Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2021

শাঁওলি-ছলিয়া

দিগন্ত বিস্তৃত চা-এর গাছ কবির চোখে সবুজ গালিচা শুধু রূপ পাল্টায় খেয়ালে খুশিতে। গুল্ম আর বৃক্ষ, লতার সহাবস্থান গভীর রাতের ভালোবাসার সংসার। রোদেলা দাবদাহে মহাবৃক্ষের আচ্ছাদনে বেঁচে থাকে গুল্মলতা -   উৎপাটন প্রতীক্ষায়।   দুঃখে, দুর্দশায়, অবহেলা অত্যাচারে ক্ষোভিত দু'টি নিঠুর হাতের অপেক্ষায়।   সারাটি দিন শুধু কথার চাবুক,   উৎপাটনের লক্ষ্যমাত্রা মাত্রা ছাড়ায় রোজ দেহে যা আছে সম্বল উজাড় করে   তবু শুধু মিথ্যে বঞ্চনা।   এত এত দুঃখবেলায়ও   নজর কাড়ে ছলিয়া - মুখে বুকে।   রাতে দু'জোড়া হাত খেলে যায় অবিরত গোপনে গোপনে সারা অঙ্গে শুধু   লহরের পর লহর আসে উত্তাল।   দিনে বুভুক্ষা আর প্রখর রোদের গনগনে আঁচ সাড়া জাগায় মন গগনে,   ছলিয়ার ছবি শক্তি জোগায় কাজে।   কবি হাঁটেন লাল কার্পেট ধরে পথের নুড়ি পথেই পড়ে রয়।   এক সময় বাইরে বেরিয়ে   জীবন ধারণ রঙ্গমঞ্চে   কাজের চাপে ব্যতিব্যস্ত   কবির চোখে ভেসে ওঠে বিদ্রোহ।   তবু সেই দ্রোহবেলায়, ব্যতিব্যস্ত ক্ষণে আবছা ভাসে শাঁওলি দু'টি চোখ,   শরতের জমাট বাঁধা সাদা মেঘের মতো তোলপাড় করা একটি মুখ, ছবির মতো। দিনশেষে ছলিয়া - বুধিয়া আর শাঁওলি সখা

অথ ‘ঘাসফুল কথা’

সচরাচর ‘ ঘাসফুল ’ শব্দটির মধ্যে একটি তাচ্ছিল্যের অভিব্যক্তি নিহিত হয়ে থাকে । অপরাপর কুসুম বনে ঘাসফুল নিতান্তই এক তুচ্ছ, অবহেলিত, দ্রষ্টার আকুল নয়নে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশে অক্ষম, অনুল্লেখ্য প্রাকৃতিক ফুল। যেমন এ ভবসংসারের কোনোও এক মেধাহীন, রূপহীন, বিচার বুদ্ধিহীন, অকর্মণ্য কোনও মানব-মানবী। কারোও দৃষ্টি আকর্ষণে অপারগ, অবহেলায় পড়ে থেকে অর্থহীন জীবন যাপনের অনুৎকৃষ্ট উদাহরণ। অথচ সযত্নে লালিত হলে, সুশিক্ষায় যত্নবান হলে এরাও সমাজের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম। যেমন কখনো নিরালা ঘাসের সবুজ বাগিচায় ঘাসফুলের রঙিন উপস্থিতি গোটা চারণক্ষেত্রকে করে তোলে অনাবিল সৌন্দর্যের রম্যভূমি। ঘাসফুল আকারে ছোট হলেও সযত্নে লালিত হলে কুসুম বনে তারও মাহাত্ম্য অপরিসীম। আবার কোনও গল্পকারের বয়ানে যদি গল্পের চরিত্রসমূহকে অতি সাধারণ বলে ঘাসফুলের মর্যাদা বা তকমা দেওয়া হয়েছে তাহলেও বলা যায় এই ঘাসফুলই তো পৃথিবীময় বনানীর সৃষ্টিকথা। এদের উপেক্ষা করে তো বৃহতের পথে অগ্রসর হওয়া যায় না। ঘাসফুল কথাই তাই প্রকৃতপক্ষে জীবন কথা।    এই কথাটিরই সূত্র ধরে কৃতি তথা জনপ্রিয় সাহিত্যিক শর্মিলী দেব কানুনগোর সদ্য প্রকাশিত অণুগল্প

