Skip to main content

দেবাশিস দত্তের গবেষণামূলক গ্রন্থ - রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু


উত্তর পূর্বের সাহিত্য পরিমণ্ডলে এক উজ্জ্বল মুখ দেবাশিস দত্ত। সদ্য সমাপ্ত গুয়াহাটি বইমেলায়  প্রকাশিত হয়েছে নাগাল্যাণ্ড রাজ্যের এই একমেবাদ্বিতীয়ম সাহিত্যিকের গবেষণামূলক গ্রন্থ - “রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু”। গ্রন্থ উন্মোচনী সভায় উপস্থিত থাকার সুবাদে স্বয়ং গ্রন্থকারের মুখেই শুনতে পেয়েছি এই গবেষণার পেছনের গরজ এবং পরিশ্রমের কথা। গ্রন্থটি সম্পূর্ণ পড়ার পরে সেই কথাগুলিরই যেন একটি স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া গেল। ইতিমধ্যে লেখকের সম্পাদিত ছোটপত্রিকা ‘পূর্বাদ্রি’র পাতায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছিল এই বিষয়টি। তবে দুই মলাটের মধ্যে এই গবেষণামূলক কাজকে ধরতে পেরে নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের সম্ভারে আরেকটি মুক্তোর সংযোজন ঘটালেন শ্রী দত্ত। প্রকৃতার্থে এক অপ্রচলিত এবং অধরা বিষয়ের অবতারণার মাধ্যমে রবীন্দ্র গবেষণার জগতে আরেকটি নতুন দিগন্তের সূচনা করলেন বললেও অত্যুক্তি হবে না। 

গবেষণার স্বার্থে রবীন্দ্র রচনার বিশাল সাগর থেকে অত্যন্ত সীমিত পরিসরের একটি বিষয়কে পছন্দ করার সপক্ষে লেখক লিখছেন - ‘এক মানবিক জীবনমুখী বাস্তবতায় মৃত্যু তার স্বরূপ উন্মোচন করেছে রবীন্দ্রসাহিত্যে। - - -  রবীন্দ্রসাহিত্যের অনেকটা এলাকা জুড়ে বিভিন্ন ভাবে মৃত্যু এসে ধরা দিয়েছে বারবার। এ বিষয়ে গ্রন্থ রচনা নগণ্য হলেও কবিতা, সঙ্গীত বা অন্যান্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘মৃত্যু’র উপর বহু মূল্যবান আলোচনা হয়েছে। সচেতন ভাবে কবিতা, সঙ্গীত ইত্যাদির মধ্যে মৃত্যুর স্বরূপ সম্বন্ধীয় আলোচনা থেকে আমরা বিরত রয়েছি। শুধু গদ্য সাহিত্য থেকে মৃত্যু সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের অনুভূতি কী ছিল সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য রবীন্দ্রনাথের সাহায্য আমরা নিয়েছি। আমাদের আলোচনার লক্ষ্যস্থল - রবীন্দ্রনাথের নাটকে মৃত্যু কীভাবে ধরা দিয়েছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা। রবীন্দ্রনাথের নাটকে যে মৃত্যুর সাথে আমাদের পরিচিতি ঘটেছে সেখানেই আমরা দেখতে পাব রবীন্দ্রনাথের বাস্তব প্রতিফলন। কবিতা, সঙ্গীত বা গদ্যে এ প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন নাটকে যেন আরো বেশি প্রত্যক্ষ, আরো বেশি অর্থবহ হয়ে উঠেছে। দ্বন্দের মধ্য দিয়ে যেহেতু নাটকের বিস্তৃতি, মৃত্যু তাই রবীন্দ্রনাথের নাটকে এক দ্বান্দিক শক্তি রূপে প্রকাশিত। - - -  জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে এই দ্বন্দ প্রকাশ পেয়েছে বড় সুন্দর ও অর্থপূর্ণভাবে’।

গ্রন্থের শুরুতেই চমৎকার একটি ভূমিকার মাধ্যমে গ্রন্থের খেই ধরিয়ে দিয়েছেন সাহিত্যব্রতী বিকাশ সরকার। আজকের কঠোর বাস্তব মুহূর্তের প্রাসঙ্গিক পরিপ্রেক্ষিতে ‘কোথাও কোনও ভয় নেই, ভালোবাসা আছে’ শিরোনামে ভূমিকায় তিনি লিখছেন - ‘অধিকাংশ মানুষই মৃত্যুকে ভয় পায়। মৃত্যু শব্দটি শুনলেই কেমন যেন গা হিম হয়ে আসে, অজানা আশঙ্কায় মন শিহরিত হয়, ভীতিবিহ্বলতা জাগে। - - -  বস্তুতঃ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু চেতনায় শেষাবধি কোথাও কোনও ভয় নেই, বরং অফুরান ভালোবাসা আছে। - - - -  দেবাশিস দত্ত ‘রবীন্দ্রনাটকে মৃত্যু’ বইটিতেও তারই ব্যাখ্যা করেছেন অত্যন্ত গভীরতার সঙ্গে। কবির নাটকগুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ও তজ্জনিত অভিঘাতগুলিকে দেবাশিসবাবু অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে, গভীর অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে খুলে ধরেছেন পরতে পরতে - - - ।‘

