Skip to main content

ভাষার গরজে পুষ্ট মধ্য অসমের ছোট পত্রিকা - ‘প্রাচীপট’


শোনো ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই ….
না, আমরা শুনি না। কারা ডাকছে, কারাই বা একাদশ শহিদ। তা আমরা জানি না। জানতেও চাই না। অথচ, ওই একাদশ শহিদ কোন এক ইনিশে মে তারিখে মাতৃভাষামর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। উনিশে মে বছর বছর আসে এবং নীরবে ও নিঃশব্দে দিনটি পেরিয়ে যায়। আমাদের মনে বা প্রাণে এতে শিহরণ জাগে না।’ ...
... এভাবেই শুরু যে সম্পাদকীয়ের সেই সম্পাদকীয় গিয়ে শেষ হয়েছে পত্রিকার নবম পৃষ্ঠায়। সম্পাদকীয় এই দীর্ঘ নিবন্ধ নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী সম্পাদকীয় - যেখানে ইতিহাস তথা বহু যুগের স্থানীয় আর্থ সামাজিক ও সাহিত্য চর্চার প্রেক্ষাপটে বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা এবং অসমের বাংলা ভাষা চর্চার এক তথ্যবহুল এবং সত্যোচ্চারিত কথন লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে। মাঝের দীর্ঘ চর্চাটুকু পেরিয়ে এসে সমাপনে উচ্চারিত হয়েছে কিছু নিখাদ কঠোর বাস্তব -
সম্পাদকীয়ের শেষে আছে - ‘আধুনিক অসম গড়ে তোলার মহাযজ্ঞে বাঙালির অবশ্যই এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ... পরিশেষে বলি মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা !’
এবং এই সম্পাদকীয়ই গোটা পত্রিকার সুর বেঁধে দেয় নিঃসন্দেহে।
বিশালবাহু ব্রহ্মপুত্রের তীরসংলগ্ন মধ্য অসমের শোভনীয়, পরিচ্ছন্ন শহর তেজপুর থেকে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের ছোট পত্রিকা ‘প্রাচীপট’-এর দ্বিতীয় সংখ্যা - জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯, সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে যদিও প্রচ্ছদের ভিতর প্রথম পৃষ্ঠায় ভুলবশত ১৪১৯ ছাপা হয়েছে।
প্রথমেই বলতে হয় অসাধারণ একটি প্রচ্ছদের কথা। এবং এ নিয়ে রয়েছে বিস্তারিত একটি ‘প্রচ্ছদ পরিচিতি’ও। তেজপুর শহরের লাগোয়া ব্রহ্মপুত্রের পারে অবস্থিত একটি যুগ পুরোনো প্রস্তর শিলালিপির ছবি এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তার বর্ণনা। সংখ্যাটির মর্যাদা এবং গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে নিশ্চিত। গবেষণাধর্মী পাঠকের জন্য এক মূল্যবান খোরাক। পত্রিকার নাম এবং প্রচ্ছদের সাযুজ্যও লক্ষণীয়।   
ভেতরের দ্বিতীয় প্রচ্ছদে ‘কুলখুড়ো’ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের রঙিন ছবি ও শ্রদ্ধার্ঘ্য। পরবর্তী পৃষ্ঠায় একাদশ শহিদের ছবিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভিতরের শেষ প্রচ্ছদে রঙিন চিত্রে ‘প্রফেসর’ অমলেন্দু গুহকে স্মরণাঞ্জলি। এই একগুচ্ছ শ্রদ্ধাঞ্জলিও সংখ্যাটির বিশেষত্ব প্রমাণে সবিশেষ কার্যকরী হয়ে উঠেছে।
