Skip to main content

Posts

Showing posts from January, 2022

অপরাজিতা

মন খারাপ করা এক হৈমন্তী সকালে আনমনে বারান্দার বাইরে তাকিয়ে আছে অপরাজিতা । ভোরের শিশিরের আস্তরণ খসে যেতেই উঠোনের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা অতসীগুলো প্রথম সূর্যের আলো গায়ে মেখে নিজেদের পাপড়িগুলো মেলে ধরছে আপন গরিমায় । শিশিরবিন্দু মাখা জালগুলো গুটিয়ে নিচ্ছে দুষ্টু মাকড়সাগুলো । কিছুই নজর এড়ায় না অপরাজিতার । কামিনীর গন্ধে ম ম করছে সারা বাড়ি । উঠোন জুড়ে কাল রাতের ধান মাড়াইয়ের পর ধানী গন্ধে ছেয়েছিল চরাচর । রাতে কামিনী তার সৌরভ ছড়িয়ে আচ্ছা জব্দ করেছে ধানের গন্ধকে । সব মিলিয়ে এক নতুন আবেশ যেন ছেয়ে থাকে বাড়িটার আনাচে কানাচে । ওপাশের শিউলিও রোজ রাতে ফুল ঝরায় এখনো । রূপ আর সৌরভের যেন এক অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে এখন । চলবে বহুদিন । সেই শেষ চৈত্র ইস্তক । দেখে অপরাজিতা - তারিয়ে তারিয়ে আর ভাবে যতই তোরা জারিজুরি দেখাস না কেন কে আর তোদের দিকে ফিরে তাকায় ? এ বাড়ির আদি বাসিন্দা হয়েও তোরা একাই থাকিস । অথচ এই আমাকে দেখ । উদ্বাস্তু হয়ে এসেও আমি কেমন আদরে যত্নে রসেবশে থাকি । অবশ্য তোদের সাথে আমার তো আর তুলনা চলে না । প্রাণে প্রাণেও ফারাক থাকে । তোরা থাকিস বাইরে পড়ে আর আমি মালিকের খাস মহলে ।

গণতন্ত্র, মিথ্যাচার ও নাটক

সদ্য পেরিয়েছি আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস কিংবা গণতন্ত্র দিবস । রাজতন্ত্র আর নেই । সুতরাং রাজাও নেই , প্রজাও নেই । তবে প্রজা অর্থে সাধারণ লোক অর্থাৎ জনগণ অবশ্যই আছেন এবং দেশে এদেরই আধিক্য । এরাই সরকার নির্বাচিত করেন এবং সেই সরকার গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা করেন । সুতরাং আজ সাধারণতন্ত্র দিবস বা গণতন্ত্র দিবসের পরিপ্রেক্ষিতে আসুন একটু দেখে নেওয়া যাক আমরা সাধারণ মানুষেরা এ দেশে কতটুকু গণতান্ত্রিক জীবন যাপন করছি এবং কতটুকু গণতান্ত্রিক জ্ঞান আহরণ করেছি ।   পত্র পত্রিকা কিংবা সামাজিক মাধ্যম খুললেই দেখা যায় শিক্ষিত মানুষের লেখালেখির প্রাচুর্য । দুঃখজনক ভাবে এর অধিকাংশই নঞাঁর্থক । এসব দেখে মনে হয় এই দেশে এই মুহূর্তে পজিটিভ বলতে কিছুই নেই একমাত্র করোনা রোগীর বাইরে । একটি কথা প্রায়শঃই দেখতে পাওয়া যায় - দেশ আজ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । কিংবা দেশের সামনে আজ সমূহ বিপদ । অথবা দেশটাকে ওরা বিক্রি করে দিচ্ছে । সরকার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । এসব পেটেন্টমার্কা কিছু শব্দাবলি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে এবং আমরা এসব শিখে নিয়ে চর্বিতচর্বণ করেই যাচ্ছি । পাশাপ

দৃঢ়বন্ধন ‘শারদ অর্ঘ্য’

