Skip to main content

Posts

Showing posts from October, 2021

'মাটির পৃথিবী' বই-এর আলোচনা - ২

' সাহিত্যের অন্তর্নিহিত আঁচটুকু যথাসময়ে অনুধাবন করতে না পেরে বাস্তবের তাড়নায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শেকড়কে শক্তপোক্ত করে উঠতেই পার হয়ে যায় জীবনের অধিকাংশ পথ । কাব্য সাধনায় বেঁচে থাকে সংক্ষিপ্ত জীবনকাল ...।" কবিতাকে কতটা গভীর ভাবে ভালবাসলে অন্তর থেকে বেরিয়ে আসে সহজ সরল স্বীকারোক্তি, একটা অতৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস সহজেই অনুমেয় । বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে কবি সাহিত্যিক মহলে প্রতিষ্ঠিত, প্রিয় এবং পরিচিত নাম । তার ক্ষুরধার রচনা বৌদ্ধিকসমাজে প্রশংসিত । প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল"স্বপ্নতরী" নাম নিয়ে । তারপর দীর্ঘ বিরতির শেষে প্রায় পনেরো বছর পর আবারও উপহার দিলেন নতুন কাব্যগ্রন্থ । এই দীর্ঘ অবসরে কবির কলম কিন্তু থেমে নেই । তার কবিতা আমরা পেয়েছি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এবং এই অবসরে আমাদের উপহার দিয়েছেন দু'দুইটি অসামান্য ছোটগল্প সংকলন "দিনান্তের রঙ" ও " জল রঙ জীবনকথা" । গত১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২১ রবিবার উন্মোচিত হলো কবির নতুন কাব্য সংকলন " মাটির পৃথিবী" । উন্মোচন করলেন গতি পত্রিকার সম্পাদক তথা

আলেয়ার খোঁজে

সকাল সন্ধে, রাতবিরেতে খোঁজ শুধু খোঁজ আলেয়া খুঁজি আমি, আপন মনে ঘরে, বাইরে, দালান কোঠায় রাস্তা ধারে, নদীর পাড়ে, চায়ের কাপে সে আছে, সে থাকে - পূর্ণ অবয়বে। কাঠফাটা রোদ্দুরে, লেপমুড়ির অন্দরে গ্রাম শহরে, চত্বরে, বন্দরে আমার মন না মানা অবসরে আমার হাজার কাজের ফাঁকফোকরে। কথায় কবিতায়, ব্যস্ত যাপন বেলায় ‘আমার নয়ন ভুলানো’ আসে স্মৃতির ভেলায়। ‘নয়নের মাঝখানে’ নিয়েছে সে ঠাঁই সে কি ‘কেবলই ছবি’ ? থেকেও যে নাই ? আছে সে তার আপন বিশ্বে খেয়ালি যাপনে আমি আলেয়ার মতো রচি তারে আপন মননে সাজাই তারে মনের মতো রংবাহারে আমার সব কথা রয় মনের গহীন অলিন্দে তার মন গগনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধরা দিয়েই হয় অবয়ব ফুসমন্তর আমি পাগলপারা খুঁজেই মরি অবান্তর, কে দেবে তার মনের খবর, কোন সে মেঘদূত ? তার কথার বাহার, খুশির ঝিলিক - তার চাউনি, ইশারায়, তারায় তারায় তার ঝাপসা বুলির স্বপ্নকথায় আহ্বানে তার কী যে কথা ভেসে বেড়ায়, আমি খুঁজে বেড়াই অতল সাগর যাই ছুটে প্রাণপনে, দিগন্ত নীল আকাশ পানে নীল পাহাড়ে, সবুজ ধানে - অধরা সে । আছে শুধু নয়নঠার আর মুচকি হাসি আমি আলেয়াকে ভালোবাসি।

বিষাদ-মেঘের কবিতা সংকলন - ‘শ্রী’

