Skip to main content

Posts

Showing posts from July, 2023

‘হৃদিকথা’ - এক সাহিত্য উৎসব

‘হৃদয়নন্দন বনে নিভৃত এ নিকেতনে এসো হে আনন্দময়, এসো চিরসুন্দর...।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ হৃদয়কে একাধারে নন্দনবনের সঙ্গে এবং নিভৃত নিকেতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আর নিভৃত নিকেতনেই যে হৃদয়ের কথা উথালপাথাল আবেগে ছুটে বেড়ায় দিগদিগন্ত সে কথা তো সর্বজনবিদিত। এ পৃথিবীতে কতজনের যে হৃদয়ের কত কথা অহরহ জমা হতে থাকে মহাকালের মহাফেজখানায় তার কি আর লেখাজোখা আছে ? সেইসব হৃদয়ের অফুরান কথামালা, সেইসব হৃদিকথার সাজানো কোলাজই হল ‘হৃদিকথা’, লিখিত সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে যার সংরক্ষণ সম্ভব। সম্প্রতি কলকাতা/শিলচর থেকে প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য পত্রিকা (পত্রিকা না বলে একে গ্রন্থ বলেই আখ্যায়িত করা যায় অনায়াসে) ‘হৃদিকথা’র দ্বিতীয় সংখ্যা। অতি সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় ‘আমাদের কথকতা’ শিরোনামে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন দুই সম্পাদক শর্মি দে ও মীরা পাল। লিখছেন - ‘হৃদিকথা যেন হৃদয়ে খোদাই করা এক শিল্পের চরম নিদর্শন। সকল সৃষ্টির পিছনে মানুষের আবেগময় মনের তাড়নাই কাজ করে যা এক শাশ্বত সত্য। মানুষ যুগ যুগ ধরে তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছে তার হৃদয়ের কথা। তাই ‘লিখনদ্বীপে আমরা আমরণ নির্বাসিত এক পবিত্র অপরাধী’। সেই দণ্ডিত সমাজে বিনিময় হোক

গল্পবাগানের বুলবুল 'পাখি সব করে রব'

লিখেছিলেন কোনও এক অজ্ঞাত কবি - ‘আমি গাছপাখি হব পরজনমে’। পাখিজীবন নিয়ে মানুষের ভাবনার বিরাম নেই কদাপি। আপাত ভাবনায় পাখিজীবন সুখের জীবন। যথেচ্ছ উড়ে যাওয়ার স্বাধীনতা যে আছে! পৃথিবীর বুকে যত দিন প্রকৃতি আছে, গাছগাছালি আছে - খাদ্য কিংবা বাসস্থানের অভাব নেই। ‘তার মতো সুখ কোথাও কি আছে’ ? এমন বিন্দাস সুখী জীবনের হাতছানিতেই তো মানুষ ছুটে বেড়ায় আজীবন।  কিন্তু আদপেই কি তা ? পাখিরা কি সত্যিই সুখী ? ‘পাখির চোখ’-এ কেমন রূপ ধরা পড়ে এ পৃথিবীর ? পাখিদের মন জুড়ে কোন ভাবনা খেলে বেড়ায় নিয়ত ? সবই অজানা। আসলে, গ্রন্থের ভূমিকা শেষে - ‘পাখিদের সম্পর্কে আমরা আর কতটুকু জানি’ - বলতে গেলে এই ট্যাগলাইনটিই আলোচ্য গ্রন্থের নির্যাস। কমল বসু লিখিত গল্প সংকলন ‘পাখি সব করে রব’। বিখ্যাত কবিতার  পঙ্ক্তি থেকে নেওয়া এবং স্বভাবতই গ্রন্থের বিষয়ের সঙ্গে আগাপাশতলা প্রাসঙ্গিক।  ১২৭ পৃষ্ঠার গ্রন্থের ১১৭ পৃষ্ঠা জুড়ে মোট ২০টি গল্পের সমাহার। আড়াই থেকে এগারো পৃষ্ঠা জোড়া গল্পগুলির সঙ্গে রয়েছে প্রাসঙ্গিক রেখাচিত্র যা পঠনক্রিয়ায় যুক্ত করেছে আলাদা পঠনসুখ। আমাদের চেনা জানা পরিমণ্ডলের সতত চোখে দেখা পাখিদের নিয়ে লিখা গল্পগুলোতে লুকিয়ে রয়েছে

