Skip to main content

নজর কেড়েছে সালংকারা অনলাইন কবিতাপত্র 'দৃঢ়বন্ধন' - ১২৫ তম সংখ্যা


বইপত্র প্রকাশে একটা বনেদিয়ানা আছে যদিও তার পথে কাঁটাও আছে বিস্তর প্রধানত অর্থকরী ও প্রকাশকজনিত সমস্যাই প্রধান ফলত অধিকাংশ কবি সাহিত্যিকরা উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় পারঙ্গম হওয়া সত্তেও প্রচারের আড়ালে থেকে যাওয়ার একটা ব্যাপার চলে আসছে আদিকাল থেকেই চূড়ান্ত দক্ষতা ও অর্থবান হওয়াই তাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রধান উপাদান এর সমাধানে এক সময় এগিয়ে এলেন সহৃদয় পত্রিকা সম্পাদকরা সাময়িক পত্রই হোক আর ছোট পত্রিকা অর্থাৎ লিটল ম্যাগাজিনই হোক সমস্যার অনেকটা সমাধান করে দিল এই বিষয়ের তবে পূর্ণ সমাধান হয়তো হল না কারণ বর্ধিত জনসংখ্যার অনুপাতে কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যাও স্বভাবতই ক্রমবর্ধমান হওয়ার সুবাদে পত্রিকাও আরযথেষ্টহয়ে রইল না তাছাড়া অর্থগত বিষয়টিরও পূর্ণমাত্রায় সমাধান হল আর পরিচিতিও একটা বিষয় হয়ে রইল সম্পাদকদের পরিচিতির গণ্ডির বাইরে থাকা কবি সাহিত্যিকরা রয়ে গেলেন অনেকটাই আগের মতো, অগোচরে
এবার এই ধারায় অনলাইন পত্রপত্রিকা সমক্ষে এসে উদভাসিত হল মুশকিল আসান রূপে এর বিশাল ব্যাপ্তি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের সুবাদে লেখালেখির প্রকাশক্ষেত্রে যেন খুলে গেল এতদিনের বন্ধ কপাট কিছু কুলীনমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এই অনলাইন সাহিত্যকে নিম্নবর্গীয় বলে ভাবেন যদিও এটা অনস্বীকার্য যে এতদিনে অনলাইন পত্রিকাও সাহিত্যের জগতে একটা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা বা ই-পত্রিকায় লিখছেন - এমন দৃশ্যও আর বিরল নয় এখন। তবে অফলাইনের মতোই অনলাইন পত্রিকারও রকমফের আছে। কোথাও একেবারেই সাদামাঠা, ম্যাড়মেড়ে, অনিয়মিত তো কোথাও এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
এমনই এক ব্যতিক্রমী অনলাইন পত্রিকা হচ্ছে হাইলাকান্দি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কবিতাপত্র ‘দৃঢ়বন্ধন’। পুরো নাম - ‘সাত রঙে রবিবার...... দৃঢ়বন্ধন’। সম্প্রতি ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হল এর ১২৫ তম সংখ্যা। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার যা তা হলো এই একশো পঁচিশ অবধি একটি সংখ্যাও ধারাবাহিকতার ছক ভাঙেনি। সপ্তাহে একটি সংখ্যার বেশি হলেও কম হয়নি। বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হলেও প্রতি রবিবারের ধারাবাহিকতা আজও অক্ষুণ্ণ। প্রাথমিক স্তর থেকেই এই পত্রিকার অলংকরণ ও বিন্যাস পাঠকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে নানারকম বিস্তারও ঘটে আসছে সময়ে সময়ে। প্রথম পৃষ্ঠার আধখানা জুড়ে এসেছে এই পত্রিকার যাঁরা লেখালেখি করছেন সেইসব কবি সাহিত্যিকদের সচিত্র সম্মাননা। বাকি অর্ধেক জুড়ে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার কবিদের রঙিন ছবি। এতে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে দৃঢ়বন্ধন। সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গদ্যাংশ এবং কবিতাপুস্তক/কাব্যগ্রন্থ আলোচনাও। এভাবেই পাঠকমনে ধীরে ধীরে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে পত্রিকাটি, বাড়ছে কবিদের সাথে পাঠক সংখ্যাও। বেড়ে ওঠাই তো বেঁচে থাকার একমাত্র শর্ত। এই পথে আন্তরিকতা ও গরজ তথা নিবেদনের যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন দুই সম্পাদক - ড. দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা ও পম্পা গুহ ঠাকুরতা।
