Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2023

নিজের জন্য মৃত্যু খুঁজি মাঠে-ঘাটে। মৃত্যু দিবি, বৃষ্টিরাতে ? …… বিষাদের অনুষঙ্গে - ‘ঘুমোও, দুপুর’

কবি সঞ্জয় চক্রবর্তীর ১১তম কবিতার বই। সাকুল্যে ৩২ পৃষ্ঠার এই বইয়ের ২৮টি পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে আলোচনায় উঠে আসার মতো চারটি দীর্ঘ কবিতা। স্বভাবতই সূচিপত্রের জন্য আলাদা একটি পৃষ্ঠা খরচ করার প্রয়োজন হয়নি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে সব সঞ্জয়সুলভ পঙ্‌ক্তি। প্রথম কবিতা ‘নীলবধূ’র শ্রীগণেশেই প্রথমে চোখ রাখা যাক - সুদূর পল্লীগ্রাম, কুপির আলোয় লিখছেন নিজের জীবন, বধূ, রাসসুন্দরী। ঝিঁঝিঁর ডাক ঘিরে রয়েছে তাঁকে, জোনাকিরা জোছনাসুন্দর চুলে, খেলার মত্ততাকে, করেছে চোখের অঞ্জন। পুকুরের শান্ত জল, খেতের কোমল ধানচারা, বুকে নিয়ে শুয়ে আছে জীবনানন্দের গ্রাম। বাঁশরিতে কার নাম, নীল নবঘন শ্যাম ? চোখ রাখা যাক এই স্তবকে ব্যবহৃত যতি চিহ্নগুলোর দিকে। এই শব্দের ব্যবহার, এই সমাসবদ্ধ যুগল শব্দের স্থাপনা, এই রূপকল্প, এই যতি চিহ্নের ব্যতিক্রমী সংযোজন - আমাদের কবিতাবিশ্বে এ সবই নিখাদ সঞ্জয়সুলভ। এর কোনও বিকল্প নেই। সংকলনে সন্নিবিষ্ট চারটি কবিতাই বিষয়ে ভিন্ন যদিও একই মোহাচ্ছন্নতায় গ্রথিত আছে কবিতামালিকা হয়ে। বিষয় ভিন্ন হলেও কিছু অনুভব, কিছু বোধ একত্র হয়ে ছড়িয়ে আছে প্রতিটি কবিতায়। আর সবচাইতে বেশি করে যে অনুভবটি জড়িত হয়ে আছে তা হল মৃত্যু

গরজে, আয়োজনে দৃষ্টিনন্দন ‘প্রবাহ’ - শারদ পর্যায় ২০২৩

শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার বহু আগে থেকেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পত্রিকা সম্পাদকদের সেই যে দৌড়ঝাঁপ তার অবসানে উৎসবের আমেজে ঘটে তাঁদের দায়মুক্তি। এবং এর পরের দায় শুধুই পাঠকের। এই দায় মোচন হতে হতে পেরিয়ে যায় হেমন্ত, পেরিয়ে যায় হয়তো বা শীতকালও। পত্রিকা প্রকাশের এমনই দায় নিয়ে সাহিত্যিক জহর দেবনাথের সম্পাদনায় অন্যান্য বারের মতো এবারেও ত্রিপুরার ধলাই জেলার কুলাই থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রবাহ’ পত্রিকার শারদ পর্যায় ২০২৩ - সার্বিক ২৫ তম সংখ্যা। চমকপ্রদ প্রচ্ছদটি প্রথম প্রেমের মতোই লেগে থাকে চোখে। নেশা ধরায় ভেতরের পৃষ্ঠাগুলোতে প্রবেশ করার। প্রচ্ছদের সৌজন্যে পুস্পল দেব। পত্রিকার আয়তন বড়ো হওয়ায় গায়ে গতরে ভারী না হলেও আয়োজন নেহাত কম নয়। ৬৬ পৃষ্ঠার পত্রিকাটিতে রয়েছে ৭৫টি কবিতা, ৮টি ছোটগল্প, ৫টি অণুগল্প, ১টি বড়গল্প এবং ৭টি প্রবন্ধ। সম্পাদকীয় পৃষ্ঠা পড়া শেষ করে কবিতা পাঠ শুরু করে কিছুটা এগোতেই পাঠকমননে ধরা পড়বে - এবারের থীম - ‘সবার উপরে মানুষ সত্য ……’। আজকের দিনে এই কথাটি যেন আরোও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সুতরাং যথার্থ ভাবনাপ্রসূত এই বিষয় এতে কোনও সন্দেহ নেই। স্বভাবতই প্রতিটি রচনা এই থীমের উপরেই লেখা হ

স্বচ্ছ অনুবাদের কাব্যগ্রন্থ 'হৃদয়ের বালুচর'

“ হৃদয়ের বালুচর বইটি একটি অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ । অসমের দ্বিভাষিক কবি , আবৃত্তিকার , অনুবাদক জয়িতা চক্রবর্তীর দ্বারা অনূদিত এই বইটি অসমের প্রখ্যাত কবি যোগেশ বিকাশ গগৈ মহাশয়ের প্রায় পঁয়তাল্লিশটি অনন্য কবিতার সংকলন - ‘ সোনোয়ালি মাছ , রূপোয়ালি ঢেউ ’- এর নতুন সাজ । এখানে বাংলা ভাষায় অনূদিত প্রতিটি কবিতায় রয়েছে নিজস্ব বিচক্ষণতা , মানবতা ও ভালোবাসার অনন্য পৃথিবী । কবিতাগুলোতে যে পৃথিবীর সৃষ্টি করা হয়েছে , তাতে রয়েছে নির্জনতা , শান্তি , পবিত্রতা , প্রেমের পূর্ণতা । কবি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ জিনিসগুলোর বিষয়কে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন , যেমন - বৃষ্টি , শ্রাবণের প্রেম , নতুন পৃথিবী , জীবন , স্বাদ , শ্রমিক ইত্যাদি । এই বইটিতে একজন ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনের ছোট্ট ছোট্ট বিষয়গুলোতে জীবন শক্তি খুঁজে পেতে পারেন । প্রত্যেকটি সারিতে রয়েছে অনন্য নিষ্পাপ মানব সভ্যতাকে খোঁজার তাড়না । যেখানে বড় কিংবা ছোট , প্রতিটি জীবন কারো অপকার না করে একসাথে বাস করতে পারবে । খুব সাবধানতার সঙ্গে অসমের জীবন্ত শহরের ছবি চিত্রিত করা হয়েছে যেখানে প্রতিটি নাগরিক বাঁচে , ভালোবাসে ও জীবনের সুগন্ধ উপভোগ করে । বইটি ম

উত্তরণের দায়ভার নিয়ে উন্মোচিত - শারদীয় সংখ্যা ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’

যথাসময়েই প্রকাশিত হয়েছে এবারের অর্থাৎ ১৪৩০ বাংলার পূজা সংখ্যা ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’। ভারে - প্রতিবারের ন্যায় এবারও ওজনদার হয়েছে পূজা সংখ্যা হিসেবে গোটা উত্তরপূর্বের অন্যান্য পত্রিকার চাইতে। ধারে - কতটা শানিত হল একবার দেখে নেয়া যাক। এই পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতে হতে এবার অষ্টম সংখ্যায় পদার্পণ করল যদিও এই অঞ্চলের (সম্পাদকের মতে তৃতীয় ভুবনের) পাঠক তথা কবি-সাহিত্যিকদের নজরে তা কতটা আসে তা বোঝার উপায় নেই। কারণ কোথাও এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ে না। এর অন্যতম একটি কারণ হল এই যে অনেকেরই এই ‘তৃতীয় ভুবন’ শব্দটিতে ঘোর আপত্তি রয়েছে। তাঁদের মতে সাহিত্যের ভুবনায়ন সঠিক নয়। অথচ স্পষ্ট একটি বিভাজন যে রয়েছে তা কিন্তু কোনোভাবেই অস্বীকার্য নয়। বৌদ্ধিক মহলে এবং উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টির আঙিনায় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এবং ভাষা সাহিত্যের প্রয়োগজনিত উৎকর্ষে বাংলাদেশের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে এক উল্লেখনীয় বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায় এই অঞ্চলের সাহিত্যের। তাছাড়া উত্তরপূর্বের এই সাহিত্যভুবনের ভাষার বিরাট বৈচিত্র্য, বহু ভাষাভাষী মানুষের উপস্থিতির প্রভাবমুক্ত হতে পারে না এ অঞ্চলের সাহিত্য। সেই হিসেবে তৃতীয় না হলেও এক ব