শতাধিক নির্বাচিত কবিতার অনবদ্য শারদ সংকলন - দৃঢ়বন্ধন ‘শারদ অর্ঘ্য’ অনেকেই কবিতা লিখেন , কবিতা পড়েন কিন্তু কবিতার গরজে প্রতি সপ্তাহে কবিদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে পত্রিকা প্রকাশ করে থাকেন - তাও নিয়মিত , বহু বছর ধরে - সেরকমটি কিন্তু সহজে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না । অথচ আমাদের ‘ বাড়ির কাছে আরশি নগর ’ বরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি থেকে পম্পা গুহ ঠাকুরতা এবং দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতার যৌথ সম্পাদনায় সাপ্তাহিক কবিতার অণুপত্রিকা হিসেবে ‘ দৃঢ়বন্ধন ’ প্রকাশিত হয়ে আসছে নিয়মিত । সম্প্রতি শারদ সংখ্যা হিসেবে দুই বাঁধাই মলাটের ভেতর মোট ১০৬টি কবিতার সমাহারে প্রকাশিত হলো দৃঢ়বন্ধন-এর ‘শারদ অর্ঘ্য’। ‘পহলে দর্শনধারী ফির গুণ বিচারি’ - শারদ অর্ঘ্য-এর প্রচ্ছদ এক নজরে প্রথমেই পাঠকের চিত্ত আকর্ষণ করে নিতে সক্ষম। ভেতরের মণিমুক্তোগুলোকে নাড়াচাড়া করার খিদে চাগিয়ে দেয়, অথচ কী আশ্চর্য, কোথাও প্রচ্ছদ শিল্পীর নামোল্লেখ নেই। ব্যতিক্রমী এই বিশাল সম্ভারের সম্পাদনায় উপরোক্ত দুই জনের সঙ্গে রয়েছেন আরোও তিনজন স্বনামধন্য কবি - সুপ্রদীপ দত্তরায়, সুশান্ত ভট্টাচার্য এবং গোপাল চক্রবর্তী। স্বভাবতই চমৎকার একটি সম্পাদকীয় রয়েছে - যার

'মহন্ত সিরিজ' - তপন মহন্ত

কবিতার ঘোর - মহন্ত সিরিজ   কবিতা এমনই এক শিল্প যেখানে শব্দেরা কথা বলে এক একটি বাক্য হয়ে। কবি তাঁর মনের কথাটি প্রতিটি শব্দে এঁকে দেন নিপুণ পটুয়ার মতো। কবিতার তাই অবয়ব নয়, শব্দের পারিপাট্যই মুখ্য। দারুহরিদ্রা পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি তপন মহন্ত-এর কবিতা-বই ‘মহন্ত সিরিজ’। শুধুমাত্র একটি সিরিজ নিয়ে একটি আস্ত কবিতার বই - সচরাচর এমনটা খুবই কম দেখা যায় যদিও এই সংকলনটি এমন সাহসের যাথার্থ্য প্রকাশ করেছে নিশ্চিত। ৩২ পৃষ্ঠার বইয়ে আছে নেই নেই করেও ২৮টি কবিতা যেখানে শব্দেরা কথা বলেছে আপন খেয়ালে। তাই এখানে ভারের চাইতে ধারের পাল্লা ভারী। এবং স্বভাবতই এমন দুঃসাহস প্রকৃত অর্থেই ষোলোআনা সফল। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘মহন্ত মহারাজ’কে। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়েছে টংলার অভিজিৎ চক্রবর্তীর উদ্দেশে। যেহেতু ‘মহন্ত সিরিজ’, তাই স্বভাবতই স্বগতোক্তির পয়োভার। মনের কথাকে কবিতায় করা হয়েছে সুষমামণ্ডিত। তা বলে পাঠকের দরবারে তা মোটেও ব্যক্তিগত মনে হবে না। কারণ কবিতার মাধুর্য, কবিতার স্বকীয়তা, কবিতার কবিতাময়তা ছাপিয়ে গেছে সব বিপত্তি। অধিকাংশ (বোধ করি প্রতিটি কবিতাই) নেওয়া হয়েছে তাঁর ইতিপূর্বে প্রকাশিত কাব্য সংকলনগুলো