Skip to main content

ব্যতিক্রমী ভাবনার অনবদ্য ফসল ‘রবীন্দ্রসংগীত মননে ও অনুভবে’


একুশ শতকের তৃতীয় দশকে প্রবেশ করেছি আমরা এর মধ্যে কুড়ি ও একুশ - বিগত দুটি বছর মারণ ব্যাধি করোনার প্রকোপে পড়ে অগণিত মানুষ মানবিক সংকটের সম্মুখীন হলেও সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে একেবারে নিষ্ফলা নয় আমরা এই সংকটের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে চলেছি এখনও এর থেকে অব্যাহতি লাভে সংগীতই একমাত্র অবলম্বন আর রবীন্দ্রসংগীত এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস‘  
প্রথম ব্লার্বে এভাবেই স্বল্প কথায় তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট বিষয়ের কথা ‘রবীন্দ্রসংগীত মননে ও অনুভবে’ শীর্ষক ৬৪০ পৃষ্ঠার এই বিশাল সংকলন গ্রন্থে রয়েছে ৫৭ টি বাংলা প্রবন্ধ এবং ৮ টি ইংরেজি প্রবন্ধ। লিখেছেন এ অঞ্চলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিদগ্ধ প্রবন্ধকাররা। এর পরেই রয়েছে সম্পাদক শংকর করের ‘সম্পাদনার নেপথ্যে’। এই ভূমিকার পুরো বক্তব্য তুলে ধরতেই শেষ হয়ে যাবে আলোচনার পরিসর। পৃষ্ঠা সাত থেকে সতেরো অবধি ভূমিকায় রয়েছে সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত এবং গ্রন্থের সাতসতেরো। বস্তুত সমগ্র সংকলনের নির্যাস এখানে তুলে ধরা হয়েছে সবিস্তারে‘রবীন্দ্রনাথ শুধু কবিই নন, তিনি বিশ্বকবি, বিশ্বমানবের কবি। ... তাঁর ঋষিসত্তা ও মানবসত্তা একাত্ম হয়ে প্রেমিকসত্তায় রূপান্তরিত করেছে তাঁকে। রবীন্দ্রনাথের প্রেম তাই মানবপ্রেম। ... রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট গানের বিপুল সম্ভারে মানব মনের গহন গভীরে নিহিত যে মর্মকথা তিনি অপরূপ শব্দমালা ও নানা অনুভূতি ও ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন, সেখানে মন-প্রাণ-চিত্ত একীভূত হয়ে এক অনির্বচনীয় আনন্দে মাতোয়ারা করে তোলে। ... আসাম ও ত্রিপুরা ভ্রমণকালীন রবীন্দ্রসৃষ্টি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এইসব সোনালি যুগের স্বর্ণময় অধ্যায় ইতিহাসের পাতায় বন্দি বললে রবীন্দ্রসংস্কৃতির প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বরং এটা বলা ভালো রবীন্দ্র পদার্পণে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগত বহুল পরিমানে নব উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল যাকে রাবীন্দ্রিক সংস্কৃতি আখ্যা দেওয়া যায়। এর দ্বারা বৌদ্ধিক মহল যেমন ঋদ্ধ হয়েছিল তেমনি সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে এক নতুন আলোড়ন আসে। এসব ঘটনাবলি উত্তরাধিকার সূত্রে আজও বহমান।
গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি রচনা তত্ত্ব ও তথ্যের সংমিশ্রণে এক একটি সংগ্রহযোগ্য রচনা হিসেবে অভিধাযুক্ত হওয়ার দাবি রাখে। স্বল্প পরিসরে প্রতিটি রচনার উপর মন্তব্য কিংবা আলোকপাত নিতান্ত্ই অসম্ভব। তাই প্রবন্ধনামেই বিষয়বস্তুর দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ক্ষান্ত থাকতে হবে। বিষয় ও লেখকের নামের তালিকাটি দেখলেই, পড়লেই সম্যক পরিচয় লাভ করা যাবে এই সংকলন গ্রন্থের যাথার্থ্য। আসামের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য এবং অমলেন্দু চক্রবর্তীর লেখাদু’টি স্থান করে নিয়েছে প্রথমেই। শিরোনাম যথাক্রমে ‘গানের রবীন্দ্রনাথ’ এবং রবীন্দ্র-দর্শনে সোহ্‌হম তত্ত্ব’। ঠিক এখানটাতেই একটু হোঁচট খেতে হয় এটা দেখে যে উত্তর পূর্বের বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্যের কোনও লেখা নেই এই সংকলনে।
