সম্প্রতি দেশীয় ইতিহাসের অবলোকন তথা
মূল্যায়ন নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হচ্ছে ঘরে বাইরে। জ্ঞাতব্য বনাম অহেতুক তথা অপ্রয়োজনীয়
ইতিহাস পাঠের সীমারেখা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। দোষারোপ তথা পালটা দোষারোপের
চাপানউতোর চলছে সমানে।
সম্প্রতি গুয়াহাটির পি পি পাবলিকেশন অ্যান্ড গ্রাফিক্স থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা সম্পাদক অঞ্জন সাহা কর্তৃক সম্পাদিত ৫৬০ পৃষ্ঠার বিশাল সংকলন গ্রন্থ ‘স্বাধীনতার অন্য কথা’তেও এমনই সন্দেহ তথা আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিচিত ইতিহাসকথার বাইরে বেরিয়ে বহু অজানা তথ্যের সমাহারে সুচয়িত ও সুলিখিত একগুচ্ছ প্রবন্ধ-নিবন্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার এক অদ্যাবধি অনুদ্ঘাটিত অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে পাঠকের সামনে। এ নিয়ে ‘শুরুর কথায়’ আছে - ‘......বলা হয়, এবং কথাটা সত্যি যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আমরা সেইসব নেতাদেরই গুরুত্ব দিয়ে এসেছি, যাঁরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে নতুন দেশের শাসক হয়ে উঠেছেন বা তাঁদের প্রভাবিত করেছেন। হয়তো কিছুটা পরিকল্পিত ভাবেই এসব করা হয়েছে।...... তাঁদের ‘ত্যাগের’ আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকার কারাপ্রাচীরের ভিতরে থাকা অসংখ্য যুবক যুবতির আত্মবলিদানের কথা। অখ্যাত, অনামী সেই বিপ্লবীদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে এই বইটিতে।’ ......
মোট ৮৬ টি প্রবন্ধ-নিবন্ধের শিরোনাম লিখতেই যেখানে খরচ হয়ে যাবে প্রায় হাজার শব্দ সেখানে এই স্বল্প পরিসরে প্রতিটি রচনার সামান্যতম আভাসও দেওয়া সম্ভব নয়। তবু সার্বিক ভাবে কিছু ছুঁয়ে দেখার প্রয়াস করাই যায়।
‘শুরুর কথা’ শিরোনামে ভূমিকায় সংকলক ও সম্পাদক যে কথাটি মূলত বলতে চেয়েছেন তার নির্যাসটুকু পাওয়া যায় প্রথম ব্লার্বে - ‘অমাবস্যার স্মশানে ভীরু ভয় পায়; সাধক সেখানে সিদ্ধিলাভ করে। ফাঁসির আগে রাজসাহী জেল থেকে ভাইকে চিঠিতে লিখেছিলেন ভবানী ভট্টাচার্য। এমনই সব বীর, যাঁরা নিজেদের কথা, পরিবারের কথা ভাবেননি। যেন কোনও নিশির ডাকে জীবন উৎসর্গ করে চলে গিয়েছেন। সেই নিশির ডাক, ভারতকে মুক্ত করার ডাক। তবু এত লড়াইয়ের পরেও ভারতবর্ষে এল খণ্ডিত স্বাধীনতা। দেশভাগের সঙ্গেই শুরু উদবাস্তুদের টিকে থাকার লড়াই। ভারতের স্বাধীনতার আসল নায়কদের কথা, কংগ্রেসে চোরাস্রোত, দেশভাগ, কাশ্মীর ত্রিপুরা কোচবিহারের সংযুক্তি নিয়ে পর্দার আড়ালের অনেক নাটক, অনেক গল্প। এসব নিয়েই ‘স্বাধীনতার অন্যকথা’।
লেখাগুলিকে মোট দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। ‘প্রস্তুতি পর্বে’ আছে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঘটনার পরিক্রমা। এই পর্বে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৭৬ টি রচনা এবং শেষে ‘বিভাজন পর্বে’ আছে মোট দশটি লেখা - স্বাধীনতা পরবর্তী ঘটনা; মূলত দেশভাগ ও তজ্জনিত উদবাস্তু বিষয়ক। কিছু লেখা সরাসরি আহৃত হয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিভিন্ন সময়ে লিখা রচনাসমূহ থেকে। অধিকাংশ লেখাই মৌলিক। কলম ধরেছেন যাঁরা কিংবা যাঁদের লেখা তুলে আনা হয়েছে - অঞ্জন সাহা, অপূর্ব সাহা, হেমচন্দ্র কানুনগো, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, রণেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মতিলাল রায়, বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব দাস, তুষারকান্তি সাহা, স্বাগতা চৌধুরী, নলিনীকিশোর গুহ, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, বিপ্লবী হরিদাস দত্ত, সৈকত মিস্ত্রী, অনিন্দ্য শর্মা, বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক, বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত, মোহসীন