কোনও ভণিতা নেই, কঠিন শব্দাবলির আদিখ্যেতা
নেই, তৎসম শব্দের ব্যবহারে সাহিত্যরস সৃষ্টির কোনও প্রয়াস নেই,
অপ্রয়োজনীয় জায়গায় গল্পের কলেবর বৃদ্ধির কোনও অপচেষ্টা নেই। সরাসরি বিষয়বস্তুতে প্রবেশ করে ঘটনা
পরিঘটনার প্রাঞ্জল বয়ানে,
সংলাপে নিখাদ নিটোল এক একটি ছোটগল্পের উপস্থাপনা করতে পারেন এবং পাঠকের
নিরলস পঠনের সুযোগ করে দিতে পারেন এমন গল্পকারের উপস্থিতি আজকের দিনে বড় একটা পাওয়া
যায় না। যে
ক’জন গল্পকার
এমন সাহস দেখিয়ে নিমগ্ন পাঠককে ধরে রাখতে পারেন আদ্যন্ত তাঁদের মধ্যে একজন অতি অবশ্যই
পরিতোষ তালুকদার। অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার এই সাহিত্যিক এ যাবৎ সৃষ্টি করেছেন
দশটি গল্প সংকলন এবং ছয়টি উপন্যাস। সাহিত্যের এই ভুবনে যা নিঃসন্দেহে
এক বিরল ঘটনা। এমন
বিপ্লব কিন্তু আমাদের এই পরিচিত সাহিত্যাকাশে চাপা পড়ে রয় নীরব বিমুখতার আড়ালে।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আরোও একটি গল্প সংকলন - ‘স্বপ্নের রূপকথারা’। মোট আটটি গল্পের সমাহারে ৮৮ পৃষ্ঠার এই সংকলনটিও আগের সংকলনগুলির মতোই পেপারব্যাকে প্রকাশিত। গ্রন্থনামে ‘স্বপ্ন’ শব্দটি ব্যবহৃত হলেও প্রতিটি গল্পই কিন্তু নিখাদ বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে লিখা। এবং ‘রূপকথা’ও নয় নিশ্চিত। একেবারেই সপাট সহজ সত্য কথার বাখান প্রতিটি গল্প। যে কথাটি বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের পক্ষেই বলা বা লিখা সম্ভব নয় সেই কথাই পরিতোষ অপার দক্ষতা ও সাহসে উচ্চারণ করার ক্ষমতা রাখেন। এটাও তাঁর এক সহজাত ক্ষমতা। কালোকে কালো বলার মতো নির্ভীক ও উদাত্ত লিখনশৈলীর পরিচয় মেলে এই গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে।
গ্রন্থের ‘পূর্বাভাষ’-এ গ্রন্থকার লিখছেন - ‘... আজকাল গল্পে পরীক্ষা নিরীক্ষার চাষআবাদি হয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেকেই আজেবাজে উদ্ভট চরিত্র ধরে এনে তাদের মুখে বেমানান কিছু শব্দ বমি করিয়ে দেয়। কেউ কেউ বিদেশি গল্পের ধাঁচ ধার করে কলম চালায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বকচ্ছপ জাতীয় রচনার আত্মপ্রকাশ হয়ে ওঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে।’ পরিতোষের লেখালেখি, গল্পের সহজ সপাট বয়ানের মতোই এসব নিয়ে তাঁর চিন্তাচর্চা।
প্রথম গল্প ‘পরিক্রমণ’। পথ চলার বৃত্তান্ত। মানুষের জীবনপথে চলমানতার এক চমৎকার ব্যঞ্জনাধর্মী ছোটগল্প। চলমান জীবনধারার প্রতিটি পর্যায় অঙ্কিত হয়েছে নিটোল বয়ানে। উঠে এসেছে দেশভাগ, অত্যাচারিত জাতির কথা। গল্পও এগিয়েছে জীবনেরই মতো। দ্বিতীয় গল্প ‘করিমউদ্দিনের স্বপ্নবিলাস’। গরিব খেটে খাওয়া মানুষের ভাষা ধর্ম জলাঞ্জলি দিয়েও কারো ক্রীতদাস হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার বেদনা এবং শেষ পরিণতিতে অসহায় জীবনাবসানের করুণ অথচ এক নির্মোহ বাস্তব জলজ্যান্ত জয়ে ফুটে উঠেছে এই গল্পে। যাযাবর জীবনে পেটের তাগিদে যারা নিরন্তর অত্যাচারিত তাদের দুঃখ দুর্দশা এবং তার আড়ালে স্বার্থান্বেষী মানুষের হিংসাদ্বেষের এক সাহসী বর্ণনা। পরের গল্প ‘বৃক্ষতর্পণ’। এও এক চলমানতার কাহিনি। তবে ভিন্ন আঙ্গিকে। মানুষ ও গাছেদের পারস্পরিক সম্পর্কের এক নির্ভেজাল আত্মবিশ্লেষণ। ব্যতিক্রমী বিষয় নিঃসন্দেহে। ‘এন আর সির জরিপ চলছে’ গল্পটি রাজ্যের চালচুলোহীন মানুষদের অস্তিত্বের টানাপোড়েনের এক কাহিনি। চরিত্রের