ধাপে ধাপে এগিয়েছে রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যুর বিশালতা পরিমাপের প্রচেষ্টা। অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং পারিপাট্যের সঙ্গে মোট আশি পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের প্রথম বারোটি পৃষ্ঠায় সন্নিবিষ্ট হয়েছে মৃত্যু, ট্র্যাজেডি ও শেক্সপিয়ারকে নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা। এর পরেই একে একে রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী, মালিনী, বিসর্জন ও মুক্তধারা নাটকে ক্রমে রঞ্জন, সুপ্রিয়, জয়সিংহ, সুমিত্রা ও অভিজিতের মৃত্যু সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে বিশদের পথে খুবই সন্তর্পণে এগিয়েছেন গ্রন্থকার। রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যুচিন্তার যে নির্যাস তার বিস্তৃত পটভূমিকার স্বার্থে আলোচ্য নাটকসমূহের বিস্তারিত কাহিনির উপস্থাপনা যদিও আংশিক অপরিহার্য ছিল কিন্তু এর মাধ্যমে মূল বিষয়ের চর্চা কিংবা আলোচনায় অহেতুক বিলম্ব ঘটেছে বলে পাঠক মনে দ্বিধার সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়ে গেছে। যদিও এতে পঠনের একাগ্রতা কোনও ভাবেই বিঘ্নিত হয়নি। কারণ ভাষার চমৎকার প্রয়োগ ও আলোচনা ধারার নৈপুণ্যে প্রতিটি বিষয়কে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার এক অনবদ্য প্রয়াস আমরা দেখতে পাই শ্রী দত্তের বর্ণনায়। 

সামগ্রিক ভাবে মৃত্যু এবং রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু এই দুয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনায় লিখন এগিয়েছে আপন ছন্দে। কিন্তু কোথাও যেন মূল উপপাদ্য বিষয়ের অবতারণায় বিলম্ব ঘটেছে যথেষ্ট। মৃত্যুর ব্যাপারটি এসেছে ঘনঘন কিন্তু রবীন্দ্রনাটকে মৃত্যুর বিষয়টি এসেছে তাৎক্ষণিক ভাবে। আশি পৃষ্ঠার গ্রন্থে অনেক জায়গাতেই নাটকে মৃত্যুর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলেও প্রকৃতপক্ষে শেষ তিন পৃষ্ঠায়ই গভীর আলোচনায় রত হয়েছেন গ্রন্থকার। তার আগে - বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ধ্যান ধারণার হদিশ মিলে আলোচনায়। যেমন - (১) রবীন্দ্রনাথের সকল সৃষ্টির অন্তরে গভীর জীবনসত্য ও সৌন্দর্যসৃষ্টির তীব্র প্রেরণা তাঁর সাহিত্যকর্মকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করেছে, তাঁর নাটকে যে মৃত্যুর উপস্থিতি তা সাধারণ মৃত্যু নয়, জীবনচেতনার এক নিগূঢ় সত্যকে তা প্রকাশ করেছে। (২) রবীন্দ্রনাথের নাটকে মৃত্যু যেভাবে সংস্থাপিত হয়েছে, তার সাথে ট্র্যাজেডির কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর নাটকে মৃত্যু কোনও ট্র্যাজিকরসের সৃষ্টি করে না। রবীন্দ্রনাথের নাটকে মৃত্যুর জন্য পূর্বপরিকল্পিত কোনও কাঠামো তৈরি করা হয়নি, নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। (৩) মানুষের ভেতরের অদম্য শক্তি বা জাগরণের কথা রবীন্দ্রসাহিত্যের একটি উজ্জ্বল দিক। নাটকেও তার প্রতিফলন ঘটেছে আরোও অনেক বেশি প্রত্যক্ষভাবে। রবীন্দ্রনাথের এই গভীর চৈতন্যবোধ থেকেই নাটকে সংস্থাপিত হয়েছে মৃত্যু। নাটকে মৃত্যুর মধ্যে তিনি জন্ম দিয়েছেন চিরসত্যের, সাথে আনন্দের। মৃত্যু যে চলার, মুক্তিরই এক রূপ - এ সত্য তাঁর নাটকে প্রতিষ্ঠিত। (৪) এই যে মৃত্যুগুলি রবীন্দ্রনাথের নাটকে আরোপিত হয়েছে, তার সাথে আমাদের পরিচিত মৃত্যুর কোনও সাদৃশ্য নেই। এই মৃত্যু বিশেষ কোনও ভাব বা আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে নাটকে এসেছে, নাটকের গভীরে প্রবেশ করলে এ-প্রত্যয় মনে দৃঢ়মূল হয়। 

