Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2023

আত্মপ্রকাশেই পাঠক হৃদয়ে উদ্ভাসিত ‘লোকসংস্কৃতি’

লোকসংস্কৃতি হল সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত   তাদের চিন্তায় ও কর্মের ঐতিহ্যানুসারে বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্টীর ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস , আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠান , জীবন-যাপন প্রণালি , শিল্প ও বিনোদন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সংস্কৃতি । অধ্যাপক ড. তুষার চট্টোপাধ্যায় তাঁর “ লোক সংস্কৃতির তত্ত্বরূপ ও স্বরূপ সন্ধান ” গ্রন্থে লোকসংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন - ‘লোকসংস্কৃতি লোকায়ত সংহত সমাজের সমষ্টিগত প্রয়াসের জীবনচর্যা ও মানসচর্চার সামগ্রিক কৃতি’ । সম্প্রতি নবগঠিত ‘জাতীয় লোকসংস্কৃতি পরিষদ, কলকাতা’ থেকে আত্মপ্রকাশ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন - ‘লোকসংস্কৃতি’। সম্পাদনায় আছেন অমিত চট্টোপাধ্যায় (কলকাতা), অহীন্দ্র দাস (আসাম) ও মন্টু দাস (ত্রিপুরা)। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকেই একটি জাতীয় পরিচিতির আভাস । চমৎকার একটি প্রচ্ছদ প্রথমেই দৃষ্টি কেড়ে নেয় পাঠকের যদিও এ নিয়ে কিংবা প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম উল্লেখ করা হয়নি কোথাও। তবে গ্রামীণ উৎসবাদিতে এ ধরনের শৈল্পিক চিত্রের দেখা পাওয়া যায় আলপনা হিসেবে। সেদিক দিয়ে বলতে হয় এক প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ। লোকসংস্কৃতির

কবিতার জলসায় ধারাবাহিক সংযোজন ৭ম সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি’

মূলত এ প্রান্তিক কবিদের বার্ষিক কাব্যজলসা। প্রান্তিকতার সীমা ছাড়িয়ে দু’একজন সহযাত্রী কবিও স্থান করে নেন আপন সারল্যে ও সংযোগে। এবং অতি অবশ্যই গুণগত মানেও। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সপ্তম সংখ্যায় পৌঁছে গেল ‘ সীমান্তরশ্মি ’ । মে ২০২৩ সংখ্যা রূপে আত্মপ্রকাশ করল প্রান্তিক শহর করিমগঞ্জ থেকে ধারাবাহিক সম্পাদকীয় উৎকর্ষের নমুনা হিসেবে। কবিতার ‘যথাসাধ্য আয়োজন’ - ‘ সীমান্তরশ্মি ’ পথ চলতে শুরু করেছে উত্তরণের মধ্য দিয়ে, নিজেকে পরিমার্জন ও পরিশোধনের মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ সম্পাদক নারায়ণ মোদক বছরে তিন তিনটি পত্রিকার সম্পাদনা করে থাকেন। সুতরাং এ উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী। তত্ত্বভিত্তিক সম্পাদকীয়তে স্বভাবতই উঠে এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য - ‘সভ্যতার ইতিহাসে সাহিত্য এক বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা দেখতে পাই বৈদিক যুগ থেকে যত গ্রন্থ রচনা হয়েছে তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছে। জীবন চর্চায়, শিক্ষায়, উপাসনায়, শাসন ব্যবস্থায়, নিজ নিজ ক্ষেত্র বিশেষে কীভাবে সমাজে সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে, আপনার কর্ম দ্বারা, সমাজের একজন হয়ে, তার নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে থেকেও দক্ষতার প্রকাশ ঘটিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার শিক্ষা দেয়। ......