সম্পাদকীয় ও প্রচ্ছদ পরিচিতির পর রয়েছে শাখা সংবাদ, চারটি কবিতা, একটি অণুগল্প, একটি গল্প, চারটি সমৃদ্ধ প্রবন্ধ এবং সম্পাদক নির্মলেন্দু রায়ের একটি দীর্ঘ ‘অনুবাদ সাহিত্য’।
চারটি কবিতা - নন্দন মহীশাসনের ‘উনিশের দিনে’, ছায়া দাস-এর ‘সমাধি’, সুমন দে’র ‘প্রেম প্রবাহিনী’ এবং নীরব বাচ্যনবীশ-এর ‘ভারতপুত্র’ - চারটি ভিন্ন আঙ্গিকের বিষয়ভিত্তিক কবিতা, যেখানে বিষয়ই প্রধান, কবিতার আঙ্গিক কিংবা সাহিত্যগুণ বিবেচ্য নয়।
অবনীন্দ্র কুমার নন্দীর অণু গল্প ‘পত্র বিচিত্রা’ চিঠির আঙ্গিকে একটি সরস রচনা। এখানেও গল্পময়তার অভাব এবং তার খোঁজও অপ্রাসঙ্গিক।
অমৃত বর্মন-এর দীর্ঘ গল্প ‘বজ্রবাহু’। ইতিহাস, মিথ, লোককাহিনির প্রেক্ষাপটে একটি সুখপাঠ্য গল্প। তবে গল্পের মাঝে মাঝে প্রথম পুরুষে গল্পকারের সংলাপ তথা নিজস্ব ব্যাখ্যা পাঠককে কাহিনির মধ্যভাগ থেকে বাস্তবে নিয়ে আসে এবং স্বভাবতই গল্পপাঠের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হয়।
প্রথম প্রবন্ধ - দিগন্ত চক্রবর্তীর ‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা ভাষা শিক্ষার সংকট’। সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে লেখক অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবেই তুলে এনেছেন ইতিহাসকেও। আজকের দিনের এই জ্বলন্ত সমস্যাকে সামনে থেকে আলোকপাত করার ফলপ্রসূ চেষ্টা করেছেন নিবন্ধকার। তবে শুধু হা হুতাশ নয়। কিছু স্পষ্ট কথনে সঠিক বাস্তবকে চিত্রিত করেছেন কিছু সপাট ব্যাখ্যায় - ‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বাংলা মাধ্যমের স্কুলের অন্তর্জলি যাত্রা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা’, ‘পরবর্তী প্রজন্ম বাংলা হরফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এজন্য পরবর্তী প্রজন্মকে দোষারোপ করে কোন লাভ হবে না’ ইত্যাদি। তবে কঠোর বাস্তবের মধ্যেই অন্তরের বেঁচে থাকা আশার বিচ্ছুরণও লক্ষ করা যায় লেখকের লেখনীতে - ‘এই ভাষার বিলুপ্তি কোনোদিনই ঘটবে না। বাঙালি হিসেবে আমাদের গৌরব বোধ করতে হবে। এই গৌরব বোধ পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত করতে হবে। বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রতিরোধ সম্ভব নয়।’
দ্বিতীয় প্রবন্ধ শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারতীয় বাঙালির জাতীয়তা সংকট’। অসাধারণ একটি নিবন্ধ যেখানে বাঙালিয়ানা ও ভারিতীয়ত্ব প্রদর্শনের প্রহসনবোধক অবস্থানকে চাঁচাছোলা ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু অংশ উদ্ধৃতিযোগ্য -
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ভারতের পক্ষে আত্মঘাতী বলা যায়, কারণ বিপুল লোক ও সম্পদ ক্ষয়ের বিনিময়ে আমরা পেলাম একটি নয়, দু’টি শত্রু প্রতিবেশী। একটি চরম আগ্রাসী পাকিস্তান ও একটি অকৃতজ্ঞ বাংলাদেশ।’......
