বরাক উপত্যকা থেকে যে ক’টি ছোট পত্রিকা
প্রকাশিত হয় তাদের মধ্যে ‘মানবী’ অন্যতম
এবং একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা নিঃসন্দেহে। গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে এ
কথা বলা যায় হলফ করে। তবে নিয়মিতভাবে প্রকাশের ক্ষেত্রে ‘মানবী’ পিছিয়ে পড়ছে প্রায়শই। তাই একের পর এক যৌথ সংখ্যা
প্রকাশিত হচ্ছে। উল্টো করে বললে যৌথ সংখ্যা প্রকাশ করেই নিয়মানুবর্তিতা
রক্ষা করে চলেছে। এতে ক্ষতি পাঠক বই আর কারোও নয়। কারণ বিষয়ে, বৈচিত্র্যে
‘মানবী’ সততই একটি উন্নত মানের পত্রিকা।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকার ডিসেম্বর ২০২২ - মার্চ ২০২৩ সংখ্যা (ষোড়শ ও সপ্তদশ বর্ষ, শীত-বসন্ত সংখ্যা)। ‘মানবী’ বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা না হলেও একটি অংশ বিষয়ভিত্তিক হয়ে থাকে সাধারণত। এবারের বিষয় ছিল ‘পুরাণ পাতা থেকে’। এই পত্রিকার সূচিপত্রের বিন্যাস বরাবরই ব্যতিক্রমী। যথারীতি অন্যথা হয়নি এ সংখ্যাতেও। প্রথমেই সম্পাদকীয়র পর আছে পুরাণ নির্ভর কিছু প্রবন্ধ-গল্প, অবশ্যই নতুন আঙ্গিকে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে।
‘মানবী’র চার নিয়মিত সম্পাদকের মধ্যে এবারের সম্পাদক হচ্ছেন দোলনচাঁপা দাসপাল। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে - ‘...... অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতাই তো ভবিষ্যৎ আলোর উৎস। এই অতীতকে বর্তমানের দৃষ্টি দিয়ে দেখার অভিপ্রায়ে এবার আমরা ফিরে তাকিয়েছি ভারত মহাদেশের স্বর্ণখনি পুরাণের দিকে। ... পুরাণের ইতিহাস প্রাচীন হলেও আজকের দিনে বড় প্রাসঙ্গিক।‘ যৌথ সংখ্যার প্রাসঙ্গিকতাও বলা হয়েছে সম্পাদকীয়তে - ‘২০২২ ইংরেজির চতুর্থ সংখ্যাটি প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে বের করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন কারণে। অতএব সময়কে করতলগত করার অভিপ্রায়ে এ সংখ্যাটিকে যৌথ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করলাম...।’
‘পুরাণ পাতা থেকে’ বিভাগে প্রথমেই রয়েছে চন্দ্রিমা দত্তের ‘প্রিয়বরেষু তারা, আপনার আলো ছুঁয়ে কিছুটা সময়’। ‘দেবতাদের পুরোহিত, আচার্য বৃহস্পতির স্ত্রী’ তারাকে উদ্দেশ করে লিখা এই নিবন্ধের এক জায়গায় প্রবন্ধকার লিখছেন - ‘পুরাণের পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনার সাথে আমার এই কথোপকথন যেন নিজেকেই নানাভাবে খুঁজে ফেরা, আগুনকে স্পর্শ করে উজ্জীবিত হওয়া, প্রকৃত ইতিহাসকে যেন খুঁজে বের করা ...।’ সোম ও বৃহস্পতির টানাপোড়েনে প্রকৃত প্রেমের স্বরূপ উদঘাটনের এক নিগূঢ় অনুসন্ধান এই প্রবন্ধ। শেলী দাস চৌধুরী তিনটি কবিতা - অহল্যা, পুতনা ও মহিমার মাধ্যমে সন্ধান করেছেন নারী জীবনের অসহায়তার। প্রশ্ন রেখেছেন - ‘আর কত কাল ?’ শর্মিলা দত্তের নিবন্ধ ‘অথ ভারত মহাকথার ক্ষুদ্রাংশ’। নিবন্ধকার এখানে আধুনিকতার নিরিখে আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে কাঁটাছেঁড়া করেছেন ‘অপরিচিতা নামগোত্রহীন দাসী’ বিদুর জননী ও ‘যজ্ঞাগ্নিসম্ভূতা’ কৃষ্ণাকে। ‘প্রণমি তোমারে নাথ’ - দেবদত্ত চক্রবর্তীর ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে একটি তুলনাত্মক বিশ্লেষণ, যেখানে বিরোধ নয় সমন্বয়ই খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। ড. অজিত কুমার সিংহের প্রবন্ধ ‘যতীন্দ্রনাথের কাব্য-কবিতায় ‘শিব’ চরিত্রের নবরূপায়ণ - একটি বিশ্লেষণাত্মক পাঠ। শিরোনামের সঙ্গে মানানসই একটি তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। জয়িতা