Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2023

দুই বরেণ্য কবির কাব্য সংকলন - ‘স্বপ্ন দেখি নিরন্তর’

অতীন দাস ও কস্তুরী হোমচৌধুরী। বরাক উপত্যকার দুই বর্ষীয়ান কবি। অসংখ্য কবিতা লিখেছেন দুজনেই। প্রকাশিত হয়েছে দুজনেরই একগুচ্ছ করে কাব্যগ্রন্থ। এই কথাটিই ৬৪ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যসংকলন ‘স্বপ্ন দেখি নিরন্তর’ -এ ব্লার্বের পরিবর্তে লিখা হয়েছে চতুর্থ পৃ ষ্ঠায়। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে বরাকেরই আরেক খ্যাতনামা কবি দীপক হোমচৌধুরীকে এবং গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন অন্যতম বিশিষ্ট কবি, সম্পাদক অশোক বার্মা। দুই পৃষ্ঠাজোড়া ভূমিকায় তিনি এই দুই কবির জীবন, লেখালেখি তথা সাহিত্যের প্রতি নিবেদনের বিস্তৃত তথ্য নিখুঁতভাবে পরিবেশন করেছেন - ‘কবি অতীন দাসের যেমন প্রকৃতি-প্রেম, সমাজ জীবনের নিখুঁত চিত্রাদি, রাজনৈতিক ডামাডোল, অন্যায়, অত্যাচার এবং দোষ-ত্রুটির প্রতি তীক্ষ্ণ ও তীর্যকভাবে প্রহার করার প্রবৃত্তি, অকুতোভয়তা লক্ষ করা যায় তাঁর রচনায় তেমনি কস্তুরী হোমচৌধুরী র রচনায় থাকে বরেণ্য মানুষের বন্দনা, স্তুতি, মাতা-পিতা, আত্মীয়স্বজনের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও প্রেম। সকলের প্রতি তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসার উচ্ছ্বাস।’    গ্রন্থে উভয় কবির কবিতাকে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কবিতাসমূহের আলাদা সূচিপত্র সহ। সেই অনুযায়ী দেখা

কে তুমি ?

এই যে আনন্দের তুমি বাড়িয়েছ পা উন্মুখ হয়ে গুনছ বসে প্রহর আর - বিষাদের তুমি , এসেছিলে একদিন না চাইলেও চলেছ একা পথে কী অবাক সাযুজ্য …… আনন্দে বিষাদে আপন আপন যাত্রাপথ নিয়েছ নিজের করে । আমার আছে শুধু বিষাদ বীণার সুর বুক জোড়া হাহাকার …… না , যেয়ো না । থেকে যাও আরো কিছু পল এত যদি ত্বরা তবে একদিন নাহয় একদিন …… চলো তবে এক সাথে যাই দূরে , ধরে হাতে হাত । আনন্দে বিষাদে - বলয় পেরিয়ে এ জীবন হোক কিস্তিমাত । আর নয় আসা , থাক শুধু শেষ যাওয়া বন্ধ হোক এ জীবন তরণী বাওয়া এক সাথে ধরে হাতে হাত ।

ডাকাতিয়া চোখ

চোখ যখন কথা বলে তখন কথারা থেমে যায় , নিস্তব্ধ নিৰ্বাক পাহাড়ি রাতের জলসাঘরে আমি হয়েছি নীরব দৰ্শক হতবাক৷ পাহাড় চূড়ায় ছবি হয়ে যেতে যেতে সূৰ্যমুখীরা দেখেছি নতমুখ দেখিনি তো সেই মুখে রাত - প্ৰথমের লাজরাঙা ডাকাতিয়া সুখ৷   আঁটোসাঁটো বনানীর পথে পথে মাখা গোধূলির সোনা রোদ্দুর খাঁজ ভেঙে সেইপথে , আমি ছুটে চলি উজান সোপান বহু দূর৷ নীড়ে ফেরা পাখিদের পিছু পিছু জোনাকির ইতিউতি সান্ধ্যভ্ৰমণ আবছা আলোর পথে আমি সে ও সখা , চুপিচুপি কাকলিকথন৷   রাতশেষে প্ৰভাতের প্ৰথম আলোয় বনানী ভাঙেনি আড়মোড়া সূৰ্য ওঁঠা পালাশেষে দিনভর হইহই , সাঁঝবেলা কুহকে মোড়া৷ চোখে তার গোধূলির সোনালি দিগন্ত আভা আমি দেখি অপলক অজস্ৰ সোপান শেষে আমার দুচোখ জুড়ে শুধুই জোনাকি পাবক৷   তারপর সেই রাত হিমেল চাদরে ঢাকা , বহ্ন্যুৎসব কুটোর আগুন গোলাকার কথার আসর , আড়চোখে দমছুট , চাহনিতে গজল ধুন৷ কবিতায় কবিতায় , বনবীথিকায় মুখ তুলে চন্দ্ৰমুখী নজরবন্দি সহসা সেইক্ষণে ঝরঝর চরাচরে ঝরে যায় হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা৷   সেই থেকে ডাকাতিয়া চোখ তার ফিরে আসে রোজ বারেবারে সেই চোখে দেখি আমি মায়াময় পৃথিবীর রং রূপ , বলি তারে ফেলো না পলক তুমি , বেঁচে থাক পৃথিবী - চন্দ