এক ‘অল্যলকম’ গল্পকথা

সাহিত্যিক সজল পাল-এর ‘ছোটদের গল্প সংকলন - অল্যলকম গন্প’। প্রকাশক - ভিকি পাবলিশার্স, গুয়াহাটি। আলোচনায় উঠে আসার মূল কারণ - এর বিষয় বৈচিত্র। একজন সফল শিশু সাহিত্যিক যে কী অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী হয়ে, শিশু মনস্তত্ত্বের গভীরে প্রবেশ করে ঋদ্ধ করেন শিশু সাহিত্যের মতো এক জটিল এবং ব্যতিক্রমী ধারার সৃষ্টিসম্ভার তা এই গল্প সংকলনটি না পড়লে অনুধাবন করা মুশকিল। সচরাচর অনুচ্চারিত, অনাস্বাদিত - শিশু মনের কিছু অনবদ্য বিষয়কে সহজ সরল করে এমন ভাবে বিন্যস্ত করেছেন যে সব বয়সের পাঠক পাঠিকার কাছে এই সংকলন হয়ে উঠেছে এক নিবিড় পাঠের উপকরণ। লেখক এই বইটি ‘উৎসর্গ’ নয়, ‘উপহার’ দিয়েছেন পুত্র সায়ন্তন (সায়ন)কে। পূর্বাভাষে আরেক নামী সাহিত্যিক মানিক দাস বেশ কয়েকটি গল্পের সূত্র ধরে পাঠকবর্গকে সুচারুভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন গ্রন্থকারের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে। বিচিত্র সব চিন্তাশক্তির সুনিপুণ প্রয়োগের খেইটি ধরিয়ে দিয়েছেন প্রাঞ্জল কথায়। মোট আঠারোটি গল্পের সমাহার এই গ্রন্থে। মগ্ন পাঠে একটির পর একটি গল্প অনায়াসে পড়ে ফেলা যায় সুস্বাদু খাবারের গলাধঃকরণের মতো। পশুপাখির জগতের সঙ্গে শিশুদের যে নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক সেই সম্পর্কের

অচিনপুরের কবিতা

কবিতার গায়ে নিভৃত যতনে যত বার রাখি হাত   ততই কবিতা আমাকে ডোবায় ফিরে আসে প্রতিঘাত। শ্রীকুমার আমি আপন আদলে গড়ে তুলি যত ছাঁচ পুড়ে মরি শুধু ব্যর্থ দহনে তপ্ত বহ্নি আঁচ। অধরা ছন্দ চোরাস্রোত হয়ে নীরবে নিভৃতে বয় কূলে বসে আমি দেখি তা তাকিয়ে হৃদয় বিষাদময়।   প্রভাতী আলোয় অমলিন ভাবে বিভোর মননে স্মরি আঁধার রাতের গভীর প্রহরে আবাহনে ধ্যান করি।   তবু থেকে যায় দূর বহু দূর দেয় না সে এসে ধরা আমার কবিতা শুধুই কাঁদায় কাটে না জীবনে খরা। কবিতা শরীরে অধরা মাধুরী লহরে লহর খেলে অনিমেষ বসে তাই দেখি শুধু পিয়াসী দু ' চোখ মেলে।   পথ চলা যেন দোদুল দোলায় লতাবিতানের শাখা আদুরে গতরে বালিকা বধুটি কলকল মধুমাখা।   আহা রে অমন একটি কবিতা   যদি সে আমার হতো নিজ হাতে গড়ি আপন মননে স্বপ্ন যে ছিল কত।   যা আছে আমার যতনের ধন সবটুকু দিয়ে তারে আদরে সোহাগে আপন খেয়ালে   সাজাতাম কবিতারে। অভিমানী সে যে কোন অপরাধে আমাকে রেখেছে দূর জানি না কবিতা আছে সে কোথায়   কোন সে অচিনপুর।   সারাটি জীবনে জ্বেলেছি যে কত ব্যর্থ প্রদীপ শিখা হলো না তবুও মনের মতো যে একটি কবিতা লিখা।

হংস মিথুন কথা

  এ এক অনাবিল অনুভব -   এ অনুভবে খাদ নেই এতটুকু। আছে শুধু হৃদয়ের অন্দর মহল থেকে উঠে আসা রাশি রাশি ভালো লাগা - শ্রাবণের ধারার মতো অনন্ত ভালোবাসা। দূর থেকে ওই হেঁটে আসা বালিকা - কিংবা নিয়ন আলোয় উদ্ভাসিত ওই কিশোরী ,  সবার মুখের হাসির ছোঁয়ায় নিভৃতে শুধু মানসী মেয়ের আদল খোঁজা। মাঝে মাঝেই - হাজার কাজের ফাঁকে উড়ু উড়ু মন রেশমি চলার পথে।   বিশ্ব যখন নিদ্রা মগন গভীর রাতে   ঘুম ভাঙানিয়া সুখ স্বপনের হাতটি ধরে দাঁড়ায় আমার আঁখির আগে ঘনঘোরে।   বাইরে তখন নিকষ কালো আঁধার শুধু ভিতর জুড়ে আলোয় আলোয়   দুই জোড়া চোখ তাকায় অনিমিখ।   কেউ জানে না কোন সে অপরাধ   কীসের অমোঘ টানে এমন   হৃদমাঝারে পানসি ছুটে তরতরিয়ে। এই কি তবে প্রেম ?  হয়তো তাই , কিংবা হয়তো না -   জানি শুধু বালিকা থেকে   যুবতী পথের নিখাদ উপাখ্যান।   অনুভবের দিনলিপিতে ব্যর্থ মর্মগাথা আর জনমের হংস মিথুন কথা।

