Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2022

গল্পকথায় উৎকৃষ্ট সংযোজন - ‘কয়েক টুকরো ঈশান’

‘ কয়েক টুকরো ঈশান ’ - যথার্থ নামকরণ । বেশি নয় , সাকুল্যে দশটি ছোটগল্প এবং অবধারিত ভাবে প্রতিটি গল্পের প্রেক্ষাপট এই ঈশান বাংলা - আরো সংক্ষিপ্ত করে বললে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা - যেখানকার আলো হাওয়ায় গল্পকারের বাস । সাড়ে পাঁচ বাই সাড়ে আট সাইজে মোট ৮৮ পৃষ্ঠার এই মিনি গল্পগ্রন্থটিকে বাইরে থেকে দেখলে ভেতরের আঁচ এসে গায়ে ( চোখে ) লাগে না মোটেও । নীলদীপ চক্রবর্তী আসলে কবি না গল্পকার - ধন্দে পড়তে হয়। ইতিমধ্যে তাঁর তিনটি কাব্য সংকলন এবং এ নিয়ে দু’টি গল্প সংকলন - উভয় ক্ষেত্রেই চরম উৎকর্ষতা। ভিন্ন স্বাদের দশটি গল্পের যে কোনও একটি পড়তে গেলে গল্পটি শেষ না করে উঠে যাওয়ার জো নেই পাঠকের। প্রতিটি গল্পের প্রথম পরিচ্ছেদের গোছালো ভাষাসমৃদ্ধ বর্ণনা পাঠককে আটকে রেখে দেয় গল্পের ভেতর। নীলদীপের গল্পে ভাষার কারুকার্য, গল্পের যথাযথ বুনোট এবং দক্ষ হাতে খেই ধরে রাখার যে চাতুর্য সেটাই গল্পগুলোকে করে তোলে জীবন্ত। অনেকটা আমাদের বনফুল, বিভূতিরা কিংবা বন্ড, বুকোস্কির ধাঁচ লক্ষ করা যায় গল্পগুলোতে। স্থানীয় প্রেক্ষাপট এবং সমাজের বাস্তব সমস্যাকে উপেক্ষা না করে বরং এই সব অন্যায় অনিয়মকে চোখে আঙুল দিয়ে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছে

এক আকাশ কবিতা

এক আকাশ কবিতা এমনও হয়, মন্দ নয় কাছেই থাকা, মাঝে মাঝে ইতিউতি দেখা। ঠুনকো কিছু কথা ভালো লাগা, ভালোবাসা, সারি সারি প্রেমের কবিতা ভাবনা, কল্পনা - বিলাসিতা নাই বা হলো কথা সরাসরি। একদিন। হ্যাঁ, এক সন্ধ্যায় - বলেছি তাকে - তুই আমার আকাশ হবি ? দুই ঠোঁটে মুচকি ছড়িয়ে - সেই সর্বনাশা মুচকি, বলেছিল চুপিচুপি - তুমি তো নিজেই নিজে আস্ত একটি আকাশ। বলেনি যে কথা - পাশ কাটিয়ে রয়ে গেছে অব্যক্ত, আমি সব সব জানি তা। 'আমি যে অন্য কারো আকাশ'। তুই তো আমার নিত্য পূজার এক আকাশ কবিতা।

কেউ আছে বলেই...

কেউ আছে বলেই… কেউ আছে বলেই কবিতা লিখি - আনমনে কেউ আছে বলেই ঘুম ভেঙে স্বপ্ন দেখার শুরু। সাগর আছে বলেই বয়ে চলে নদী - অবিরাম মরণ আছে বলেই - পড়ি জীবনের ধারাপাত। অলীক জেনেও বাঁচি দিন রাত আশা ভরসায়, জাগ্ৰত স্বপনে রচি রোজনামচা আপন খেয়ালে - যাপনে নিভৃতে - যেখানে সব পথ শেষ হয় নীরব ভালোবাসার অধরা সোপান তলে - নিরাশায়। তবু রোজ, প্রতি পলে - নিঃশ্বাসে নৈঃশব্দ্যে রচে যাই স্বপ্নসৌধ - কেউ আছে বলে, শুধু কেউ আছে বলে .....।