সরল গদ্যে আপনজনের কথা ‘চেনা মানুষের কথা’

বিশ্বজোড়া লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যে আমাদের চেনা মানুষের সংখ্যা কত ? কয়েক হাজার তো অন্তত হবেই । তাদের সবাইকে নিয়ে লিখতে গেলে পৃষ্ঠাসংখ্যায় ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বকোষকেও যা শুধু অসম্ভবই নয় , অকল্পনীয়ও । তাই বিশ্ব সাহিত্যে পছন্দের বা অতি আপন মানুষজনদের নিয়ে গদ্য পদ্য গ্রন্থের বহু প্রকাশ যদিও সবই সীমাবদ্ধ বিশেষ কয়েকজনকে নিয়ে । সুতরাং দক্ষিণ ত্রিপুরার বাইখোড়ার বাসিন্দা তথা ‘ অষ্টচরণ কবিতা ’ খ্যাত কবি অর্ধেন্দু ভৌমিক তাঁর ‘ চেনা মানুষের কথা ’ শীর্ষক সদ্য প্রকাশিত গদ্য সংকলনে সন্নিবিষ্ট করেছেন তাঁর একান্ত কাছের কয়েকজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের কথা । নিখাদ সরল গদ্য । এমন একটি ভাবনা , চিন্তাধারা নিয়েও যে গ্রন্থ প্রকাশ সম্ভব সেটাই করে দেখিয়েছেন গ্রন্থকার । এ নিয়ে ভূমিকায় ‘ লেখকের কথা ’ শিরোনামে গ্রন্থকার লিখছেন ‘ সব অনুভূতি লেখা হয়ে ওঠে না । দিনের আলোতে কতো শত শত অনুভূতি অঙ্কুরিত হয় , আবার রাতের আঁধারে গ্রাসে মুদে যায় । কর্মজীবনের , মানুষের সাহচর্যের , পার্থিব সম্পদের , ভালো লাগার , চিন্তনের , মর্ম ঘটনার অনুভূতি কলমের টানে সাদা কাগজে হয়ে ওঠে প্রকাশিত … । ’ ৬০ পৃষ্ঠার এই

ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ৩১তম সংখ্যা ‘মাতৃভাষা’

ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি , কাছাড় - এর বার্ষিক সাময়িকী ‘ মাতৃভাষা ’ র ৩১তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে এ বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে । সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা । প্রথমেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সম্পাদকীয়তে । সম্পাদকীয়তে, বলতেই হয় - মাতৃভাষার সুরক্ষা নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’একটি লাইন থাকলেও ভাষা শহিদদের নিয়ে কিছুই নেই। তার পরিবর্তে সমিতির এবং আলোচ্য সাময়িকীর বিষয়েই বেশি করে লিখা হয়েছে। সদ্য প্রয়াত বিশিষ্টজনদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং সাময়িকী প্রকাশে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনেই ব্যয় হয়েছে প্রায় পুরো সম্পাদকীয়। ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগ, তাঁদের নিবেদন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যের অভাব অনুভূত হয়েছে । এ সংখ্যায় রয়েছে মোট ৪টি প্রবন্ধ, ২৮ জন কবির কবিতা এবং ‘বহুভাষী লেখা’ শিরোনামে বিভিন্ন ভাষার মোট ৬টি কবিতা। প্রবন্ধ বিভাগের প্রথম রচনা সুনীল রায়-এর ‘ইতিহাসের পর্যালোচনায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন - একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন’। ধর্মভিত্তিক দেশভাগের পর ভাষাভিত্তিক অত্যাচার ও পীড়নের সংক্ষিপ্ত হলেও এক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে

আপন ঐতিহ্যের তথ্যভিত্তিক ঐতিহাসিক দলিল ‘মনু-বরাকের প্রাচীন জনপ্রবাহ’

মনু - বরাক । সূত্র অনুযায়ী ত্রিপুরা রাজ্যের দীর্ঘতম নদী মনু , যার গতিপথ উত্তর ত্রিপুরা জিলা হয়ে এবং আসামের বরাক উপত্যকার সর্ববৃহৎ নদী বরাক যার একটি অংশ কুশিয়ারা । বাংলাদেশের সিলেটের মনুমুখে মিলিত হয়েছে এই দুটি নদী । তাই মনু - বরাক অর্থে উত্তর ত্রিপুরা , বরাক উপত্যকা এবং বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলকে প্রতিপাদ্য হিসেবে ধরে নিয়ে আলোচ্য গ্রন্থটির নাম ‘ মনু - বরাকের প্রাচীন জনপ্রবাহ ’ যদিও মূলতঃ স্বাধীনতাপূর্ব সময়ের বৃহত্তর সিলেটের জনপ্রবাহ , ইতিহাস , লোক পরম্পরা , মানব সম্পদ , সামাজিক বাতাবরণের উপর এক গভীর অধ্যয়নসঞ্জাত এবং গবেষণাকৃত রচনার সম্ভার এই গ্রন্থ । অর্থাৎ এক সুচিন্তিত গ্রন্থনাম ।   লেখক ত্রিপুরার বিশিষ্ট কবি , প্রাবন্ধিক ও গবেষক মন্টু দাস । গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট নয়টি অধ্যায় । দুটি অধ্যায় ইতিহাসাশ্রিত হলেও বাকি সাতটি অধ্যায় পুরোপুরি গবেষণামূলক । আগরতলার উইমেন্স কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ড . নারায়ণ ভট্টাচার্য ভূমিকা হিসেবে গ্রন্থটির প্রসঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সারধর্মী পরিচয় তুলে ধরেছেন । তাঁর কথায় ‘… ত্রিপুরায় ইতিহাস গবেষণার একটি ধারা অনেকদিন আগে থেকেই ক্ষীণভাবে প্

উত্তর পূর্বের সাহিত্যচর্চায় প্রয়াত সাহিত্যিক দেবাশিস দত্তের অবদান

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একনিষ্ঠ এক নীরব পূজারী তথা আমাদের প্রতিবেশী এক রাজ্য নাগাভূমি বা নাগাল্যান্ডের বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে একা কুম্ভের মতো প্রতিষ্ঠিত একমেবাদ্বিতীয়ম কবি , সাহিত্যিক , প্রবন্ধকার - প্রয়াত দেবাশিস দত্ত । বাংলা সাহিত্যের ভুবনে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছিল নাগাল্যান্ড কিংবা উত্তর পূর্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু দূর ।    ধর্মমূলক ছবির বদলে যাঁর বৈঠকখানার মূল বহির্গমন দ্বারের উপরে স্রোতের বিপরীতে সসম্মানে স্থান করে নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র - সাহিত্যে তাঁর আত্মোৎসর্গ সহজেই অনুমেয় । সাহিত্য চর্চার স্থান এই বৈঠকখানার বাকি দেয়াল অবধারিতভাবেই রবীন্দ্রময় । মুখোমুখি দুই দেয়ালে সরলরৈখিক অবস্থানে বিরাজিত ছিলেন সত্যজিৎ এবং সুকান্তও । বলতে গেলে রবীন্দ্র ছায়ায় আচ্ছাদিত এই নিবেদিত প্রাণ সাহিত্যিক কী অসীম একাগ্রতায় যে সাহিত্যের এই অখ্যাত , নির্জন ভুবনে বসে রচনা করে গিয়েছেন অফুরন্ত সব প্রাণবন্ত সাহিত্য , গভীরে প্রবেশ না করলে তা বোঝার উপায় নেই । ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নাগাল্যান্ড নামের এই রাজ্যে – বাংলা ও বাঙালি যেখানে সংখ্যালঘুত্বের খাতিরে চির ব্রাত