স্বাধীনতার সহজ পাঠ

স্বাধীনতা মানে শুধু   একঘেয়ে চর্বিতচর্বন কথা নয় , ' কোথায় স্বাধীনতা ' বলে কল্পিত কথা নয় স্বাধীনতা মানে শুধু দোষারোপ গাথা নয়। আজকের ' আমাকে দেখো ' র নেশায় অতীতকে ভুলে থাকা নয়। স্বাধীন হয়ে বেঁচে থেকে পরাধীনতার গ্লানিকে অস্বীকার করা নয়। স্বাধীনতা মানে -   আতসকাঁচে দুঃখকে খুঁজে ফেরা নয়। ছল চাতুরী আঁতলামো করে নিজেকে জাহির করে পণ্ডিতি কথা নয়।   চার দেয়ালের সুখের ঘরে বসে নিন্দাবাদ কিংবা স্বেচ্ছাচারিতা নয়।   স্বাধীনতা মানে শুধু কান্না কথা নয়   জননেতার মুণ্ডপাতে ঝাল মেটানো নয়   ইনিয়ে বিনিয়ে শুধু নিরাশার কথা নয় ,  দেশপ্রেমের কপিরাইট কথা নয়।     স্বাধীনতা মানে -   পরাধীনতার কষ্টের স্মৃতিচারণ সংগ্রামী ইতিহাসকে মননে স্মরণ।   বীর শহিদদের সজল তর্পণ কৃতজ্ঞতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ।   চোখ খুলে সত্যকে সত্য বলে পুরোনো থেকে নতুনের মার্গদর্শন ,  উন্নয়নের স্বরূপকে প্রকৃত অনুধাবন।     স্বাধীনতা মানে শুধু হাহাকার প্রচার নয় স্বাধীনতা মানে একতরফা মিথ্যাচার নয়। স্বাধীনতা মানে উন্নত শির কথা প্রজন্মে সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়।   স্বাধীনতা মানে সত্যপথের অঙ্গীকার -   স্বাধীনতা

একটি সকাল - মহাবাহুর বাহুডোরে

  “ বাড়ির কাছে আরশিনগর সেথা পড়শি বসত করে , আমি একদিনও না দেখিলাম তারে ” ।   ‘ বিপুলা এ পৃথিবীর ’ রূপ রস গন্ধে যখন অন্তরাত্মা হয়ে ওঠে রসসিক্ত , জুড়ায় দু ’ নয়ন - তখন মোহাবিষ্ট মননে আমরা ছুটে বেড়াই হিল্লিদিল্লি , ছুটে চলি দূর থেকে দূরান্তে । কাঁড়িকাঁড়ি টাকাপয়সা খরচ করে হলেও নিয়মিত বেরিয়ে পড়ি আমরা - ভ্রমণপিয়াসী হৃদয়টাকে হাতের মুঠোয় করে । আমাদের ‘ উচাটন মন - ঘরে রয় না ’ । যুগ থেকে যুগান্তর ধরে বাহির আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে - ‘ বাহির হলেম আমি আপন ভিতর হতে , নীল আকাশে পাড়ি দেব খ্যাপা হাওয়ার স্রোতে ’ । আজ বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে , অতিমারীর করাল গ্রাসে ভ্রমণপিয়াসীদের হৃদ - নিকেতন হয়েছে ছন্নছাড়া । গৃহবন্দি দিনযাপনে সঘনে উথলে উঠে হৃদয়পুর । মন বিদ্রোহ করলেই ভেসে আসে ওই বজ্রনির্দেশ - ‘ আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ’ । এমনি আজ কাল পরশু করে করে দিন মাস বছর গড়িয়ে যায় তবু শান্ত হয় না পৃথিবী । মনের অন্দরমহলে গুমোট মেঘ এসে বাঁধে বাসা । ইচ্ছেডানা ছুটে ছুটে চলে দিকে দিকান্তরে । বই পড়ে আর পত্র পত্রিকায় ভ্রমণ কাহিনি পড়ে কিংবা অনলাইনে ঘোরাঘুরি করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা চলে অবিরাম