বিষয় ভাবনার আধারে কাব্যগ্রন্থ 'ঈশান বাংলা'

কবি, লেখকের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। প্রথম প্রেমের মতোই এর আকর্ষণ, দোলাচল। হৃদমাঝারে প্রথম সন্তান লাভের মতোই টগবগে উত্তেজনা। প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তির শঙ্কা, সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে এক দুরন্ত পরিঘটনা।  ‘ঈশান বাংলা’ কবি বিপ্লব গোস্বামীর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। গ্রাম বরাকের প্রত্যন্ত জনপদে বসে নিরলস কাব্যসাধনায় রত এই কবি আজ উপত্যকায় এক পরিচিত নাম। ৬৪ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মোট ৫৬ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে সমসংখ্যক কবিতা। একটির বাইরে সব ক’টি কবিতা ছন্দে লিখা। অন্ত্যমিল ছন্দ। বলাই বাহুল্য কবিদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অমন হয়। আসলে ছন্দই তো মানুষের মনকে কবিতার প্রতি আকর্ষিত করে। তাই কবিতা মানেই ছন্দ - এমন একটা প্রাথমিক ধারণা গড়ে ওঠে সুপ্ত মননে।  বিপ্লবের কবিতায় কাব্য সুষমা কিংবা কাব্যময়তার চেয়ে বিষয় বৈচিত্র্যের পাল্লা ভারী। কল্পনাকে ছাপিয়ে গেছে বাস্তবের জীবনযাত্রা। তাই বর্ষবরণ থেকে শুরু করে উৎসবাদি, মহান ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়া এসব অনুষঙ্গই প্রকট হয়েছে স্বাভাবিক কারণেই। মাতৃভাষা, মাতৃভূমির প্রতি কবির দুর্নিবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাঙময় হয়ে উঠেছে বহু কবি

ছড়া ও ছবির অনবদ্য সমাহার ‘হিজিবিজি ছবি নড়বড়ে কবি’

বৈচিত্র্য , অবিনবত্ব ও নব নব উদ্ভাবনী চিন্তাধারা নিয়ে শিশু সাহিত্যের আঙিনায় এ অঞ্চলে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সাহিত্যিক প্রাণকৃষ্ণ কর । শিশুমনে ছবির আকর্ষণ চিরন্তন । ‘ খোকা ঘুমালো , পাড়া জুড়ালো ’ র যুগ এখন অতিক্রান্ত । মাতৃভাষায় পঠনপাঠনই যেখানে স্তিমিত হওয়ার পথে সেখানে ছড়া শেখা , বলা কিংবা শেখানোর প্রচেষ্টা আজকের দিনে নিতান্তই কপোলকল্পিত আশার বাইরে আর কিছুই নয় । খোকারা এখন পাড়ার কাউকেই চেনে না। খোকারা ঘুমোতে গেলেও পড়াশোনার একগাদা চাপ মাথায় নিয়েই ঘুমোয়।   অগত্যা করার কী আছে ? খোকাদের জন্য কি রোবট জীবন সদৃশ গড্ডলিকা প্রবাহের বাইরে বড়োদের দেওয়ার মতো কিছুই নেই ? এ চিন্তা কিংবা চর্চা কাউকেই তেমন করতে দেখা যায় না । প্রাণকৃষ্ণ কর করেন । আর করেন বলেই তিনি ব্যতিক্রমী, তাঁর চিন্তাচর্চায় নিত্য নতুন কল্পনা এসে ধরা দেয় । শিশুমনের উপযোগী সাহিত্য রচনায় তাই তিনি অহোপুরুষার্থ করছেন দীর্ঘ দিন ধরে । তারই ফলস্বরূপ তাঁর মননে উঠে এসেছে যে ধারণা সেই ধারণা থেকেই তিনি মনোনিবেশ করেছেন শিশুমনের চিরন্তন আকর্ষণ ছবির মাধ্যমে শিশুপঠনোপযোগী সাহিত্য রচনায় । এই লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রকাশিত হল তাঁর সচিত্র ছড়াগ্রন্থ

