Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2020

রোদ্দুর আজো আছে

  রোদ্দুর আজো আছে সেই যে এক চিলতে রোদ্দুর - ঝিলের জলে , শাপলা শালুকের ভিড়ের ফাঁকে , বেহায়া শালিকের একটানা কিচিরমিচিরে , রঙবাহারে মানানসই সব কোলাজে , কিংবা অতসী ফুলে শিশিরভেজা পাপড়ি জোড়া উর্ণনাভের শিল্প জালে , ধানি পাতার আপাদমস্তকে হৈমন্তী ভোরে , পলাশ আগুনে , জামরুল সুবাসে , শিমূল শিখরে পাখিদের হাটে , বিলের জলে হিজল পথে , মায়ের আঁচল , বাবার হাঁটা পথে , শীতসকালে পড়তে বসা মাদুর ছেয়ে । কিংবা চা বাগিচার দূর গালিচায় - কৃষ্ণচূড়ার ফাঁকটি গলে , খুনসুটিতে - হরিয়া আর লছমি মিলে দু ’ টি পাতা এক কুঁড়িতে ।   রোদ্দুর আজো আছে , আগের মতো । আজ আবার সাত সকালে দেখতে পেলাম তাকে ঘেরাটোপের ব্যালকনিতে , গৃহবন্দির বাধ্য যাপনে ।

আমার ক্যালেণ্ডার

  আমার ক্যালেণ্ডার   ঝাঁ চকচক পলেস্তারায় চোখ জুড়ানো রঙ আমার ঘরের দেয়াল জুড়ে আঁকিবুকির ঢং । বারো পাতার ক্যালেণ্ডারে স্পাইর ‍ ্যাল বাইণ্ডিং ফ্যানের হাওয়ায় দুলছে দেদার বড্ড ফানি থিং ।   পাশের বাড়ির বাঁশের ঘরে প্রাচীন ক্যালেণ্ডার দেব দেবী আর লোকনাথ মিলে টানছেন সংসার । তারিখগুলো কবেই যে তার হয়েছে ভোকাট্টা এক পাতার ওই ছবিই চালায় মৌরসী পাট্টা । বর্ষা দিনে বৃষ্টি বেলার ছিঁচকাঁদুনে ধারা সামলায় সব সেই ছবিটি নিজেই ভিজে সারা । ঠেকলই বা দেয়ালে পিঠ হয় না তবু ক্লান্ত ঝড় ঝঞ্ঝা আটকে রাখেন ছবির রাধাকান্ত । এমনি যত গুচ্ছ ছবি যুগযুগান্ত ধরে আগলে রাখে গৃহস্বামী পিঠ চিতিয়ে লড়ে । তারিখবিহীন ক্যালেণ্ডারে ছয়লাপ সেই ঘর গৃহস্বামী সুখস্বপ্নে মশগুল দিনভর । ছবিরা সব জ্যান্ত হয়ে আসেন রাতের বেলা সবাই মিলে হেসেখেলে কাটান দুঃখবেলা ।   আমার ক্যালেণ্ডারের তারিখ জ্যান্ত বিভীষিকা যতই ধরতে এগোই ততই পালায় মরীচিকা । আমার স্বপ্নে নিয়ত আসে ব্যর্থ অন্ধকার রোজ সকালে বিদ্রুপে হাসে আমার ক্যালেণ্ডার ।

নতুন মোনালিসা

  নতুন মোনালিসা চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে ব্যালকনিতে সদ্য প্রোথিত বনসাই । তালে তালে পায়ে মিলিয়ে পা ডাগর হতে চায় অঘোরবাসীর কন্যা । অঘোরবাসী দিনের বেলা গতর খাটে রাতে জমে যায় কীর্তনের আসরে । কীর্তন এখনো চলছে রমরমিয়ে কীর্তনীয়া লুপ্তপ্রায় । অঘোরবাসীর তাই নামডাক খুব , শ্রাদ্ধবাসরে অপরিহার্য অঘোরবাসী । দেখলে আমার রাগ হয় ওর বাবার উপর কেন যে এত কঠিন নামটা রেখেছে ওর । ### এখন দিনের বেলা বেকার অঘোরবাসী রাতের বেলা কীর্তনও আর হয় না । কীর্তনে পালিয়ে যেত প্রেতাত্মা তুষ্ট হতেন দেবতা । ধুরন্ধর ভাইরাস আজ কীর্তন মানে না বেকার অঘোরবাসী তাই আধপেটা খেয়ে সাইকেল চড়ে ফলমূল ফেরি করে । ডাগর মেয়েটি নুইয়ে পড়া লতার মতো প্রাণপণে সামলে রাখে নিজেকে । ### আজ বহুদিন পর সে পথ দিয়ে যেতে কানে এল - অঘোরবাসীর গান , " ভিখারি বানিয়ে কী রঙ্গ তুমি করিলে " ? দোহার লাগায় অঘোরবাসীর মেয়ে - কী রঙ্গ তুমি করিলে - - - - । আমি চমকে গিয়ে থমকে দাঁড়াই খানিক , হাতড়ে আমার সম্বল , বাড়াই আমার হাত করযোড়ে কৃতজ্ঞতায় জীর্ণ অঘোরবাসী গান থামিয়ে চোখের জলে ভেসে বলে - দাদা বাঁচান মেয়েটিকে । কাজকর্ম অনেকটাই ও জানে , আ

