বইপত্র প্রকাশে একটা বনেদিয়ানা আছে
যদিও তার পথে কাঁটাও আছে বিস্তর। প্রধানত অর্থকরী ও প্রকাশকজনিত সমস্যাই
প্রধান। ফলত
অধিকাংশ কবি সাহিত্যিকরা উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় পারঙ্গম হওয়া সত্তেও প্রচারের আড়ালে
থেকে যাওয়ার একটা ব্যাপার চলে আসছে আদিকাল থেকেই। চূড়ান্ত দক্ষতা ও অর্থবান হওয়াই তাই
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রধান উপাদান। এর সমাধানে এক সময় এগিয়ে এলেন সহৃদয়
পত্রিকা সম্পাদকরা। সাময়িক
পত্রই হোক আর ছোট পত্রিকা অর্থাৎ লিটল ম্যাগাজিনই হোক সমস্যার অনেকটা সমাধান করে দিল
এই বিষয়ের। তবে
পূর্ণ সমাধান হয়তো হল না কারণ বর্ধিত জনসংখ্যার অনুপাতে কবি সাহিত্যিকদের সংখ্যাও স্বভাবতই
ক্রমবর্ধমান হওয়ার সুবাদে পত্রিকাও আর ‘যথেষ্ট’ হয়ে রইল না। তাছাড়া অর্থগত বিষয়টিরও পূর্ণমাত্রায়
সমাধান হল আর পরিচিতিও একটা বিষয় হয়ে রইল। সম্পাদকদের পরিচিতির গণ্ডির বাইরে
থাকা কবি সাহিত্যিকরা রয়ে গেলেন অনেকটাই আগের মতো, অগোচরে।
এবার এই ধারায় অনলাইন পত্রপত্রিকা সমক্ষে এসে উদভাসিত হল মুশকিল আসান রূপে। এর বিশাল ব্যাপ্তি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের সুবাদে লেখালেখির প্রকাশক্ষেত্রে যেন খুলে গেল এতদিনের বন্ধ কপাট। কিছু কুলীনমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এই অনলাইন সাহিত্যকে নিম্নবর্গীয় বলে ভাবেন যদিও এটা অনস্বীকার্য যে এতদিনে অনলাইন পত্রিকাও সাহিত্যের জগতে একটা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা বা ই-পত্রিকায় লিখছেন - এমন দৃশ্যও আর বিরল নয় এখন। তবে অফলাইনের মতোই অনলাইন পত্রিকারও রকমফের আছে। কোথাও একেবারেই সাদামাঠা, ম্যাড়মেড়ে, অনিয়মিত তো কোথাও এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
এমনই এক ব্যতিক্রমী অনলাইন পত্রিকা হচ্ছে হাইলাকান্দি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কবিতাপত্র ‘দৃঢ়বন্ধন’। পুরো নাম - ‘সাত রঙে রবিবার...... দৃঢ়বন্ধন’। সম্প্রতি ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হল এর ১২৫ তম সংখ্যা। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার যা তা হলো এই একশো পঁচিশ অবধি একটি সংখ্যাও ধারাবাহিকতার ছক ভাঙেনি। সপ্তাহে একটি সংখ্যার বেশি হলেও কম হয়নি। বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হলেও প্রতি রবিবারের ধারাবাহিকতা আজও অক্ষুণ্ণ। প্রাথমিক স্তর থেকেই এই পত্রিকার অলংকরণ ও বিন্যাস পাঠকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে নানারকম বিস্তারও ঘটে আসছে সময়ে সময়ে। প্রথম পৃষ্ঠার আধখানা জুড়ে এসেছে এই পত্রিকার যাঁরা লেখালেখি করছেন সেইসব কবি সাহিত্যিকদের সচিত্র সম্মাননা। বাকি অর্ধেক জুড়ে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার কবিদের রঙিন ছবি। এতে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে দৃঢ়বন্ধন। সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গদ্যাংশ এবং কবিতাপুস্তক/কাব্যগ্রন্থ আলোচনাও। এভাবেই পাঠকমনে ধীরে ধীরে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে পত্রিকাটি, বাড়ছে কবিদের সাথে পাঠক সংখ্যাও। বেড়ে ওঠাই তো বেঁচে থাকার একমাত্র শর্ত। এই পথে আন্তরিকতা ও গরজ তথা নিবেদনের যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন দুই সম্পাদক - ড. দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা ও পম্পা গুহ ঠাকুরতা।
