Skip to main content

Posts

Showing posts from November, 2022

ডিমাহাসাও সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের শারদ সম্ভার - ‘মৈত্রী’

এ রাজ্যের বরাক ও ব্রহ্মপুত্র - এই দুই উপত্যকাকে ভৌগোলিক সূত্রে দুই স্বতন্ত্র ভূখণ্ডে জুড়ে রেখেছে যে অপরূপা বড়াইল সেখানেই পাহাড়ের গায়ে গায়ে ফুটে শরতের প্রথম কাশফুল । রাজ্যের একমাত্র শৈল শহর হাফলং ডিমা হাসাও জেলার প্রাণকেন্দ্র । দুই প্রান্তকে মৈত্রীর বন্ধনে জুড়ে রাখে নিরন্তর । আর এখান থেকেই প্রকাশিত হয় শারদীয় ‘ মৈত্রী ’ । বাংলা এবং অসমিয়া দুই ভাষায় প্রকাশিত শারদীয় সম্ভার । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ মৈত্রী ’ র পঞ্চম বর্ষ - শারদ সংখ্যা ২০২২ - ১৪২৯ বাংলা । পরিবেশনায় ডিমাহাসাও সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ , হাফলং । সম্পাদক - পঙ্কজকুমার দেব । সহযোগিতায় রজতকান্তি নাথ ও নারায়ণ চক্রবর্তী। গদ্যে, পদ্যে বিশাল এক সম্ভার। পদ্য বিভাগটি আলাদা করে রাখা হলেও গদ্য বিভাগ সুবিন্যস্ত নয়। তাই যেমন খুশি এসেছে একের পর এক - গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, অণুগল্প, স্মৃতিকথা, মুক্ত গদ্য, অনুবাদ সাহিত্য - সবকিছু। সূচিপত্রেও তার উল্লেখ নেই। তাই পাঠককে পড়েই বুঝতে হবে। ১০২ পৃষ্ঠার ঢাউস পত্রিকাটির চমৎকার প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ প্রথমেই নজর কেড়ে নেয় পাঠকের। সৌজন্যে নরনজ্যোতি শর্মা। প্রকৃতি, শরৎ , মৈত্রী ও ‘ মৈত্রী ’ নিয়ে প

একা চাঁদ

শীতকাতুরে রাতের যাবতীয় নৈঃশব্দ্য ভেঙে মাঝে মাঝেই কে যেন ডাক দিয়ে যায় , এ আকুল আহ্বান আধো অচেতন দেহে অতীত খুঁড়ে খুঁড়ে আনে যত বিলুপ্ত আলাপন তিন কাল মিলে উত্তাল আলোড়ন । বারান্দা জুড়ে চাঁদের মায়াবী আলো ছড়িয়ে যায় একরাশ ভীত বিহ্বল বেদন । পূর্ণিমা রাতের আলোক মাড়িয়ে উঠে আসে নতুন সুখ , অগুনতি সব চাঁদপানা মুখ । আজো কেউ চাঁদ হয়ে জোছনা ছড়ায় গায়ে কেউ হারিয়ে গেছে কাশবন আর বাঁশবনের ফাঁকে কেউ সরে গেছে শত যোজন দূরে কলঙ্ক কথার দায়ভার বয়ে বয়ে। আজো কেউ উদ্ভাসিত আলোয় পথ দেখায় আঁধার রাতে, আশার পথে।   আজও এক চাঁদ নীরব অভিমানে আকাশ জুড়ে আলো করে রয় অনাদি অনন্ত পথে প্রজঙ্ক থেকে প্রজন্ম জুড়ে স্মৃতির পসরা নিয়ে জীবন সরণি জুড়ে শেষ পারাণির কড়ি হয়ে।

