Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2021

অমৃতলোকে দেবাশিস দত্ত

‘রবীন্দ্রনাটকে মৃত্যু’ নিয়ে সুগভীর অধ্যয়নসঞ্জাত গ্রন্থ প্রকাশের এক বছরের মধ্যেই বিচিত্র সেই মৃত্যুলোকে পাড়ি জমালেন উত্তর পূর্বের গর্বিত তথা ব্যতিক্রমী সাহিত্য ব্যক্তিত্ব দেবাশিস দত্ত। উপজাতি অধ্যুষিত নাগাল্যাণ্ড রাজ্যে বসবাস করে পাহাড়সম প্রতিকুলতাকে সামলে নিরলস সাহিত্যদেবায় ব্রতী এই সাহিত্যিকের মৃত্যু স্বভাবতই সৃষ্টি করে গেল এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলা ভাষার ব্রাত্য এই অঞ্চলে কিছু মননশীল পথের সাথীকে নিয়ে তিনি সাহিত্যের মরুদ্যানে ফুল ফোটানোর যে কাজটি করে গেছেন আজীবন তা কোনও অংশেই এক আন্দোলনের চাইতে কম কিছু নয়। এক অন্তহীন সংগ্রামের পথেই অন্ত হয়ে গেলেন মহাশূন্যে। ৭৮ বছর বয়সে নিজেকে সাহিত্যসেবায় নিয়োজিত করে রেখেই রোগের কাছে হার মানতে হলো এই বর্ষীয়ান সাহিত্যিককে। তীরে এসে তরী ডোবার মতোই তাঁর অন্তরের ধন - সাহিত্য পত্রিকা ‘পূর্বাদ্রি’র শেষ সংখ্যাটি দেখে যেতে পারলেন না। এক বলিষ্ঠ প্রত্যয় ও দায়বদ্ধতা নিয়ে ১ অক্টোবর ২০০৩ ডিমাপুর থেকে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘পূর্বাদ্রি’। নববর্ষ ও শারদ সংখ্যা রূপে ‘পূর্বাদ্রি’ গত বছর প্রায় পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য কোনও প্রান্তিকতায় আবদ্ধ হতে পারে না - এ প্রত্

অভিজিৎ চক্রবর্তীর 'সিলেটি মহাভারত' - এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস

বাংলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় মহাভারত অনুবাদক ছিলেন কবি কাশীরাম দাস। এরপর রয়েছে হরিসিদ্বান্ত তর্কবাগীশ এর ৪৩ খন্ডের মহাভারত। এরপর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সঞ্জয় ভট্ট নামে আরেকজন মহাভারতের বাংলা অনুবাদ করেন। সেটি 'সঞ্জয় ভারত' নামে পরিচিতি পায়।  তথ্য মতে মহাভারতের প্রথম দুইটি পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ আলাদা আলাদাভাবে তৈরি হয় পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে। এর মাঝে একটির রচয়িতা সুনামগঞ্জের সঞ্জয় ভট্ট যদিও, কেউ কেউ দাবি করেন সঞ্জয়ই প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা মহাভারত রচনাকার। তবে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা মহাভারত রচনাকার হিসাবে সঞ্জয়ের চাইতে চট্টগ্রামের পরমেশ্বর দাসের দিকে যুক্তির পাল্লা বেশি ভারি। হিসাবমতে ‘পরাগলি মহাভারত’ নামে পরিচিত পরমেশ্বর দাসের ‘পাণ্ডববিজয় কাব্য’ ‘সঞ্জয় ভারতের’ প্রায় ত্রিশ বছর আগে লেখা। মহাভারতের আরেকটি সংস্করণ সিলেটি ভাষাতেই রচিত হয়েছে এই করোনাকালে। বিধুভূষণ ভট্টাচার্যের সিলেটি মহাভারত। “মহাভারত কথার প্যাচ/আমির্তির লাখান বিধুভূষণ ভটে কইরাম/সিলেটি বাখান” জানা মতে এতদিন এটাই ছিল মহাভারতের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পূর্ণ সংস্করণ। সিলেটি ‘ছিলক’ বা ‘শিলক’ (অর্থাৎ শ্লোক) স্টাইলে লেখা এই ‘বাখানে’ দ্বৈপায়ন বন

গোছালো এক ‘এলোমেলো’

