Skip to main content

কবির মজলিশ-গাথা


তুষারকান্তি সাহা
 
জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান  তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ছায়াতরুসাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে শুকতারায়৷ এরপরদৈনিক যুগশঙ্খপত্ৰিকারসবুজের আসর’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷
নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ), ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য), একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ), প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন), জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন গাবুদার কীৰ্তি৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া, কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন বেশ কটি নাটক৷ মঞ্চায়নও হয়েছে সেগুলো৷ উল্লেখযোগ্য - রতন (পোষ্টমাষ্টার), উপেন (দুই বিঘা জমি) ও মিনি (কাবুলিওয়ালা)৷ এর বাইরেও যেসব পত্ৰপত্ৰিকায় কিংবা সংকলন গ্ৰন্থে তাঁর রচনা প্ৰকাশ পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গ সংবাদ, প্ৰতিক্ষণ, স্বাধীনতার অন্যকথা (কলকাতা), বৰ্ণমালা (বৰ্ধমান), অনুবাদ পত্রিকা (কলকাতা) ইত্যাদি৷ অসমিয়া কাগজে কলাম লিখেছেন নিয়মিত৷ তাঁর লেখালেখি নিয়ে আলোচনা বেরিয়েছে দেশ, দহনকালের কথকতা, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে৷ দেশ বিদেশের বহু পত্ৰিকায় বেরিয়েছে শতাধিক লেখা৷ বৰ্তমানে ত্ৰিপুরায় এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্ৰমে প্ৰাবন্ধিক ও কবি সৌম্যদীপ দেব ও তীৰ্থঙ্কর চক্ৰবৰ্তী তাঁর লেখার উপর কাজ করছেন৷
একাধারে একজন কবি, সাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক, আবৃত্তিকার ও নাট্যশিল্পী তুষারকান্তি বিগত দুই দশক ধরে সম্পাদনা করে চলেছেন নিয়মিত প্ৰকাশিত সাহিত্য বিষয়ক ছোট পত্ৰিকা মজলিশ সংলাপ৷ এ যাবৎ এই পত্ৰিকার ১৫৭টি সংখ্যা প্ৰকাশিত হয়েছে, যা উত্তরপূৰ্বের সাহিত্যাকাশে এক উজ্জ্বল তথা ব্যতিক্ৰমী প্ৰয়াস৷ সাহিত্য ক্ষেত্ৰে উল্লেখযোগ্য অবদানের ফলস্বরূপ তিনি ২০২১ সালে পেয়েছেন অসম সরকারের সাহিত্য পেনশন৷
 