নিরালা দুপুর

এমনি এক নিরালা দুপুর আমার বড় প্রিয় যাপন। ঘর থেকে বলে কয়ে একলা একা জাগতিক সব ভাবনা থেকে দূরে জগৎটাকে দেখা - বাউন্ডুলে ভবঘুরে। চওড়া পথের পাশে সারি সারি তরুবান্ধবীদের নিবিড় ছায়ায় এক পশলা আত্মগোপন কী যে মধুর যাপন। ছুটে যাক মনতরণী যেদিক খুশি মরুকগে সব মনখারাপের উচাটন কী যে এক স্নিগ্ধ যাপন। এখানে ঘনিয়ে আসে ছায়ারা সব বৃক্ষ-তরু গুল্ম লতায় - মন্দ ধীরে , এখানে দুষ্টু রোদের মিষ্টি কুটকচালি বনানীর ফাঁকফোকরে। চলে যায় পথিক যত পথ মাড়িয়ে শিশুদের কলকল কথার মাতন ঢলে যায় অধীর বেলা নিক্তি ধরে আহা এ কেমন অবাক যাপন। নেই পিছুটান , শপথ কথার গরজ এখানে যেমন খুশি হারিয়ে যাওয়া সহজ এখানে মন্দ পবনে কবিতার ওড়াওড়ি যেমন খুশি হাতের মুঠোয় ধরি খুলে দিই মন বাতায়ন ভুলে যাই জীবন খাতার জটিল রসায়ন বিশ্বজোড়া তত্ত্ব কথার বাঁধন। এখানে হৃদয় জুড়ে আত্ম আলাপন এক লাবণ্যপ্রাণ মাতন আহা কী মিষ্টি সুখের যাপন।

উত্তর পূর্ব বিশেষ সংখ্যা রূপে প্রকাশিত - সম্ভাব্য শেষ সংখ্যা ‘পূর্বাদ্রি’

উত্তরপূর্বে যে ক ’ টি ছোট পত্রিকা ধারে ও ভারে নিজস্ব প্রতিষ্ঠা অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়ে আসছে , ‘ পূর্বাদ্রি ’ তাদের মধ্যে অন্যতম । অন্য আরও পাঁচটি পত্রিকার তুলনায় পূর্বাদ্রির আছে এক আলাদা বিশেষত্বও । ধারাবাহিকতায় ও উৎকৃষ্টতায় পূর্বাদ্রি আগাগোড়া স্বতন্ত্র । তবে এটাই পূর্বাদ্রির শেষ কথা নয় । নয় মূল কথাও । পূর্বাদ্রির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তার অন্য এক বিশেষত্ব । নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যের বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রের কঠিন জমিতে পূর্বাদ্রি নিয়মিত জুগিয়ে আসছে উর্বরতা , ফলিয়ে আসছে সোনার ফসল । আর এর নেপথ্য কারিগর হলেন এই উত্তর পূর্বের অন্যতম বলিষ্ঠ লেখক , সাহিত্যিক , সম্পাদক দেবাশিস দত্ত । তাঁর মেধাসম্বলিত সাহিত্যকৃতি শুধু উত্তর পূর্বেই সীমাবদ্ধ নয় , ছাড়িয়ে গেছে এই ভৌগোলিক পরিসরের সীমানাও । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘ পূর্বাদ্রি ’ র বিশেষ উত্তর - পূর্ব সংকলন ১৪২৯ । প্রকাশের কাজ যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখনই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত অমৃতলোকে পাড়ি জমালেন কৃতী সাহিত্যব্রতী, সম্পাদক দেবাশিস দত্ত । এমনকি সম্পাদকীয়টুকুও লিখে যেতে পারলেন না । পূর্বাদ্রি প্রকাশে তাঁর দীর্ঘ দিনের সঙ্গ

ক্ষুদ্র পরিসরে বৃহৎ আয়োজন - শারদীয় ‘শতরূপা’

