ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে
মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতি,
কাছাড়-এর বার্ষিক সাময়িকী ‘মাতৃভাষা’র ৩১তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে এ বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহা।
প্রথমেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয়তে, বলতেই হয় - মাতৃভাষার সুরক্ষা নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’একটি লাইন থাকলেও ভাষা শহিদদের নিয়ে কিছুই নেই। তার পরিবর্তে সমিতির এবং আলোচ্য সাময়িকীর বিষয়েই বেশি করে লিখা হয়েছে। সদ্য প্রয়াত বিশিষ্টজনদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং সাময়িকী প্রকাশে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনেই ব্যয় হয়েছে প্রায় পুরো সম্পাদকীয়। ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগ, তাঁদের নিবেদন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যের অভাব অনুভূত হয়েছে।
এ সংখ্যায় রয়েছে মোট ৪টি প্রবন্ধ, ২৮ জন কবির কবিতা এবং ‘বহুভাষী লেখা’ শিরোনামে বিভিন্ন ভাষার মোট ৬টি কবিতা। প্রবন্ধ বিভাগের প্রথম রচনা সুনীল রায়-এর ‘ইতিহাসের পর্যালোচনায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন - একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন’। ধর্মভিত্তিক দেশভাগের পর ভাষাভিত্তিক অত্যাচার ও পীড়নের সংক্ষিপ্ত হলেও এক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই যেভাবে ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই ধারাবাহিকতা যে আজও চলে আসছে সমানে তার যথার্থ উল্লেখে নিবন্ধটি মূল্যবান হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় নিবন্ধ ‘উনিশের শহিদ বেদি - সূচনার কথা’। লেখক রাজীব কর। এটি মূলত একটি প্রতিবেদন। ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে অকুস্থলে একটি শহিদ বেদি নির্মাণের বিস্তারিত প্রতিবেদন। এই প্রচেষ্টার পিছনে যাঁদের অবদান তাঁদের পরিচয় পাঠকের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল। সবার অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে বহু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই শহিদ বেদি স্থাপনের একগুচ্ছ ছবি সহ এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এই নিবন্ধটি। নিবন্ধের শেষ লাইনে ব্যক্ত করা হয়েছে উপত্যকার মানুষ তথা আপামর ভাষাপ্রেমীদের ন্যায্য দাবি - ভাষা শহিদ স্টেশন হিসেবে শিলচর রেল স্টেশনের নামকরণ। প্রতিবেদনে আছে প্রত্যয়, আছে প্রতিশ্রুতি - ‘ভাষা শহিদ স্টেশন, শিলচর সরকারি ঘোষণার পর ‘উনিশের শহিদ বেদি’তে ব্রোঞ্জের আবরণ করার অদম্য ইচ্ছা রইল’। এর পর ‘জীবনরেখা’ শিরোনামে জয়ন্তী দত্তের একটি এক পৃষ্ঠার রচনা যা বেশ কিছুদিন থেকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল সম্ভবত ফেসবুক থেকে সংগৃহীত - যদিও তার উল্লেখ নেই। এই রচনা এবং তার পর শিবানী গুপ্ত লিখিত অণুগল্পের আদলে লিখা রচনা ‘গৌরীবালার নকশিকাঁথা’ বিষয়বহির্ভূত দুটি রচনা।