উল হাকিম, দিব্যেন্দু বিশ্বাস, বিপ্লবী উজ্জ্বলা মজুমদার (রক্ষিত-রায়), কে পি বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ, সন্তোষকুমার বসু, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, বিপ্লবী সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, বিপ্লবী অখিলচন্দ্র নন্দী, বিপ্লবী কমলা দাশগুপ্ত, বিপ্লবী বীণা দাস, শুভেন্দু রায়চৌধুরী, গৌতম সিনহা, সুখেন্দু হীরা, প্রণব রায়, অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী অবিনাশ ভট্টাচার্য, ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত-রায়, রাতুল চন্দরায়, অমলেন্দু বাগচী, বিপ্লবী বারীন্দ্র ঘোষ, দেবোত্তম চক্রবর্তী, সত্যেন সেন, অরিতা ভৌমিক, সুকুমার মিত্র, স্বাধীনতা সংগ্রামী অশোকা গুপ্ত, বিপ্লবী সুনীলকুমার গুহ, চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল ও জীবন সাহা। রয়েছে একই লেখকের একাধিক নিবন্ধ। কিছু লেখার লেখকদের নাম অনুল্লেখিত। পাদটীকাতেও উল্লেখ নেই কিছু। সম্ভবত পূর্ববর্তী লেখকের লিখা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আবার ক্রমান্বয়ে দু’টি নিবন্ধের পাশে একই লেখকের নাম লিখাও হয়েছে। তাই কিছুটা ধন্দে পড়তে হয় এইসব লেখক-নামরহিত লেখাগুলির ক্ষেত্রে।
এক একটি লেখা পড়তে গিয়ে বিস্মিত হতে হয় যে কত কথাই না চাপা পড়েছিল বিস্মৃতির কিংবা বলা ভালো অনুল্লেখ-এর আড়ালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে লুকিয়ে রয়েছিল কত বীর গাথা, কত বিনিদ্র রজনীর দীর্ঘশ্বাস কতটুকু তার প্রকাশ পেয়েছে আজ অবধি ?
বিভাজন পর্বে দেশভাগের অব্যবহিত পরে সৃষ্ট উদবাস্তুদের দুঃখ কষ্টের কথা পড়তে গিয়ে অশ্রু সংবরণ করা মুশকিল। দেশত্যাগের বেদনার পাশাপাশি রয়েছে এ দেশে উদবাস্তুদের নিয়ে রাজনীতি ও পক্ষপাতিত্বের স্বরূপ। তবে এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গের উদবাস্তু সমস্যার পাশাপাশি আসাম ও উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যের এই সমস্যা - যা আজও জ্বলন্ত; এ নিয়ে একটি প্রবন্ধের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্তের পাশাপাশি তথাকথিত দেশনেতাদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বও বর্ণিত হয়েছে কিছু লেখায় যা পাঠকের চোখ খুলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী আদি পরিচিত নামের বাইরেও অনেক অনেক বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বীরগাথা, হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার কথা যা এতদিন সাধারণ্যে থেকে গিয়েছিল অশ্রুত, অজানা সেইসব বীরকথার, অনন্য দেশভাবনা, দেশপ্রেম ও সহাস আত্মবলিদানের ঘটনার অসামান্য বর্ণনায় গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। প্রতিটি রচনা পড়ে যেতে হয় তন্ময় হয়ে। লেখকদের লেখায় যেমন ফুটে উঠেছে বিষয়ের গাম্ভীর্য তেমনি সাহিত্যরসেও হয়ে উঠেছে সুপাঠ্য। ফলত এই গ্রন্থটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে অনুবাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারলে আখেরে দেশের জনতারই হিতকর্মে আসবে বলে মনে হয়।
বিপ্লবীদের ছবির পাশাপাশি কিছু ঘটনাবলির চিত্র সন্নিবিষ্ট হওয়ায় গ্রন্থের মর্যাদা বেড়েছে বহুলাংশে যদিও সম্পাদক এক্ষেত্রে অনেক ছবি উদ্ধার করতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। রাতুল চন্দরায়ের পরিচ্ছন্ন প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক ও আন্তরিক। জ্যাকেট কভারে পাকা বাঁধাই ও নির্ভুল বানানে ছাপার মান যথাযথ। গ্রন্থটি সম্পাদক অঞ্জন সাহা উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘মা-কে’।
সম্প্রতি গুয়াহাটির পি পি পাবলিকেশন অ্যান্ড গ্রাফিক্স থেকে প্রকাশিত বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা সম্পাদক অঞ্জন সাহা কর্তৃক সম্পাদিত ৫৬০ পৃষ্ঠার বিশাল সংকলন গ্রন্থ ‘স্বাধীনতার অন্য কথা’তেও এমনই সন্দেহ তথা আশঙ্কার কথা ব্যক্ত হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিচিত ইতিহাসকথার বাইরে বেরিয়ে বহু অজানা তথ্যের সমাহারে সুচয়িত ও সুলিখিত একগুচ্ছ প্রবন্ধ-নিবন্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার এক অদ্যাবধি অনুদ্ঘাটিত অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে পাঠকের সামনে। এ নিয়ে ‘শুরুর কথায়’ আছে - ‘......বলা হয়, এবং কথাটা সত্যি যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আমরা সেইসব নেতাদেরই গুরুত্ব দিয়ে এসেছি, যাঁরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে নতুন দেশের শাসক হয়ে উঠেছেন বা তাঁদের প্রভাবিত করেছেন। হয়তো কিছুটা পরিকল্পিত ভাবেই এসব করা হয়েছে।...... তাঁদের ‘ত্যাগের’ আলোর ঝলকানিতে হারিয়ে গিয়েছে অন্ধকার কারাপ্রাচীরের ভিতরে থাকা অসংখ্য যুবক যুবতির আত্মবলিদানের কথা। অখ্যাত, অনামী সেই বিপ্লবীদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে এই বইটিতে।’ ......
মোট ৮৬ টি প্রবন্ধ-নিবন্ধের শিরোনাম লিখতেই যেখানে খরচ হয়ে যাবে প্রায় হাজার শব্দ সেখানে এই স্বল্প পরিসরে প্রতিটি রচনার সামান্যতম আভাসও দেওয়া সম্ভব নয়। তবু সার্বিক ভাবে কিছু ছুঁয়ে দেখার প্রয়াস করাই যায়।
‘শুরুর কথা’ শিরোনামে ভূমিকায় সংকলক ও সম্পাদক যে কথাটি মূলত বলতে চেয়েছেন তার নির্যাসটুকু পাওয়া যায় প্রথম ব্লার্বে - ‘অমাবস্যার স্মশানে ভীরু ভয় পায়; সাধক সেখানে সিদ্ধিলাভ করে। ফাঁসির আগে রাজসাহী জেল থেকে ভাইকে চিঠিতে লিখেছিলেন ভবানী ভট্টাচার্য। এমনই সব বীর, যাঁরা নিজেদের কথা, পরিবারের কথা ভাবেননি। যেন কোনও নিশির ডাকে জীবন উৎসর্গ করে চলে গিয়েছেন। সেই নিশির ডাক, ভারতকে মুক্ত করার ডাক। তবু এত লড়াইয়ের পরেও ভারতবর্ষে এল খণ্ডিত স্বাধীনতা। দেশভাগের সঙ্গেই শুরু উদবাস্তুদের টিকে থাকার লড়াই। ভারতের স্বাধীনতার আসল নায়কদের কথা, কংগ্রেসে চোরাস্রোত, দেশভাগ, কাশ্মীর ত্রিপুরা কোচবিহারের সংযুক্তি নিয়ে পর্দার আড়ালের অনেক নাটক, অনেক গল্প। এসব নিয়েই ‘স্বাধীনতার অন্যকথা’।
লেখাগুলিকে মোট দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। ‘প্রস্তুতি পর্বে’ আছে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঘটনার পরিক্রমা। এই পর্বে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৭৬ টি রচনা এবং শেষে ‘বিভাজন পর্বে’ আছে মোট দশটি লেখা - স্বাধীনতা পরবর্তী ঘটনা; মূলত দেশভাগ ও তজ্জনিত উদবাস্তু বিষয়ক। কিছু লেখা সরাসরি আহৃত হয়েছে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিভিন্ন সময়ে লিখা রচনাসমূহ থেকে। অধিকাংশ লেখাই মৌলিক। কলম ধরেছেন যাঁরা কিংবা যাঁদের লেখা তুলে আনা হয়েছে - অঞ্জন সাহা, অপূর্ব সাহা, হেমচন্দ্র কানুনগো, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ, রণেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মতিলাল রায়, বিপ্লবী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব দাস, তুষারকান্তি সাহা, স্বাগতা চৌধুরী, নলিনীকিশোর গুহ, বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত, বিপ্লবী হরিদাস দত্ত, সৈকত মিস্ত্রী, অনিন্দ্য শর্মা, বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক, বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত, মোহসীন উল হাকিম, দিব্যেন্দু বিশ্বাস, বিপ্লবী উজ্জ্বলা মজুমদার (রক্ষিত-রায়), কে পি বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ, সন্তোষকুমার বসু, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, বিপ্লবী সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, বিপ্লবী অখিলচন্দ্র নন্দী, বিপ্লবী