মুখে মানানসই শব্দাবলির সরাসরি প্রয়োগ এই গল্পেও বরাবরের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। গল্পের শেষ লাইনটি অব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক মোক্ষম চপেটাঘাত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পঞ্চম গল্প ‘ধর্মাধর্ম’। ছোটপত্রিকা ‘প্রবাহ’তে পূর্বপ্রকাশিত এই সুলিখিত গল্পটি করোনাকালের আবহে ধর্ম ও তার ভেতরে লুক্কায়িত অধর্মের ককটেলে জীবনচর্চার এক চমৎকার বুনোটের গল্প। ষষ্ঠ গল্প ‘দাবানল’। কঠোর কঠিন বাস্তবের প্রেক্ষিতে উঠতি প্রজন্মের অস্থির যাপন ও অবক্ষয়ের এক খণ্ডচিত্র। শিরোনামের সঙ্গে ঠিক মানানসই হয়ে ওঠেনি মনে হয়েছে। গল্পের শেষটাও ভিন্ন ধাঁচে গড়ে উঠতে পারত। এর পর রয়েছে গল্প ‘অবিশ্বাস’। করোনার আবহে লিখা একটি শিশু কিশোরদের উপযোগী গল্প। গ্রন্থের শেষ গল্প ‘ঝরাপাতা’। সাহিত্য পত্রিকা ‘সেবা’তে পূর্বপ্রকাশিত এই গল্পটি আধুনিক সমাজব্যবস্থায় মানুষের ক্ষয়িষ্ণু মানসিকতার এক জীবন্ত পর্যালোচনা। নিখাদ বুনোটে রচিত এই গল্পটি আমাদের তথাকথিত এলিট সমাজের অন্দরমহলে থাকা ঈর্ষা ও ফাঁকা ঠাটের এক অসাধারণ চিত্র।
পল্টুর প্রচ্ছদ অসাধারণ সুন্দর পটচিত্রে অঙ্কিত প্রাসঙ্গিক এক নিবেদন। গুয়াহাটির বিকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সূচিপত্র ছাপা হয়েছে উৎসর্গের আগে। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘প্রাবন্ধিক ইলোরা দাশগুপ্তকে’। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে ‘দীপক ভদ্র’কে। তাঁর সম্যক পরিচিতি নিদেনপক্ষে একটি বাক্যে হলেও উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। কাগজ, ছাপাই যথেষ্ট ভালো ও স্পষ্ট। বানান বা ছাপার ভুলের সংখ্যা নিতান্তই স্বল্প। তবে সবার নজরদারি এড়িয়ে কিছু বেয়াড়া শব্দ থেকেই গেছে এমনকি গল্পের শিরোনামেও। ‘র’ এবং ‘ড়’-এর পারস্পরিক স্থানচ্যুতি ঘটেছে বেশ কয়েক জায়গায়।
গ্রন্থনাম ‘স্বপ্নের রূপকথারা’ না হয়ে ‘বাস্তবের চুপকথারা’ও হতে পারত হয়ত।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আরোও একটি গল্প সংকলন - ‘স্বপ্নের রূপকথারা’। মোট আটটি গল্পের সমাহারে ৮৮ পৃষ্ঠার এই সংকলনটিও আগের সংকলনগুলির মতোই পেপারব্যাকে প্রকাশিত। গ্রন্থনামে ‘স্বপ্ন’ শব্দটি ব্যবহৃত হলেও প্রতিটি গল্পই কিন্তু নিখাদ বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে লিখা। এবং ‘রূপকথা’ও নয় নিশ্চিত। একেবারেই সপাট সহজ সত্য কথার বাখান প্রতিটি গল্প। যে কথাটি বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের পক্ষেই বলা বা লিখা সম্ভব নয় সেই কথাই পরিতোষ অপার দক্ষতা ও সাহসে উচ্চারণ করার ক্ষমতা রাখেন। এটাও তাঁর এক সহজাত ক্ষমতা। কালোকে কালো বলার মতো নির্ভীক ও উদাত্ত লিখনশৈলীর পরিচয় মেলে এই গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে।
গ্রন্থের ‘পূর্বাভাষ’-এ গ্রন্থকার লিখছেন - ‘... আজকাল গল্পে পরীক্ষা নিরীক্ষার চাষআবাদি হয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেকেই আজেবাজে উদ্ভট চরিত্র ধরে এনে তাদের মুখে বেমানান কিছু শব্দ বমি করিয়ে দেয়। কেউ কেউ বিদেশি গল্পের ধাঁচ ধার করে কলম চালায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বকচ্ছপ জাতীয় রচনার আত্মপ্রকাশ হয়ে ওঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে।’ পরিতোষের লেখালেখি, গল্পের সহজ সপাট বয়ানের মতোই এসব নিয়ে তাঁর চিন্তাচর্চা।