কবিতার হাত ধরে - 'মন কথা বলে'

মন যখন কথা বলে - ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ / যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতমঃ’। একদা তমসা তীরে আদিকবির মন যখন ভাবনায় আবিষ্ট হয়ে বলতে চেয়েছিল কথা তখনই সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম কবিতা। সেই থেকে আজ অবধি কবিদের মনের ভিতর যখনই জমেছে কথার পাহাড় তখনই সৃষ্টি হয়েছে কবিতার। এ ধারা নিত্য প্রবহমান। জয়ন্তী দত্ত বরাকের বর্ষীয়ান কবি। কবিতা লিখছেন বহু দিন থেকে। কবিতায় উঠে আসছে মনের কথা, স্মৃতির কথা, জীবনের কথা। আলোচ্য গ্রন্থ ‘মন কথা বলে’তে উঠে এসেছে এমনই অজস্র মনের কথা। ৩২ পৃষ্ঠার সুসজ্জিত কাব্যগ্রন্থে ধরা আছে বিভিন্ন আঙ্গিকের মোট ৩১টি কবিতা। ‘আমার কথা’য় কবি লিখছেন - ‘মানুষ কাব্যচর্চার মাঝে অসীমকে খুঁজে পায়। আমিও করে যাব শব্দের আনন্দচাষ, যতদিন জীবন থাকবে......।’ গ্রন্থের মুখবন্ধে বরাকেরই অন্যতম বিশিষ্ট কবি অঞ্জু এন্দো লিখছেন - ‘জয়ন্তীর কবিতার মূল সুরটি প্রতিবাদের। মাতৃভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর কবিতার সুর।’ কবি ও কবিতা নিয়ে আরোও একজন বিশিষ্ট বোদ্ধা দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বর্ণনায় - ‘চিত্রকররা রং নিয়ে যা করেন, বইটিতে শব্দকে নিয়ে সেই কাজই করা হয়েছে...

সিলেটি ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় ব্যতিক্রমী প্রয়াস ৬ষ্ঠ সংখ্যা ‘জড়র টানে’

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সর্বভারতীয় সিলেটি ফোরাম নিবেদিত সিলেটি ভাষার পত্রিকা ‘জড়র টানে’র ষষ্ঠ সংখ্যা, ১৪৩০ বাংলা, এপ্রিল ২০২৩। এ কথা পুনরোচ্চারণে দ্বিধা নেই যে আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনা সহজ তো নয়ই বরং এক অতি দুরূহ কাজ। এর কারণ বহু। প্রধানত এই আঞ্চলিক ভাষাসমূহ মানুষ জন্মের পর থেকে শুধু মুখেই বলে থাকে। লেখাপড়ার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ যদি সিলেটি ভাষার কথাই বলা যায় তাহলে এক্ষেত্রে কাজটা তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই কঠিন। কারণ সিলেটি ভাষার নিজস্ব লিপি ছিল বা থাকা সত্ত্বেও তা আর এখন ব্যবহৃত হয় না। ব্যবহার করলেও কেউ তা বুঝবে না। সুতরাং অখণ্ড বাংলার অন্তর্গত সিলেট অঞ্চলের এই কথ্য ভাষা লিখতে গিয়ে স্বভাবতই মান্য বাংলা হরফে লিখা হয়। সমস্যাটা এখানেই। যে ভাষায় শিক্ষা অর্থাৎ মান্য বাংলা, তার কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে প্রতি মুহূর্তে কলমের ব্যাকরণগত এবং শব্দগত স্খলন হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এতসব জটিলতা কাটিয়ে আলোচ্য সংখ্যায় কলম ধরেছেন অনেকেই। প্রসবিত হয়েছে উৎকৃষ্ট সাহিত্য। কিন্তু ফাঁকফোকর গলে সেই চ্যুতি যে আসেনি একেবারেই তা কিন্তু নয়। তবে সংখ্যায় তা একেবারেই কম বলা যায়। এসবকে ধর্তব্যের মধ্যে না এ