‘তথাকথিত একটি সাম্যবাদী দল নিছক রাজনৈতিক মতাদর্শগত ব্যানারটুকুর কারণে চিনের মতো এমন শত্রু প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সমর্থন করে যাচ্ছে, যে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে বারবার আক্রমণ করছে ...... সাম্যবাদের চোখে বিচ্ছিন্নতাবাদী খুনি জঙ্গি আফজল গুরু, বুরহান বানিরা স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ বলে স্বীকৃত হচ্ছে, আর দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাকে ঘাতক মনে হচ্ছে ?’ এমন স্পষ্টকথন আজকের দিনে সত্যিই বিরল।
তৃতীয় নিবন্ধ - চিন্ময় কুমার বল-এর ‘গোঁসাইগাঁও শহর ও অসমে বাঙালি অসমিয়া সম্প্রীতির কিছু আভাস’। ইতিহাসকে ছুঁয়ে গোঁসাইগাঁও শহরের সাতকাহন বলা যায় এই নিবন্ধটিকে। কিছু তথ্য অজানাই ছিল এত দিন যা জেনে ঋদ্ধ হতে হয়।
চতুর্থ তথা শেষ নিবন্ধ - ‘নীলাচলের বাংলা ও বাঙালি’। লিখেছেন কুমার অজিত দত্ত। এটি একটি অনুসন্ধানমূলক ঐতিহাসিক নিবন্ধ যা নিবিষ্ট মনে পড়ে যেতে হয় থেমে না থেকে। অত্যন্ত মূল্যবান একটি নিবন্ধ যা গ্রথিত করা হয়েছে পরম যত্নে। এ সংখ্যার অন্যতম সম্পদ নিঃসন্দেহে।      
এরপর সম্পাদক নির্মলেন্দু রায়ের একটি অনুবাদ সাহিত্য - যার পরিসর দীর্ঘ ২৫ পৃষ্ঠা। সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার ‘ককাদেউতা আরু নাতি লরা’র ‘রাজমন্ত্রী ও নাপিত’ শীর্ষক রূপকথার প্রাঞ্জল এই অনুবাদ সাহিত্য এই সংখ্যার মূল সম্পদ বললেও অত্যুক্তি হয় না। অনুবাদ সাহিত্য ভিন্ন ভাষাভাষী পাঠকের এক মিলনক্ষেত্র এবং এই পরম্পরা অন্যান্য পত্রিকায়ও সন্নিবিষ্ট করতে পারলে আখেরে পাঠকদেরই লাভ।
সব মিলিয়ে সাড়ে সাত বাই সাড়ে নয় ইঞ্চি সাইজের পত্রিকার মোট ৭২ পৃষ্ঠার নির্যাস নিখাদ বাঙালিয়ানা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যিখান থেকে এমন প্রচেষ্টা সর্বান্তকরণে সমর্থনযোগ্য একটি প্রয়াস। স্পষ্ট ছাপাই, প্রায় নির্ভুল বানানসমৃদ্ধ এই পত্রিকার প্রচ্ছদ পরিকল্পনাও সম্পাদকের।
তবে ৭২ পৃষ্ঠার পত্রিকায় সম্পাদকের অবদান যদি ৩৩ পৃষ্ঠা হতে হয় সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছু হলেও একপেশে মনে হতে পারে এবং সংখ্যাটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় অর্থাৎ বাংলা ভাষা চর্চা ও সাহিত্য গুণগ্রাহীর সংখ্যাল্পতার চিত্রটিই ফুটে ওঠে। তাই যদিও আলোচ্য সংখ্যার সাহিত্য মান নয় গরজটুকুই শেষ কথা তথাপি স্থানীয় বিষয়-আশয়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলের কবি সাহিত্যিকদের রচনাকে আরোও খানিক জায়গা ছেড়ে দিলে হয়তো ভবিষ্যতে ‘প্রাচীপট’ হয়ে উঠবে অধিকতর সমৃদ্ধ, অধিকতর গ্রহণযোগ্য।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

‘প্রাচীপট’
সম্পাদক - নির্মলেন্দু রায়
মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৮১৩০০১৩৩৯২

Comments

  1. ভালো লাগলো। পত্রিকা টি হাতে পেলে আরো ভালো লাগবে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়