এরপর ১৫ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল অবধি সময়কালের ‘মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির কাজকর্মের খতিয়ান’। বিস্তৃত এই প্রতিবেদনটি পেশ করেছেন সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তী। কবিতা বিভাগে আছে নবীন প্রবীণ কবিদের মোট ২৮টি কবিতা। তার অধিকাংশই ভাষা বিষয়ক। প্রথম কবিতাটি ১৯৬১র ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সংগ্রামী সত্যাগ্রহী চামেলি কর-এর ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস’। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে কবিতাটি। এই বিভাগে উল্লেখযোগ্য কবিতা লিখেছেন কবি অঞ্জু এন্দো, কৃষ্ণা বসু, চন্দ্রিমা দত্ত, মুন চক্রবর্তী, মীরা পাল, আরতি রায়, শর্মি দে, অভিজিৎ সাহা, মানিক মজুমদার, দীপ্তি চক্রবর্তী। এছাড়াও আছেন কবি শিশির কুমার বিশ্বাস, যদুনন্দন কুণ্ডু, অপরাজিতা, নমিতা রায়, মিনু রায়, বাবুল চৌধুরী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুতপা দে, শুক্লা ভট্টাচার্য, অজন্তা কর, শিপ্রা দাস, পান্না ভট্টাচার্য, রীণা দে, সুখেন দাস, সপ্তমিতা নাথ, বিদ্যা (সোনম পাণ্ডে) ও লিলি দেবী।
বহুভাষী লেখা বিভাগের মোট ৬টি কবিতার মধ্যে আছে ছিলোমিলো ভাষায় লিখা অভিজিৎ চক্রবর্তী ও কাজল দেমতার দুটি কবিতা। মণিপুরী ভাষার কবি আই এস থিঙ্গোম এর কবিতার বাংলা অনুবাদ করেছেন শ্যামলী দেবী। কুসুম কলিতার অসমিয়া কবিতার বাংলা ভাষান্তর করেছেন কবি নিজেই। এছাড়া আছে শ্যামলী দেবী ও লক্ষণ প্রকাশের দুটি ইংরেজি কবিতা।
পত্রিকার শেষ প্রচ্ছদের বাইরে ভেতরে রয়েছে সমিতির নানা অনুষ্ঠানের রঙিন ছবিসমূহ। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়নি কাউকেই। মাতৃভাষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই সংখ্যার ছাপা তথা অক্ষর, শব্দবিন্যাস আদি যথাযথ মানের হয়েছে। মুদ্রণে মালতী প্রিন্টার্স, শিলচর। স্বচ্ছ, প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে দেবাশিস মাজি, শান্তিনিকেতন।
প্রথম প্রবন্ধ ও অন্য দু’একটি পৃষ্ঠায় কিছু বানান বিসংগতির বাইরে একটি সাধু প্রয়াস যদিও ভাষা ও শহিদ সংক্রান্ত আরোও কিছু গভীর তাত্ত্বিক নিবন্ধাদির অভাব অনুভূত হয়েছে। পরবর্তীতে তা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে আশা করা যেতেই পারে।
প্রথমেই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সম্পাদকীয়তে। সম্পাদকীয়তে, বলতেই হয় - মাতৃভাষার সুরক্ষা নিয়ে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’একটি লাইন থাকলেও ভাষা শহিদদের নিয়ে কিছুই নেই। তার পরিবর্তে সমিতির এবং আলোচ্য সাময়িকীর বিষয়েই বেশি করে লিখা হয়েছে। সদ্য প্রয়াত বিশিষ্টজনদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং সাময়িকী প্রকাশে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনেই ব্যয় হয়েছে প্রায় পুরো সম্পাদকীয়। ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগ, তাঁদের নিবেদন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যের অভাব অনুভূত হয়েছে।
এ সংখ্যায় রয়েছে মোট ৪টি প্রবন্ধ, ২৮ জন কবির কবিতা এবং ‘বহুভাষী লেখা’ শিরোনামে বিভিন্ন ভাষার মোট ৬টি কবিতা। প্রবন্ধ বিভাগের প্রথম রচনা সুনীল রায়-এর ‘ইতিহাসের পর্যালোচনায় বাহান্নর ভাষা আন্দোলন - একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন’। ধর্মভিত্তিক দেশভাগের পর ভাষাভিত্তিক অত্যাচার ও পীড়নের সংক্ষিপ্ত হলেও এক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই যেভাবে ভাষাভিত্তিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই ধারাবাহিকতা যে আজও চলে আসছে সমানে তার যথার্থ উল্লেখে নিবন্ধটি মূল্যবান হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় নিবন্ধ ‘উনিশের শহিদ বেদি - সূচনার কথা’। লেখক রাজীব কর। এটি মূলত একটি প্রতিবেদন। ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন শহিদের স্মৃতি রক্ষার্থে অকুস্থলে একটি শহিদ বেদি নির্মাণের বিস্তারিত প্রতিবেদন। এই প্রচেষ্টার পিছনে যাঁদের অবদান তাঁদের পরিচয় পাঠকের কাছে তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল। সবার অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে বহু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই শহিদ বেদি স্থাপনের একগুচ্ছ ছবি সহ এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এই নিবন্ধটি। নিবন্ধের শেষ লাইনে ব্যক্ত করা হয়েছে উপত্যকার মানুষ তথা আপামর ভাষাপ্রেমীদের ন্যায্য দাবি - ভাষা শহিদ স্টেশন হিসেবে শিলচর রেল স্টেশনের নামকরণ। প্রতিবেদনে আছে প্রত্যয়, আছে প্রতিশ্রুতি - ‘ভাষা শহিদ স্টেশন, শিলচর সরকারি ঘোষণার পর ‘উনিশের শহিদ বেদি’তে ব্রোঞ্জের আবরণ করার অদম্য ইচ্ছা রইল’। এর পর ‘জীবনরেখা’ শিরোনামে জয়ন্তী দত্তের একটি এক পৃষ্ঠার রচনা যা বেশ কিছুদিন থেকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল সম্ভবত ফেসবুক থেকে সংগৃহীত - যদিও তার উল্লেখ নেই। এই রচনা এবং তার পর শিবানী গুপ্ত লিখিত অণুগল্পের আদলে লিখা রচনা ‘গৌরীবালার নকশিকাঁথা’ বিষয়বহির্ভূত দুটি রচনা।
এরপর ১৫ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল অবধি সময়কালের ‘মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির কাজকর্মের খতিয়ান’। বিস্তৃত এই প্রতিবেদনটি পেশ করেছেন সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তী। কবিতা বিভাগে আছে নবীন প্রবীণ কবিদের মোট ২৮টি কবিতা। তার অধিকাংশই ভাষা বিষয়ক। প্রথম কবিতাটি ১৯৬১র ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সংগ্রামী সত্যাগ্রহী চামেলি কর-এর ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস’। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে কবিতাটি। এই বিভাগে উল্লেখযোগ্য কবিতা লিখেছেন কবি অঞ্জু এন্দো, কৃষ্ণা বসু, চন্দ্রিমা দত্ত, মুন চক্রবর্তী, মীরা পাল, আরতি রায়, শর্মি দে, অভিজিৎ সাহা, মানিক মজুমদার, দীপ্তি চক্রবর্তী। এছাড়াও আছেন কবি শিশির কুমার বিশ্বাস, যদুনন্দন কুণ্ডু, অপরাজিতা, নমিতা রায়, মিনু রায়, বাবুল চৌধুরী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুতপা দে, শুক্লা ভট্টাচার্য, অজন্তা কর, শিপ্রা দাস, পান্না ভট্টাচার্য, রীণা দে, সুখেন দাস, সপ্তমিতা নাথ, বিদ্যা (সোনম পাণ্ডে) ও লিলি দেবী।
বহুভাষী লেখা বিভাগের মোট ৬টি কবিতার মধ্যে আছে ছিলোমিলো ভাষায় লিখা অভিজিৎ চক্রবর্তী ও কাজল দেমতার দুটি কবিতা। মণিপুরী ভাষার কবি আই এস থিঙ্গোম এর কবিতার বাংলা অনুবাদ করেছেন শ্যামলী দেবী। কুসুম কলিতার অসমিয়া কবিতার বাংলা ভাষান্তর করেছেন কবি নিজেই। এছাড়া আছে শ্যামলী দেবী ও লক্ষণ প্রকাশের দুটি ইংরেজি কবিতা।
পত্রিকার শেষ প্রচ্ছদের বাইরে ভেতরে রয়েছে সমিতির নানা অনুষ্ঠানের রঙিন ছবিসমূহ। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়নি কাউকেই। মাতৃভাষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই সংখ্যার ছাপা তথা অক্ষর, শব্দবিন্যাস আদি যথাযথ মানের হয়েছে। মুদ্রণে মালতী প্রিন্টার্স, শিলচর। স্বচ্ছ, প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে দেবাশিস মাজি, শান্তিনিকেতন।
প্রথম প্রবন্ধ ও অন্য দু’একটি পৃষ্ঠায় কিছু বানান বিসংগতির বাইরে একটি সাধু প্রয়াস যদিও ভাষা ও শহিদ সংক্রান্ত আরোও কিছু গভীর তাত্ত্বিক নিবন্ধাদির অভাব অনুভূত হয়েছে। পরবর্তীতে তা কাটিয়ে উঠা যাবে বলে আশা করা যেতেই পারে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৭৪৪৩৩৩৬৪
Comments
Post a Comment