Skip to main content

দায়বদ্ধতা ও সমর্পনের উৎকৃষ্ট নিদর্শন - ‘ঐতিহ্য - The Heritage’


ভারততত্ত্ব বা Indology শব্দটি মহাভারতের মতোই বিশাল ভারত দেশের যাবতীয় ইতিহাস, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, জন ও ধন সম্পদ, ভারতীয়তার মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা, ভাবাদর্শ, চিন্তাধারা, ব্যুৎপত্তি ইত্যাদি যাবতীয় ভাবধারার অধ্যয়ন, বিশ্লেষণ, কর্ষণ ও অনুসরণই হচ্ছে ভারতীয়ত্ব
সেই ভারততত্ত্বের উপর ঐতিহ্য সংস্থা ফাউণ্ডেশন, গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত হয় বহুভাষিক গবেষণাপত্রের সাময়িকীঐতিহ্য The Heritage’. বছরে দুটি সংখ্যা সদ্য প্রকাশিত হয়েছে সাময়িকীর তেরোতম সংখ্যা ২০২২ এর প্রথম সংখ্যা - দোলযাত্রা সংখ্যা মার্চ - এপ্রিল ঐতিহ্য ফাউণ্ডেশনের পক্ষে প্রকাশক ডঃ পান্নালাল গোস্বামী মুখ্য সম্পাদক ডঃ নন্দিতা ভট্টাচার্য গোস্বামীর তরফে ভেতরের শেষ প্রচ্ছদে সম্পাদকীয়ের ধাঁচে সংখাটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া আছে
তিনটি ভাষায় (ইংরেজি, বাংলা ও অসমিয়া) মোট বারোটি গবেষণাপত্রের সমাহারে এক অত্যন্ত উচ্চমানের এই সাময়িকীর এ সংখ্যায় আছে ছটি ইংরেজি এবং তিনটি করে বাংলা ও অসমিয়া বিষয়ভিত্তিক অধ্যায় গবেষণাপত্রের নির্ধারিত করে দেওয়া ধাঁচ অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায়ে আছে  সংক্ষিপ্তসার/প্রেক্ষাপট (ইংরেজিতে) - পাঁচটি করে মূল বিষয়সূচক শব্দ (ইংরেজিতে) - বিষয় - উপসংহার - তথ্যসূত্র এক একটি করে গবেষণাপত্রের চুলচেরা পাঠ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা স্বল্প পরিসরে নিতান্তই অসম্ভব প্রতিটি পত্রের গবেষক/লেখকরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে পণ্ডিতম্মণ্য ব্যক্তি হওয়ার সুবাদের প্রতিটি অধ্যায়ই জ্ঞানের এক একটি দ্বার উন্মোচনের অধিকারী   
ইংরেজি বিভাগে প্রথমেই আছে সুপর্ণা ভট্টাচার্যের ‘Plagiarism - An Academic theft ? Understanding Plagiarism and Academic Integrity : Assessing the Issues and Challenges of Combating the Academic Dishonesty.’ সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তির উপর যে এত বিশাল লেখালেখি ও গবেষণার একটি ক্ষেত্র রয়ে গেছে তা হয়তো অনেকেরই এতদিন অজানা ছিল সে অর্থে অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি রচনা নিঃসন্দেহে
দ্বিতীয় রচনা প্রশান্ত দাস-এর ‘The American Baptist Mission in Assam’. মূলত ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিদের বদান্যতায় আসামে ছাপাখানা ও ছাপা মাধ্যমে লেখালেখির এক বিস্তৃত প্রতিবেদন বলা যায় জিজ্ঞাসু পাঠক তথা আগত গবেষকদের কাছে এক মূল্যবান চর্চাক্ষেত্র
তৃতীয় অধ্যায় - সঙ্গীতা কৃষ্ণ-এর ‘Dalits Inventing Tradition Towards Democratisation Of Historical Knowledge’. দলিত সমাজের রীতিনীতি, জীবনধারার বহু অজানা তথ্যে ভরপুর এক পুনরাবলোকনের ইতিহাস
চতুর্থ অধ্যায় - ইরা দাস-এর ‘Assessment of Inter-District Disparity in Maternal and Child Health in Assam : Evidence From The National Family Health Survey (NFHS)-5 (2019-20)’. উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে আসামের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর বিস্তৃত অবলোকনের এক গবেষণাপত্র
