Skip to main content

গণতন্ত্র, মিথ্যাচার ও নাটক


সদ্য পেরিয়েছি আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবস কিংবা গণতন্ত্র দিবস রাজতন্ত্র আর নেই সুতরাং রাজাও নেই, প্রজাও নেই তবে প্রজা অর্থে সাধারণ লোক অর্থাৎ জনগণ অবশ্যই আছেন এবং দেশে এদেরই আধিক্য এরাই সরকার নির্বাচিত করেন এবং সেই সরকার গণতান্ত্রিক উপায়ে দেশ পরিচালনা করেন সুতরাং আজ সাধারণতন্ত্র দিবস বা গণতন্ত্র দিবসের পরিপ্রেক্ষিতে আসুন একটু দেখে নেওয়া যাক আমরা সাধারণ মানুষেরা এ দেশে কতটুকু গণতান্ত্রিক জীবন যাপন করছি এবং কতটুকু গণতান্ত্রিক জ্ঞান আহরণ করেছি  

পত্র পত্রিকা কিংবা সামাজিক মাধ্যম খুললেই দেখা যায় শিক্ষিত মানুষের লেখালেখির প্রাচুর্য দুঃখজনক ভাবে এর অধিকাংশই নঞাঁর্থক এসব দেখে মনে হয় এই দেশে এই মুহূর্তে পজিটিভ বলতে কিছুই নেই একমাত্র করোনা রোগীর বাইরে একটি কথা প্রায়শঃই দেখতে পাওয়া যায় - দেশ আজ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কিংবা দেশের সামনে আজ সমূহ বিপদ অথবা দেশটাকে ওরা বিক্রি করে দিচ্ছে সরকার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এসব পেটেন্টমার্কা কিছু শব্দাবলি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে এবং আমরা এসব শিখে নিয়ে চর্বিতচর্বণ করেই যাচ্ছি পাশাপাশি আবার পরিবর্তনের দাবিও তুলছি যা কিছু পুরোনো সব বদলে ফেলতে হবে স্কুলে শিক্ষকরা ছাত্রের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোন ধরণের নির্দেশ দিতে পারবেন না, গায়ে হাত তুলতে পারবেন না, ফেল করাতে পারবেন না পরিবর্তন হচ্ছে, তবে এসব পরিবর্তন কিন্তু কোন সরকার করেনি আমরাই চেয়েছিলাম ফলে আজকের দিনে ছাত্ররা পকেটে মদের বোতল নিয়ে ক্লাসে যায় আর সুন্দরী শিক্ষিকাদের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে কুকথা বলে বাইরে রাস্তায় বেলেল্লাপনা করে ঘুরে বেড়ানো কিশোরদের দেখেও আপনি কিছু বলতে পারবেন না কারণ সেই অধিকার আমাদের নেই এবং ওদের সেই স্বাধীনতাটুকু আমরাই দিয়েছি অভিভাকদের বক্তব্য - আমার ছেলেকে শাসন করার আপনি কে ? তাই পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে আমরা নব্য হচ্ছি পরিবর্তন এসেছে বৈকি

ফেসবুক, পত্রপত্রিকায় নির্বিচারে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার হচ্ছে এখানে আবার অশ্লীলতার সংজ্ঞা নিয়ে শুরু হয়ে যাবে কড়চা আপনি অশ্লীলতার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই একটি প্রশ্ন ধেয়ে আসবে - অশ্লীলতার সংজ্ঞা কী ? যেসব শব্দাবলি আমরা স্বল্পশিক্ষিত থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত লোকজন সরাসরি জনসমক্ষে কিংবা নিজেদের মধ্যে উচ্চারণ করি না বা করতে পারি না সেসবই হলো অশ্লীল শব্দ অশিক্ষিতদের সংখ্যা এখানে ধরছি না কারণ এদের সংখ্যা আজ দেশে প্রায় বিরল শ্লীল বা অশ্লীলের পার্থক্য বুঝতে বিশিষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই অথচ পণ্ডিত লিখিয়েদের বয়ানে প্রত্যন্ত সমাজে ঘরের ভেতর যেসব গালিগালাজ ব্যবহার হয়ে থাকে তাকে সমক্ষে তুলে ধরারও প্রয়োজন আছে বৈকি - এবং তাই এসব শব্দাবলির যথেচ্ছ প্রয়োগ দরকার তাদেরও আমরা অবহেলা করতে পারিনা তারাও সমাজের অঙ্গ এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে অশ্লীলকে শ্লীল বা অভদ্রকে ভদ্র হিসেবে উত্তরণের পথ না দেখিয়ে এসবের যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে কি আমরা সমাজটাকেই কলুষিত করছি না ? পরবর্তী প্রজন্মকে অভদ্র, অশ্লীল করে তোলার ইন্ধন যোগাচ্ছি না ? কিন্তু কে বুঝে কার কথা ? আমাদের চাই পরিবর্তন বৃদ্ধ মা বাবার ভরণপোষণের জন্য সন্তানকে বাধ্য করতে এখন দেশে আইন বানাতে হয় এসব কি আমাদেরই কৃতকর্মের ফল নয় ?

