Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2022

হাজার শিখার কথকতা

হৃদয়ে কতটা আঁধার জমা হলে দীপ্তি ছড়ায় শিখা ? কত কত অন্যায় অবিচারে দগ্ধ হলে হাজার শিখার কথকতা হয় লিখা ? বাতাসে কত মিথ্যার বার্তা ছড়ালে সত্যপথের সন্ধানী হয় মন ? কত দুঃখ গাথার অস্ফুট গুঞ্জনে আগল খুলে দেয় হৃদয় বাতায়ন ? কেউ জানে না, রাজা জানে আমাদের সেই রাধানগরের রাজা আত্মীয়সভা থেকে বিশ্বসভায় মহাগৌরবে উড্ডীয়মান ধ্বজা। বেঁচে গেল কত অসহায় প্রাণ, বেদ বেদান্ত উপনিষদ - শিক্ষা অনর্গল ছলছল আঁখিজল থেকে যুগান্তরের স্মিতহাসি চিতাজল। এমনও কেউ যুগের দিশারি তাঁর আলোকপথে হই আগুয়ান রাজা তোমার নামের পাশে রোজ উড়ুক হাজার সত্য নিশান ।

তুষারকান্তি সাহার সুখপাঠ্য উপন্যাস - ‘জীবনের আশেপাশে’

জীবনের আশেপাশে, জীবনের চতুঃসীমানায় গড়ে ওঠে - এগিয়ে চলে আরোও বহু জীবন। চলতে চলতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জুড়ে একত্রিত হয়ে পড়ে এমনি একাধিক জীবনও। বিচিত্র তার পরিসীমা, বিচিত্র তার এগিয়ে চলা। সব কথা লিখা থাকে না মহাকালের খাতায়, সব জীবন সমক্ষে আসে না। অথচ প্রতিটি জীবনের অন্দরমহলে লুকিয়ে থাকে এক একটি স্বতন্ত্র জীবনবোধ, এক একটি কথামালার পাহাড়। মানব ইতিহাসে এই বোধ নামক অনুভূতিটি আছে বলেই মানুষ জীবশ্রেষ্ঠ। অনুভবে, অনুভূতিতে দীর্ঘ জীবনের এই চলার পথ আপন আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। প্রতিটি জীবনেই তাই লুকিয়ে থাকে বলার মতো কথা, লিপিবদ্ধ হয়ে থাকার মতো কথামালা, কাহিনি। প্রতিটি জীবনই আদতে এক একটি উপন্যাস। কবি, সাহিত্যিক তুষারকান্তি সাহা বাংলা ও উত্তর পূর্বের এক অতি পরিচিত মুখ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা দীর্ঘ হলেও উপন্যাস সম্ভবত এটাই একমাত্র - যদিও পৃষ্ঠাসংখ্যার বিচারে এবং বিস্তৃতির বিচারেও একে ঠিক উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে কিনা তা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। ‘জীবনের আশেপাশে’ গ্রন্থটি হয়ত উপন্যাসিকা হিসেবেই বিচার্য তবু যেহেতু লেখক নিজে এটিকে উপন্যাস বলে আখ্যায়িত করেছেন তাই আলোচনায় একে উপন্যাস হিসেবেই ধরে ন

মানবিক মূল্যবোধের সুবিন্যস্ত গল্প সংকলন - ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’