প্রথম বর্ষা

প্রথম বর্ষা আজ আষাঢ়ের প্রথম দিনেই ঘোর নেমেছে বর্ষা গাঁয়ের পাশের ছোট্ট ধারা আজ সে তিস্তা তোর্ষা। সকাল হতেই আকাশ জুড়ে ঘন দেয়া ঘনঘোর আঁধার নেমেছে চরাচর ছেয়ে তড়িৎ, বজ্র শোর। থেকে থেকে আসে অঝোর ধারায় প্রথম বর্ষা বৃষ্টি ঝরছে আকাশ ভাসছে পৃথ্বী ধুয়ে যাক অনাসৃষ্টি। বর্ষা কি আর নিছক শুধু প্রেম বিরহের গান আবির্ভাবেই আষাঢ় ধারায় ধরায় এল বান। উপচে উঠেছে নদী নালা যত পড়ছে খসে পাহাড় প্রথম দিনেই রক্তচক্ষু ভয়াল রুদ্র আষাঢ়। ভাসে কৃতঘ্ন মানব জাতি প্রকৃতি রোষ জলে আমি - নীরো, লিখি বর্ষা পদ্য শুধুই অন্ত্যমিলে।

প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রত্যয়ের পত্রিকা – ‘সীমান্ত’

নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের গোসাইগাঁও শাখা থেকে নিয়মিত বেরোয় মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা ‘সীমান্ত’। এর সর্বশেষ সংযোজন অষ্টম সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২২। সম্পাদক বন্দন দেব। সম্পাদকীয় দপ্তরে সহসম্পাদক দেবাশীষ দে’র বাইরেও আছেন স্বপ্না বল, কৃষ্ণকান্ত সূত্রধর, রীতা দেবনাথ মুখার্জী এবং শ্যামল দেবনাথ। ১০৯ পৃষ্ঠার ব্যাপক আয়োজনে সন্নিবিষ্ট হয়েছে সাহিত্যের ভিন্ন ধারার রচনার পাশাপাশি শাখা সংবাদ এবং সদস্যসূচি। আছে ৯ টি প্রবন্ধ, ১৬ টি কবিতা, ৬ টি ছোটগল্প, ‘সাময়িক প্রসঙ্গ’ বিভাগে তিনটি বিশেষ অণু নিবন্ধ এবং ‘কচিকাঁচাদের বিভাগ’-এ ৪ টি কবিতা। শাখা কর্মাধ্যক্ষের প্রতিবেদনের বাইরে সম্পাদকীয়তে আছে শাখা সম্মেলনের উদ্দেশ্য বর্ণনার পাশাপাশি পত্রিকা নিয়ে গভীর প্রত্যয়ের সুর – ‘একটা সময় এই ‘সীমান্ত’ই হবে সময়ের এক বাংলা ভাষার কালজয়ী মূল্যবান দলিল যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখাবে এক আশার আলোর মসৃণ পথ।’ প্রবন্ধ বিভাগে ‘বড়ো-কছারী জনগোষ্ঠীর আদি কথা ও কয়েকটি সামাজিক প্রথা’ শিরোনামে অধ্যাপক দেবাশীষ ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন বড়ো-কছারীদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান সহ যাপন কথার এক সংক্ষিপ্ত অথচ সার্বিক বাখান। ডঃ দীপক কুমার রায় সমাজে

গরজের ধারাবাহিক সাহিত্য পত্রিকা - 'স্বরিত'

আন্তর্জাতিক সীমানাসংলগ্ন প্রান্তীয় শহর করিমগঞ্জ। দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকার তিন জেলার অন্যতম জেলা করিমগঞ্জের সদর শহর। রাজ্যের মূলধারা থেকে বহু দূরে অবস্থানসূত্রে এ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহের জনগণের জীবনযাত্রার অন্য নাম টানাপোড়েন। এই টানাপোড়েনের জের ছড়িয়ে যায় সাধারণ্যে, জন অরণ্যে। জীবন যাপনের মানোন্নয়নের হার নিতান্তই শ্লথ। এমনই এক পরিস্থিতি, পরিবেশের মধ্যে অবস্থান করেও যে কয়েকজন হাতে গোনা ব্যক্তি বা সংগঠন নিরলস সাহিত্য সাধনায় ব্রতী রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে - আজ তাঁদেরই হাত ধরে, তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রোথিত অঙ্কুর পর্যবসিত হচ্ছে চারা গাছে। এক গুচ্ছ তরুণ, নবীন কবি সাহিত্যিকের উত্থানে অনন্ত প্রত্যয় জাগে অন্তরে। এবং সেই প্রত্যয়ের ধ্বজাধারী যেসকল নমস্য সাহিত্য ব্যক্তিত্ব নিরন্তর রত রয়েছেন সাহিত্য সাধনায়, সৃষ্টিময়তায় তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলোচ্য ধারাবাহিক পত্রিকা ‘স্বরিত’-এর দুই সম্পাদক নারায়ণ মোদক এবং গৌতম চৌধুরী। এই দুই উদ্যমী সাহিত্য সাধকের হাত ধরে নিয়মিত এই প্রান্তীয় শহর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে আরোও দু’দুটি সাহিত্য পত্রিকা - নিয়মিত। সম্প্রতি বিশ্ব কবিতা দিবসে উন্মোচিত হলো ‘স্বরিত’ স