গল্প , উপন্যাসের পথে না হেঁটেও একজন লেখক যে একজন সফল কথাশিল্পী হয়ে উঠতে পারেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন সঞ্জয় গুপ্ত । কিংবা কথাটি এভাবেও বলা যায় - শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমে (বিশেষ করে ফেসবুক) প্যারাগ্রাফ লিখেও যে একজন লেখক জনপ্রিয় কথাকার হিসেবে পাঠক মনে জায়গা করে নিতে পারেন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন সঞ্জয় গুপ্ত।   কোথাও অচেনা অজানা পথের হদিশ তো কোথাও অতি সামান্য ঘটনাকে অসামান্য হিসেবে (তিলকে তাল করে ?) পাঠকের দরবারে পেশ করতে জুড়ি নেই তাঁর। সত্য ঘটনাকে সত্য হিসেবেই রেখে তিলকে তাল করার মধ্যেও একটা এলেম থাকতে হয়, একটা শিল্পবোধ থাকতে হয়। তা বিলক্ষণ আছে বলেই সঞ্জয় গুপ্তকে নিয়ে লিখতে বসতে হয়। হালে প্রকাশিত হলো তাঁর প্রথম গদ্যগ্রন্থ ‘এলোমেলো-১’। এলোমেলো ভাবনাগুলোকে বইবন্দি করার প্রয়াসে লেখক হয়তো তাঁর অজান্তেই সৃষ্টি করে ফেলেছেন অসম্ভব রকমের একটি গোছালো সম্ভার। পেপারব্যাক-এ ১২৪ পৃষ্ঠার বইটির প্রকাশক ভিকি পাবলিশার্স, গুয়াহাটি। ছিমছাম অথচ আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন নয়নজ্যোতি শর্মা। তিনটি ভাগে বিন্যস্ত এই গ্রন্থ। ‘একটি অসম্পূর্ণ কাহিনি’, ‘শিলং স্মৃতি’ এবং ‘অন্যান্য’। ভেতরের প্রাসঙ্গিক স্কেচ

ব্যতিক্রমী কাব্যগ্রন্থ - Pandemic Poetry

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি সুশান্ত ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ Pandemic Poetry. বরাকের ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে কবি সুশান্ত ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই কবিতার দিগন্তে এক উজ্জ্বল তারার নাম । ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একাধিক কবিতার বই । কবিতার সজবোধ্যতা , পাঠকের বোধগম্যতার খুব কাছাকাছি অবস্থানই কবি হিসেবে তাঁর সীমাহীন জনপ্রিয়তার কারণ । এবার সেই সূত্রেই প্রচলিত ধারার বাইরে বেরিয়ে প্রকাশিত হলো তাঁর ইংরেজি কবিতার বই । মাটির কাছাকাছি থাকা কবির সব কথা , সব অনুভূতি সরাসরি পৌঁছে গেছে মাটিরই কাছাকাছি থাকা পাঠকের দরবারে - একটু ভিন্ন আঙ্গিকে । নাম শুনে এরকম একটি ধারণা পাঠকের মনে আসতেই পারে যে এই গ্রন্থের কবিতাগুলি সম্ভবত অতিমারী বিষয়ক । আসলে কিন্তু তা নয় । কবিতাগুলি অতিমারী কালে লিখিত বলেই Pandemic Poetry. স্বভাবতই অতিমারী বিষয়ক কবিতারই প্রাধান্য থাকবে গ্রন্থে। কিন্তু এর বাইরেও কবির স্বভাবসিদ্ধ সরলতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে একের পর এক অনবদ্য অনুভবের কবিতা। অতিমারী বিষয়ক একাধিক কবিতায় অসাধারণ দক্ষতায় কবি ধরে রেখেছেন সময়টাকে। এ যেন ত্রস্তবেলার এক জীবন্ত দলিল। একেবারেই সহজ ভাষায় অতিমারীর বি

শিখর পেরিয়ে

কে যেন তোমাকে থাকতে দিল না সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলে তুমি। তাই তো তুমি সীমার মাঝেই   অসীম হয়ে রইলে বেঁচে। কেউ আমাদের সীমারেখা দেয় বেঁধে   ওদের সীমার ওপারে যাওয়া বারণ ,   তুমি ওদের পেরিয়ে -   অধরা শিখরে বাড়িয়েছিলে পা।   তাই তুমি আজ শিখর পেরিয়ে   আছো আমাদের নক্ষত্রলোকে ,   আমাদের অন্তর্লোকে।   অথচ আমরা জড়ভরতের দল বছরে একদিন তোমারই গান গাই আর বাকি সব দিন তাদের পানেই চাই যারা যুগ যুগান্তর ধরে টুটি চিপে ধরে আমাদের সুরকে রেখেছে দূরে   কিংবা রেখেছে কলমকে ব্রাত্য করে।     তবু বারবার আমি জন্ম নেবো এই শহিদের দেশে , মাটি - জলে - ফসলে ,   সৃষ্টি সুখে রচে যাব এক আপন বিশ্ব   তোমার সুরকে হাতিয়ার করে   গুড়িয়ে দেবো ব্রাত্যকারীর বৃত্ত। এখানে উড়বে নিশান তোমার নামের অবাক চোখে দেখবে অপর বিশ্ব ,   একদিন নয় তোমার পূজা এবার হবে নিত্য।   (শিল্পী কালিকাপ্রসাদের জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি - ২০২১)।