উত্তর পূর্বের গল্পবিশ্বে পরিতোষ তালুকদার এক বহু পরিচিত নাম। তাঁর দু’টি গল্পগ্রন্থ সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে একই সাথে। আগস্ট ২০১৮ তে। এর পর কোনও এক অজানা কারণে থেমে রয়েছে নিয়মিত গল্পগ্রন্থ প্রকাশের পালা। সেই দু’টি গ্রন্থের মধ্যে একটি ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’। সমকালীন পরিমণ্ডলে সম্পর্কের জটিল রসায়নের যুগে পারস্পরিক ধ্যান ধারণা, সৌহার্দ, সহযোগিতার বিচিত্র উপস্থাপনা এই গ্রন্থটি। পরিতোষের গল্পের ধাঁচ খুবই সরল সোজা যেখানে নেই কোনও অতিকথন। ঘটনা পরম্পরার বাইরে কোনও বর্ণনা খুঁজলে পাওয়া যাবে না তাঁর গল্পে। প্রকৃতির বর্ণনা হোক কিংবা অপ্রয়োজনীয় শাখা প্রশাখার বিস্তারের মাধ্যমে বহিরঙ্গকে অন্তরঙ্গে জুড়ে দেওয়ার নেই কোনও অবাঞ্ছনীয় প্রচেষ্টা। অথচ গল্পের প্রতিটি ঘটনারাজির ঠিক যতটা দরকার ততটাই কিন্তু রয়ে থাকে প্রাসঙ্গিক হয়ে। মজবুত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত গল্পগুলোতে কোথাও খামতি নেই অনুষঙ্গের। এখানেই তাঁর গল্পের বিশেষত্ব। আলোচ্য গ্রন্থটিতে রয়েছে মোট ৯ টি গল্প। প্রতিটি গল্পই উত্তর পূর্ব - বিশেষ করে গুয়াহাটি শহরের প্রেক্ষাপটে লিখা। নিত্যদিনের বাঞ্ছিত-অবাঞ্ছিত ঘটনাসমূহের ভিতরের কথা এক একটি গল্প। সাধারণ্যে যা নিতান্তই

কথা অবিকল

সময় নাকি কথা বলে নীরব মোড়কে শুনতে পাচ্ছ বাতিঘর ? সময় সত্যি সত্যি কথা বলে সময় পাল্টে গেলেও কথা পাল্টায় না। সেই একই স্রোত বয়ে চলে শতাব্দী জুড়ে জীবন থেকে জীবনে। তুমি চঞ্চল - আমাকেও তাই হতে হবে ? তবু আমি তোমারই মতো - প্রবহমান শ্লথ হয়ে যাইনি আমি , হইনি স্থিতপ্ৰজ্ঞ বৃক্ষ আমৃত্যু বেড়ে চলে গায়ে যতই লাগুক ধুলোর আস্তরণ। কথা রয়ে যায় উৎসমুখের মতো অবিকৃত , একই উচ্চারণ , একই উন্মাদনা সময় চলে যায় বাতিঘর তবু সময় কথা বলে যায় অবিকল। তুমি কি শুনতে পাও সময়ের সংলাপ ? নাকি শুধু নিরেট বিস্মৃতি পথে তুমি গায়ে মাখো সুখদিন ছয়লাপ ?

জলশেষে

কত জল সেদিনও তো ছিল ওই পাষাণীর কাজল চোখে টলমল জল মোতির মালা খাল বিল নদ পুকুর নালা । জল ছিল ফোরাতেও , তবু ছিল কি ? পাষাণীর গভীর রাতে দুই কাঁখে আজ সলিল ছলকে একই । কোন সুদূরের জলের কিনারায় প্রহরের পর প্রহর বয়ে যায় বুকে তার সাত সাগরের জল চোখে তাঁর ইতিউতি আঁখিজল পাষাণী অম্বা বাই , স্বপ্নে ফটিক - জল , প্রস্রবণের বুদবুদ মোতিজল সব জল শেষে চাতক চোখে হায় পাষাণী আজ পিপাসায় অসহায় । একদিন - জল ছিল সবখানে ফোরাত নদী - রাজস্থানে তবু কেউ বলে হায় হায় অম্বা বাই জল আনতে যায় । সন্ধে হতেই দুই কাঁখে তার চৌচির পথে কলসি শোভা পায় জল দাও জল দাও , পরান চলে যায় । শুকিয়ে গেছে ধরণী গর্ভ হাহাকার রব ঘরে ঘরে শোনা যায় ।

প্রত্যাশার আত্মপ্রকাশ ছোটপত্রিকা ‘মোহনা’