নজর কেড়েছে সালংকারা অনলাইন কবিতাপত্র 'দৃঢ়বন্ধন' - ১২৫ তম সংখ্যা

বইপত্র প্রকাশে একটা বনেদিয়ানা আছে যদিও তার পথে কাঁটাও আছে বিস্তর । প্রধানত অর্থকরী ও প্রকাশকজনিত সমস্যাই প্রধান । ফলত অধিকাংশ কবি সাহিত্যিকরা উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় পারঙ্গম হওয়া সত্তেও প্রচারের আড়ালে থেকে যাওয়ার একটা ব্যাপার চলে আসছে আদিকাল থেকেই । চূড়ান্ত দক্ষতা ও অর্থবান হওয়াই তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রধান উপাদান । এর সমাধানে এক সময় এগিয়ে এলেন সহৃদয় পত্রিকা সম্পাদকরা । সাময়িক পত্রই হোক আর ছোট পত্রিকা অর্থাৎ লিটল ম্যাগাজিনই হোক সমস্যার অনেকটা সমাধান করে দিল এই বিষয়ের । তবে পূর্ণ সমাধান হয়তো হল না কারণ বর্ধিত জনসংখ্যার অনুপাতে কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যাও স্বভাবতই ক্রমবর্ধমান হওয়ার সুবাদে পত্রিকাও আর ‘ যথেষ্ট ’ হয়ে রইল না । তাছাড়া অর্থগত বিষয়টিরও পূর্ণমাত্রায় সমাধান হল আর পরিচিতিও একটা বিষয় হয়ে রইল । সম্পাদকদের পরিচিতির গণ্ডির বাইরে থাকা কবি সাহিত্যিকরা রয়ে গেলেন অনেকটাই আগের মতো, অগোচরে । এবার এই ধারায় অনলাইন পত্রপত্রিকা সমক্ষে এসে উদভাসিত হল মুশকিল আসান রূপে । এর বিশাল ব্যাপ্তি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের সুবাদে লেখালেখির প্রকাশক্ষেত্রে যেন খুলে গেল এতদিনের বন্ধ কপাট । কিছু কুলী

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

সোনার মাটি

- না না ; এমনিতে আপনার বৌদির হাসিটিও , চমৎকার । আমি অস্বীকার করছি না । খুব যত্ন করে ঈশ্বর প্রদত্ত সুন্দর দাঁত দু ’ পাটির পরিচর্যা করেন নিয়মিত । বলতে গেলে আপনার বৌদিকে বিয়ের আগে দেখতে গিয়ে ওই অমলিন শুভ্র হাসিটি দেখেই আমি মজে গিয়েছিলাম । হ্যাঁ , দেখতে শুনতেও খারাপ কিছু ছিল না । আজও সেই জেল্লা ধরে রাখতে পেরেছে অনেকটাই । তবে ওই মিতাবৌদির ব্যাপারটা একটু আলাদা । বুঝলেন ? আমি মাথা নাড়ি । বুঝেছি । বুঝতে পারছি পরিতোষদা নতুন প্রসঙ্গের অবতারণা করছেন । মিতা বৌদি কে তা আমি জানি না । তবে নামটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে পরিতোষদার ঠোঁটের কোনায় ছড়িয়ে পড়া ঈষৎ মুচকি হাসির ছোঁয়া আমার নজর এড়ায়নি । বস্তুত পরিতোষদার মতো বাচিক শিল্পীর কথায় এক জাদু আছে । তাঁর কথায় সাধারণ কথাও অসাধারণ হয়ে ওঠে । তবে আমার দুঃখ হয় এটা ভেবেই যে বাগাড়ম্বরের বাইরে মঞ্চে বা সমাজে বাচিক শিল্পী হিসেবে তিনি স্থান পেলেন না । মূলত তাঁর নিজেরই দোষে বলতে হবে । নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন সব সময় । ঘর আর অফিস । এ নিয়েই তাঁর জগৎ । অথচ তাঁর এই বাচিক শিল্পকে পাবলিক করলে মঞ্চ কাঁপাতেন নিশ্চিত । তা - অমন একজন সঙ্গী পেলে প্রাতঃভ্