কবি গীতশ্রী ভট্টাচার্যের কাব্যগ্রন্থ ‘শ্রী’। ভূমিকায় তাঁর কথায় - ‘আমার বইয়ের নাম দিয়েছি ‘শ্রী’। ‘শ্রী’ মানে সুন্দর, শ্রী মানে সব ভালো কিছু। আর ‘শ্রী’-র মধ্যে কিছুটা এই ‘আমি’ও লুকিয়ে আছি।‘ ৫৬ পৃষ্ঠার বোর্ড বাঁধাইয়ের দুই মলাটের মধ্যে সাজানো আছে মোট ৫০টি কবিতা। প্রতিটি কবিতা এক পৃষ্ঠার। শিল্পী/লেখক কুণাল ভট্টাচার্য লিখছেন - সুললিত বিষাদের অনবদ্য ক্যানভাস - ‘শ্রী’। “এ কাব্যগ্রন্থে কবি এক নৈর্ব্যক্তিক চিত্রশিল্পী, নিজেকেই ক্যানভাস করে এঁকেছেন অনবদ্য বিষাদ। - - - - কখনও এক মনোরম চিরাকাঙ্ক্ষিত কল্পজগতের নির্মাণ-বিনির্মাণ করেছেন। কখনও হতাশা আর বিষাদের আড়ালে এক আধ্যাত্মিক যাত্রারম্ভ করেছেন কবি।“ এই সংকলনের প্রায় প্রতিটি কবিতাতেই ধরা আছে এক নৈরাশ্য, এক বিষাদের সুর। কবিতার নামকরণেও পরিষ্ফুট হয়েছে এই সুর - হারানো আমি, আটপৌরে, বিষাদ-মালা, ফুল ফোটে না, ফাগুন এলে না ?, অনাসক্তি, বিষাদ সঙ্গী, খরা ইত্যাদি। কবিতায় অনুভূতির কুসুমকলিকে যথাযথ ভাবে প্রস্ফুটিত করে তোলা যেন এক চিত্রকরের তুলির মোচড়ে অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করে তোলা। সেখানে এক অবয়বের দরকার। নিরাকার দৃশ্যকল্পে পার্থিব মানুষ তৃপ্তির ছোঁয়া থেকে চিরবঞ্চ

ভালোবাসা মূর্ত হয়ে ওঠে নিজেরই অজান্তে

“আমার মন বলে চাই চাই গো, যারে নাহি পাই গো” - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার - আন্তর্জাতিক বেস্ট সেলার ‘Bending the Universe’- এর লেখক Justin Wetch লিখছেন - “Sometimes it feels like even if Every inch of my skin was touching yours I still wouldn’t be close enough to you.” চাওয়া পাওয়ার এই লুকোচুরিই হয়তো প্রেমের সবচাইতে প্রথম ও প্রধান উপাদান। আর প্রেমের পরিভাষা সম্ভবতঃ কবিতায়ই ধরা হয়েছে সবচাইতে প্রাঞ্জল করে। প্রেমের কবিতা তাই বিশ্বজনীন। কবিতার আলেয়ার মতো বুনোটে প্রেম হয়ে ওঠে আরোও নিগূঢ়, আরোও একান্ত। বাঙ্ময় নৈশব্দে এসে ধরা দেয় অন্তরের অন্দরমহলে। দেবলীনা সেনগুপ্তের সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেম, তুমি’ সেই অনন্ত প্রেমের অনিঃশেষ যাত্রাপথে নির্দ্বিধায় এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। ২০১৪ সালে ‘আলোকবর্ণা’ এবং ২০১৬ সালে ‘চন্দ্রাহত’ - এই দু’টি কাব্যগ্রন্থের পর মোট চল্লিশটি কবিতা নিয়ে ‘প্রেম, তুমি’ হলো কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। কবি সঞ্জয় চক্রবর্তী ভূমিকাতে লিখছেন - “দেবলীনা সেনগুপ্ত যে ভূমিতে বাস করেন, তারই কাদামাটিজলের মতো নরম, স্নিগ্ধ, শান্ত, মনভোলানো এক আবেগময় পৃথিবী ওনার কবিতা। সহজ উচ্চারণ, জটিলতাহীন -