চোখ রাখা যাক এই জনপ্রিয় পত্রিকার ১২৫ তম সংখ্যায়। এ সংখ্যায় সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছে কবি সোমা মজুমদারকে। সোমা মজুমদারের কবিতা ব্যতিক্রমী ধাঁচের এবং সুখপাঠ্য। আজকের দিনে এই কবিতাবিশ্বে তাই যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে কবির কবিতা। সেই অর্থে যথার্থ এই সম্মাননা। এই সংখ্যায় যাঁদের কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন মীরা পাল, সোমা মজুমদার, চন্দ্রিমা দত্ত, তাহের আহমেদ লস্কর, পূরবী দাস, জিতেন্দ্র নাথ, রফি আহমেদ মজুমদার, কিরণ দেবী, মানিক চক্রবর্তী, সুব্রত পুরকায়স্থ, সুপ্রদীপ দত্তরায়, কল্লোল চৌধুরী, দীপক সেনগুপ্ত, সৌরভ ভট্টাচার্য, শ্যামলী কর, দেবাশিস সায়ন, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য ও সুশান্তমোহন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিটি কবিতাই সুপাঠ্য এবং সুলিখিত। এছাড়া শেষের পাতায় রয়েছে বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অশোক বার্মা সংকলিত কবিতার বই ‘তিন দম্পতির কবিতা’র উপর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একটি আলোচনা। এর আগে অন্য আলোচকদের আলোচনাও প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায়। একটি কাব্যগ্রন্থের আলোচনা নিঃসন্দেহে মান বাড়িয়ে দেয় একটি কবিতা বিষয়ক পত্রিকার। সম্পাদকদের এই উদ্যোগও তাই ধন্যবাদার্হ।
উপর্যুক্ত কবি তালিকা দেখে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে নামি দামি কবিদের পাশাপাশি নবীন ও সচরাচর আড়ালে থাকা কবিদেরও উপযুক্ত জায়গা দিচ্ছে এই পত্রিকা গোষ্ঠী। এর আগে নিয়মিত সংখ্যাগুলোয় ইতোমধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়েছে অনেক নবীন ও তরুণ কবিদের কবিতাও।
সাহিত্যক্ষেত্রে এক সামাজিক দায়বদ্ধতা যে পালন করে চলেছে এই পত্রিকা তা অনস্বীকার্য। যদিও আগের সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেছে তবু সার্বিক ভাবে বলা যায় অধিকাংশ কবিতাই বরাক ভুবনের কবিদের কবিতা। একটি কবিতাপত্রের স্থানীয় দায়বদ্ধতা প্রশংসনীয় যদিও পুরো উত্তরপূর্বের কবিতা অধিক সংযোজিত হলে এই বর্ধিত দায়বদ্ধতার পাশাপাশি পত্রিকার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা অধিক অনুভূত হবে এটাও নিশ্চিত। সম্পাদকের অধিকার খাটিয়ে বানানের শুদ্ধতার দিকে আরোও অধিক যত্নবান হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ একাধিক অশুদ্ধ বানান বইপত্রের মান নিম্নগামী করে তোলে বোদ্ধা পাঠক মহলে।
সব মিলিয়ে স্থানিক এই কবিতাবিশ্বের পাশাপাশি বহির্ভুবনেও অধিক দায়বদ্ধ ও অধিক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে সালংকারা এই ‘দৃঢ়বন্ধন’ পত্রিকার।
এবার এই ধারায় অনলাইন পত্রপত্রিকা সমক্ষে এসে উদভাসিত হল মুশকিল আসান রূপে। এর বিশাল ব্যাপ্তি এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারের সুবাদে লেখালেখির প্রকাশক্ষেত্রে যেন খুলে গেল এতদিনের বন্ধ কপাট। কিছু কুলীনমনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এই অনলাইন সাহিত্যকে নিম্নবর্গীয় বলে ভাবেন যদিও এটা অনস্বীকার্য যে এতদিনে অনলাইন পত্রিকাও সাহিত্যের জগতে একটা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা বা ই-পত্রিকায় লিখছেন - এমন দৃশ্যও আর বিরল নয় এখন। তবে অফলাইনের মতোই অনলাইন পত্রিকারও রকমফের আছে। কোথাও একেবারেই সাদামাঠা, ম্যাড়মেড়ে, অনিয়মিত তো কোথাও এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
এমনই এক ব্যতিক্রমী অনলাইন পত্রিকা হচ্ছে হাইলাকান্দি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কবিতাপত্র ‘দৃঢ়বন্ধন’। পুরো নাম - ‘সাত রঙে রবিবার...... দৃঢ়বন্ধন’। সম্প্রতি ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হল এর ১২৫ তম সংখ্যা। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার যা তা হলো এই একশো পঁচিশ অবধি একটি সংখ্যাও ধারাবাহিকতার ছক ভাঙেনি। সপ্তাহে একটি সংখ্যার বেশি হলেও কম হয়নি। বিশেষ বিশেষ দিনে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হলেও প্রতি রবিবারের ধারাবাহিকতা আজও অক্ষুণ্ণ। প্রাথমিক স্তর থেকেই এই পত্রিকার অলংকরণ ও বিন্যাস পাঠকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে নানারকম বিস্তারও ঘটে আসছে সময়ে সময়ে। প্রথম পৃষ্ঠার আধখানা জুড়ে এসেছে এই পত্রিকার যাঁরা লেখালেখি করছেন সেইসব কবি সাহিত্যিকদের সচিত্র সম্মাননা। বাকি অর্ধেক জুড়ে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার কবিদের রঙিন ছবি। এতে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে দৃঢ়বন্ধন। সম্প্রতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গদ্যাংশ এবং কবিতাপুস্তক/কাব্যগ্রন্থ আলোচনাও। এভাবেই পাঠকমনে ধীরে ধীরে অধিক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে পত্রিকাটি, বাড়ছে কবিদের সাথে পাঠক সংখ্যাও। বেড়ে ওঠাই তো বেঁচে থাকার একমাত্র শর্ত। এই পথে আন্তরিকতা ও গরজ তথা নিবেদনের যথার্থ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন দুই সম্পাদক - ড. দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা ও পম্পা গুহ ঠাকুরতা।
চোখ রাখা যাক এই জনপ্রিয় পত্রিকার ১২৫ তম সংখ্যায়। এ সংখ্যায় সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়েছে কবি সোমা মজুমদারকে। সোমা মজুমদারের কবিতা ব্যতিক্রমী ধাঁচের এবং সুখপাঠ্য। আজকের দিনে এই কবিতাবিশ্বে তাই যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে কবির কবিতা। সেই অর্থে যথার্থ এই সম্মাননা। এই সংখ্যায় যাঁদের কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন মীরা পাল, সোমা মজুমদার, চন্দ্রিমা দত্ত, তাহের আহমেদ লস্কর, পূরবী দাস, জিতেন্দ্র নাথ, রফি আহমেদ মজুমদার, কিরণ দেবী, মানিক চক্রবর্তী, সুব্রত পুরকায়স্থ, সুপ্রদীপ দত্তরায়, কল্লোল চৌধুরী, দীপক সেনগুপ্ত, সৌরভ ভট্টাচার্য, শ্যামলী কর, দেবাশিস সায়ন, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য ও সুশান্তমোহন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিটি কবিতাই সুপাঠ্য এবং সুলিখিত। এছাড়া শেষের পাতায় রয়েছে বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অশোক বার্মা সংকলিত কবিতার বই ‘তিন দম্পতির কবিতা’র উপর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একটি আলোচনা। এর আগে অন্য আলোচকদের আলোচনাও প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকায়। একটি কাব্যগ্রন্থের আলোচনা নিঃসন্দেহে মান বাড়িয়ে দেয় একটি কবিতা বিষয়ক পত্রিকার। সম্পাদকদের এই উদ্যোগও তাই ধন্যবাদার্হ।
উপর্যুক্ত কবি তালিকা দেখে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে নামি দামি কবিদের পাশাপাশি নবীন ও সচরাচর আড়ালে থাকা কবিদেরও উপযুক্ত জায়গা দিচ্ছে এই পত্রিকা গোষ্ঠী। এর আগে নিয়মিত সংখ্যাগুলোয় ইতোমধ্যে সন্নিবিষ্ট হয়েছে অনেক নবীন ও তরুণ কবিদের কবিতাও।
সাহিত্যক্ষেত্রে এক সামাজিক দায়বদ্ধতা যে পালন করে চলেছে এই পত্রিকা তা অনস্বীকার্য। যদিও আগের সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রে ঘটেছে তবু সার্বিক ভাবে বলা যায় অধিকাংশ কবিতাই বরাক ভুবনের কবিদের কবিতা। একটি কবিতাপত্রের স্থানীয় দায়বদ্ধতা প্রশংসনীয় যদিও পুরো উত্তরপূর্বের কবিতা অধিক সংযোজিত হলে এই বর্ধিত দায়বদ্ধতার পাশাপাশি পত্রিকার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা অধিক অনুভূত হবে এটাও নিশ্চিত। সম্পাদকের অধিকার খাটিয়ে বানানের শুদ্ধতার দিকে আরোও অধিক যত্নবান হওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ একাধিক অশুদ্ধ বানান বইপত্রের মান নিম্নগামী করে তোলে বোদ্ধা পাঠক মহলে।
সব মিলিয়ে স্থানিক এই কবিতাবিশ্বের পাশাপাশি বহির্ভুবনেও অধিক দায়বদ্ধ ও অধিক আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে সালংকারা এই ‘দৃঢ়বন্ধন’ পত্রিকার।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
যোগাযোগ - ৯৪০১৪৩২৩২৩
Comments
Post a Comment