মন যখন কথা বলে - ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ / যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতমঃ’। একদা তমসা তীরে আদিকবির মন যখন ভাবনায় আবিষ্ট হয়ে বলতে চেয়েছিল কথা তখনই সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম কবিতা।
সেই থেকে আজ অবধি কবিদের মনের ভিতর যখনই জমেছে কথার পাহাড় তখনই সৃষ্টি হয়েছে কবিতার। এ ধারা নিত্য প্রবহমান। জয়ন্তী দত্ত বরাকের বর্ষীয়ান কবি। কবিতা লিখছেন বহু দিন থেকে। কবিতায় উঠে আসছে মনের কথা, স্মৃতির কথা, জীবনের কথা। আলোচ্য গ্রন্থ ‘মন কথা বলে’তে উঠে এসেছে এমনই অজস্র মনের কথা। ৩২ পৃষ্ঠার সুসজ্জিত কাব্যগ্রন্থে ধরা আছে বিভিন্ন আঙ্গিকের মোট ৩১টি কবিতা। ‘আমার কথা’য় কবি লিখছেন - ‘মানুষ কাব্যচর্চার মাঝে অসীমকে খুঁজে পায়। আমিও করে যাব শব্দের আনন্দচাষ, যতদিন জীবন থাকবে......।’
গ্রন্থের মুখবন্ধে বরাকেরই অন্যতম বিশিষ্ট কবি অঞ্জু এন্দো লিখছেন - ‘জয়ন্তীর কবিতার মূল সুরটি প্রতিবাদের। মাতৃভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর কবিতার সুর।’ কবি ও কবিতা নিয়ে আরোও একজন বিশিষ্ট বোদ্ধা দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বর্ণনায় - ‘চিত্রকররা রং নিয়ে যা করেন, বইটিতে শব্দকে নিয়ে সেই কাজই করা হয়েছে... কবিতার অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ অর্থাৎ আত্মা ও দেহের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছেন কবি...।’
তাঁর এই তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মন কথা বলে’ শীর্ষক গ্রন্থে ত্রিপুরানন্দিনী কবি জয়ন্তী উপর্যুক্ত সবক’টি ভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন একের পর এক কবিতায়। জীবনধারায় অনুভবের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে নানা কবিতায় বিচিত্র শব্দসম্ভারে -
‘স্বপ্নময় রঙিন দিনগুলি / ছিল আমার মেয়েবেলা / ছোট্ট ছোট্ট পায়ে, গুটি গুটি চলা / আধো আধো কথা, নানা ছেলেখেলা / অঙ্কুর কলি হয়ে ফুটল ফুল / পালটে গেল আমার বাল্য কৈশোর / ছুঁয়ে গেল ক’টি বসন্ত দুপুর / পল্লবিত প্রেমিক ছোঁয়ায় বিভোর......। (কবিতা - ছুঁয়েছিল বসন্ত) থেকে শুরু করে -
রক্তের তুলি দিয়ে সূচিবিদ্ধ ব্যঞ্জনা / কবিতার দ্বন্দে ঊঁকি দেয় বারবার। ... / দ্রৌপদী, সীতার মতো পরীক্ষার দাবানলে / পুড়ে ছাই হয় মন। / প্রতিবাদী মন হঠাৎ গর্জে ওঠে সেইক্ষণ ...... (কবিতা - নারীর মন)।
কবিতায় বেহিসেবি ছন্দ এসেছে কোথাও আপন ছন্দেই, কবি আধুনিক কবিতার ধাঁচ অনুসরণে কিংবা কাব্যময়তার পথে না হেঁটে ভাবের প্রকাশেই থেকেছেন মগ্ন। অবয়বে ছোট হলেও বিষয়ে বয়ানে ঋদ্ধ এ সংকলন গ্রন্থের কাগজের মান, ছাপাই ও পেপারব্যাক বাঁধাই যথেষ্ট ভালো। চমৎকার প্রচ্ছদটির শিল্পীর নাম অনুল্লেখিত। কবি এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন গুরুদেব স্বামী বীরেশ্বরানন্দজির শ্রীচরণযুগলে।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
মূল্য - ৬০ টাকা।
যোগাযোগ - ৯৭০৬৪২৫৫১০
Comments
Post a Comment