Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2022

ভাষার গরজে পুষ্ট মধ্য অসমের ছোট পত্রিকা - ‘প্রাচীপট’

‘ শোনো ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই …. না, আমরা শু নি না। কারা ডাকছে, কারাই বা একাদশ শহিদ। তা আমরা জানি না। জানতেও চাই না। অথচ, ওই একাদশ শহিদ কোন এক ইনিশে মে তারিখে মাতৃভাষা র মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। উনিশে মে বছর বছর আসে এবং নীরবে ও নিঃশব্দে দিনটি পেরিয়ে যায়। আমাদের মনে বা প্রাণে এতে শিহরণ জাগে না। ’ ... ... এভাবেই শুরু যে সম্পাদকীয়ের সেই সম্পাদকীয় গিয়ে শেষ হয়েছে পত্রিকার নবম পৃষ্ঠায়। সম্পাদকীয় এই দীর্ঘ নিবন্ধ নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী সম্পাদকীয় - যেখানে ইতিহাস তথা বহু যুগের স্থানীয় আর্থ সামাজিক ও সাহিত্য চর্চার প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এবং অসমের বাংলা ভাষা চর্চার এক তথ্যবহুল এবং সত্যোচ্চারিত কথন লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। মাঝের দীর্ঘ চর্চাটুকু পেরিয়ে এসে সমাপনে উচ্চারিত হয়েছে কিছু নিখাদ কঠোর বাস্তব - সম্পাদকীয়ের শেষে আছে - ‘আধুনিক অসম গড়ে তোলার মহাযজ্ঞে বাঙালির অবশ্যই এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ... পরিশেষে বলি মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা !’ এবং এই সম্পাদকীয়ই গোটা পত্রিকার সুর বেঁধে দেয় নিঃসন্দেহে। বিশালবাহু ব্রহ্মপুত্রের

দায়বদ্ধতা ও সমর্পনের উৎকৃষ্ট নিদর্শন - ‘ঐতিহ্য - The Heritage’

ভারততত্ত্ব বা Indology শব্দটি মহাভারতের মতোই বিশাল । ভারত দেশের যাবতীয় ইতিহাস , শিল্প , সাহিত্য , সংস্কৃতি , জ্ঞান - বিজ্ঞান , জন ও ধন সম্পদ , ভারতীয়তার মূল্যবোধ , আধ্যাত্মিকতা , ভাবাদর্শ , চিন্তাধারা , ব্যুৎপত্তি ইত্যাদি যাবতীয় ভাবধারার অধ্যয়ন , বিশ্লেষণ , কর্ষণ ও অনুসরণই হচ্ছে ভারতীয়ত্ব । সেই ভারততত্ত্বের উপর ঐতিহ্য সংস্থা ফাউণ্ডেশন , গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত হয় বহুভাষিক গবেষণাপত্রের সাময়িকী ‘ ঐতিহ্য The Heritage’. বছরে দু ’ টি সংখ্যা । সদ্য প্রকাশিত হয়েছে সাময়িকীর তেরোতম সংখ্যা । ২০২২ এর প্রথম সংখ্যা - দোলযাত্রা সংখ্যা মার্চ - এপ্রিল । ঐতিহ্য ফাউণ্ডেশনের পক্ষে প্রকাশক ডঃ পান্নালাল গোস্বামী । মুখ্য সম্পাদক ডঃ নন্দিতা ভট্টাচার্য গোস্বামীর তরফে ভেতরের শেষ প্রচ্ছদে সম্পাদকীয়ের ধাঁচে সংখাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া আছে । তিনটি ভাষায় ( ইংরেজি , বাংলা ও অসমিয়া ) মোট বারোটি গবেষণাপত্রের সমাহারে এক অত্যন্ত উচ্চমানের এই সাময়িকীর এ সংখ্যায় আছে ছ ’ টি ইংরেজি এবং তিনটি করে বাংলা ও অসমিয়া বিষয়ভিত্তিক অধ্যায় । গবেষণাপত্রের নির্ধারিত করে দেওয়া ধাঁচ অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায়ে আছে  সং

নারী তুমি নদীর গানেই প্রতিষ্ঠিত সত্য

হাসপাতালে মৃত্যুর মুখোমুখি শুয়ে কী ভাবছিলে তুমি সুরঞ্জনা ? নদী থেকে তোমার উত্তরণ ? নাকি তুমি থেকে নদী ? এই যে নদীর সাথে তোমার সখ্য এই তো তোমার পরিচয়। তোমারও তো প্রবহমান জীবন আমৃত্যু কলকল ছলছল। পাহাড় ছাড়িয়ে সাগর পথের জলোচ্ছ্বাস বাঁধতে পেরেছে কেউ কখনো ? তোমার পথেও খড়-কুটো সব জ্বলতে চেয়েও নিভেছে ব্যর্থ তুবড়ির মতো। এমনি জীবন বাঁচে জলে - অলক্ষ্যে - চরাচরের বৃক্ষ , মানব , তামাম সৃষ্টি যত এবার জীবন জোড়া যোগবিয়োগের হিসেবনিকেশ সুরঞ্জনা- তুমি নদীর গানেই প্রতিষ্ঠিত সত্য। মোহনা আর হাসপাতাল আজ ছন্নছাড়া একাকার আবার আসিবে ফিরে , সুরলহরে ফের ওই নদীরই নামটি ধরে ভাসিয়ে বিশ্ব ভালোবাসার সুখ প্লাবনে।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সফরনামা # ধুবড়ি-গৌরীপুর

