Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2021

হালিচারা - কথা অমৃত সমান

একটি গ্রন্থের এত যে সার্থক নামাকরণ হতে পারে তা হাতে না এলে বুঝে ওঠা মুশকিল। ‘ হালিচারা ’ র কথাই বলছি। গল্পকার মঞ্জরী হীরামণি রায় - এর হালিচারা। সাড়ে চার বাই সাত ইঞ্চি সাইজের গল্পগ্রন্থ। অনায়াসে পাঞ্জাবির পকেটে পুরে হেঁটে চলা যায়। প্রথম যখন হাতে এলো স্বাভাবিক ভাবেই নজর কাড়েনি এই পুচকে সম্ভার। ‘ পেহলে দর্শনধারী ফির গুণ বিচারি ’ । গায়ে গতরে নাদুসনুদুস নাহলে কি আর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ? তাই হলো। পড়ে রইল অনাদরে বহুদিন। মাঝে যা এলো হাতে , সব পড়া হয়ে গেল এক এক করে। এবার নিতান্তই দায়সারা উৎসাহে হাতে নিয়েছি ‘ হালিচারা ’ । আর এর পরেই নাওয়া খাওয়া ভুলে যেন নেশায় পেয়ে বসেছে। উরিব্বাস !! এ কী পড়ছি ? থামতেই পারছি না যে। বলতে গেলে প্রায় এক নিঃশ্বাসেই সাবাড় ১০২ পৃষ্ঠা জোড়া ১২ টি অসাধারণ গল্প। হালিচারা অর্থে - ফসলের জন্মভূমি। বেঁচে থাকার রসদের শৈশব থেকে বাল্যকালের রম্যভূমি। আকারে ‘ হালিচারা ’ তাই সত্যিকার অর্থেই হালিচারা। কিন্তু এই আপাত পুস্তিকার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আয়াসলব্ধ ফসলের যাবতীয় উপাদান। কথা বিকল্প পরিবার - এর সৌজন্যে এবং সাহিত্যিক বিজয়া করসোম - এর সম্পাদনায় প্রকাশিত এই গল্পগ্রন্থে রয়েছে একের

খুশি

শেশেষ দুপুরের যাত্রী তরী তৈরি হয়েই আছে আয়েসী কুসুম দিদার পাশেই বসে। মন গগনে সফর শুরুর আনন্দ গান আদিগন্ত জলে জলে বিস্ময় অফুরান। একটি জীবন একান্তই দায়সারা এক দায় একটি কুসুম পাপড়ি মেলার অপেক্ষায়। সেই শেষ দুপুরের অবাধ ইচ্ছেডানা মেলেছিল তার পাখা, যতদূর যায় দেখা। তরী বেয়ে একটি বিকেল শেষে মামাবাড়ি উঠবে গিয়ে হেসে খেলে। আনন্দ আর বাধ মানে না তার শুধু কি তার ? এ আনন্দ তরীর সবাকার। গরিব ঘরের যাত্রী সবাই চলে আনন্দপুর নাই বা থাকুক সাধ্য - সাধ আছে তো ভরপুর। সূর্য তখন শেষ আকাশে ডুবু ডুবু পাটে ক্রমশঃ হলুদ - সোনালী - লাল সাঁঝে। হিজল ছায়া ম্লান হয়ে যায় চলে খানিক আগেই সব ছিল চোখে চোখে। আচমকা কোন দূর দিগন্ত ছেয়ে মেঘলা হাওয়ায় ঢেউগুলি আসে ধেয়ে। পানসি তরী খেই হারিয়ে দোলে বিষমে যাত্রীরা সব ইষ্ট জপে হাহাকারে। ভীত কুসুম দিদার কাছে ছুটে যায় দু'হাত বাড়িয়ে দিদাও আজ অসহায়। লহর নিনাদ ছাপিয়ে যায় রব সামাল সামাল অসহায় মাঝি, যাত্রী সবাই তরীটি টালমাটাল। অতল জলে ডুবিয়ে তরী বিধাতা হন ক্ষান্ত অস্ফুটে হয় দিদাআআআ শব্দে একটি জীবনান্ত। হারিয়ে গেছে কুসুমকলি সাথে নিয়ে সব হাসি হারিয়ে গেছে বিলের জলে ছোট