আমরা সব জেনেও অবুঝ, সব দেখেও অন্ধ কারণ আমাদের চাই যশ, সুনাম তাই পরিবর্তনের সুনামি এনে নাম কামানোর চেষ্টা করতে ক্ষতি কী ? রাজনৈতিক মতভেদের আড়ালে গেল গেল রব তুলে সমাজকে ভুল পথে পরিচালিত করলে ক্ষতি কী ? আমি তো বিশিষ্ট হলাম কেউ প্রত্যন্ত গ্রামের জীর্ণ কুটিরের ছবি দিয়ে ক্যাপশন লিখবেন - হায় ভারতবর্ষ অথচ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আজকাল আবাস যোজনার মাধ্যমে দেশে কোটি কোটি ঘর তৈরি হচ্ছে চোখের সামনে গড়ে উঠছে সুদৃশ্য দালান, অট্টালিকা আমাদেরই ওইসব আমরা নিজেদের আখের ঠিকই গুছিয়ে নিতে জানি কিন্তু বিরোধিতার জন্য কুযুক্তি দেখাতে আমাদের জুড়ি নেই সরকারের সমালোচনায় আমরা সামাজিক মাধ্যমে মুখর নির্জন রাস্তায় আমাদেরই শেখানো পরিবর্তনের ললিপপের বলি হওয়া কোনও গুণ্ডা বদমাশের হাতে সাধারণ পথচারী যদি লুণ্ঠিত, ধর্ষিত, মৃত হয়ে যায় - কোন সরকারি হাসপাতালে হামলা করে কর্তব্যরত ডাক্তারকে গণহারে পিটুনি দেয় - তখন সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সামাজিক মাধ্যমে হামলে পড়ি সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে অমুক থানা থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে এই জঘণ্য ঘটনা দেশে অরাজকতা চলছে সরকার, প্রশাসন কুম্ভকর্ণ নিদ্রায় যেন যত দোষ শুধু সরকারেরই, দুষ্কৃতিকারীদের নয় তাদের বিরুদ্ধে একটি বাক্যও আমরা ব্যয় করি না কারণ এতে আমাদের ক্ষতি বৈ লাভ কিছু নেই এই স্বার্থপরদের বলতে ইচ্ছে হয় আপনার ঘরের পেছনে দশ মিটার দূরত্বেও যদি নিঃশব্দে কোন অঘটন ঘটে, আপনি টের পান কি ? সরকার কি সারা দেশ জুড়ে প্রতি বর্গফুটে একজন করে সিপাহি রাখবে ? আপনি কুশিক্ষায় সমাজকে উজ্জীবিত করবেন আর সরকার আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে ? কখনো সরকারের ভালো কাজের উল্লেখ করেছেন কোথাও ? সারা দেশের কোটি কোটি ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে জল, বিজলি বাতি সেসব উত্তরণের খবর কেন শেয়ার করব ? এতে যে রাজনৈতিক শয়তানি হবে না ছাত্রাবস্থা থেকেই মগজ ধোলাই এর যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সেই ব্যবস্থাটির তো তাহলে অকালমৃত্যু হয় আমরা এতটাই অসহিষ্ণু যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনার জন্যও আমরা সরকারকেই কাঠগড়ায় ওঠাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি কারণ এতে সাপও মরে আর লাঠিও ভাঙে না নিন্দাবাদের ফলে সমাজে এক কেউকেটা হওয়ার সুযোগ হয়ে যায় অথচ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কোন ধরণের শাস্তির সম্ভাবনাও থাকে না অনেককেই দেখা যায় বলতে - আমরা আজ বাকস্বাধীনতা হারিয়েছি মুখ খুললেই বিপদ আসলে যুগ যুগ ধরে চলে আসা মিথ্যাচারের মুখোশ এখন অনেকটাই অনাবৃত হয়ে পড়েছে তাই মিথ্যা কথার ফাঁদে এখন অনেকেই আর পা দেয় না পাশাপাশি শুরু হয়ে গেছে এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিথ্যুকরা নগ্ন হয়ে পড়ছেন সমাজে তাই বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ আসলে বাকস্বাধীনতা নয়, বিপদে এখন মিথ্যাচারের স্বাধীনতা মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বোকা বানানোর দিন প্রায় শেষ তাই এত হাহাকার তবু কয়লা না ছাড়ে ময়লা এতদিনের আহৃত কুসংস্কারকে কি আর এত সহজে ঝেড়ে ফেলা যায় ? ধোলাই হওয়া মগজকে কি আর সহজ পথে ফিরিয়ে আনা যায় ? তাই আড়ালে আবডালে সুযোগ পেলেই এখনো সমানে চলছে মিথ্যাচার গণতন্ত্র ধ্বংসের নামে মিথ্যা প্রচার