আটপৌরে অবয়বে নান্দনিক - ‘সম্পর্ক’

‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। জীব ও জড়ের প্রকৃত সৌন্দর্য বাহ্যিক আড়ম্বর অবিহনেই প্রগাঢ় রূপে পরিস্ফুট হয়। সম্প্রতি বিত্তবান মানুষের বিলাসী জীবনযাপনে বাহ্যিক প্রসাধনের বিশ্বময় বাজার ও প্রতিযোগিতা। তবে এতে করে কতটা বর্ধিত হয় দৈহিক সৌন্দর্য তা বলার ক্ষমতা রাখে একমাত্র দ্রষ্টার চোখ। কিন্তু বলাবলির সূত্র ধরে কিংবা লেখালেখির দৌলতে এটাই প্রতীয়মান যে বিধাতার প্রদেয় সৌন্দর্য বিনা প্রসাধনেই অধিক শোভন। ‘সম্পর্ক’ - বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর লংকা শাখার মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা। সম্প্রতি গত মার্চে প্রকাশিত হয়েছে এর প্রথম সংখ্যা। অবয়বের দিকে ছিমছাম আটপৌরে হলেও ভাবনাচিন্তায়, বিষয় বৈচিত্র্যে অভিনব নিঃসন্দেহে। মোট ৪৪ পৃষ্ঠার সাদাকালো এই পত্রিকা আলোচনার টেবিলে উঠে আসে উপর্যুক্ত গুণাবলির সূত্র ধরেই। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলি ওলটালেই ধরা পড়ে সম্পাদকীয় গরজ ও যত্নের ছাপ। এ অঞ্চলের সাহিত্য চর্চার হাল হকিকত নিয়ে যত্নবান সম্পাদক তাঁর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের শুরুতেই অনেকটা খোলামেলা - ‘গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটি এখনও সর্বসমক্ষে পুরোপুরি উঠে আসতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে ক

অতিক্রান্ত কালের ক্যানভাসে ‘দেশভাগের নতুন কবিতা’

উপমহাদেশের গত একশো বছরের ইতিহাসে সব থেকে বড় ঘটনা দেশভাগ। পর্যায়ক্রমে একটি দেশের তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার এই ঘটনার কার্যকারণ যেমন বহুধাবিভক্ত তেমনি এর প্রভাবও সুদূরপ্রসারী। এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দেশ ও অগণিত দেশবাসীর জীবনে নেমে আসা পরিবর্তনের ফল সংগত কারণেই ভোগ করতে হয় একাধিক প্রজন্মকে। মননে, শিল্পে, সাহিত্যে তাই প্রত্যক্ষে এর রেশ চলতে থাকে পরবর্তী আরোও একশো বছর এবং পরোক্ষে হয়ত অনন্ত কালাবধি। দেশভাগের উপর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের ধারা স্বভাবতই বয়ে চলেছে আজও। এই ধারায় নতুন সংযোজন কবি আশিস হীরা সম্পাদিত কাব্য সংকলন ‘দেশভাগের নতুন কবিতা’। মোট ১২২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের ১১২ পৃষ্ঠা জুড়ে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ১০৬টি ‘নতুন’ ( অপ্রকাশিত ) কবিতা। শতাধিক সমকালিক কবির নতুন করে লিখা কবিতার সম্ভার এই সংকলন। প্রথম ব্লার্বে সম্পাদকের ভাষ্যে লিপিবদ্ধ হয়েছে সংকলন প্রকাশের উদ্দেশ্য - ‘সাতচল্লিশ পরবর্তী সাত দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত। খণ্ডিত দেশকে সামনে রেখে বাংলা কথাসাহিত্য যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তার তুলনায় কাব্যসাহিত্যের প্রকাশ ঢের কম। এই অভাব সামান্য হলেও পূরণের লক্ষ্যে শতকবির শত কলমের দে

সুপাঠ্য এবং সহজপাঠ্য গল্প সংকলন ‘পুতুলঘর’

