Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2023

স্বাধীনতা সংগ্রামের অনুচ্চারিত অধ্যায় - ‘স্বাধীনতার অন্য কথা’

সম্প্রতি দেশীয় ইতিহাসের অবলোকন তথা মূল্যায়ন নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে ঘরে বাইরে। জ্ঞাতব্য বনাম অহেতুক তথা অপ্রয়োজনীয় ইতিহাস পাঠের সীমারেখা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। দোষারোপ তথা পালটা দোষারোপের চাপানউতোর চলছে সমানে। সম্প্রতি গুয়াহাটির পি পি পাবলিকেশন অ্যান্ড গ্রাফিক্স থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা সম্পাদক অঞ্জন সা হা কর্তৃক সম্পাদিত ৫৬০ পৃষ্ঠার বিশাল সংকলন গ্রন্থ ‘স্বাধীনতার অন্য কথা’তেও এমনই সন্দেহ তথা আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিচিত ইতিহাসকথার বাইরে বেরিয়ে বহু অজানা তথ্যের সমাহারে সুচয়িত ও সুলিখিত একগুচ্ছ প্রবন্ধ-নিবন্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার এক অদ্যাবধি অনুদ্ঘাটিত অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে পাঠকের সামনে। এ নিয়ে ‘শুরুর কথায়’ আছে - ‘......বলা হয়, এবং কথাটা সত্যি যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আমরা সেইসব নেতাদেরই গুরুত্ব দিয়ে এসেছি, যাঁরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে নতুন দেশের শাসক হয়ে উঠেছেন বা তাঁদের প্রভাবিত করেছেন। হয়তো কিছুটা পরিকল্পিত ভাবেই এসব করা হয়েছে।...... তাঁদের ‘ত্যাগের’ আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকার কারাপ্

প্রতিবাদী কবিতার সুবিন্যস্ত সংকলন ‘নির্বাসিত ঈশ্বরের দেশে’

... পথও কখনো কখনো পথ বদলায় এর পথ হঠাৎ বেঁকে তার পথে মেশে চড়াই উতরাই পেরিয়ে ওর পথের পেটে ঢুকে যায় তার পথ ।   এভাবে দরজা জানালা বেডরুম কলিংবেল ছিটকিনি ভাতঘুম অদলবদল হয়।   শেষে একই শব্দে জ্বলে আমকাঠ কিংবা সাড়ে তিন হাত মাটির চাদরে শরীর ঢেকে - নৈঃশব্দ্যের ভেতর শব্দরা ঘুমিয়ে পড়ে। গ্রন্থের প্রথম কবিতা - ‘শব্দের ভেতর’-এ কবির এভাবেই যে ঢুকে পড়া সগর্বে, সপাটে, কাব্যিকতাকে সঙ্গে নিয়ে সেই ধারা আদ্যোপান্ত বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছেন একইভাবে। কবি তারাপ্রসাদ বণিক শুধু ত্রিপুরার কবি নন। বস্তুত কবি লেখকরা আঞ্চলিক হতে পারেন না। তাঁরা বিশ্বনাগরিক। তাই তো তারাপ্রসাদের কবিতায় গঙ্গা যমুনা গোমতীর সাথে মিশে থাকে ব্রহ্মপুত্র ডিহিং-এরও প্রবহমানতা। শব্দের মতো, কবিতার ফল্গুধারার মতো। ৭২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে আছে মোট ৫৬ টি কবিতা। ব্যতিক্রমী তার ভূমিকা। ‘স্বীকারোক্তি’ শিরোনামে ভূমিকায় কবিতার শরীরে ব্যক্ত করেছেন আত্মকথা - ‘আজন্ম আপাদমস্তকে মেখেছি মর্মে মথিত এ মাটির স্নেহ-স্পর্শে জন্ম জন্মান্তরের গূঢ় লেনদেন। ... ’ কবির সপাট উচ্চারণ - ‘কবিতার বুকে আশ্রিত হই নিরন্তর ... নির্বাসিত ঈশ্বরের দেশে কবিতা নয় শুধু এ ক্রম-ক্ষী

অষ্টচরণ কবিতার সুখপাঠ্য সংকলন ‘মানুষ কি মানুষের মতো’