মজলিশ সংলাপ
 
একটি ছোটপত্ৰিকার প্ৰায় ২০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন প্ৰকাশ সাধারণ কথা নয়৷ কোনও একজনের প্ৰয়াসে একটি ছোটপত্ৰিকার ধারাবাহিক প্ৰকাশ সম্ভব নয় কদাপি৷ একাধিক সংস্কৃত প্ৰাণের যৌথ প্ৰচেষ্টাই পারে একটি ছোট পত্ৰিকাকে দীৰ্ঘদিন ধরে সমক্ষে বাঁচিয়ে রাখতে৷ ঠিক এমনই এক আবহে আজ থেকে প্ৰায় ২০ বছর আগে, ২০০৪ সালে গুয়াহাটির কয়েকজন সাহিত্য-অন্ত ব্যক্তির সমবেত উদ্যোগে অঙ্কুরিত হয়েছিল ২০/৮ ডিমাই সাইজের ফোল্ডার সদৃশ একটি পুস্তিকা৷ সাকুল্যে আট পাতা৷ দাম দুটাকা৷ তখনকার দিনের লিটল ম্যাগাজিনের পোড় খাওয়া তথাকথিত অভিজ্ঞ সম্পাদকরা হয়তো মুখ টিপে হেসেছিলেন আড়ালে৷
কিন্তু না, মুখ থুবড়ে পড়েনি এই প্ৰচেষ্টা৷ কারণ এর স্ৰষ্টাদের অন্তরে প্ৰত্যয় ছিল৷ ছিল আবেগ, ‘সাগর-বাসনা৷ সেই আবেগ, সেই গরজের ধারাবাহিক উত্তরণ ও টিকে থাকার লড়াইয়ে মাথা উঁচু করে নিজের অস্তিত্বকে সগৰ্বে প্ৰতিষ্ঠিত করার অসাধ্য সাধনের নামই হচ্ছে মজলিশ সংলাপ৷ আজ অবধি মোট ১৫৭টি সংখ্যা বেরিয়েছে এই পত্ৰিকার৷ বছরে চারটি সংখ্যার ধারাবাহিকতা হয়তো সব সময় রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি কোভিডজাতীয় বিঘ্নিত সময় তথা অন্যান্য বাধ্যবাধকতার জেরে কিন্তু মজলিশ সংলাপকে শুধু সংখ্যা দিয়ে বিচার করাও যাবে না৷ বিষয়বৈচিত্ৰে্, ভাবনায়, গুণগত মানেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একশো ভাগ সমৰ্থ হয়েছে পত্ৰিকা৷ ভুবনচিন্তার গণ্ডি পেরিয়ে মজলিশ-এ সন্নিবিষ্ট হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্ৰান্তের কবি লেখকদের রচনা যদিও সবচাইতে বেশি করে উল্লেখযোগ্য যে কথাটি তা হল এই ব্ৰাত্য ভুবনের কবি লেখকরাই কিন্তু মজলিশ-এর মূল আকর৷ এই ক্ষেত্ৰটিকে আজকাল অনেকেই গুরুত্ব দিচ্চেন না৷ আঞ্চলিকতা গুণ অনেকেই পরিহার করে চলেছেন৷ মজলিশ সংলাপএখানে ব্যতিক্ৰম৷
অভিজ্ঞ সম্পাদক তুষারকান্তি সাহাই আজ এই পত্ৰিকার কেন্দ্ৰবিন্দুতে বসে তাঁর অভিজ্ঞতার নিরিখে নিরন্তর জল সিঞ্চন করে চলেছেন এই বৃক্ষ-পত্ৰিকার গোড়ায়৷ জন্মলগ্নে জড়িত কিছু মহাপ্ৰাণ ব্যক্তি এখনও ভরসার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন বাইরে থেকে যদিও পত্ৰিকার মূল প্ৰাণশক্তি যে এই সম্পাদক তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ এ যাবৎ এই পত্ৰিকায় ৪টি ধারাবাহিক উপন্যাস প্ৰকাশিত হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বিশিষ্ট লেখক মানিক দাসেরও ঝিঙেফুল বলো তারে’, সজল পালেরহাজার কণ্ঠে মা৷ দুটি উপন্যাসই পরে গ্ৰন্থাকারে প্ৰকাশিত হয়েছে৷ এছাড়াও প্ৰকাশিত হয়েছে প্ৰয়াত লেখক শান্তিময় দেবনাথ তথা বিশিষ্ট সাহিত্যিক ঝুমুর পান্ডের দুটি উপন্যাসও৷ এর বাইরেও বিশিষ্ট যেসব কবি লেখকদের লেখা এখানে প্ৰকাশিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছেন তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবন সাহা, সত্য গুহ, অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, শৈলেন সাহা, বিকাশ সরকার, সঞ্জয় চক্ৰবৰ্তী, বিমলেন্দু চক্ৰবৰ্তী, চন্দ্রিমা দত্ত, মিলনকান্তি দত্ত, অভীককুমার দে, পবিত্ৰ মুখোপাধ্যায়, রূপরাজ ভট্টাচার্য, রমানাথ ভট্টাচাৰ্য প্ৰমুখ৷
সগৌরবে আরও বহু দূর এগিয়ে যাবে মজলিশ সংলাপএমন বিশ্বাস অকপটেই স্থান করে নেয় অন্তরে৷

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী 

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...