পারিস যদি

পারিস যদি রাখিস তবে আমার কথা হৃদয় মাঝে একটি ছিল অবুঝ ছেলে। নিয়ম নিষেধ তুড়ি মেরে এক পলকে দেয় উড়িয়ে মনকে বাঁধে কথার তোড়ে। পারিস যদি রাখিস মনে বয়স যত দেহের বাড়ে মন যে টানে মনের টানে। ইচ্ছেবিহীন প্রাণের টানে আগুন পাখি আমার মনে সব হারিয়ে যাই যে ছুটে। পারিস যদি মুচকি হেসে মনের কথা বলিস এসে যেমন ছিল প্রথম দিনে। আবার যদি পারিস তবে খিলখিলিয়ে উঠিস হেসে দমকা বায়ে ফুল ছড়ায়ে। পারিস যদি ভাবিস বসে একটুখানি সময় করে গেছে যে দিন খুনশুটিতে - কোন সে কথা কীসের টানে পানসি ছুটে তরতরিয়ে আবার কি তা আসবে ফিরে ? পারিস যদি মেঘলা দিনে বৃষ্টি বাদল মন উদাসে তাকিয়ে দেখিস অস্তরাগে, জীবন জোড়া ইজেল জুড়ে ছবির মতো আসবে ফিরে যাপন বেলা দুই নয়নে। পারিস যদি রাখিস ধরে জীবনজোড়া স্মৃতির ঘরে সেসব কথা যতন করে - কাটলো যে দিন পাশে পাশে মনের কথা নয়নঠারে মরীচিকার অলীক পথে। পারিস যদি রাখিস লিখে কথার মালায় ঋদ্ধ করে জীবন খাতা তোর সকাশে। ঝরা পাতার এমন দিনে যাপন বেলার থরে থরে নীরব প্রেমে যে দিন গেছে। পারিস যদি বিশেষ দিনে একটু খানি চুপটি করে আমার কথা ফেলিস মনে। মন গগনে সংগোপনে বাঁচব আমি এমনি করে সন্ধ্যা বেলার স্মৃতির প

উত্তর-পূর্বের বাংলা গল্পে সমৃদ্ধ পত্রিকা - ‘প্রবাহ’

কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রের লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার প্রাপ্ত (২০২১) গবেষণাধর্মী লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রবাহ’-এর বর্ষ ৩৪, সংখ্যা - ২, ডিসেম্বর ২০২১ (অগ্রহায়ণ ১৪২৮) সংখ্যাটি প্রকাশিত হলো সাড়ম্বরে। ‘প্রবাহ’ কে এখন আর কোনোভাবেই ‘লিটল’ বলা চলে না। একের পর এক সংখ্যা জুড়ে পত্রিকায় সন্নিবিষ্ট থাকছে বিশাল সম্ভার। এবারেও ব্যতিক্রম হয়নি তার। সম্পাদকের চরম নিবেদন পরিস্ফুট হয়ে ওঠে বিষয় বৈচিত্রে, বিষয়ের বিশালত্বে। সময়ের পেছনে ছুটে ছুটে এভাবে গুচ্ছ লেখা সংগ্রহের মধ্যে লুক্কায়িত থাকে যে অসীম অধ্যবসায় এবং অকৃত্রিম গরজ তার কথা আলাদা করে উল্লেখ না করলে এ আলোচনা মুখ থুবড়ে পড়বে শ্রীগণেশেই। উত্তর পূর্বের প্রতিষ্ঠিত ও উঠতি মোট ২৬ জন গল্পকারের গল্পের বাইরেও এ সংখ্যায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে সদ্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে ভূষিত অসমিয়া সাহিত্যের বিদগ্ধ কবি নীলমণি ফুকনের উপর দীর্ঘ ৩৭ পৃষ্ঠার একটি ক্রোড়পত্র। উত্তর পূর্বের বাংলা গল্পের এক আলাদা বিশ্ব। ভাষা, লিখনশৈলীর এক নিজস্ব পরিমণ্ডল। এখানে গল্পের অভ্যন্তরে উদ্ভাসিত হয় আপন বিশ্বের হাসিকান্না, পথ চলার অম্লমধুর বর্ণনা। প্রেক্ষাপটে ভেসে আসে আঞ্চলিক জীবনযাত্র