাষ নিজেই কিনবে নিজের স্বপ্ন মৃদুভাষ।   কেউ আড়াল থেকে বাড়ায় হাত কেউ সামনে দাঁড়িয়ে দেখায় পথ স্থবির দাঁড়ায় মেয়েটি এক চিলতে পথ নেই আজ সব পথ গিয়েছে ভরি অগণিত মানুষের পদচিহ্ন ধরি।   আজ তৃতীয়া চাঁদের মতো স্বপ্নমায়ায় কে যেন আকাশচুম্বী দশ দিকে চায় নদী পেরিয়ে পাহাড় ডিঙিয়ে   রোদ ঝড় বৃষ্টি পথে বেপরোয়া   স্বপ্নিল চোখ নিয়ে আসমানি স্বপ্নে আকাশ ছুঁতে চায়।

অনুবাদ সাহিত্যের চমকপ্রদ সংকলন - ‘কাব্যবীথিকা’

অনুবাদ সাহিত্যের চমকপ্রদ সংকলন - ‘কাব্যবীথিকা’   বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   ভাষার উদ্ভাবন ও তার প্রসার মানবেতিহাসের এক অন্যতম যুগান্তকারী ঘটনা । অচেনা ভাষার অপরিচয় থেকে চেনা ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে মানব অভিজ্ঞতার যে বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তা কিন্তু প্রমাণ করে মানবসৃষ্ট সাহিত্য দেশকালোত্তীর্ণ । আর এখানেই অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা । সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মানবিক ও শৈল্পিক সত্তাকে , অনুভব শক্তিকে ব্যপ্ত করার একটি প্রয়াস হচ্ছে অনুবাদ । ভাষান্তরের বাধা পেরিয়ে ভৌগোলিক দূরত্বকে জয় করে বিশ্বমানবের অনুভবের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ এনে দেয় অনুবাদ । বস্তুত একটি মানুষ শিশুকাল থেকেই অনুবাদের মাধ্যমে জগতকে চিনতে, জানতে শেখে। অভিনয় ও শব্দের তরজমার সুবাদেই ভাষার মাধ্যমে প্রকাশক্ষমতা গড়ে ওঠে আয়াসসাধ্য প্রচেষ্টার ফলে। মানুষ প্রধানত অনুবাদের মাধ্যমেই পারিপার্শ্বিক জগৎটাকে উপলব্ধি করতে পারে। বাংলার সবচাইতে কাছের ভাষা হলো অসমিয়া। একই উৎস থেকে আগত সমকালীন উদ্‌ভাবনের মাধ্যমে এই দুই সহোদরা ভাষার উৎপত্তি যদিও চর্চা ও সহজলভ্যতার অভাবে উভয় ভাষার পাঠক পাঠিকারা উভয় ভাষার সাহিত্যরসের স্বাদ থেকে বহুলাংশে বঞ্চিত। এক

নিটোল ব্যঞ্জনার কাব্যগ্রন্থ - ‘গান্ধারী বাঁধন খোল’

প্রতিবার দৃঢ়তা ভাঙে বিষণ্ণ রাত চায়ের চুমুকে ওড়ে রাজহাঁস , অবহেলিত পোড়ো বাড়িতে কুসুমকুমারীর গায় মান্দাস   নিলাম হয়ে গেছে ভিটেমাটি   যন্ত্রসভ্যতার রূপটানে শ্যাওলার বিভ্রম বিসর্জনের বাজনা বাজে গ্রিসের সমুদ্রতীরে । ( কবিতা - বিভ্রম ) এভাবেই ব্যাঞ্জনায় , রূপকে একের পর এক সেজে ওঠে মন্টু দাস - এর কবিতা । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘গান্ধারী বাঁধন খোল’। পাকা বাঁধাইয়ে ৭২ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে মোট ৬৫ টি কবিতা। অধিকাংশ কবিতাই হ্রস্ব অবয়বের। কিছু পৃষ্ঠাজোড়া কবিতা থাকলেও আকারে ছোট কবিতাগুলোই অধিকতর আবেদনময়। প্রায় প্রতিটি কবিতাই প্রথম পুরুষে লিখা। অর্থাৎ প্রকারান্তরে অনেকটা আত্মকথারই প্রকাশ যদিও সেই কথার বাঁধন অনেকটা গান্ধারীর অক্ষিবন্ধনের মতোই। কবি যেন তাঁর কবিতায় প্রয়াস করেছেন বহু কথা বলতে। অথচ সেইসব না বলা কথারা বিভ্রম হয়ে আত্মগোপন করে আছে কবিতার শরীরে। ব্যাঞ্জনায় ব্যাঞ্জনায় বহুস্বৈরিক ভাবনারা খেলা করে বেড়িয়েছে একের পর এক কবিতায়। কবিমন সতত ভ্রাম্যমান। বিশ্ব জুড়ে তাঁর পরিভ্রমণ। কবি আজকের অসুস্থ পৃথিবীকে দেখেছেন কাছে থেকে। ভিটেমাটিচ্যুত যাযাবর জীবন যাপনের খণ্ডচিত্র তাঁর অনুভবে অনুভবে। সেই বিচিত

সীমান্ত শহরের স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়োজন - ‘সীমান্তরশ্মি’

ছোট পত্রিকা না বলে একে সাহিত্য পত্রিকা কিংবা কবিতাপত্রও বলা যায় । নিয়মিত একটি ছোট পত্রিকা প্রকাশ যে কতটা সমস্যার এবং কতটা গরজ থাকলে পরে তা সম্ভব তা একমাত্র এ কাজে নিয়োজিত সুজনদের পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব । মানসিক , কায়িক এবং আর্থিক শ্রমের বিনিময়েই জন্ম হয় এক একটি ছোট পত্রিকার । সম্প্রতি বরাক উপত্যকার সীমান্ত শহর করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকা ‘ সীমান্তরশ্মি ’ র ‘ বন্যা শিলচর ২০২২ ’ সংখ্যাটি । কবি , সাহিত্যিক নারায়ণ মোদক সম্পাদিত এই পত্রিকার এটি হচ্ছে তৃতীয় বর্ষ , প্রথম সংখ্যা - সর্বমোট চতুর্থ সংখ্যা । জুলাই ২০২২ - এ প্রকাশিত এই সংখ্যাটি আসামের বরাক উপত্যকার শহর শিলচরের ভয়াবহ বন্যার স্মরণে নামাঙ্কিত যদিও এটি কোনও বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা নয় । এই সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘ সীমান্তরশ্মি ’ র উপদেষ্টা গল্পকার প্রফুল্ল কুমার দেব - এর স্মৃতিতে । প্রকাশক সীমান্তরশ্মি সাহিত্য পত্রিকা পরিবার , মুদ্রণে স্কলার পাবলিকেশনস্ ‌, করিমগঞ্জ । অধিকাংশ কবিরাই বরাক উপত্যকার । আছেন বাইরেরও কয়েকজন । তবে পত্রিকার না