বিশ্বকবির ‘ কণিকা ’ য় ক্ষুদ্রের ব্যাপ্তি , ক্ষুদ্রের বিশিষ্টতা , তার উৎকৃষ্টতা , দায়বদ্ধতার অনাবিল রূপ খুঁজে পাওয়া যায় প্রবল ভাবে - ‘ প্রাচীরের গায়ে এক নামগোত্রহীন ফুটিয়াছে ছোটো ফুল অতিশয় দীন । ধিক্ ‌- ধিক্ ‌ করে তারে কাননে সবাই সূর্য উঠি বলে তারে , ভালো আছ ভাই ?’ আপন সৌন্দর্যে , গরিমায় , বৈভবে তাই ক্ষুদ্রও মহতের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য । একই কথা হুবহু মিলে যায় মধ্য অসমের ক্ষুদ্র শহর লংকা থেকে সদ্য প্রকাশিত ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘শতরূপা’র শারদীয় সংখ্যার ক্ষেত্রে। সার্বিক ত্রয়োদশ সংখ্যা ১৪২৯ বাংলা । A5 মাপের ন্যূনতম ম্যাগাজিন সাইজে মাত্র ৪৮ পৃষ্ঠার একটি শারদীয় সংখ্যা । অথচ প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ভেতরের লেখালেখির গুণগত মাপে ‘ মহৎ ’- এর দৃষ্টি আকর্ষণে একশো ভাগ সফল এই সংখ্যা । সৌজন্যে কবি , সাহিত্যিক মনোজ কান্তি ধরের যত্নশীল , রুচিশীল সম্পাদনা । ‘ শতরূপা ’ সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠেছে অপরূপা । প্রথম পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়র পর অপর পৃষ্ঠা থেকেই শুরু হয়ে গেছে লেখালেখির সম্ভার । অতিমারি , অতিবৃষ্টির উল্লেখে উঠে এসেছে শিলচর শহরের সাম্প্রতিক বন্যার কথাও । একেই বলে প্রাণের টান । ‘ মান

‘বরাক নন্দিনী’র ২২তম কৃষ্ণচূড়া উৎসব সংখ্যা - ২০২২ প্রকাশিত

বার্ষিক পত্রিকা । স্বভাবতই গায়ে গতরে ডাগর হওয়া বাঞ্ছনীয় । এবং হয়েছেও তাই । A4 সাইজের ঢাউস আয়তনের বিজ্ঞাপন আদি নিয়ে একশো পৃষ্ঠার পত্রিকা । বরাক উপত্যকা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের ২২তম কৃষ্ণচূড়া উৎসব সংখ্যা । প্রকাশ কাল জুন ২০২২ । প্রচ্ছদ পরিকল্পনা এবং সম্পাদনায় পাঠচক্রের করিমগঞ্জ শাখার সহ সম্পাদক বনানী চৌধুরী । প্রথমেই চমৎকার লেখার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা রয়েছে ঢাকা , বাংলাদেশ থেকে পাঠচক্রের কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা রিজিয়ার তরফ থেকে । পরবর্তী সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন শিলিগুড়ি ফুলেশ্বরী নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সভাপতি সুহাস বসু । দু ’ পৃষ্ঠা জোড়া সূচিপত্রের পর আছে দু ’ পৃষ্ঠা জোড়া সম্পাদকীয় । বহু কথা আছে এই সম্পাদকীয়তে - নন্দিনীদের নিয়ে , শাখা নিয়ে , বার্ষিক মুখপত্র নিয়ে এবং অতিমারি সময়ের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে নন্দিনীদের স্বমহিমায় ফিরে আসার কথা । নন্দিনী সম্পর্কিত বহু গুণী ব্যক্তিদের ইহলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতেই রয়েছে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি । সদ্য প্রয়াত কবি , প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর একটি অপ্রকাশিত কবিতা পত্রিকাটির মান বাড়িয়ে দিয়

আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্য চর্চার উৎকৃষ্ট নিদর্শন শারদীয় সংখ্যা - ‘জড়র টানে’