(১) মেরিন ড্রাইভ ধরে ছুটে চলেছে গাড়ি । এক পাশে সাগর , উপসাগর - চোখ ফেরানো দায় । এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহুবার । পুরী - কোনার্ক কিংবা মুম্বই , চেন্নাই , পুডুচেরি । কিন্তু সবেতেই নিছক সওয়ারি হয়ে । ড্রাইভ ধরে গেছি কিন্তু ড্রাইভ করিনি । এবং তখন থেকেই এমন একটা সুপ্ত ইচ্ছে যে মনের মধ্যে দানা বেঁধে রয়েছিল সে কথাটি থেকেই গেছে গোপনে । আচ্ছা সাগরের তীর ঘেঁষে চলে যাওয়া রাস্তাটি যদি মেরিন ড্রাইভ হয় তাহলে নদীর পারে পারে চলে যাওয়া রাস্তাটি ধরে ছুটে চলাকে নিশ্চিত রিভার ড্রাইভই বলতে হবে । চমক , জমক কিংবা রোমাঞ্চ কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ‘ সেম টু সেম ’ । এবার স্টিয়ারিং হাতে ড্রাইভ ধরে এগিয়ে যাওয়ার লুকিয়ে থাকা সেই সুপ্ত ইচ্ছেটি যে এভাবে এতগুলো বছর পর কার্যক্ষেত্রে ঘটে যাবে তা কিন্তু ঘটনাটির দিন তিনেক আগেও কল্পনায় আসেনি । আসছে পুজোতে একটি জমজমাট দূরভ্রমণের ব্যাপারে যখন ‘ বু বু - বা বা ’ চলছিল ঠিক তখনই মেয়ে একদিন কলেজ থেকে এসে জানাল যে কলেজে এক সপ্তাহ গরমের বন্ধ থাকছে । সুতরাং কোথাও একটু ঘুরে আসা যায় দিন দুই - তিনের জন্য । একঘেয়ে জীবনযাত্রায় হাঁফিয়ে ওঠা আমরা দু ’ জনও তাই এক কথায় রাজি । কাছ

মিথিলেশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিমেদুর শহর সফর - ‘ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়’

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে ... পড়তে পড়তে হারিয়ে যেতে যেতে এ কথাটিই যেন বার বার ফিরে ফিরে আসছিল মনের মধ্যে। যদিও ফারাক আছে বেশ। তবু এই পথ চলার বৃত্তান্ত পাঠক মনকে কোনও এক অদেখা সুতোর বন্ধনে জড়িয়ে আটকে রাখে নিরন্তর। গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিকথা ‘ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়’ও এমনি এক পথ চলার সাতকাহন। পাঁচ বাই সাত ইঞ্চির ৬৫ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে কোলকাতা থেকে এপ্রিল ২০২২-এ। চিন্তা গদ্য সিরিজ ১৪-এর অধীনে। গ্রন্থ নামেই গ্রন্থের নির্যাস রয়েছে প্রোথিত। পথ যতই ভাঙা হোক, ধূলিময় হোক, ঋদ্ধ অতীতের সহাবস্থানে সেই ধুলো কখনো ধূসর হয় না, সেই ধুলো চির রঙিন, হৃদয়-রাঙা। সে অর্থে যথেষ্ট অর্থবহ এবং যথার্থ নামকরণ। কিন্তু এ স্মৃতিকথা জীবনকথা নয়। এ একটি মাত্র দিনের এক পথকথা। এ গ্রন্থের নায়ক - ভাষ্যকার নির্মলেন্দুর মুখ দিয়ে কথাকারের এক অনবদ্য স্মৃতিমেদুর পথ চলার বৃত্তান্ত। অবসরপ্রাপ্ত নির্মলেন্দুর নিত্যদিনের পথ চলার মধ্য থেকে তুলে আনা একটি দিনের কথা। নির্মলেন্দু আর শহর শিলচর যেন একে অপরের পরিপূরক। জীবনপথের অনেকখানি দূরত্ব পেরিয়ে এসে আজও নির্মলেন্দু একাত্ম হয়ে আছে শহর শিলচরের পথ

খেলাপি কথার মৃত্যু

শব্দেরা খেলা করে মৃত্যু ভাবনায় কল্পকথার পাহাড় জমে অন্তরে অন্দরে এ দীর্ঘ জীবনে এত কথা হয়নি বলা। প্রতিটি ঘাটে মরে গিয়ে ফের জেগে ওঠে নদী - নতুন করে ক্ষয়ে ক্ষয়ে। নতুনের হাত ধরে খসে পড়ে রূপযৌবন পড়ে থাকে সব ভোকাট্টা ফানুস। অথচ ফানুস ঘিরে কত ঘটা দেমাক কথার, নীরব প্রত্যাখানের। কত রাতজাগা ইতিবৃতের অকালমৃত্যু কত অসার কথামালার সমাপন শেষে কেউ সং সেজে পাড়ি দেয় সংসারে কেউ সংসার যাপন শেষে বৃক্ষ হয়ে থাকে। যে শাখায় ফুটতো রোজ কথার পারিজাত বৃক্ষচ্যুত সেই শাখাটি আজ ভেসে চলে নদীর জলে খেলাপি কথার অপরাধ বয়ে বয়ে ঘাটের পরে ঘাট পেরিয়ে মৃত্যু মাড়িয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে।