Skip to main content

ক্ষুদ্র পরিসরে বৃহৎ আয়োজন - শারদীয় ‘শতরূপা’


বিশ্বকবিরকণিকায় ক্ষুদ্রের ব্যাপ্তি, ক্ষুদ্রের বিশিষ্টতা, তার উৎকৃষ্টতা, দায়বদ্ধতার অনাবিল রূপ খুঁজে পাওয়া যায় প্রবল ভাবে -
প্রাচীরের গায়ে এক নামগোত্রহীন
ফুটিয়াছে ছোটো ফুল অতিশয় দীন
ধিক্‌-ধিক্করে তারে কাননে সবাই
সূর্য উঠি বলে তারে, ভালো আছ ভাই ?’
আপন সৌন্দর্যে, গরিমায়, বৈভবে তাই ক্ষুদ্রও মহতের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য একই কথা হুবহু মিলে যায় মধ্য অসমের ক্ষুদ্র শহর লংকা থেকে সদ্য প্রকাশিত ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা ‘শতরূপা’র শারদীয় সংখ্যার ক্ষেত্রে। সার্বিক ত্রয়োদশ সংখ্যা ১৪২৯ বাংলা A5 মাপের ন্যূনতম ম্যাগাজিন সাইজে মাত্র ৪৮ পৃষ্ঠার একটি শারদীয় সংখ্যা অথচ প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ভেতরের লেখালেখির গুণগত মাপেমহৎ’-এর দৃষ্টি আকর্ষণে একশো ভাগ সফল এই সংখ্যা সৌজন্যে কবি, সাহিত্যিক মনোজ কান্তি ধরের যত্নশীল, রুচিশীল সম্পাদনা। ‘শতরূপাসত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠেছে অপরূপা
প্রথম পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়র পর অপর পৃষ্ঠা থেকেই শুরু হয়ে গেছে লেখালেখির সম্ভার অতিমারি, অতিবৃষ্টির উল্লেখে উঠে এসেছে শিলচর শহরের সাম্প্রতিক বন্যার কথাও একেই বলে প্রাণের টানমানুষ মানুষের জন্য ক্রমান্বয়ে এক পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে শরৎ, পুজো, সাহিত্য এবংশতরূপা
প্রতিটি গদ্য-পদ্য সুচয়িত এবং সুচিন্তিত বিশিষ্ট কবি রতীশ দাস-এর একটি অনবদ্য কবিতার হাত ধরে হয়েছে মঙ্গলাচরণ ভাবে, ভাষায়, বিষয়ে একটি সুখপাঠ্য কবিতা বাস্তবের নির্মোহ প্রতিফলন এই কবিতা। এছাড়াও রয়েছে আরোও একগুচ্ছ কাব্যময় ভালো লাগা কবিতা যাঁরা লিখেছেন - মমতা চক্রবর্তী, গোপাল চক্রবর্তী, অনিন্দিতা সাহা, অনামিকা চক্রবর্তী, মনোজ কান্তি ধর তবে এখানেই শেষ নয় তালিকা দীর্ঘ রয়েছেন নবীন কবিদের পাশে নামিদামি কবিরাও ভালো কবিতা লিখেছেন ইন্দ্রজিৎ তাপাদার, মধু বাউল, দীক্ষিতা দে, জিৎ দে, সোমা পাল, কল্পনা দে, কনোজ চক্রবর্তী, প্রতিমা পাল, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, মৌসুমী নাথ, জাহিদ রুদ্র, ডঃ তাপসী গুপ্ত, স্বাতীলেখা রায়, অপূর্ব দেব এবং রামমোহন বাগচি তবে এই বিভাগে সবচাইতে ব্যতিক্রমী এবং আকর্ষণীয় সংযোজন হচ্ছে অসমিয়া ভাষার কবি কমলেশ্বর কলিতার একটি কবিতার মূল অসমিয়া সংস্করণ এবং নিত্যানন্দ দাস কৃত যথাযথ বাংলা অনুবাদ এই চিন্তাধারার ব্যাপারেও রয়েছে সম্পাদকের রুচিশীল ব্যাখ্যা
গল্প বিভাগে রয়েছে মোট পাঁচটি গল্প প্রথমেই মনোজ কান্তি ধরের ১৪ পৃষ্ঠাব্যাপী বড় গল্প রক্তাম্বরী কাহিনি ও বুনোটে অসাধারণ একটি গল্প পড়ে যেতে হয় নিরবচ্ছিন্ন পঠনে স্থানিক প্রেক্ষাপটে জাগতিক প্রেম ও প্রকৃতি প্রেমের এক নিটোল সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে চিত্রকল্প
বৃদ্ধদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশিষ্ট গল্পকার সুব্রত দত্তের গল্পবৃদ্ধাশ্রমগোছানো একটি সুখপাঠ্য গল্প বর্ণিল সমাপন বিশ্বজিৎ দেব-এর গল্পযন্ত্রণাবাস্তব প্রেক্ষাপটের উপর লিখা এক বর্ণনাত্মক বাখান মানব মনের ভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ
অনুরাগ দাস-এর গল্পকে অনায়াসে অণুগল্পের বিভাগে রাখা যেত শেষ পৃষ্ঠায় রয়েছে সুদীপ্তা পাল-এর আরেকটি অণুগল্প যদিও গল্পের নির্যাস থেকে বেশি প্রকট হয়েছে ভাববিহ্বল মনের আত্মগাথা
প্রবন্ধ রাখা হয়নি একটিও শারদীয় সংখ্যায় ন্যূনতম একটি প্রবন্ধের সংকুলান হলে অধিকতর উৎকৃষ্ট হতো সংখ্যা পরবর্তীতে এদিকটায় ভাবনা চিন্তার অবকাশ রয়েছে সব মিলিয়ে বর্ণ, শব্দ, বাক্য বিন্যাস, ছাপাই যথাযথ। বানানের ব্যাপারে আরোও সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। সব কিছু কাটিয়ে ওঠে বিস্তৃত সম্ভারে অচিরেই সেজে উঠবে পরবর্তী সংখ্যাসমূহ - এমন আশা করার পেছনে যথেষ্ট ইন্ধন রয়ে গেছে এই শারদীয় সংখ্যাটিতে।

- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

শতরূপা
সম্পাদক - মনোজ কান্তি ধর
মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৮৮২২৪৬৪৬২৩

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...