পঞ্চম রচনা - কৌশিক ঠাকুর ভুঞাঁর ‘Reluctant Recovery : Aideu Handique and The Gender Question in Assamese Cinema’. অসমিয়া চলচ্চিত্রের প্রথম নায়িকা আইদেও সন্দিকৈ-এর জীবনের উপর ভিত্তি করে তৎকালীন সমাজে এবং পরবর্তী সময়ে নারীসত্ত্বার মূল্যায়ন নিয়ে একটি তথ্যনির্ভর গবেষণাপত্র।
ষষ্ঠ তথা শেষ রচনা - লোপা দাস ও লিওনা তালুকদার-এর ‘Exploring the music of ‘Gurumandali’ Within the Ancient Performing Art of BIYAHGOWA OJAPALI’. আসামের দরং জেলা থেকে উদ্ভুত কথকতাভিত্তিক নৃত্যগীতমূলক প্রাচীন সংগীতকলাবিয়াগোয়া ওজাপালিগুরুমণ্ডলীঅংশের উপর এক বিস্তৃত গবেষণামূলক রচনা
বাংলা বিভাগে আছে তিনটি গবেষণাপত্র প্রথম - অমলেন্দু চক্রবর্তীরসাবিত্রী মহাকাব্য - বেদের অনুরণন ঋষি অরবিন্দেরসাবিত্রীমহাকাব্যের নির্যাসে প্রাচীন ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার অন্তর্গতবেদ’-এর প্রতিধ্বনির এক সুখপাঠ্য জ্ঞানলব্ধ পরিবেশনা
দ্বিতীয় অধ্যায় - উদয়ন বিশ্বাসেরআসামের শিল্পকলার এক সংক্ষিপ্ত রূপরেখা আসামের চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের বিবর্তনমূলক যাত্রার এক অনুসন্ধানমূলক ও বশ্লেষণাত্মক পর্যালোচনা
তৃতীয় অধ্যায় - মুগ্ধ মজুমদারেরগৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ ও মধ্যযুগে বাংলার মিষ্টান্ন সংস্কৃতি মঙ্গলকাব্যের বিপরীতে চৈতন্য মহাপ্রভুর অনুসারী বৈষ্ণবদের মধ্যে মিষ্টদ্রব্য ভক্ষণের পরম্পরার উপর এক বিস্তারিত পর্যালোচনা
অসমিয়া বিভাগের তিনটি গবেষণাপত্রের মধ্যে আছে - দিলীপ রাজবংশীরলক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার অসমীয়া ভাষাচর্চার আলোকত ভাষাবিজ্ঞানর তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ভায়োলিনা ডেকারশৈলীবিজ্ঞানর আধারত জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার নাটর ভাষা বিশ্লেষণএবং শিবজিৎ দত্তেরউপন্যাসর আলোচনাত সৃষ্টিশীল আরু বিচ্ছিন্ন শ্রম, অতিনির্ধারিত বাস্তব আরু প্রবেশবিন্দুর ধারণা - দীননাথ শর্মারনদাইপ্রসঙ্গ বলাই বাহুল্য প্রতিটি গবেষণাপত্রই সাহিত্যমূলক চর্চার ক্ষেত্রে এক প্রামাণিক আধার হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য
অত্যন্ত সুসংঘবদ্ধ ভাবে বিন্যস্ত ১৯৬ পৃষ্ঠার এই মূল্যবান সংখ্যাটি আগের সংখ্যাগুলির মতোই তত্ত্ব ও তথ্যের এক জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে সংগহযোগ্য সংখ্যা এতে কোনও দ্বিমত নেই স্পষ্ট নিখুঁত ছাপাই ও অক্ষর বিন্যাসযুক্ত সংখ্যাটির প্রচ্ছদ ও ছিমছাম এবং ভিতরের ভাব বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বছরে এমন দুটি সংখ্যার প্রকাশ এ অঞ্চলের এক গৌরবগাথা হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে এমন একটি গবেষণামূলক সাময়িকীর নিয়মিত প্রকাশের পিছনে প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়বদ্ধতা, সমর্পণ ও অপরিসীম শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য

- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

ঐতিহ্য The Heritage’
প্রকাশক - ডঃ পান্নালাল গোস্বামী
মুখ্য সম্পাদক - ডঃ নন্দিতা ভট্টাচার্য গোস্বামী
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০২২৮৮৯

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়