মৃত্যু এখন

এখানে সময় অফুরান - অপেক্ষায় যাপিত অনন্ত কাল , এখানে জীবন মৃত্যু সমকাল - সমান্তরাল। এখানে সুখ ও শোকের একান্ত সহযাপন এখানে নবজাতকের বিদ্রোহ ক্রন্দন এখানে জাতকান্তের নিঃশব্দ অনুরণন। এখানে ভরসা যোগায় প্রাচীরপত্র - ' পাশাপাশি কিংবা মুখোমুখি - সব খুশি ' । এখানে আসা যাওয়ার পথের ধারে মাঝে মাঝেই অলস দিন যাপন অ-সুখ যত সরিয়ে রেখে সুখের অন্বেষণ এখানে আনকোরা মুখে সখ্য আলাপন দিনশেষে সুখ সোপানে কাংক্ষিত উত্তরণ।   আচমকাই ফুসমন্তর সেই সে সুখের চিত্র যাপন বেলার সঙ্গী এবার শুধুই হাহাকার লুকিয়ে থাকে ভীত বিহ্বল আপন মুখাবয়ব দিগবিদিকে ছুটে চলে উদভ্রান্ত মুখাবরণ। আসে না ভেসে ক্রন্দন বোলচাল এখন জন্ম মৃত্যু নিরাসক্ত শব্দবন্ধ শুধু হাসপাতালে শ্মশানের স্তব্ধতা শ্মশান জুড়ে মিছিলের কোলাহল। হারিয়ে গেছে মুখের ভাষা , মনন সুখ যত গুমরে ফেরে একটি প্রশ্ন - আর কত , আর কত ?

যুদ্ধং শরণং

  যুদ্ধং শরণং - - - - - - - - - আজ ক'দিন থেকেই ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা দেরি হচ্ছে। এর কারণ ঘরের ভেতরের একটা আপাত শান্ত পরিস্থিতি। । সচরাচর এমনটি থাকে না। তবে এখন পরিবেশ বেশ শান্ত - যদিও গুমোট। মাত্র দু' রাত আগেই ছিল বার্ষিক ঝগড়া সপ্তাহের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। জমজমাট অনুষ্ঠান হয়েছে এবারও। এক সপ্তাহ ধরে তুমুল ঝগড়া, বাকবিতণ্ডার শেষে আজ দু'দিন ধরে শান্তির নীরবতা ঘর জুড়ে। প্রতি বছরই আমি নব উদ্যমে লড়াই-এর ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ি। গত বাইশটি বছর ধরে এই চলছে। এর ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু বলতে খারাপ লাগারই কথা যে এখন অবধি এই যুদ্ধে আমি বিজয়ীর হাসিটি হাসতে পারিনি। কী অফুরন্ত দম মাইরি আমার প্রতিপক্ষের। সারাটি বছর মিনিমিনিয়ে কথা বলে আর এই সপ্তাহটির জন্য বোধ করি সব দম জিইয়ে রাখে। শুধু কি আর কথা-অস্ত্রেই যুদ্ধ করে ? মোটেই নয়। নানা রকম লুকোনো অস্ত্রের ভাণ্ডার একেবারে। দিনের পর দিন প্রায় অভুক্ত থাকার এই অদম্য কৌশল কী করে যে আয়ত্ত করে এরা। আমার তো নির্ধারিত সময়ের চাইতে একটি ঘণ্টা পেরোলেই হাসপাতালে যাওয়ার উপক্রম। আর কৌশল করে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরও নিজের আওতায় নিয়ে আসে আগেভাগেই।

দুলাল বাবু ও সাবিত্রী

আজ সকাল সকালই তিনি এলেন। নিজেই এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিয়ে এলাম। প্রতি বছরই তিনি আসেন। বছরে একদিন। ধরাবাঁধা নিয়ম। তিন দিন থাকবেন নিয়ম করে। যে কয়দিন থাকেন - সারা ঘরে কেমন একটা মিঠে আমেজ লেগেই থাকে। বয়স হয়েছে। আগে রঙিন কাপড় জামা পরতেন। এখন সাদা কাপড়। আগে শক্ত সমর্থ টানটান শরীর ছিল।  তর্জনীর চাটিতে টং করে শব্দ হতো। টিপে টিপেও গায়ের চামড়া ঢোকানো যেতো না। এখন বয়সের ভারে থলথলে হয়ে গেছে চামড়া। আঙুলের আঘাতে ভেট ভেট শব্দ হয়। টিপে দিলে ভেতরে ঢুকে যায় বহিরঙ্গ। তবুও নিয়ম করে আসেন। বলেছেন - আপনি যত দিন থাকবেন, আমি আসবো। সব ঠিক আছে। কিন্তু মূল কথা হলো আমি এভাবে প্রতি বছর নিয়ম করে আজকের দিনে তাঁর আসাটা পছন্দ করি না। এমনিতে অন্যদিন আসলে আসুন। কিন্তু আজ নয়। কিন্তু সব কিছু তো আর আমাদের ইচ্ছায় অর্থাৎ কর্তার ইচ্ছায় হয় না। কিছু কিছু কর্ম কর্ত্রীর ইচ্ছায়ও হয়। গত বাইশ বছর ধরে আন্দোলন করেও নড়াতে পারিনি। নরম গরম সব ঔষধই সেরেছি প্রয়োগ করে। কিন্তু পারিনি। তবুও হার মানিনি এখনো। কিন্তু কী করবো ? এখন তো মেয়েটাও আজকের দিন এলে আমার তর্জন গর্জন শুনে মুখ টিপে হাসে আর ওর মা'কে বলে- 'মা, বাবা