‘আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানবিন্দু থেকে জন্ম দিলাম তোমায় জন্ম দিলে তো চলে না, লালনের দায়িত্ব আমি কি একা সামলাতে পারি ? তোমাকে কি পৌঁছে দিতে পারি ভরা যৌবনে ? চাই প্রেম, চাই ভালোবাসা, চাই ভালো লাগা, ঘন আঁধারে হাজার জোনাকির আলো তোমায় পৌঁছে দেবে পূর্ণিমার আকাশে, ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থেকো।’ একটি মস্ত বড় - প্রায় পৃষ্ঠাজোড়া আকারের ‘ ৮ ’ । এবং তার খাঁজে খাঁজে , অঙ্গে অঙ্গে ইতস্তত আটকে থাকা , জুড়ে থাকা আটটি পা ( পড়ুন চরণ ) । অনবদ্য রং - এর খেলায় অভিনব এক প্রচ্ছদ । সাংকেতিক এবং ষোলোআনা প্রাসঙ্গিক । আটটি পা অর্থে অষ্টচরণ । এক বিশেষ ধাঁচের কবিতা , যার পঙক্তি সংখ্যা অতি অবশ্যই আট । এই অষ্টচরণ কবিতা নিয়ে গ্রন্থের ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধন লিখছেন - “ মধ্যযুগে ইতালিতে এক বিশেষ ধরনের কবিতার প্রথম উদ্ ‌ ভব হয় , যার বৈশিষ্ট্য হল প্রতিটি কবিতা চোদ্দো চরণের এবং প্রতিটি চরণে সাধারণত মোট চোদ্দোটি করে অক্ষর থাকবে । এই কবিতার প্রথম আট চরণের স্তবককে অষ্টক এবং পরবর্তী ছয় চরণের স্তবককে ষষ্টক বলা হয় । … এগুলোকে সনেট বলা হয় । বাংলা ভাষায় সনেট রচনার কৃতিত্বের অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন

বিষয় বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ‘মানবী’

বরাক উপত্যকা থেকে যে ক ’ টি ছোট পত্রিকা প্রকাশিত হয় তাদের মধ্যে ‘ মানবী ’ অন্যতম এবং একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা নিঃসন্দেহে । গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে এ কথা বলা যায় হলফ করে । তবে নিয়মিতভাবে প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘ মানবী ’ পিছিয়ে পড়ছে প্রায়শই । তাই একের পর এক যৌথ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে । উল্টো করে বললে যৌথ সংখ্যা প্রকাশ করেই নিয়মানুবর্তিতা রক্ষা করে চলেছে । এতে ক্ষতি পাঠক বই আর কারোও নয় । কারণ বিষয়ে , বৈচিত্র্যে ‘ মানবী ’ সততই একটি উন্নত মানের পত্রিকা । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকার ডিসেম্বর ২০২২ - মার্চ ২০২৩ সংখ্যা ( ষোড়শ ও সপ্তদশ বর্ষ , শীত - বসন্ত সংখ্যা ) । ‘মানবী’ বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা না হলেও একটি অংশ বিষয়ভিত্তিক হয়ে থাকে সাধারণত। এবারের বিষয় ছিল ‘পুরাণ পাতা থেকে’। এই পত্রিকার সূচিপত্রের বিন্যাস বরাবরই ব্যতিক্রমী। যথারীতি অন্যথা হয়নি এ সংখ্যাতেও। প্রথমেই সম্পাদকীয়র পর আছে পুরাণ নির্ভর কিছু প্রবন্ধ-গল্প, অবশ্যই নতুন আঙ্গিকে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে। ‘মানবী’র চার নিয়মিত সম্পাদকের মধ্যে এবারের সম্পাদক হচ্ছেন দোলনচাঁপা দাসপাল। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে - ‘...... অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতাই ত

বাস্তবের প্রেক্ষাপটে ‘স্বপ্নের রূপকথারা’

কোনও ভণিতা নেই , কঠিন শব্দাবলির আদিখ্যেতা নেই , তৎসম শব্দের ব্যবহারে সাহিত্যরস সৃষ্টির কোনও প্রয়াস নেই , অপ্রয়োজনীয় জায়গায় গল্পের কলেবর বৃদ্ধির কোনও অপচেষ্টা নেই । সরাসরি বিষয়বস্তুতে প্রবেশ করে ঘটনা পরিঘটনার প্রাঞ্জল বয়ানে , সংলাপে নিখাদ নিটোল এক একটি ছোটগল্পের উপস্থাপনা করতে পারেন এবং পাঠকের নিরলস পঠনের সুযোগ করে দিতে পারেন এমন গল্পকারের উপস্থিতি আজকের দিনে বড় একটা পাওয়া যায় না । যে ক ’ জন গল্পকার এমন সাহস দেখিয়ে নিমগ্ন পাঠককে ধরে রাখতে পারেন আদ্যন্ত তাঁদের মধ্যে একজন অতি অবশ্যই পরিতোষ তালুকদার । অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার এই সাহিত্যিক এ যাবৎ সৃষ্টি করেছেন দশটি গল্প সংকলন এবং ছয়টি উপন্যাস । সাহিত্যের এই ভুবনে যা নিঃসন্দেহে এক বিরল ঘটনা । এমন বিপ্লব কিন্তু আমাদের এই পরিচিত সাহিত্যাকাশে চাপা পড়ে রয় নীরব বিমুখতার আড়ালে । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আরোও একটি গল্প সংকলন - ‘ স্বপ্নের রূপকথারা ’ । মোট আটটি গল্পের সমাহারে ৮৮ পৃষ্ঠার এই সংকলনটিও আগের সংকলনগুলির মতোই পেপারব্যাকে প্রকাশিত । গ্রন্থনামে ‘ স্বপ্ন ’ শব্দটি ব্যবহৃত হলেও প্রতিটি গল্পই কিন্তু নিখাদ বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে লিখ