অথচ নিজেরা কতটুকু গণতান্ত্রিক সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায় অন্যের নিন্দা বড়ই সহজ বিপরীতে নিজেদের ছায়া আমরা নিজেই দেখি না সব গণতান্ত্রিক নিয়ম কানুন কি মেনে চলছি আমরা ? প্রশ্ন করেছেন কি নিজেদের - হে মহান পণ্ডিতবর্গ ? রাস্তাঘাটে নিয়ম মেনে যানবাহন চালান তো ? যত্রতত্র পানের পিক ফেলে, আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে দূষিত করছেন না তো ? ইলেকট্রিক পোস্টের গায়ে চূণ মেখে আর রাস্তার পাশের জলের নর্দমায় প্লাস্টিক ফেলে পরিবেশটাকে বিষিয়ে তুলছেন না তো ? সরকারের সব নির্দেশ মানছেন তো ? মাস্ক পরছেন কি ? নিজের কার্যসিদ্ধির বিনিময়ে ঘুষ দিচ্ছেন না তো ? ঘুষ নিচ্ছেন না তো অফিস আদালতে বসে ? আর এই যে গরিবের দুঃখে কেঁদে পথঘাট ভাসাচ্ছেন, বলি নিজে কত টাকা রোজগার করেন ? তার থেকে ওদের কোন সাহায্য করেন কি নিয়মিত ? যদি নিজে করে না থাকেন তাহলে সরকারের উপর এত প্রত্যাশা কেন আপনার ? আপনি যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করবেন আর সরকার এসে ঠিকমতো সাফাই করছে না বলে গালিগালাজ করবেন এই কি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ? সরকার যে বিনামূল্যে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে - এমনকি প্রাথমিক স্তরে খাবারদাবারেরও ব্যবস্থা করছে যাতে সবাই শিক্ষিত হতে পারে সেসব কথা কখনো শেয়ার করেছেন কি ? ওসব না করে অশিক্ষিতের গালিগালাজকে স্বীকৃতি দিতেই আপনার বেশি মতলব নীট ফল সমাজের অধঃপতন আর এখানেই আপনার ব্যক্তিগত লাভালাভ সমাজসেবকের ভূমিকায় বেশ একটা দামি আসন লাভের মাধ্যমে কে জানে ভবিষ্যতে গদির কাছাকাছি যাওয়ার যদি একটা সুযোগ হয় ?