গানগুলি মোর - - - - - -

(১) জীবনমুখী গান জীবনটা আমাদের আমরা বাঁচি ভুলিনি তোমাকে বন্ধু পাশেই আছি। আজও আমরা সব একএকই আছি এক প্রাণ এক মন এক সুরে সুর    খুব কাছে হৃদয়ের যত থাকি দূর। আজ বন্ধু তোমার তরে জয়গান রচি ভুলিনি তোমাকে বন্ধু পাশেই আছি। সময়টা এলোমেলো কঠিন জীবন জড়োয়ায় গাঁথা মালা সব দেহ মন। মিলন আশায় আজ কেন আনচান মন দিন রাত একাকার অফুরান ক্ষণ আজ বন্ধু মহামিলনের দিন গুণে আছি ভুলিনি তোমাকে বন্ধু পাশেই আছি।   আজও আমরা সব এক একই আছি ।   (২০১৮ সনে ঊচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠী বন্ধুদের প্রথম মিলনোৎসব উপলক্ষে লিখা গান। গানটিতে সুর ও কণ্ঠ দিয়েছে সহপাঠী বন্ধু তথা নামী কণ্ঠশিল্পী ড. সঞ্জীব কর। পরবর্তীতে বন্ধুদের গ্রুপে এটাকেই স্থায়ী উদ্বোধনী সঙ্গীত রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং বভিন্ন অনুষ্ঠানে সমবেত সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়)।     (২) আগমনি গান সুরে সুরে গানের ভেলায় ভেসে আগমনি সুরে তোমারই গান গাই জননী থেকো না মা আর তো দূরে   শারদ স্নিগ্ধ বেলায় শিউলি সুবাস ছড়ায় ময়ূরী পেখম তুলে শিশিরে ছন্দ মেলায়।   শারদীয়া সুরের ছোঁয়ায় খেলছে গগণ বক্ষ জুড়ে   বালিকা নিপুণ হাতে মালাতে ছন্দ গাঁথে মন্দিরে আজ বাজে সুর স্নিগ্ধ শারদ প্

দেবাশিস দত্তের গবেষণামূলক গ্রন্থ - রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু

উত্তর পূর্বের সাহিত্য পরিমণ্ডলে এক উজ্জ্বল মুখ দেবাশিস দত্ত। সদ্য সমাপ্ত গুয়াহাটি বইমেলায়  প্রকাশিত হয়েছে নাগাল্যাণ্ড রাজ্যের এই একমেবাদ্বিতীয়ম সাহিত্যিকের গবেষণামূলক গ্রন্থ - “রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু”। গ্রন্থ উন্মোচনী সভায় উপস্থিত থাকার সুবাদে স্বয়ং গ্রন্থকারের মুখেই শুনতে পেয়েছি এই গবেষণার পেছনের গরজ এবং পরিশ্রমের কথা। গ্রন্থটি সম্পূর্ণ পড়ার পরে সেই কথাগুলিরই যেন একটি স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া গেল। ইতিমধ্যে লেখকের সম্পাদিত ছোটপত্রিকা ‘পূর্বাদ্রি’র পাতায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছিল এই বিষয়টি। তবে দুই মলাটের মধ্যে এই গবেষণামূলক কাজকে ধরতে পেরে নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের সম্ভারে আরেকটি মুক্তোর সংযোজন ঘটালেন শ্রী দত্ত। প্রকৃতার্থে এক অপ্রচলিত এবং অধরা বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে রবীন্দ্র গবেষণার জগতে আরেকটি নতুন দিগন্তের সূচনা করলেন বললেও অত্যুক্তি হবে না।  গবেষণার স্বার্থে রবীন্দ্র রচনার বিশাল সাগর থেকে অত্যন্ত সীমিত পরিসরের একটি বিষয়কে পছন্দ করার সপক্ষে লেখক লিখছেন - ‘এক মানবিক জীবনমুখী বাস্তবতায় মৃত্যু তার স্বরূপ উন্মোচন করেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে। - - -  রবীন্দ্রসাহিত্যের অনেকটা এলাক