শরৎ

আবার এসেছে স্নিগ্ধ শরৎ শিউলি শিশিরে আলিঙ্গন , শারদ সুবাসে দোদুল হৃদয় ভোরের আমেজে উতলা মন । শরৎ মানেই কাশফুলে আর ঘাসফুলে যত আলাপ তান শরৎ মানেই শিমূল পলাশে কিচিরমিচির গজল গান ।   নীলাকাশ জুড়ে বলাকার ঝাঁক পারাপার শুধু সাঁঝসকাল পেঁজাতুলো মেঘে পথে যেতে যেতে মুচকি হাসিতে টালমাটাল । শরৎ মানেই সুপ্রভাতের আধফোটা ফুল চয়নসুখ ভরে নিয়ে সাজি মণ্ডপ পানে বালক বেলার সহাস মুখ ।   সকাল হতেই হিসেবনিকেশ শারদোৎসব নির্ঘন্ট মনাকাশ জুড়ে একখানি মুখ সবার উপরে নীলকণ্ঠ । শরৎ মানেই প্রান্তর জুড়ে কিশোরী ধানের উত্তরন শরৎ মানেই জল সহচরে হংসমিথুন সন্তরণ ।   পাহাড়ি ধারার মন্দ্রবিভোর কুলুকুলু পথে অবরোহন পথে যেতে যেতে বনানীর সাথে স্নিগ্ধ হাসিতে সম্বোধন । শরৎ মানেই নতুন কাপড় নতুন বন্ধু বাহির ঘর শরৎ মানেই নব পত্রিকা নতুন ' শব্দ নিরন্তর ' ।

‘মানবী’ - আখর কথায় সময়ের দলিল

সেই আদিকাল থেকেই প্রকৃতি আর নারী চিরসম্পূরক , একাকার। প্রজন্মের সৃষ্টিকথা আবর্তিত হতে থাকে এঁদের নিয়েই। সৃষ্টিকথায় পুরুষের অবদান কতটুকু তা পরিমাপের কোনও উপায় নেই , কিন্তু প্রকৃতিই যে সৃষ্টির ধারক ও বাহক তা এক কথায় অনস্বীকার্য । সেই প্রকৃতির অমোঘ টানেই যেন হাতে হাত ধরে , পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন একঝাঁক মানবী। পায়ের নিচে সবুজ ধরণী আর সামনে অবাধ প্রকৃতি। একে অপরের হাতের বেষ্টনিতে ঝাপসা ছবিতেই ফুটে ওঠে যুথবদ্ধ প্রত্যয়ের এক স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। বলছিলাম শিলচর থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ছোট পত্রিকা - ‘ মানবী ’ র প্রচ্ছদের কথা। হালে প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকার পঞ্চদশ বর্ষ , প্রথম সংখ্যা - জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২১ । এতগুলো বছর ধরে বরাক উপত্যকা তথা এই ঈশান বাংলার ছোট পত্রিকার পরিমণ্ডলে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে এই ‘মানবী’ পত্রিকা। চারজন কৃতী মানবীর পর্যায়ক্রমে সম্পাদকীয় দপ্তর সামলানোর ব্যাপারটা এক কথায় ব্যতিক্রমী। এবারের সম্পাদক যশস্বী গল্পকার শর্মিলা দত্ত। এর বাইরে সম্পাদকীয় প্যানেলে আছেন কবি চন্দ্রিমা দত্ত , কবি শেলী দাসচৌধুরী এবং কবি - গল্পকার দোলনচাঁপা দাসপাল। প্রচ্ছদচিত্রটি তুলেছেন ক

‘অস্ফুটে দ্রোহ’ - কবিতায় একরাশ অনুচ্চারিত প্রতিবাদ

আদিমা মজুমদার মূলতঃ গল্পকার । উত্তর - পূর্বের অবিসংবাদিত সফল গল্পকার । অথচ কবিতায়ও যে একজন গল্পকার এতটা স্বচ্ছন্দ এবং সাবলীল তা শিরোনামে উল্লেখিত কাব্যগ্রন্থটি না পড়লে বোঝা - ই যেত না । পড়তে পড়তে বারে বারে অনুভূত হয় সেই আপ্তবাক্য - যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে। ‘অস্ফুটে দ্রোহ’ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে - সাইমা পাব্লিকেশনের প্রকাশনায়। গল্পকার থেকে কবি হওয়ার পথে যে ভাবনাটি সব চাইতে বেশি কাজ করেছে তা হলো গল্পের দীর্ঘ বর্ণনে যে কথাটি বলতে গেলে পোড়াতে হয় বহু কাঠখড় সেই চিন্তাটিই কবিতার মাধ্যমে স্বল্প কথায় উচ্চারণ করা যায় কম আয়াসে। এবং সেই সূত্রে আদিমা মজুমদারের কবি হয়ে ওঠাটি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল খুব। কারণ কথার পাহাড়, প্রতিবাদের অদম্য আকাঙ্ক্ষা জমে জমে যেন পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছিল সময়ের সাথে সাথে। সমাজের তথাকথিত নিয়মাবলির ভেতরে লুকিয়ে থাকা অন্যায়, অবিচার আর ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তাই কলম ধরতেই হতো এই প্রতিবাদী সত্ত্বাটিকে। সেই কাজটিই স্পষ্ট আর সরল ভাষায় সেরেছেন কবি। কোনও রাখঢাক না রেখেই উন্মোচিত করেছেন ভেতরের অনুচ্চারিত ব্যথাকে । পাঠকের দরবারে সরাসরি পৌঁছে দিয়েছেন সত্যের