একটি ছোটপত্রিকার জন্ম হয়তো নিত্যদিনের চালচলনে কিংবা বিশ্ব অর্থনীতি বা রাজনীতিতে কোনও প্রভাব ফেলে না। কিন্তু সাহিত্যের কর্ষণক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব এবং নান্দনিক পরিমণ্ডলে এক যোগাত্মক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। ছোটপত্রিকার হাত ধরে উঠে আসে নবীন প্রজন্ম যাঁরা কালক্রমে মহিরুহ হয়ে আলোকিত করেন সাহিত্যের অঙ্গন। সুতরাং একটি ছোটপত্রিকার আত্মপ্রকাশ সাড়া জাগায় বিদ্বৎবহলে। সম্প্রতি বহু প্রতীক্ষার অন্তে, বহু ঝড়ঝাপটাকে অতিক্রম করে বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ শহর থেকে উন্মোচিত হল ছোটপত্রিকা ‘মোহনা’। কোভিড কালে পরিকল্পিত এই পত্রিকার আত্মপ্রকাশ বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ অতিমারি, সম্পাদকের পরম প্রিয়জন - তাঁর স্বামীর আকস্মিক প্রয়াণ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সম্পাদক বনানী চৌধুরী এ নিয়ে বিস্তৃত লিখেছেন সম্পাদকীয়তে। পত্রিকার প্রথম সংখ্যার উৎসর্গ যথেষ্ট মানবিক এবং যথোপযুক্ত। এ নিয়ে সম্পাদকীয়তে আছে - ‘আমাদের এ পত্রিকাতে প্রথম যিনি লেখা দিয়েছিলেন তিনি উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশিষ্ট লেখক মানবরতন মুখোপাধ্যায়। কিন্তু আমাকে লেখা পাঠানোর কয়েকদিন পরই তিনি না-ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সংখ্যাটি

কে তুমি ভুবনমোহিনী ?

কে তুমি দাঁড়াও এসে প্রহরে প্রহরে আমার দু’চোখ জুড়ে ? এক হাতে বরাভয় এক হাতে ভালোবাসাবাসি আলেয়া সুখের ঝাঁপি, তোমার চোখের তারায় ছবি কথা কয় আমার নয়নজলে ইতিহাস বয়। ঘাসফুল, দ্রোণফুল, দাঁতরাঙা ইতিহাস প্রহরে প্রহরে দেবী ভুবনমোহিনী কোন ছায়া পথ ধরে ছড়াও সুবাস আধোঘুমে শুনি কার নূপুরের ধ্বনি ? রাতপাখি গান জুড়ে - করুণ রাগিনী ওই বুঝি ভেসে যায় ভরা মান্দাস টইটম্বুর জলে সোনার ফসল ভাসে কোন সারিগান আমি রোজ কান পেতে শুনি ? আর কত রাত শেষে, কত পথ পার হলে স্বপ্নবেলার শেষে ধরা দেবে জাগ্রত চোখে ? একে একে শেষ হল ছলছল কত জল পথ আর কত কাল ধরে কাঙ্ক্ষিত হয়ে রবে সুখ কোন রাতে ধরা দেবে সোনা সুখমুখ ?

প্রেয়সী তোমায়

কত পথ হেঁটে গেলে প্রেয়সী তোমার   দু ’ চোখে চোখ রাখা যায় ? কতটা বিনিদ্র রাত পেরিয়ে এলে নির্বাক তারারা অবাক হয়ে যায় এক মুঠো মুচকি হাসির ছোঁয়ায় ? একা চাঁদ রাতভর কত আর জোছনা ছড়ায় , এক জীবনে কত পথ হেঁটে চলা যায় ? মাঝে মাঝে গাঙচিল ডাক দিয়ে যায় প্রহর মেপে মেপে একাদশী রাতে ডাহুক জানান দিয়ে যায় স্বপ্ন সুখের রাত অতীতের দায় । ভালোবাসা মেপে মেপে জীবন কাবার চোখে চোখ রেখে স্বপ্ন নিরালায় । কার চোখে ভালোবাসা কত আগ্রাসী কতটা ডাকাতিয়া ভালোবাসাবাসি তারা ঝলমল পথে পাহাড়ে পাহাড়ে মেঠোপথ আলপথ জলপথ ধরে কত যুগ কত রাত কত পথ পরে ব্যর্থ কবিতা শেষে ভালোবাসি বলা যায় প্রেয়সী তোমায়, চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায় ?