জীবনে যে পূজা হল না সারা

সকালে উঠেই লিখেছি বীজমন্ত্র - গুরোবে নমঃ। এর পর একরাশ দ্বিধা এসে দোলাচলে আবদ্ধ করে সন্দিগ্ধ প্রহর আজ কি লিখব কিছু আদৌ ? কলম ধরার এলেম আছে কতটুকু আজকের পূজাদিনে ? আজ তো অনন্ত চরাচর জুড়ে একটাই ক্যানভাস - একটাই মুখ হৃদয়ের আনাচে কানাচে পার্থিব দুঃখ সুখ। আজ সকাল হতে কাঠফাটা রোদ্দুর পড়ে না জল , নড়ে না পাতা কোথাও নেই বৃষ্টি , নেই টাপুর টুপুর রব। তবু বান আসে জোর , হড়পা বান চোখের জলে ভেসে যায় সারা অঙ্গ কেমন করে সাজাই অর্ঘ্য ডালি ? ইচ্ছে করে আমার আছে যত প্রেম উজাড় করে তোমারই চরণে ঢালি। এ জীবনে হায় এ পূজা হল না সারা আর জনমে প্রভু পাই যেন এ অধিকার , যে পথে একদিন পড়েছে তোমার চরণচিহ্ন ধূলি হব সেই পথে আমি - শুধু একটিবার।

ব্যতিক্রমী ভাবনার অনবদ্য ফসল ‘রবীন্দ্রসংগীত মননে ও অনুভবে’

‘ একুশ শতকের তৃতীয় দশকে প্রবেশ করেছি আমরা । এর মধ্যে কুড়ি ও একুশ - বিগত দু ’ টি বছর মারণ ব্যাধি করোনার প্রকোপে পড়ে অগণিত মানুষ মানবিক সংকটের সম্মুখীন হলেও সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে একেবারে নিষ্ফলা নয় । আমরা এই সংকটের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে চলেছি এখনও । এর থেকে অব্যাহতি লাভে সংগীতই একমাত্র অবলম্বন । আর রবীন্দ্রসংগীত এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস । ‘   প্রথম ব্লার্বে এভাবেই স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট বিষয়ের কথা । ‘রবীন্দ্রসংগীত মননে ও অনুভবে’ শীর্ষক ৬৪০ পৃষ্ঠার এই বিশাল সংকলন গ্রন্থে রয়েছে ৫৭ টি বাংলা প্রবন্ধ এবং ৮ টি ইংরেজি প্রবন্ধ। লিখেছেন এ অঞ্চলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিদগ্ধ প্রবন্ধকাররা। এর পরেই রয়েছে সম্পাদক শংকর করের ‘সম্পাদনার নেপথ্যে’। এই ভূমিকার পুরো বক্তব্য তুলে ধরতেই শেষ হয়ে যাবে আলোচনার পরিসর। পৃষ্ঠা সাত থেকে সতেরো অবধি ভূমিকায় রয়েছে সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত এবং গ্রন্থের সাতসতেরো। বস্তুত সমগ্র সংকলনের নির্যাস এখানে তুলে ধরা হয়েছে সবিস্তারে । ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই নন, তিনি বিশ্বকবি, বিশ্বমানবের কবি। ... তাঁর ঋষিসত্তা

এপার ওপার

একদিন ছিল কত কাজ এপার ওপার যাত্রী পারাপার কত হাসি খিলখিল কত উদাসী মনের ইতিউতি ফিরে দেখা চোখে চোখে কত শত বিস্ময় অপার ।   আজও কারা যায় আসে নিরবধি ওই ঘাট পেরিয়ে নদ পেরিয়ে আসে যায় কারা দলে দলে শুধু ছোটাছুটি কলকল কথাকাকলি সকাল সন্ধ্যা পায়ে পায়ে পথ চলে ? 'ছুটে চল সবে আঁধার ঘনিয়ে এল সূর্য ডোবে ধীরে ধীরে চেয়ে আছে পথ কত কত চোখ । সকাল হতেই বেরিয়েছে যারা পথে ওই বুঝি তারা ঘরে এল ফিরে'।