তরুপাখি হব একদিন

দুই কূলে ঘর পথহীন পথপাশে কে জানে কোন কর্মফলে কেন যে এমন যাপন দিয়েছ বিধাতা দেশে দেশে আর কালে কালে । আমি আর জনমে গাছ হব প্রভু গুল্ম থেকে মহিরুহ হব একদিন তিন পুরুষের দলিল হাতে আঁধার রাতে বেআব্রু পথে হব না যাযাবর কোনোদিন । কিংবা তরুপাখি হব নিশ্চিত বাঁধব আপন নীড় ইচ্ছে খুশিমতো । ডাহুকের সাথে ভাসমান হয়ে খেয়ালখুশিতে ছুটব দিগবিদিক ফরমান হাতে বলবে না কেউ এসে , ‘ তোমার বাস কোথা হে পথিক ওগো দেশে কি বিদেশে ’ ?

ছাইভস্ম

এ মন বড় নরম মাটির তাল কেউ বলে , যা শিখেছ - সব মিথ্যে ইতিহাস আমি বলি , তাই । বৃথা এত পরিহাস । এ মাটি আজও আবাদ করে যায় কেউ গড়ে নেয় আপন করে , ভেঙে করে চৌচির চালে নব্য ফন্দি ফিকির । কথার ভেতর লুকিয়ে থাকে কত কথা ছন্নছাড়া কিছু , কিছু পরিপাটি নিটোল আমার সবেতেই তালগোল । সব থেকে যায় লুক্কায়িত , ঋদ্ধ ভেতরমহল মনের মধ্যে নিত্য হিসেবনিকেশ বাইরে শুধুই বাহবা , বাহবা , বেশ । মন ভুলেনি কথার সাগর , মিথ্যে বড়াই হোক না মিছে তবু আমার সেই ইতিহাস চাই । কেউ বলে তুমি বড্ড সেকেলে মাথার ভেতর নিরেট ছাই , আর আছে শুধু জল আমি বলি শেষের বেলায় এ দু ’ টোই সম্বল ।

অশোক বার্মার দলিলসম কাব্যসংকলন ‘জনপদের মহিলা কবিরা’

একটি কাব্য সংকলন, অথচ কোনও সম্পাদকীয় নেই; এমনটাই ভাবতে ভাবতে অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেল সম্পাদকীয়। সচরাচর গ্রন্থের শ্রীগণেশেই থাকে সম্পাদকীয়। এখানে ব্যত্যয় ঘটেছে এই ধারার। সবার কবিতা পৃষ্ঠাবদ্ধ হওয়ার পর ‘আমার কথা’ শিরোনামে কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক অশোক বার্মা স্থান দিয়েছেন সম্পাদকীয়ের। গরজ ও নিবেদন একেই বলে। আজীবন সাহিত্যের এক একনিষ্ঠ পূজারি তথা অসম সরকারের সাহিত্য পেনশন প্রাপ্ত এই সম্পাদক এর আগেও সম্পাদনা করেছেন বহু সংকলনের। তবে এবারের আলোচ্য এই সংকলন ব্যতিক্রমী সংকলন হিসেবে পাঠক তথা সংগ্রাহক সমাজে যে সমাদৃত হবে তা একশো ভাগ নিশ্চিত। এই সংকলন প্রকাশের গোড়ার কথা জানার অভিপ্রায়ে তাই চোখ বুলানো যাক সম্পাদকীয় রচনার নির্বাচিত কিছু অংশে। সম্পাদক লিখছেন - ‘ তারা অসূর্যম্পশ্যা ছিল। ছিল সীমিত বৃত্তের ভিতর... ঘর এবং সংসার সামলানোই ছিল তাদের একমাত্র কাজ। কেউ কেউ তো বলেছেন, নারী সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ... আজ শিক্ষার বিস্তার হয়েছে। মানসিক ঔদার্য সেই তুলনায় বাড়েনি। দৃষ্টিভঙ্গির, ভাবনা চিন্তার বিশেষ বদল হয়নি। .... তেজস্বিনী মহিলারা জীবন-যুদ্ধে অকুতোভয়ে এসবের প্রতিবাদ করছেন, লড়ছেন এবং নজির সৃষ্টি করছেন।