স্বপ্নশব

হাড় জিরজিরে সব দিন আটপৌরে বুদবুদ ভাবনার মায়াময় রাতে আলো ছায়া অশরীরী ভ্রমে ছাপ ফেলে যায় স্বপ্নপথে। যে পথ দিয়ে উড়ু উড়ু মন রোজ সকালে পাখনা মেলে - স্বপ্নরঙিন আর ফিরে ফিরে আসে সাঁঝের বেলা। দিনভর ঝড় জল এক তাল কাদা কাঠফাটা রোদ্দুর জঠর দহন জ্বালা হাতের মুঠোয় কফিনবন্দি স্বপ্নশব। এ জীবন জমাট ধুলোর খণ্ড খণ্ড মাটির ডেলা - মিথ্যে সব।

আকাশ কবিতা

মেঘের দেশে কবিতারা সব ঘুমোয় বারোমাস। যখন পাহাড় ডাকে, নদী ডাকে আয় আয় জেগে ওঠে তারা - আহ্বান রবে বৃষ্টি হয়ে খুশি নিয়ে সাথে ঢলে পড়ে সব জলদকবিতা যত বলে দুঃখসুখের যাপন কথা চলে গায়ে গায়ে ঢলাঢলি পথ চলা। আকাশ কবিতা মাটির পৃথিবী জুড়ে ছড়ায় মেঘের নিসৃত বারতা শোনায় মেঘমুলুকের ঘুমঘোর ইতিকথা। যখন মেঘ বলে আয় ফিরে ফিরে আয় অসার যাপন দিন কবিতাহীন কাটে না বেলা দিনভর ভেসে ভেসে অলস আকাশে আকাশে, রবির কিরণে উড়ে উড়ে দিনশেষে কবিতারা যায় ফিরে আপন আবাসে - মেঘের মান্দাসে।

কবি জিতেন্দ্ৰ নাথ-এর মনোজাগতিক কাব্যগ্ৰন্থ 'অন্য এক রূপসি নগরে'

কবি জিতেন্দ্র নাথ। বরাক উপত্যকার বলিষ্ঠ কবিদের মধ্যে অন্যতম। অথচ প্রচারের আলোয় তাঁকে দেখা যায় না তেমন করে। একক গ্রন্থ এবং সংকলন - সব মিলিয়ে এ যাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দশেরও অধিক। তাঁর অন্যতম একক কাব্যগ্রন্থ ‘অন্য এক রূপসি নগরে’। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নিজের শহর হাইলাকান্দিতে অনুষ্ঠিত বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ২৮তম কেন্দ্রীয় সম্মেলন মঞ্চে। কবি তাঁর এই গ্রন্থটি ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে উয়সর্গ করেছেন দু’দফায়। প্রথমে উপত্যকার ১৪ জন কবি সাহিত্যিকদের উদ্দেশে এবং দ্বিতীয় দফায় তাঁর এগারো  জন পূর্বপুরুষ (যাঁদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর প্রমাতামহ, মাতামহ, মাতামহী এবং অতিবৃদ্ধপ্রপিতামহ থেকে শুরু করে পিতা অবধি) সহ তাঁর কাকা এবং শ্বশুরকে। ‘কবিকথা শীর্ষক ভূমিকায় কবি জানিয়েছেন যে আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাসমূহ ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লিখা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়কাল ধরে লিখা কবিতার মধ্য থেকে নির্বাচিত সব কবিতগুলো পাঠ করলেও এক বিবর্তন কিন্তু লক্ষ করা যায়। মাত্র দুই লাইনের কবিতা থেকে শুরু করে আছে পৃষ্ঠাজোড়া কবিতা যার মধ্যে লুকিয়ে আছে কিছু সরাসরি কথন এবং কিছু গভীর ভাবব্যঞ্জনা। আছে একগুচ্ছ স্মৃতিমেদুর কবিতা