এমনি ধারায় বলতে গেলে পুরো গ্রন্থ জুড়ে রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যুর স্বরূপ উদ্ঘাটনে নিমজ্জিত থেকেছেন গ্রন্থকার। পরিশেষে কিছু আত্মোপলব্ধি, কিছু উদ্ঘাটিত সত্যের সমন্বয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার সারসত্যটি লিপিবদ্ধ হয়েছে আপন ব্যাখ্যায়। “বিশালত্বকে লাভ করতে গেলে চিরায়ত সত্য, আনন্দ প্রতিষ্ঠার পেছনে মহান প্রাণের বলিদান অনিবার্য। রবীন্দ্রনাথের নাটকে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই সত্যবাণীর সুর আমরা শুনতে পেয়েছি। জীবনের মহত্তর স্বরূপ বা প্রকাশ প্রতিষ্ঠার জন্যে মহৎ প্রাণের আত্মোৎসর্গের প্রতিফলন রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলির মৃত্যুর মধ্যে প্রতিভাত - চিরায়ত এই সত্য প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল প্রতীক নাটকে সস্লিষ্ট চরিত্রগুলির মৃত্যু। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে এই মৃত্যুর অস্পষ্টতা বা অস্বাভাবিকত্ব কিছু থাকে না, এক সার্থক সৃষ্টির ব্যঞ্জনার সামগ্রিক প্রকাশই নাটকের মৃত্যুগুলির মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। জীবনে বৃহত্তর, মহত্তম কিছু আয়ত্বাধীন করতে হলে জীবনের বিনিময়েই তাকে পাওয়া যাবে, বিরাট ত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই সত্য-আনন্দের সন্ধান বা সান্নিধ্য পাওয়া যাবে - এই বিষয়টি নাটকের মৃত্যুগুলির মধ্য দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের জীবন ও আদর্শ, সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা নাটক - সেই নাটক নিয়ে খানিক আলোচনা, রবীন্দ্রনাথের নাটকের সার্বিক আলোচনা, মৃত্যু তথা রবীন্দ্র সাহিত্যে মৃত্যু এবং পরিশেষে রবীন্দ্র নাটকে মৃত্যু - এই নিয়ে সমগ্র গ্রন্থটিকে একটি কার্যকারণ সূত্রে বেঁধে রাখার প্রয়াসে গ্রন্থকার উদ্যমী হয়েছেন যদিও মাঝে মাঝেই বর্তমান কালে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতকে আপন মতাদর্শে বিশ্লেষণ করে পাঠক মহলে তুলে ধরেছেন। ফলে মূল বিষয়টি থেকে খানিকটা প্রসঙ্গচ্যুতি ঘটেছে বলে পাঠক মনে একটি ধারণার সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য যে বিষয়টি তার বিশালতা গভীর। সেখানে এই আরোপিত বিশ্লেষণটি যথাযোগ্য মানানসই হয়নি কোনওভাবেই। বর্ষীয়ান সাহিত্যিক অনায়াসেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারতেন। বস্তুতঃ এ নিয়ে আলাদা একটি গ্রন্থ রচনায় লেখক অনায়াসে উদ্যোগী হতে পারতেন।  

অন্যথায়, এভাবেই সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে রবীন্দ্র নাটকে প্রথম বারের মতো মৃত্যুকে অবলোকন করে তার স্বরূপ উদ্ঘাটনের প্রয়াস করেছেন দেবাশিস দত্ত। নিঃসন্দেহে এ এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস। এ প্রয়াসের, এ স্বরূপ উদ্ঘাটনের যথাযথ মূল্যায়ন দরকার। এ আমাদের অত্যন্ত গর্বের বিষয়। যে কাজটি বৃহৎ বঙ্গের আওতায় ধরা দেয়নি আজো সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন আমাদেরই অতি কাছের এক সাহিত্যিক। এ নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে আত্মসম্মানের  পরিচায়ক। 

পূর্বাদ্রি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থের মূল বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচ্ছদ পরিকল্পনা করেছেন শ্রী বিকাশ সরকার। ১, ২ আদি নম্বরের মাধ্যমে প্রসঙ্গসমূহকে চিহ্নায়িত করার ক্ষেত্রে কিছু ভুলের বাইরে বানান ভুল নিতান্তই নগণ্য বলা যায়। ছাপা ও অক্ষর বিন্যাস চমৎকার।

সহধর্মিণীর অকাল মৃত্যু গ্রন্থকারকে নাড়া দিয়ে গেছে মর্মান্তিক ভাবে। তারই সূত্র ধরে উৎসর্গে তিনি লিখেছেন - অকালপ্রয়াতা কল্যাণী দত্ত - আমার মেঘকন্যার উদ্দেশ্যে। “তোমার স্পন্দিত দেহ ছাই হয়ে মিশে আছে মাটির প্রতিটি কণায়, মাটির স্পর্শ থেকে তোমার গন্ধ আসে এ ঘরের কোনায় কোনায়।”


“রবীন্দ্রনাটকে মৃত্যু”

মূল্য - ১৫০ টাকা

যোগাযোগ - ৯৩৬৬৪৭৯৯৬১

- - - - - - - - - - - -

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়