আমাদের সাহিত্য ভুবনে কবিতার যত বই প্রকাশিত হয় তার অনেক কম বই প্রকাশিত হতে দেখা যায় গল্পের । উপন্যাস কিংবা প্রবন্ধ সংকলন আরোও কম । একই ধারায় চিহ্নায়িত করা যায় পাঠককুলকেও । কবিতার তুলনায় গল্প উপন্যাসের পাঠক সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য বলেও অভিহিত করা যায় নিঃসন্দেহে । সেই হিসেবে গল্পকারদের গল্প লিখনের এই শ্রমসাধ্য প্রয়াস তার যথাযথ মূল্য পায় না । কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁদের চাইতে পাঠকেরই কিন্তু আখেরে ক্ষতি । কারণ দেখা যায় যে তুলনামূলকভাবে গল্পকারদের সুদূরপ্রসারী চিন্তাপ্রসূত গল্পগুলি সাধারণ পাঠকের মনকে দোলায়িত করতে সক্ষম কবিতার চাইতেও বেশি । মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম - এর সদ্যপ্রকাশিত গল্প সংকলন ‘ পুতুলঘর ’ এমনই একটি গ্রন্থ যার মধ্যে রয়েছে অনতিদীর্ঘ ১৭ টি গল্প যা নিশ্চিতভাবে পাঠকের মনোজগতে ভাবনার আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম । গুয়াহাটির ভিকি কনিউনিকেশন অ্যান্ড অয়াসোসিয়েটস থেকে প্রকাশিত ৮৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির ৭৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে মোট ১৭ টি ছোটগল্প। প্রতিটি গল্পই ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পারিপার্শ্বিক সমাজের বিচিত্র সব ঘটনাক্রম ও চিন্তাধারার নির্মোহ বিশ্লেষণের ফসল। পাঠক কিংবা সমাজের সাধারণ মানুষের চোখ

মাটি, মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলোডাঙার চাষা’

ধারাপাত থেকে মেলে ধরা ডানা ধারা বুনেই এগিয়ে যায় ডগা বেয়ে সিঁড়ি ধাপ বুকের ভেতর মা মাটি এবং অদৃশ্য খনিজস্রোত।   আকাশ মাটির সাথে জুড়ে আছে গাছ শূন্য ঘরের অঙ্কুরিত সুর বহু দূর থেকে উড়ে আসে পাখি বাতাস এলে বেশি দোল খেতে নেই   গাছে পোকা এলেই বদলে যায় ফসলের সমীকরণ। (কবিতা - কবিশস্য) এভাবেই শুরু হয় কবিতার পথ চলা। অন্তরের অন্দরমহল থেকে ভেসে আসা উৎকণ্ঠা, গরজ আর বাঙময় কাব্যধারার সুরেলা নহবত। কবি অভীককুমার দে’র ৪০ টি কবিতার সংকলন ‘ধুলোডাঙার চাষা’। গ্রন্থসংখ্যা কিংবা কবিতার সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না কবিকে। অভীক মানেই কাব্যের বহমান জগতে এক অবিচল প্রবহমানতার নাম। কবি আদ্যোপান্ত কবিতার চাদরে ঢাকা এক জীবন্ত পথিক। তাঁর মুখের কথায়, তাঁর কলমের ডগায় কবিতার জন্ম হয় স্বতঃস্ফুর্ত ধারায়। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে ব্যঞ্জনায়, কাব্যময়তায়। এখানে দু’কুড়ি কবিতার কাটাছেঁড়ায় যে সারসত্যটি বেরিয়ে আসে তা হল কবি মনের অভ্যন্তরে জমে থাকা এক কঠিন, অশুভ সময়ের ভ্রান্ত, বেপথু সমাজের ভুল পথে পা বাড়ানোর বিরুদ্ধে এক বুক উৎকণ্ঠা। এবং তার বিরুদ্ধে সজাগতার আহ্বান। অথচ কী অপূর্ব ব্যঞ্জনায়, রূপকে তা তুলে ধরেছেন কাব্যরসের অনাবিল মোড়