প্রথম গল্প ‘পরিক্রমণ’। পথ চলার বৃত্তান্ত। মানুষের জীবনপথে চলমানতার এক চমৎকার ব্যঞ্জনাধর্মী ছোটগল্প। চলমান জীবনধারার প্রতিটি পর্যায় অঙ্কিত হয়েছে নিটোল বয়ানে। উঠে এসেছে দেশভাগ, অত্যাচারিত জাতির কথা। গল্পও এগিয়েছে জীবনেরই মতো। দ্বিতীয় গল্প ‘করিমউদ্দিনের স্বপ্নবিলাস’। গরিব খেটে খাওয়া মানুষের ভাষা ধর্ম জলাঞ্জলি দিয়েও কারো ক্রীতদাস হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার বেদনা এবং শেষ পরিণতিতে অসহায় জীবনাবসানের করুণ অথচ এক নির্মোহ বাস্তব জলজ্যান্ত জয়ে ফুটে উঠেছে এই গল্পে। যাযাবর জীবনে পেটের তাগিদে যারা নিরন্তর অত্যাচারিত তাদের দুঃখ দুর্দশা এবং তার আড়ালে স্বার্থান্বেষী মানুষের হিংসাদ্বেষের এক সাহসী বর্ণনা। পরের গল্প ‘বৃক্ষতর্পণ’। এও এক চলমানতার কাহিনি। তবে ভিন্ন আঙ্গিকে। মানুষ ও গাছেদের পারস্পরিক সম্পর্কের এক নির্ভেজাল আত্মবিশ্লেষণ। ব্যতিক্রমী বিষয় নিঃসন্দেহে। ‘এন আর সির জরিপ চলছে’ গল্পটি রাজ্যের চালচুলোহীন মানুষদের অস্তিত্বের টানাপোড়েনের এক কাহিনি। চরিত্রের মুখে মানানসই শব্দাবলির সরাসরি প্রয়োগ এই গল্পেও বরাবরের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। গল্পের শেষ লাইনটি অব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক মোক্ষম চপেটাঘাত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পঞ্চম গল্প ‘ধর্মাধর্ম’। ছোটপত্রিকা ‘প্রবাহ’তে পূর্বপ্রকাশিত এই সুলিখিত গল্পটি করোনাকালের আবহে ধর্ম ও তার ভেতরে লুক্কায়িত অধর্মের ককটেলে জীবনচর্চার এক চমৎকার বুনোটের গল্প। ষষ্ঠ গল্প ‘দাবানল’। কঠোর কঠিন বাস্তবের প্রেক্ষিতে উঠতি প্রজন্মের অস্থির যাপন ও অবক্ষয়ের এক খণ্ডচিত্র। শিরোনামের সঙ্গে ঠিক মানানসই হয়ে ওঠেনি মনে হয়েছে। গল্পের শেষটাও ভিন্ন ধাঁচে গড়ে উঠতে পারত। এর পর রয়েছে গল্প ‘অবিশ্বাস’। করোনার আবহে লিখা একটি শিশু কিশোরদের উপযোগী গল্প। গ্রন্থের শেষ গল্প ‘ঝরাপাতা’। সাহিত্য পত্রিকা ‘সেবা’তে পূর্বপ্রকাশিত এই গল্পটি আধুনিক সমাজব্যবস্থায় মানুষের ক্ষয়িষ্ণু মানসিকতার এক জীবন্ত পর্যালোচনা। নিখাদ বুনোটে রচিত এই গল্পটি আমাদের তথাকথিত এলিট সমাজের অন্দরমহলে থাকা ঈর্ষা ও ফাঁকা ঠাটের এক অসাধারণ চিত্র।
পল্টুর প্রচ্ছদ অসাধারণ সুন্দর পটচিত্রে অঙ্কিত প্রাসঙ্গিক এক নিবেদন। গুয়াহাটির বিকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সূচিপত্র ছাপা হয়েছে উৎসর্গের আগে। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘প্রাবন্ধিক ইলোরা দাশগুপ্তকে’। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে ‘দীপক ভদ্র’কে। তাঁর সম্যক পরিচিতি নিদেনপক্ষে একটি বাক্যে হলেও উল্লেখ থাকলে ভালো হতো। কাগজ, ছাপাই যথেষ্ট ভালো ও স্পষ্ট। বানান বা ছাপার ভুলের সংখ্যা নিতান্তই স্বল্প। তবে সবার নজরদারি এড়িয়ে কিছু বেয়াড়া শব্দ থেকেই গেছে এমনকি গল্পের শিরোনামেও। ‘র’ এবং ‘ড়’-এর পারস্পরিক স্থানচ্যুতি ঘটেছে বেশ কয়েক জায়গায়।
গ্রন্থনাম ‘স্বপ্নের রূপকথারা’ না হয়ে ‘বাস্তবের চুপকথারা’ও হতে পারত হয়ত।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘স্বপ্নের রূপকথারা’
পরিতোষ তালুকদার
মূল্য - ১৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪০১১৭৭৬
পরিতোষ তালুকদার
মূল্য - ১৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪০১১৭৭৬
Comments
Post a Comment