কমলা দাশগুপ্ত, বিপ্লবী বীণা দাস, শুভেন্দু রায়চৌধুরী, গৌতম সিনহা, সুখেন্দু হীরা, প্রণব রায়, অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়, স্বাধীনতা সংগ্রামী অবিনাশ ভট্টাচার্য, ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত-রায়, রাতুল চন্দরায়, অমলেন্দু বাগচী, বিপ্লবী বারীন্দ্র ঘোষ, দেবোত্তম চক্রবর্তী, সত্যেন সেন, অরিতা ভৌমিক, সুকুমার মিত্র, স্বাধীনতা সংগ্রামী অশোকা গুপ্ত, বিপ্লবী সুনীলকুমার গুহ, চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল ও জীবন সাহা। রয়েছে একই লেখকের একাধিক নিবন্ধ। কিছু লেখার লেখকদের নাম অনুল্লেখিত। পাদটীকাতেও উল্লেখ নেই কিছু। সম্ভবত পূর্ববর্তী লেখকের লিখা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আবার ক্রমান্বয়ে দু’টি নিবন্ধের পাশে একই লেখকের নাম লিখাও হয়েছে। তাই কিছুটা ধন্দে পড়তে হয় এইসব লেখক-নামরহিত লেখাগুলির ক্ষেত্রে।
এক একটি লেখা পড়তে গিয়ে বিস্মিত হতে হয় যে কত কথাই না চাপা পড়েছিল বিস্মৃতির কিংবা বলা ভালো অনুল্লেখ-এর আড়ালে। স্বাধীনতা সংগ্রামের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে লুকিয়ে রয়েছিল কত বীর গাথা, কত বিনিদ্র রজনীর দীর্ঘশ্বাস কতটুকু তার প্রকাশ পেয়েছে আজ অবধি ?
বিভাজন পর্বে দেশভাগের অব্যবহিত পরে সৃষ্ট উদবাস্তুদের দুঃখ কষ্টের কথা পড়তে গিয়ে অশ্রু সংবরণ করা মুশকিল। দেশত্যাগের বেদনার পাশাপাশি রয়েছে এ দেশে উদবাস্তুদের নিয়ে রাজনীতি ও পক্ষপাতিত্বের স্বরূপ। তবে এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গের উদবাস্তু সমস্যার পাশাপাশি আসাম ও উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যের এই সমস্যা - যা আজও জ্বলন্ত; এ নিয়ে একটি প্রবন্ধের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রকৃত দেশপ্রেমিকের আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্তের পাশাপাশি তথাকথিত দেশনেতাদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বও বর্ণিত হয়েছে কিছু লেখায় যা পাঠকের চোখ খুলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী আদি পরিচিত নামের বাইরেও অনেক অনেক বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বীরগাথা, হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার কথা যা এতদিন সাধারণ্যে থেকে গিয়েছিল অশ্রুত, অজানা সেইসব বীরকথার, অনন্য দেশভাবনা, দেশপ্রেম ও সহাস আত্মবলিদানের ঘটনার অসামান্য বর্ণনায় গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ। প্রতিটি রচনা পড়ে যেতে হয় তন্ময় হয়ে। লেখকদের লেখায় যেমন ফুটে উঠেছে বিষয়ের গাম্ভীর্য তেমনি সাহিত্যরসেও হয়ে উঠেছে সুপাঠ্য। ফলত এই গ্রন্থটি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে অনুবাদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারলে আখেরে দেশের জনতারই হিতকর্মে আসবে বলে মনে হয়।
বিপ্লবীদের ছবির পাশাপাশি কিছু ঘটনাবলির চিত্র সন্নিবিষ্ট হওয়ায় গ্রন্থের মর্যাদা বেড়েছে বহুলাংশে যদিও সম্পাদক এক্ষেত্রে অনেক ছবি উদ্ধার করতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। রাতুল চন্দরায়ের পরিচ্ছন্ন প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক ও আন্তরিক। জ্যাকেট কভারে পাকা বাঁধাই ও নির্ভুল বানানে ছাপার মান যথাযথ। গ্রন্থটি সম্পাদক অঞ্জন সাহা উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘মা-কে’।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘স্বাধীনতার অন্য কথা’
সংকলন ও সম্পাদনা - অঞ্জন সাহা
মূল্য - ৬৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৩৬১১৫০৭৮, ৯৮৬৪০৬৬৯৯৪
সংকলন ও সম্পাদনা - অঞ্জন সাহা
মূল্য - ৬৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৩৬১১৫০৭৮, ৯৮৬৪০৬৬৯৯৪
Comments
Post a Comment