‘রামধনু’ - গল্প যেখানে ভাবতে শেখায়

একেবারেই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি , গল্পকার দোলনচাঁপা দাসপাল - এর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ রামধনু ’ । নামকরণেই চমক । আজকাল বৌদ্ধিক মহলে সচরাচর উচ্চারিত হয় না এই শব্দটি । তার চেয়ে রংধনুতেই স্বচ্ছন্দ অধিকাংশ সাহিত্যসেবী । দোলনচাঁপা প্রথমেই গড্ডলিকার বিপরীতে সন্তর্পণে রেখেছেন পা । অথচ ‘ রামধনু ’ নামের গল্পটির কিন্তু অনায়াসে হতে পারত অন্য নাম । কিন্তু গল্পকার এখানে নিজের স্বতন্ত্র সত্ত্বা , আভিজাত্যের পরিচয় দিয়েছেন একেবারেই তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারায় , মতাদর্শে । এবং এই কথাটিই আগাগোড়া উচ্চারিত হয়েছে সমগ্র গ্রন্থ জুড়ে । তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা একেবারেই যে স্বতন্ত্র ধারার সেই ছাপটি স্বচ্ছ জলের মতোই স্পষ্ট ফুটে উঠেছে প্রতিটি গল্পে । সাধারণ চিন্তার বাইরেও যে একটি জগৎ আছে , নিত্য দিনের চোখে দেখা ঘটনাবলির ভেতরেও যে লুকিয়ে থাকে ভাবনার অতীত গল্পকথা সেই সত্যটিই চোখে আঙুল দিয়ে উদ্ভাসিত করে দেখিয়েছেন গল্পকার । ১১১ পৃষ্ঠার এই সংকলনে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ১১ টি গল্প । প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে পৃষ্ঠাসংখ্যা অনায়াসে কম করা যেত - যদি দু ’ লাইনের মাঝের ফাঁকটুকু (Line Spacing) অনাবশ্যক বেশি না রাখা

আদিমা মজুমদারের ‘দামিনী এবং অন্যান্য গল্প’

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হাতে এলো বিশিষ্ট গল্পকার আদিমা মজুমদারের চতুর্থ গল্প সংকলন - ‘ দামিনী এবং অন্যান্য গল্প ’ । হয়তো সোজাসুজি গল্পবিশ্বে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন বলেই ভূমিকা এখানে নিষ্প্রয়োজন । তাই নেই কোনও নান্দীমুখ । আছে শুধু অণিমা বৈদ্য ভট্টাচার্যের সংক্ষিপ্ত কথামুখ । এবং এই কথামুখেই সম্যক ভেসে আসে গল্পকার ও সংকলনের গল্পসমূহের এক অতি সংক্ষিপ্ত সারাৎসার। মোট ৮৩ পৃষ্ঠার পেপারব্যাকে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ১৫টি গল্প। এর আগেও এই সফল গল্পকারের সাবলীল গল্পময় চলনের যে পরিচয়টি পাওয়া গেছে সেই একই ধারায় এখানেও আদিমা স্বচ্ছসলিলা কিন্তু অতি অবশ্যই খরস্রোতাও বটে। কোনও ব্যক্তিবিশেষ নয়, গল্পকার তাঁর এই সৃষ্টিকে সমর্পণ করেছেন ‘অতীব স্নেহে মমতায়, প্রিয় জন্মস্থান - ইছারপার’কে। জন্মভূমির প্রতি তাঁর এই দায় দাগ কাটে মনে। এই গল্পকার আমাদের অতি কাছের জন এবং তাঁর সোজাসাপটা ভাবপ্রকাশের ধারার সঙ্গে আমরা খুব বেশি পরিচিত। ব্যতিক্রম নয় ‘দামিনী’ও। “দিঘি থেকে উঠে এসে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াই । মামার ঘরের চারপাশে এলোমেলো পায়ে এদিক ওদিক ছুটতে থাকি । আসাম টাইপ ঘর । - - - - - - দক্ষিণ দিকে আরেকটি ছোট ঘর ।