এক বৈপরীত্য প্রায়শঃ আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের প্রধান যখন বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়াচ্ছেন তখন দেশের ভেতরের এক শ্রেণীর মানুষের শুধু গেল গেল রব গণতন্ত্র নাকি বিপন্ন অথচ গণতন্ত্রকে আমরা কতটা বুঝি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সাম্প্রতিক পুরস্কার ফেরতের নাটক এক বিশেষ শ্রেণীর তথাকথিত জ্ঞানী গুণী মানুষজন আজকাল মুড়ি মুড়কির মতো পুরস্কার ফেরত দিচ্ছেন গণতন্ত্র সেই অধিকার তাঁকে দিয়েছে নিশ্চিতই কিন্তু সেই অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর গণতান্ত্রিক বোধ কতটা আছে তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় রাজনৈতিক ভাবে আমার আদর্শ একটি বা অনেকগুলি রাজনৈতিক দলের বিপরীত হতেই পারে কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলটি যদি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয় সেক্ষেত্রে সরকার আর সেই রাজনৈতিক দলের মধ্যেকার ফারাকটা আমরা বুঝি না বা বুঝতে চাই না সম্প্রতি এ বছরের পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত বেশ কয়েকজন পুরস্কার ফেরত দিয়ে কতটা জ্ঞানীর কাজ করেছেন তা তাঁরাই ভালো বুঝবেন কিন্তু একটি অঞ্চলে কোনও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর এই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রাপ্তি কিন্তু তাঁকে সারা দেশের সামনে তুলে ধরত তিনি পরিচিত হতেন সারা দেশের জনগণের সাথে, তাঁর কাজ প্রশংসিত হতো দেশ জুড়ে আঞ্চলিকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁর কাজ, তাঁর জীবনবোধ সারা দেশের কাছে চর্চিত হতো এতে তাঁর সম্মান বাড়ত বৈ কমত না নিঃসন্দেহে পাশাপাশি ইতিহাসেও স্থান পেতে পারতেন তিনি কিন্তু পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে সাময়িক হয়তো এক শ্রেণীর মানুষের চোখে তিনি হিরো হবেন কিন্তু আখেরে সেই চলেই যাবেন বিস্মৃতির গর্ভে

এইসব পুরস্কার ফেরতের তালিকায় যাঁরা আছেন তাঁদের বেশির ভাগ আবার একটি বিশেষ অঞ্চলের সুতরাং প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এই পুরস্কার ফেরতের নাটক কি কোনও চাপের ফল ? এমনও জানা গেছে অনেকেই পুরস্কার ফেরত দিচ্ছেন এই বলে যে বিরোধী দলের সরকারের থেকে তাঁরা পুরস্কার নিতে চান না এখানেই সন্দেহটি আরোও ঘনীভূত হয় আর এখানেই আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যাপারেও প্রশ্ন উঠে আসে রাজনৈতিক দল এবং সরকারের মধ্যের পার্থক্যটি আজও আমাদের অধরা কিংবা সেই মগজ ধোলাই এর ফল জেনেও আমরা জানব না, বুঝেও বুঝব না একটি সরকার নির্বাচিত হয় দেশের জনগণের দ্বারা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অংশীদার হওয়ার সূত্রে এই ব্যাপক গণরায়কে সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য একটি পুরস্কার প্রদান করবেন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী, কোনও দলীয় নেতা নন সেই বোধটি আমাদের অনেকের মধ্যেই নেই তাই এক প্রকারে বলা যায় বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের অন্ধ অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক বোধবুদ্ধি হারিয়ে সরকার প্রদত্ত পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে এইসব নাটুকেরা দেশের অধিকাংশ জনগণকেই অপমানিত করছেন দীর্ঘ সত্তর বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুগামীদের পুরস্কৃত করার মতো মানসিকতা গড়ে ওঠেনি আজ যখন এর বাইরে বেরিয়ে সরকার এক নিদর্শন তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তখন এই পুরস্কার ফেরতের নাটক নিতান্তই এক প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়

এই যখন গণতন্ত্র সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান তখন সামাজিক মাধ্যমে মিথাচারের মাধ্যমে বিরুদ্ধবাদের প্রচার কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না আমাদের উচিৎ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলার মতো মানসিকতা গড়ে তোলা শুধুমাত্র বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে আখেরে কী ফললাভ হয় তা এখন চোখের সামনে দেখে শিখি না আমরা ঠেকে তো শিখতে পারি ? সদ্য পেরোনো গণতন্ত্র দিবসে তাই একটাই প্রশ্ন - আমরা কি আরো একটু গণতান্ত্রিক হতে পারি না ?



Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়