Skip to main content

‘রামধনু’ - গল্প যেখানে ভাবতে শেখায়



একেবারেই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি, গল্পকার দোলনচাঁপা দাসপাল-এর প্রথম গল্পগ্রন্থরামধনু নামকরণেই চমক আজকাল বৌদ্ধিক মহলে সচরাচর উচ্চারিত হয় না এই শব্দটি তার চেয়ে রংধনুতেই স্বচ্ছন্দ অধিকাংশ সাহিত্যসেবী দোলনচাঁপা প্রথমেই গড্ডলিকার বিপরীতে সন্তর্পণে রেখেছেন পা অথচ রামধনুনামের গল্পটির কিন্তু অনায়াসে হতে পারত অন্য নাম কিন্তু গল্পকার এখানে নিজের স্বতন্ত্র সত্ত্বা, আভিজাত্যের পরিচয় দিয়েছেন একেবারেই তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারায়, মতাদর্শে এবং এই কথাটিই আগাগোড়া উচ্চারিত হয়েছে সমগ্র গ্রন্থ জুড়ে তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা একেবারেই যে স্বতন্ত্র ধারার সেই ছাপটি স্বচ্ছ জলের মতোই স্পষ্ট ফুটে উঠেছে প্রতিটি গল্পে সাধারণ চিন্তার বাইরেও যে একটি জগৎ আছে, নিত্য দিনের চোখে দেখা ঘটনাবলির ভেতরেও যে লুকিয়ে থাকে ভাবনার অতীত গল্পকথা সেই সত্যটিই চোখে আঙুল দিয়ে উদ্ভাসিত করে দেখিয়েছেন গল্পকার
১১১ পৃষ্ঠার এই সংকলনে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ১১ টি গল্প প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে পৃষ্ঠাসংখ্যা অনায়াসে কম করা যেত - যদি দুলাইনের মাঝের ফাঁকটুকু (Line Spacing) অনাবশ্যক বেশি না রাখা হতো
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে গল্পকারেরদুই চোখের তারাপাপু ও মিঠিকে কথামুখ-এ দীপেন্দু দাস লিখছেন - গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে পড়ছে ভার্জিনিয়া উলফ এর সেই উক্তি - ‘A woman must have money and a room for her own if she is to write fiction’. প্রায় প্রতিটি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র - নারী অধিকাংশ গল্পের সংক্ষিপ্ত আলোচনার শেষে তাঁর বক্তব্য - ‘লেখকের প্রথম গল্প সংকলন পাঠকের দরবারে সমাদর লাভ করবে এই প্রতীতী আছে এর পর গল্পকারলেখকের অনুভবেব্যক্ত করেছেন এ গ্রন্থ প্রকাশের নেপথ্য গরজ
জীবন যেমনগল্পটির নামচল কিত কিতও হতে পারতো জীবনের চলমানতায় অনাঙ্ক্ষাকিত বিপত্তির এক অসাধারণ গল্প শৈশব, কৈশোরের গোড়াতেই জীবন গড়ার বদলে ধ্বংস করে দেওয়া হয় অনেক জীবন এ তারই এক জলছবি
দেবীপক্ষলেখকের এক অনবদ্য ছোটগল্প যা সার্বিক প্রকাশে এক বিশেষ স্থান দখল করে নেয় অনায়াসে অন্ত্যজ সমাজে বৈধব্য জীবনের এক করুণ ছবি সাথে বালিকাবেলার অসহায়তা এক অনবদ্য মিশ্রণ যেন শেষে যাবতীয় ক্ষোভকে উগরে দিয়ে বেরিয়ে আসে অমোঘ শ্লেষের উচ্চারণ - ‘মা দুর্গা, তুমি বিধবা হও
খননগল্পে তেমনি এক সমান্তরাল মিশ্রণের উপস্থিতি জল ও সন্তান সেনগিন্নির সন্তান চাহিদার এক চমকপ্রদ আখ্যান এই গল্পের বুনোট লক্ষ্যণীয় পরতে পরতে মুন্সিয়ানা
ফিরে দেখাগল্পে নায়িকা সাবিত্রীর জীবন যুদ্ধের এক ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা যাবতীয় বাধাকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে সন্তানের ও পরিবারের দুর্দশা নিরসনের এক সংগ্রামী কাহিনি আজকের দিনে রোজগারহীন মহিলাদের কুণ্ঠিত দিনযাপনের এক বাস্তব ছবি ফুটে ওঠে এই গল্পটির মাধ্যমে ঘটনার ক্রমগুলোকে এখানে সুচারু সুতোয় গেঁথে রাখতে একশো শতাংশ সফল এই গল্পকার
রামধনুযেখানে এক নির্মল প্রেমের গল্প সেখানেহামারি আজব কাহিনিএবং শেষ গল্পপরভূমি বাসএক নির্মোহ বাস্তব
আরেকটি ভিন্ন স্বাদের গল্পপরিক্রমা সাধু ভাষায় লিখা ডাইরির পাতার উদ্ধৃতির সমন্বয়ে এক পুরোপুরি ব্যতিক্রমী ধাঁচ এই গল্পে বাকি গল্পগুলিও গল্পই কোথাও অগল্প হয়ে উঠেনি প্রতিটি গল্প এগিয়েছে তরতরিয়ে পাঠকের রসনা সিক্ত হয়েছে
দোলনচাঁপার গল্প সরল কথনে লিখা ভাষার ভজঘট নেই এতটুকু সহজ পাঠকের মনে দাগ রেখে যায় অনায়াসে দোলনচাঁপার গল্পে নারী জীবনের হতাশ চিত্রটি ফুটে ওঠে নিদারুণ ভাবেমুদ্রার ভিন্ন পিঠগল্পেনগণ্য নারী চরিত্র’ জনা সম্পর্কে তাই তিনি বলেন - ‘জনারা জনাই থেকে যায়, অহল্যা হয় না রামায়ণ রচিত হয়, সীতায়ণ রচিত হয় না জনারা দেবী হয়, সতী হয়, ডাইনি হয়, মানবী কিন্তু হয় না দোলনচাঁপার গল্প এভাবেই বাস্তবের প্রতিবিম্ব হয়ে ধরা দেয় পাঠকের মানস দর্পণে
তানিয়া কোলের প্রচ্ছদে রামধনুর রঙ বইটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকখানি শেষ প্রচ্ছদে আছে কিছু নিজের কথা সামান্য কিছু ছাপার ভুল এবং মাঝে মাঝে হঠাৎ করে ফন্ট চেঞ্জ হওয়ার বাইরে কোথাও ত্রুটি নেই সংকলনে
 
রামধনু
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪০১৩৭৭০৩০
- - - - - - - - -

Comments

  1. খুব ভালো লাগলো আলোচনাটি। গল্পগুলি পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুললো। লেখিকাকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানাই। রামধনু সর্বশ্রেণীর পাঠকের মন জয় করতে সক্ষম হোক।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়