প্রতিশোধ

  প্রতিশোধ   দীর্ঘ দু ’ মাসের এক তীব্র ঝড় ঝঞ্ঝার পর্যায় পেরিয়ে কাল বেশ রাতেই ঘরে ফিরেছে নগেন । পেটের তাগিদে বাবার হাত ধরে কাঠমিস্ত্রির তকমা জুটিয়েছিল অনেক আগেই । সেই সুবাদে এদিক ওদিক থেকে কাজের বরাত আসে প্রায়শই । দু ’ মাস আগে এমনি এক কাজের সূত্রে আরোও দু ’ টি ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছিল পার্শ্ববর্তী রাজ্যে । আর তার তিন দিনের মাথায়ই লক ডাউনের জেরে আকাশটা ভেঙে পড়েছিল মাথায় । সেই থেকে ঘরে একা মালতী - নগেনের নতুন বিয়ে করা বউ আর বৃদ্ধা মা । মাঝে মাঝে ফোনে বার্তালাপ ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না নগেনের । তীব্র দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগকে সঙ্গী করে কাটিয়েছে এতগুলো দিন । এরপর ফিরে এসে আবার চৌদ্দ দিনের কোয়ারেন্টাইন । সব মিলিয়ে বিধ্বস্ত , বিপর্যস্ত হয়ে অবশেষে ঘরে ফিরেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছে কাল । সকাল তখন প্রায় ন ’ টা বাজে । কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ - ঠিক নগেনের মনের আকাশটারই মতো । ছাতা আর বাজারের থলেটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা রাখল সন্তর্পণে । ঘরে প্রায় কিছুই নেই , দীর্ঘ ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে মালতী । এদিকে পকেট প্রায় খালি । সবকিছু যেন কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা এই মহাম

কলমবাজের সংসার

  কলমবাজের সংসার   বয়স বেশি হলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের ডেরা। আবার বয়স কম হলে মস্তিষ্কের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বেশি থাকে । আমার আট বছরের সন্তানের স্কুলে যেদিন ইংরেজির বাক্যবিন্যাসের ব্যাপারে নোট দেখলাম তার পরদিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষক মশাইকে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলাম - এসব কী হচ্ছে ? জবাবে শিক্ষক মশাই যা বললেন তার সারসংক্ষেপ হলো -  ছোট বাচ্চাদের মগজ হাতির মতো । যত দেবেন ততই নেবে । শুনে আমার চোখ কপালে যদিও কিন্তু চিন্তা করে দেখলাম - যা রটে তার কিছুটা হলেও সত্যি বটে । নাহলে কৈশোরে একশোটা দেশের নাম রাজধানী সহ মনে রাখতাম কী করে ? আবিষ্কার ও আবিষ্কর্তার একগাদা নামই বা কী করে বসত করত ঠোঁটের আগায় ? আজ ক ' টাই বা আর মনে রাখতে পেরেছি ? তবে ওইসব মনে রাখতে গিয়ে কিছু বুদ্ধিরও প্রয়োগ করতে হতো । উদাহরণ স্বরূপ ফাউন্টেন পেন অর্থাৎ কলম হলেই জলের কথা মনে এসে যেত । ব্যস , জল থেকে ওয়াটার আর ওয়াটার থেকে ওয়াটারম্যান । (ভাগ্যিস ওয়াটারমেলন নয়)। একটা ছবিও ভেসে উঠতো মানসচক্ষে । এক ভদ্রলোক বাড়ি বাড়ি জল বয়ে নিয়ে যেতে যেতেই একদিন কলম আবিষ্কার করে পথের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে লিখতে শুরু করে দিয়