Skip to main content

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’


রামকৃষ্ণনগর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের দেশভাগের আগে ও পরে, উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল শুধু রুটি, কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয়, এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে এই ধারা আজও চলছে সমানে শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয়রামকৃষ্ণনগর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, শিলচর
সম্প্রতি এই সংস্থার ২৫ বছর অর্থাৎ রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত মিলন অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় সংস্থার মুখপত্র - ‘পরিযায়ী অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং প্রাসঙ্গিক একটি নাম প্রসঙ্গত জনপদের গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে এই দীর্ঘ সময়ে রামকৃষ্ণনগরের বাসিন্দা এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিতরামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠবিদ্যালয়ের ছাত্ররা তথা তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মানুষেরা দেশে বিদেশে কর্মসূত্রে হয়েছেন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক, কবি, শিল্পী, খেলোয়াড় এবং সমাজের নানা স্তরে নিজেদের ছাপ রাখতে পেরেছেন তাঁরা মূলত রামকৃষ্ণনগর মূলের এবং সংযুক্ত কবি লেখকদের লেখাই স্থান পেয়েছে আলোচ্য স্মরণিকাটিতে   
বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিভাগে রয়েছে একগুচ্ছ লেখা। রয়েছে রামকৃষ্ণনগরের ইতিহাসাশ্রিত নস্টালজিক সব দলিলসম, তথ্যপূর্ণ রচনা। ১১১ পৃষ্ঠার স্মরণিকায় প্রথমেই রয়েছে রামকৃষ্ণনগরের ২০ জন কৃতী ব্যক্তির সচিত্র স্মৃতিতর্পণ শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ ইংরেজিতে দুটি বার্তা পাঠিয়েছেন সংস্থার বর্তমান সভাপতি তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক গিরিধারী কর এবং প্রথম সভাপতি মৃণালকান্তি চৌধুরী পরের পৃষ্ঠায় রয়েছে সংস্থা-সংগীত কথা বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুর - সুগায়ক ড. সঞ্জীব কর রয়েছে স্মরণিকা সম্পাদক ড. দেবাশিস পুরকায়স্থ ও সংস্থার সাধারণ সম্পাদক করুণাসিন্ধু দে-র প্রতিবেদন
বাংলা বিভাগের প্রথম রচনা শ্রীদীপ করের২৫ বছরের পথ চলা সংস্থার ২৫ বছরের পথ চলার আন্তরিক বর্ণনা ফুটে উঠেছে শেকড়ের টান ও গরজ কৃতী ব্যক্তিত্ব ড. লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেনযোগ প্রসঙ্গবিষয়ক দীর্ঘ ৮ পৃষ্ঠা জোড়া বিস্তৃত নিবন্ধ তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ রামকৃষ্ণনগর ও রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের এক শোকাবহ অধ্যায়শহিদ সাগর দীপককাণ্ড নিয়ে পৃষ্ঠাজোড়া প্রতিবেদন লিখেছেন সুব্রত কর কৃতী প্রাবন্ধিক সঞ্জীব দেবলস্কর লিখেছেনসৈয়দ মুজতবা আলীবিষয়ক একটি তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ অভিজ্ঞতাপ্রসূত নিবন্ধবাস্তুহারাদের ঘরবসতিলিখেছেন আরেক কৃতী নিবন্ধকার বিবেকানন্দ মোহন্ত উদ্বাস্তু জীবনের