এর পর যেসব প্রবন্ধ এসেছে সেগুলো হল ক্রমান্বয়ে - রামবহাল তেওয়ারীর ‘রবীন্দ্রসংগীত ও ছন্দ’, দীপক কুমার রায়ের ‘রবীন্দ্রসংগীতের অনুবাদ - একটি অনুসন্ধান’, বিকাশ রায় ও রুবি চৌধুরীর ‘রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান - আমাদের স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যৎ’, প্রয়াত সুভাষ দে’র ‘বেহাগ ও রবীন্দ্রনাথ’ (পুনর্মুদ্রণ), পূরবী ভট্টাচার্যের ‘রবীন্দ্রসংগীত ও মিউজিক থেরাপি’ (এ নিয়েও বিশদে আছে ভূমিকায়), কিরণ শঙ্কর রায়ের ‘রবীন্দ্রসংগীতে প্রতীক্ষা চিত্র : প্রতীক্ষার ঘর-বাহির’, ইন্দ্রাণী গোস্বামীর ‘রবীন্দ্র চেতনায় রাগসংগীত’, কে এন চান্দ সিংহ-এর ‘মণিপুরি সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি’, শর্মিষ্ঠা সেন-এর ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’, সুশান্ত কর-এর ‘রবীন্দ্রনাথের গান এবং রাগ-বিরাগ’, নিবেদিতা ভট্টাচার্যের ‘রবীন্দ্রসংগীতে অলংকার’, শান্তনু রায়চৌধুরীর ‘প্রেম পর্যায়ের রবীন্দ্রসংগীত : নবতর বিন্যাসের উদ্ভাস’, অনামিকা চক্রবর্তীর ‘অসমিয়া সাহিত্যে রবীন্দ্র-সৃষ্টি : বিশেষ প্রেক্ষিত গীতাঞ্জলির গান’, অশোক দাস-এর ‘রবীন্দ্রগানের সান্নিধ্য ও অনুভবের পরম্পরা’, স্বপ্না নাথ-এর ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’, মলয় দেব-এর ‘ত্রিপুরায় রবীন্দ্র-ঐতিহ্য : প্রসঙ্গ রবীন্দ্রসংগীত’, সুমিতা দত্তেররবীন্দ্রসংগীতে নদীতত্ত্ব ও গতিবাদ’, বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরীরবরাক উপত্যকার রবীন্দ্রসংগীত চর্চা’, তনুশ্রী ঘোষেররবীন্দ্রনাথের ভাবনাবিশ্বে সংগীত : প্রেমপর্যায়’, সূর্য লামা-রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির নেপালি অনুবাদ’, পরমানন্দ মজুমদার ও ঋজুশ্রী শর্মা মজুমদারের মূল ইংরেজি নিবন্ধের সম্পাদক শংকর কর-কৃত অনুবাদআসামে রবীন্দ্রসংগীত সংস্কৃতি ও দিলীপ শর্মা’, সুচরিতা চৌধুরীররবীন্দ্রগানে নারী ভাবনা ও প্রেম’, শেখর চক্রবর্তীরআধ্যাত্মিক চেতনায় রবীন্দ্রনাথ : গানের আলোয়’, শুক্লা সাহাররবীন্দ্রসংগীতে রাগ-রাগিণীর প্রভাব : একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা’, অজিত কুমার সিংহ-এরসংগীত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা : বিসর্জন’, পবিত্র রায়েরগীতাঞ্জলি কাব্যের রাজবংশী অনুবাদ : কথায় ভাবে ছন্দে গানে’, প্রণয় ব্রহ্মচারীররবীন্দ্রনাথের গানে কাব্যভাবনা : প্রসঙ্গ গীতাঞ্জলি’, শেলী দত্ত-এররবীন্দ্রসংগীতে অষ্টনায়িকা : (উজ্জ্বলনীলমণি) প্রসঙ্গ’, কুমার বিষ্ণু দেগীতাঞ্জলি এবং গীতাঞ্জলির অনুবাদক রবীন্দ্রনাথ : একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন’, প্রেমানন্দ রায়েররবীন্দ্র-সাহিত্য অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা’, বর্ণশ্রী বক্সীররবীন্দ্রগগনে ঋতু বৈচিত্র্য : বিশ্লেষণের দর্পণে’, সুব্রত রায়েররবীন্দ্রসংগীতে মানবীয় আধ্যাত্মিকতা : দার্শনিক: দৃষ্টিতে একটি বিশ্লেষণী পাঠ’, কৃষ্ণকান্ত রায়েররবীন্দ্রগানে সন্ধ্যার বহুমাত্রা’, সঞ্জয় চন্দ্র দাসেরপ্রকৃতি-তত্ত্ব ও রবীন্দ্রসংগীত’, চৈতালী ভৌমিকেররবীন্দ্রসংগীতে পরিবেশ ভাবনা’, সঞ্জয় সরকার-এররোমান্টিকতার প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গান’, নারায়ণ দত্ত-এররবীন্দ্র নাটকে সংগীত : প্রসঙ্গ রক্তকরবী’, আব্দুল জলীল চৌধুরীররবীন্দ্রসংগীত : লোকায়ত থেকে লোকোত্তরে যাত্রা’, অনিন্দিতা সাহারভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী : বৈষ্ণব অলংকার শাস্ত্রের আলোকে’, প্রভাকর মণ্ডলের ‘রবীন্দ্রসংগীতে বাংলা টপ্পা গানের প্রভাব’, সুব্রতা মজুমদারের ‘রাজা : প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ’, মাধব ঘোষের ‘রবীন্দ্রনাথের গান : বিশ্বসংগীতের এক বিশ্বস্ত প্রতিনিধি’, রেশ্মী বীর-এর ‘রবীন্দ্রসংগীতে বৈষ্ণবীয় গরিমা’, পঙ্কজ দাস-এর ‘রবীন্দ্রগান : লোকঐতিহ্যের সন্ধানে’, সংগীতা নন্দীর ‘বিজ্ঞানচেতনায় রবীন্দ্রসংগীত’, পরিমল বসাক-এর ‘রবীন্দ্রগানে - অন্তিম শ্বাস পরমের প্রকাশ’, মধুরিমা করের ‘রবীন্দ্রনাথের গান : পাঠক প্রতিক্রিয়াবাদের দৃষ্টিতে’, সৈকত বালার ‘রবীন্দ্রনাথের গান ও আধুনিক প্রবণতা’, শতাব্দী কর-এর ‘রবীন্দ্রসংগীতে সাম্রাজ্যবিরোধী বিকল্প আধুনিকতা : একটি অনুসন্ধান’, বিষ্ণুদীপ চক্রবর্তীর ‘দুই বিঘা জমি ও রবীন্দ্রনাথ’, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ‘রবীন্দ্রসংগীতে প্রতিফলিত মৃত্যুচেতনা’, অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রগানে ভাটিয়ালি সুর : স্বদেশ-ভাবনার আলোকে’, সীমা পাল-এর ‘রবীন্দ্রসংগীত : অনির্বচনীয় ভাব ও কথা’, সুব্রত সাহার ‘হিন্দি সাহিত্যে গীতাঞ্জলির অনুবাদ : একটি আলোকপাত এবং পরিতোষ রায়-এর ‘রবীন্দ্রসংগীত : একটি স্বতন্ত্র সত্তা’।
ইংরেজি বিভাগে আছে ইন্দিরা বরার ‘Rabindranath Tagore’s Gitanjali and its Reception in Bodo Literature’, ভবেন্দ্রনাথ দত্তের অসমিয়া নিবন্ধের সুভাষ চন্দ্র দাস কৃত ইংরেজি অনুবাদ ‘Rabindranath’s Patriotism’, ধীরা ভট্টাচার্যের ‘Gitanjali : A Theistic Approach’, দীপমণি দাস-এর ‘Discourse of Nature in Rbaindranath’s Gitanjali’, ভবেন্দ্রনাথ দত্তের অসমিয়া নিবন্ধের সুলতান আলি আহমেদ কৃত ইংরেজি অনুবাদ ‘Rabindra Sangeet’, রাজলক্ষ্মী দত্ত-এর ‘Alternative Modernity and an Inclusive Vision in Rabindranath Tagore’s Gitanjali : A Reading’, পিয়ালি রায়-এর ‘Rabindra Sangeet and Educational Philosophy of Tagore : A Study with Special Reference to the Freedom in Education’ এবং হাফিজ সৈয়দ আহমেদ-এর ‘Islamic Mysticism and it’s Phantom on Tagore’s Gitanjali’.
পরিশিষ্টে আছে প্রত্যেক লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এমন একটি দুর্লভ সংকলন প্রকাশের মাধ্যমে সম্পাদক শংকর কর তাঁর গভীর অধ্যবসায় ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন একথা অনস্বীকার্য বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটি সম্পাদক উৎসর্গ করেছেন তাঁর সকল শিক্ষাগুরুর উদ্দেশে ঝকঝকে ছাপাই, বাঁধাই, শব্দ ও অক্ষর বিন্যাস নান্দনিক প্রচ্ছদ - সৌজন্যে অতনু গাঙ্গুলী হাতে গোনা কয়েকটি ভুল বানান সিন্ধুতে বিন্দুরই মতো বিশাল এই গ্রন্থ নিশ্চিতভাবে এ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রী, গবেষক ও রবীন্দ্রানুরাগীদের কাছে এক অমূল্য সম্পদ হয়েই থাকবে ভবিষ্যতের মহাফেজখানায়

- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মুদ্রিত মূল্য - ৮০০ টাকা (ছাড় উপলব্ধ)

যোগাযোগ - ৯৪০১৪৭৩১১৭

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়