Skip to main content

কবিতার জলসায় ধারাবাহিক সংযোজন ৭ম সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি’


মূলত এ প্রান্তিক কবিদের বার্ষিক কাব্যজলসা। প্রান্তিকতার সীমা ছাড়িয়ে দু’একজন সহযাত্রী কবিও স্থান করে নেন আপন সারল্যে ও সংযোগে। এবং অতি অবশ্যই গুণগত মানেও। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সপ্তম সংখ্যায় পৌঁছে গেলসীমান্তরশ্মি মে ২০২৩ সংখ্যা রূপে আত্মপ্রকাশ করল প্রান্তিক শহর করিমগঞ্জ থেকে ধারাবাহিক সম্পাদকীয় উৎকর্ষের নমুনা হিসেবে।
কবিতার ‘যথাসাধ্য আয়োজন’ - সীমান্তরশ্মি পথ চলতে শুরু করেছে উত্তরণের মধ্য দিয়ে, নিজেকে পরিমার্জন ও পরিশোধনের মধ্য দিয়ে। অভিজ্ঞ সম্পাদক নারায়ণ মোদক বছরে তিন তিনটি পত্রিকার সম্পাদনা করে থাকেন। সুতরাং এ উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী। তত্ত্বভিত্তিক সম্পাদকীয়তে স্বভাবতই উঠে এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য - ‘সভ্যতার ইতিহাসে সাহিত্য এক বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা দেখতে পাই বৈদিক যুগ থেকে যত গ্রন্থ রচনা হয়েছে তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছে। জীবন চর্চায়, শিক্ষায়, উপাসনায়, শাসন ব্যবস্থায়, নিজ নিজ ক্ষেত্র বিশেষে কীভাবে সমাজে সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে, আপনার কর্ম দ্বারা, সমাজের একজন হয়ে, তার নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে থেকেও দক্ষতার প্রকাশ ঘটিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার শিক্ষা দেয়। ...... সময়কে সাক্ষী রেখে মননে চিন্তনে সাহিত্য রচনায় সমাজের আলপনা বিধৃত করে কবিকুল বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সৃষ্টির দ্বারা মানুষ সত্য, মানবতাই পরম ধর্ম। এখানেই জয় হয়েছে সাহিত্যের যা আজও বহমান...।’ কবিতা পত্রিকার প্রকাশ, সাহিত্যের আঙিনায় নিয়মিত উৎকর্ষ সাধনের প্রয়াসের এক যথাযোগ্য ভূমিকা এ সম্পাদকীয়।  
৬৪ পৃষ্ঠার পেপারব্যাকে আলোচ্য সংখ্যাটি পূর্ণ হয়েছে মোট ৫৬ জন কবির সমসংখ্যক কবিতার মাধ্যমেপূর্ববর্তী সংখ্যাগুলিতে দেখা গেছে কবিতার পাশাপাশি দু’একটি প্রবন্ধ কিংবা অণুগল্পও জায়গা করে নিতে। তবে এবার নিখাদ কবিতারই সম্ভার।
গুণগত মান হিসেবে কিছু তারতম্য থাকাটাই স্বাভাবিক যদিও আলাদা করে বিশেষোল্লেখের পথে না হাঁটাই শ্রেয়। সার্বিক ভাবে যাঁদের কবিতায় ঋদ্ধ হয়েছে এবারের সংখ্যা তাঁরা হলেন জ্যোতির্ময় রায়, সুদীপ ভট্টাচার্য, অরুণ চট্টোপাধ্যায়, ঋতা চন্দ, আদিমা মজুমদার, মীনাক্ষি চক্রবর্তী, শিখা দাশগুপ্ত, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, অভিষেক সেন, মন্টু দাস, শতদল আচার্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, বনশ্রী চৌধুরী, শিপ্রা শর্মা, শঙ্করী চক্রবর্তী, অরূপ কুমার ভুঁঞা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুবল চক্রবর্তী, সুশান্ত ভট্টাচার্য, জাহানারা মজুমদার, সত্যব্রত চৌধুরী, অমিত চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, চান্দ্রেয়ী দেব, সুচরিতা সিংহ, ছন্দা দাম, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, পরিমল কর্মকার, আশুতোষ দাস, ধ্রুবজ্যোতি দাস, ডালিয়া সিংহ, পূরবী নাথ, ডঃ গীতা সাহা, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, দীপক হোমচৌধুরী, শ্রাবণী সরকার, ডঃ কস্তুরী হোমচৌধুরী, রতন চন্দ, গৌতম চৌধুরী, জহর দেবনাথ, সুমি দাস, অনুপ কুমার বণিক, সমীরণ চক্রবর্তী, মনিকা বড়ুয়া, শুক্লা মিশ্র, নীলদীপ চক্রবর্তী, সীমা ঘোষ, রাহুল নাগ, দেবলীনা সেনগুপ্ত, গোপাল চন্দ্র দাস, শাশ্বতী ভট্টাচার্য, শুক্লা চন্দ, কৃষ্ণা রাণী চন্দ, পূর্ণিমা রাণী দে ও সম্পাদক নারায়ণ মোদক। বলা বাহুল্য এ তালিকায় আছেন বহু নামি কবিরা। আছেন উদীয়মান কিছু প্রতিভাও। একটি ছোট পত্রিকার পরিসরে সবাইকে একসাথে নিয়ে সফল পথ চলার এই যে দৃষ্টান্ত সেখানেই সম্পাদকের কৃতিত্ব।
কিছু কবিতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে কিছু অমোঘ বর্ণিত পঙ্‌ক্তি। ঋতুর প্রাসঙ্গিকতার ছোঁয়ায় এসেছে উনিশ - একাধিক কবিতায়। এবারের সংখ্যায় কিছু কবির নতুন করে সংযোজন হওয়ায় উৎকর্ষ বেড়েছে সংখ্যাটির। বর্ধিত হয়েছে ভৌগোলিক পরিসীমা। পশ্চিম বঙ্গ ছাড়াও সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে প্রায় গোটা উত্তরপূর্বকে। হয়তো এভাবেই অঙ্কুর থেকে মহিরুহ হওয়ার পথে যাত্রা করে এক একটি পত্রিকা।
প্রচ্ছদ এবারও নান্দনিক। সৌজন্যে গৌতম চক্রবর্তী। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকেঅনবদ্য শ্রদ্ধাঞ্জলি। সংখ্যাটির প্রকাশক সীমান্তরশ্মি সাহিত্য পত্রিকা পরিবার। মুদ্রণে স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ। উন্নত হয়েছে ছাপার মানবানান ভুলের পরিমাণ স্বল্প
সব মিলিয়ে উত্তরণ ও যত্নের এক সুসংহত ধারাবাহিকতা - এ সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি’।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 

‘সীমান্তরশ্মি’
সম্পাদক - নারায়ণ মোদক
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়