পত্রিকাটি হাতে নিলেই কেমন একটা টান অনুভূত হয়। প্রথমত মানস ভট্টাচার্যের চমৎকার একটি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট চিত্র সম্বলিত প্রচ্ছদ এবং প্রাসঙ্গিক নামলিপি। এরপর পাতা ওল্টালেই অনবদ্য একটি সম্পাদকীয় পৃষ্ঠা। আধাআধি ভাগ করে নেওয়া পৃষ্ঠার একদিকে রয়েছে আকর্ষণীয় এবং আবেদনময় সম্পাদকীয় যেখানে সম্পাদক শমীক চৌধুরী (রোমেল) সবটুকু বলে নিয়েছেন স্বল্প কথায়, গুছিয়ে। অপর অর্ধে পত্রিকার ছবি এবং একটি উদ্ধৃতি - “ইবারর সংখ্যাত আছে - নানান স্বাদের গল্প (ভূতের গল্পও আছে), ঘুরাফিরার গল্প, বিজ্ঞানর সূত্র লইয়া কেরামতির গল্প, জমাখরচ নিয়া নিবন্ধ, ছড়া আর কবিতা। আছে আমরার সবের প্রিয় ‘সাহায্যের হাত’ নিয়া অনুভবের কথা”। এ উদ্ধৃতি যেন মূল খাদ্যের আগের ক্ষুধাবর্ধক স্টার্টার (আচমন)। খাবার স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। সর্বভারতীয় সিলেটি ফোরামের ৫ম সংখ্যা পত্রিকা ‘জড়র টানে’ এবার শারদীয় সংখ্যা হিসেবে ছাপা হয়ে বেরোল পুজোর আগেই। ব্যতিক্রমী নিঃসন্দেহে - যেহেতু পুরোটাই সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত। কোথাও ব্যত্যয় নেই। তা বলে শুধু যে ভাষা বৈচিত্রই সব কিছু এমন নয় মোটেও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি সব মিলিয়ে এক জমজমাট পত্রিকা। এগনো যাক সূচিপত্র অন

বিপাশা থেকে গঙ্গা - এক বর্ণিল স্বপ্নসফর

কবিগুরুর ভাষায় - ‘ আমি চঞ্চল হে , আমি সুদূরের পিয়াসি … । ’ কবিগুরুর মতোই আমরা বাঙালিরা - এবং বোধ করি আপামর বিশ্বজনেরাও অন্তর থেকে সুদূরের পিয়াসি সবাই । কিন্তু এই ‘ সুদূর ’ শব্দটিই শুধু তারতম্য ঘটায় ব্যক্তিবিশেষে । কারো সুদূর ঘরের কাছের ‘আরশিনগর’ তো কারো কাছে গোটা বিশ্বই আরশিনগর।  ইচ্ছে থাকলেও উপায় হয়ে ওঠে না সব সময়। আমরা অ্যাভারেজ বাঙালিদের কাছে এ দেশের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়ানোটাই যথেষ্ট। কয়েক বছর পর পরই বাই ওঠে বাইরে বেরনোর। ‘উচাটন মন ঘরে রয় না’ তখন। যৌবনে শঙ্কু মহারাজের বেশ ক’টি ভ্রমণ কাহিনি পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। তার মধ্যে যে গ্রন্থটি আমাকে সবচাইতে বেশি আকর্ষণ করেছিল সেটি ছিল ‘লীলাভূমি লাহুল’। লাহুল ও স্পিতি উপত্যকার নৈসর্গিক বৃত্তান্ত আমাকে অভিভূত করেছিল। সেই থেকে বলতে গেলে উন্মুখ হয়ে রয়েছিলাম একবার যাব বলে। কিন্তু ওই যে লিখেছি - উপায় আর হয়ে ওঠেনি এত কাল ধরে। ইতিমধ্যে ঘোরা হয়ে গেছে বহু বার - ‘অন্য কোথা, অন্য কোনখানে’। কিন্তু হিমাচলের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করার আর ফুরসৎ হয়ে ওঠেনি। এবার আবার যখন বাইরে যাওয়ার বাই উঠল তখন আর কালবিলম্ব না করে ইছেপূরণের ভ্রমণসারণি তৈরি করে ফেললাম। স