‘সুদূরের ডাকে’ - অনুভবী পথ চলা

‘ বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি ?’ আপন চোখের বাইরে এই পৃথিবীর রং , রূপ , রস , গন্ধ পেতে আপামর মানবজাতি সততই পিয়াসি । বাদ যাননি কবিগুরুও - ‘ আমি চঞ্চল হে , আমি সুদূরের পিয়াসি …’ । এই রূপের টানে সাধ্য অনুযায়ী ঘুরে বেড়ানোর এবং পর্বশেষে ‘ ফিরে দেখা ’ র মানসে গোটা ভ্রমণপর্বকে লিপিবদ্ধ করার আবহমানকাল ধরে চলে আসা যে প্রয়াস সেই প্রয়াসেই এ যাবৎ সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক কালজয়ী ভ্রমণ সাহিত্য । বহু লেখক , পরিব্রাজক শুধু এই ভ্রমণ সাহিত্যের হাত ধরেই সগৌরবে জায়গা করে নিয়েছেন কালজয়ী সাহিত্যের পৃষ্ঠায় , পাঠকের মন মানসে । ভ্রমণ কাছে হোক কিংবা দূরে , স্ব্বল্পকালীন হোক কিংবা দীর্ঘমেয়াদি , দেখার চোখ আর লিখার হাত পরিপাটি হলে ‘ ফিরে দেখা ’ টি যে হয়ে উঠে চমৎকারিত্বে ভরপুর তার অজস্র নিদর্শন আমাদের হাতের কাছে সতত মজুদ । আমাদের নিজস্ব পারিপার্শ্বেও তার অভাব হবে কেন ? সম্প্রতি এমনই এক ভ্রমণ বিষয়ক রচনার সংকলন প্রকাশিত হয়েছে যেটি লিখেছেন উজান অসমের বাসিন্দা তথা বিশিষ্ট চিত্রকর ও কবি, প্রাবন্ধিক পার্থসারথি দত্ত। গ্রন্থনাম ‘সুদূরের ডাকে’। এই গ্রন্থে যেমন রয়েছে ভারতের দূরদূরান্তের কিছু জায়গার ভ্রমণ বৃত্তান্ত তে

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

মৌন বিষাদে ছিটিয়ে দিই এক আঁজলা রোদ্দুর…

পার্থিব জীবনধারণে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কই সম্ভবত একমাত্র সম্পদ যা মানুষকে বেঁধে রাখে এমন এক অদৃশ্য বন্ধনে যেখান থেকে সৃষ্টি হয় বেঁচে থাকার তাগিদ , খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের অর্থ । অন্যথা জীবন হয়ে উঠত নিতান্তই এক অনর্থ । সম্পর্ক কি আবশ্যিকভাবেই বেঁধে রাখে কোনও দৃশ্য বা অদৃশ্য সুতো ? হয়তো রাখে , তবু হয়তো রাখে না । এই দোলাচলের নির্মোহ বিশ্লেষণ একজন কবির চেয়ে ভালো আর কে - ই বা করতে পারেন ? কবি বিশ্বজিত নাগ তাঁর ‘ বিনি সুতোর সম্পর্ক ’ কাব্যগ্রন্থে প্রথম থেকে শেষ অবধি ব্রতী হয়েছেন এমনই এক তত্ত্বতলাশে । জীবনচর্চায় সম্পর্কের আগাপাশতলা লিপিবদ্ধ করেছেন শব্দের মোহময়তায় । চলার পথে আহৃত অভিজ্ঞতার সূত্রে কবি তাঁর হৃদয় দিয়ে যা কিছু অনুধাবন করেছেন , ঋদ্ধ জীবনপথের শেষার্ধে এসে পাখির চোখ করেছেন বিচিত্র সব সম্পর্ক আর সম্পর্কের অমোঘ , অনর্নিহিত গরজকে । তাই তিনি লিখেন - বিনিসুতোর সম্পর্কগুলো দীর্ঘ হতে হতে / একসময় মহিরুহ হয় অজান্তেই …… সম্পর্কের সূত্রকে তাই স্তবক জুড়ে ধরে রাখতে উৎসাহী কবি - ‘ এসো বৃক্ষ হই , সাজাই বসুন্ধরা / এলোমেলো আবাসিক জীবন ছুঁয়ে উড়ুক বাতাস / বিবর্ণ ইচ্ছের ঝরা পাতাগুলো