চোখ রাখা যাক এই জনপ্রিয় পত্রিকার ১২৫ তম সংখ্যায়। এ সংখ্যায় সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছে কবি সোমা মজুমদারকে। সোমা মজুমদারের কবিতা ব্যতিক্রমী ধাঁচের এবং সুখপাঠ্য। আজকের দিনে এই কবিতাবিশ্বে তাই যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে কবির কবিতাসেই অর্থে যথার্থ এই সম্মাননা। এই সংখ্যায় যাঁদের কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন মীরা পাল, সোমা মজুমদার, চন্দ্রিমা দত্ত, তাহের আহমেদ লস্কর, পূরবী দাস, জিতেন্দ্র নাথ, রফি আহমেদ মজুমদার, কিরণ দেবী, মানিক চক্রবর্তী, সুব্রত পুরকায়স্থ, সুপ্রদীপ দত্তরায়, কল্লোল চৌধুরী, দীপক সেনগুপ্ত, সৌরভ ভট্টাচার্য, শ্যামলী কর, দেবাশিস সায়ন, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য ও সুশান্তমোহন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিটি কবিতাই সুপাঠ্য এবং সুলিখিত। এছাড়া শেষের পাতায় রয়েছে বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অশোক বার্মা সংকলিত কবিতার বই ‘তিন দম্পতির কবিতা’র উপর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একটি আলোচনা। এর আগে অন্য আলোচকদের আলোচনাও প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায়। একটি কাব্যগ্রন্থের আলোচনা নিঃসন্দেহে মান বাড়িয়ে দেয় একটি কবিতা বিষয়ক পত্রিকার। সম্পাদকদের এই উদ্যোগও তাই ধন্যবাদার্হ।
উপর্যুক্ত কবি তালিকা দেখে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে নামি দামি কবিদের পাশাপাশি নবীন ও সচরাচর আড়ালে থাকা কবিদেরও উপযুক্ত জায়গা দিচ্ছে এই পত্রিকা গোষ্ঠী। এর আগে নিয়মিত সংখ্যাগুলোয় ইতোমধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়েছে অনেক নবীন ও তরুণ কবিদের কবিতাও।
সাহিত্যক্ষেত্রে এক সামাজিক দায়বদ্ধতা যে পালন করে চলেছে এই পত্রিকা তা অনস্বীকার্য। যদিও আগের সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেছে তবু সার্বিক ভাবে বলা যায় অধিকাংশ কবিতাই বরাক ভুবনের কবিদের কবিতা। একটি কবিতাপত্রের স্থানীয় দায়বদ্ধতা প্রশংসনীয় যদিও পুরো উত্তরপূর্বের কবিতা অধিক সংযোজিত হলে এই বর্ধিত দায়বদ্ধতার পাশাপাশি পত্রিকার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা অধিক অনুভূত হবে এটাও নিশ্চিত। সম্পাদকের অধিকার খাটিয়ে বানানের শুদ্ধতার দিকে আরোও অধিক যত্নবান হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়কারণ একাধিক অশুদ্ধ বানান বইপত্রের মান নিম্নগামী করে তোলে বোদ্ধা পাঠক মহলে।  
সব মিলিয়ে স্থানিক এই কবিতাবিশ্বের পাশাপাশি বহির্ভুবনেও অধিক দায়বদ্ধ ও অধিক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে সালংকারা এই ‘দৃঢ়বন্ধন’ পত্রিকার।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

যোগাযোগ - ৯৪০১৪৩২৩২৩

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়