প্রকৃত স্বরূপ এক অবশ্যপাঠ্য নিবন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দীর্ঘ গল্পনাগরিকত্বের মহাকাব্য ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণাস্মৃতিসুধায় অর্চনা ভট্টাচার্য ধরে রেখেছেন শিলচর ও রামকৃষ্ণনগরের একটি সময়কাল অসাধারণ লিখনশৈলীতে অসিত চক্রবর্তী লিখেছেনরামকৃষ্ণনগর জনপদ ও রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের গোড়ার কথা ইতিহাসের এক নিবিড়, নিমগ্ন, নির্মোহ পাঠ সংখ্যার একটি অন্যতম সম্পদ গল্পের ছলে একটি সত্য ঘটনা ও তার কার্যকারণ বর্ণনা করেছেন মুখপত্র আহ্বায়ক দেবপ্রিয় দেব (ধ্রুব) তাঁরএকটি সাপের কাহিনীশীর্ষক রচনায় প্রহসনে পর্যবসিত বাস্তবের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী গল্প মানসী ভট্টাচার্যেরদুর্গা পাপিয়া সিকিদারের গল্পসুখ সাগরও সুখপাঠ্য বাঙালির চিরন্তন দুর্দশা নিয়ে রয়েছে পূর্ণিমা চৌধুরী পুরকায়স্থের তথ্যভিত্তিক নিবন্ধকালো মেঘে ঢাকা আকাশ করুণাসিন্ধু দে-শিকড়এক পৃষ্ঠার এক নস্টালজিক রচনারামকৃষ্ণ নগরের উন্নয়ন এবং এর পরিস্থিতিতন্ত্র (ইকো সিস্টেম) নিয়ে কিছু কথাশিরোনামে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে ড. দেবাশিস পুরকায়স্থের পাঠকের ভাবনার উদ্রেক করে এই রচনা সুমনা ভট্টাচার্য (পুরকায়স্থ)-এর নিবন্ধপ্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও মনুসংহিতাশিরোনাম অনুযায়ী একটি সুলিখিত নিবন্ধ সুস্মিতা নাথ-এর রম্যগল্পশ্রীমতীসুলিখিত ও সুখপাঠ্য শিরোনামভিত্তিক তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ সুপ্রিয় ভট্টাচার্যেরআসামে চা শিল্পের গোড়াপত্তন ও চা শ্রমিক রামকৃষ্ণনগর অঞ্চলে অবস্থিত এশিয়াখ্যাত শনবিলের উপর একটি গবেষণাভিত্তিক নিবন্ধ লিখেছেন সন্তোষ ভট্টাচার্য
কবিতা পর্বে যাঁদের নানা স্বাদের কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন - দেবযানী শ্যাম, সব্যসাচী রুদ্র গুপ্ত, মিহির দাশ পুরকায়স্থ, সুজাতা চৌধুরী, শর্মি দে, জ্যোতিষ পুরকায়স্থ, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, মহেশ চন্দ, রজত চক্রবর্তী, রামকুমার ঘোষ, আশীষ নাগ, দেবজ্যোতি ধর চৌধুরী ও ঈশানী দুর্বা পুরকায়স্থ
ইংরেজি বিভাগে নানা বিষয়ের উপর যাঁদেররচনা স্থান পেয়েছে তাঁরা হলেন রোহিত চক্রবর্তী, ডা. এস কে দাস, . অঙ্কিতা চক্রবর্তী, অনুষ্কা দেবরায়, মৈনাক পুরকায়স্থ, ইঞ্জিনিয়ার দ্বৈপায়ন দেব, . কিংশুক অধিকারী, . উৎপল পাল, . গৌতম চৌবে ও ঋষিতা পুরকায়স্থ
সব মিলিয়ে এক সমৃদ্ধ স্মরণিকা ‘পরিযায়ী’। বানান বিষয়ে কিছু সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। এছাড়া দু’এক লাইনের মধ্যে কবি লেখকদের পরিচিতি তথা রামকৃষ্ণনগরের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্র বিষয়ে উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। ছাপা, বাঁধাই ও প্রচ্ছদ যথাযথ। বিভিন্ন বিষয়ের রঙিন চিত্রাবলির সংযোজনে দলিলসম এই মুখপত্র/স্মরণিকাটি হয়ে উঠেছে একাধারে নান্দনিক ও নিবিড় পাঠোপযোগী

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - অনুল্লেখিত

যোগাযোগ - ৯৪৭৬৬০০৮৯১ 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...