দাস লিখেছেন - ‘রাম স্পর্শ না করলে অহল্যারা শুদ্ধ হয় না’। গৌতম ও অহল্যার কাহিনির আধারে নারী চরিত্রের এক নির্মোহ বিশ্লেষণ। সম্ভবত পরিসরের সীমাবদ্ধতার জন্যই শেষটায় তড়িঘড়ি পরিলক্ষিত হয়েছে। খানিক বিস্তৃত হলে হয়ত অধিকতর সুখপাঠ্য হতো। শ্রীবরুণ-এর সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ - ‘ভীমের বস্ত্রহরণ : মহাভারতে যা লিপিবদ্ধ হয়নি’। যা লিপিবদ্ধ হয়নি তা নিয়ে অসাধারণ সুসংহত গদ্য। ব্যতিক্রমী চিন্তাধারায় স্বল্প কথায় বহু ভাবনার জন্ম দেয় পাঠক মনে। অপর্ণা দেব-এর পৃষ্ঠাজোড়া কবিতা ‘দেবী, আপনি নির্বাসিত’ প্রাচীন ও নতুনের বিশ্লেষণে একটি শ্লেষাত্মক কবিতা। মুক্ত গদ্যের আঙ্গিকে মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম-এর দীর্ঘ কবিতা ‘আত্মমর্যাদা’য় স্তরে স্তরে ঠিকরে পড়েছে নারীর প্রতি অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদী প্রকাশ। এ বিভাগের শেষ নিবেদন পুরাণের পাতা থেকে তুলে আনা মনসা ও বেহুলা চরিত্রের ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প ‘বিম্বিত কাল’। দোলনচাঁপা দাসপালের এই গল্প দীর্ঘ অধ্যবসায় ও গভীর অধ্যয়নের ফসল। সেকাল থেকে একালের নারীদের নানাবিধ যন্ত্রণার এক নির্মোহ বিশ্লেষণ। এই পুরো বিভাগটিই পত্রিকা নাম ‘মানবী’র সঙ্গে চমৎকার ভাবে মানানসই।
শ্রদ্ধার্ঘ্য বিভাগে তিমির দে’র প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ ও কবি নীলমণি ফুকন’ একটি সময়োচিত রচনা। ‘এই সময় : শিলচর’ বিভাগে ৯ম উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন সম্মেলন নিয়ে শর্মিলা দত্ত ও সুশান্ত কর-এর দু’টি প্রতিবেদনমূলক গদ্য প্রাসঙ্গিক হয়েছে।
‘গল্প-কথা’ বিভাগে রয়েছে দু’টি গল্প। দীপঙ্কর ঘোষ-এর গল্প ‘ব্ল্যাকমেলার’ চমৎকার বুনোটের একটি টানটান গল্প। এক পঠনে শেষ করতে হয়। শেষটায় এক নাটকীয় মোড় থাকে যা শিরোনামের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়। তবে গল্পের প্রথম পরিচ্ছদে একটি কারিগরি ভুল রয়ে গেছে। এ দেশে সাধারণত ড্রাইভারের সিট ডান দিকে থাকে। সেই অর্থে ‘শান্তিময়ের ডান পাশে বসা পাঞ্চালী …’র জায়গায় ‘বাম পাশে বসা’ হওয়া উচিত ছিল হয়ত। দোলনচাঁপার গল্প ‘বাৎসল্য’ বিষয়ে এবং বর্ণনায় একটি চমৎকার গল্প। মানানসই শিরোনাম।
কবিতা বিভাগে রয়েছে তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থের দু’টি কবিতা এবং চন্দ্রিমা দত্ত, শেলী দাস চৌধুরী ও অভীককুমার দে’র একটি করে কবিতা। প্রত্যেকেই আজকের দিনে প্রতিষ্ঠিত কবি এবং স্বভাবতই প্রতিটি কবিতা সুখপাঠ্য ও কাব্যগুণে নন্দিত। অনুবাদ বিভাগে রয়েছে রুমি লস্কর বরার অসমিয়া বড়গল্প ‘সময়’ এর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকৃত অনুবাদ এবং বিবেকা হাজরিকার অসমিয়া কবিতা ‘অদৃশ্য’-এর বাংলা অনুবাদ। অনুবাদক জয়িতা চক্রবর্তী। স্বচ্ছ, নিটোল অনুবাদ।
শেষ বিভাগ - ‘মুক্ত ভাবনা’। এই পর্বে গৌরী দত্তবিশ্বাস এর ‘আমার অনুভবে তিন প্রজন্মের মেয়েদের সামাজিক অবস্থান’ ব্যক্তিগত ভাবনার নিরিখে একটি বহুপরিচিত ভাবনার ইতস্তত প্রকাশ। ধর্মাধর্ম, নারী-পুরুষ ও স্বর্গ-নরকের প্রেক্ষাপটে একগুচ্ছ প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ময়ূরী স্বামী তাঁর গদ্য ‘কে দেবে উত্তর’-এ। শেষ মুক্ত গদ্য দোলনচাঁপা দাসপাল-এর ‘রং যেন মোর মর্মে লাগে’। বসন্তের উপর একটি মনমাতানো লেখা।
সম্পাদক হিসেবে একই সংখ্যায় তিন-তিনটি লেখা না থাকলেই ভালো হতো যদিও পাঠক এক্ষেত্রে বঞ্চিতই হতেন এ কথা বলা যায়। ছাপাই এর মান যথাযথ হলেও কাগজের মান আশানুরূপ নয়। আটপৌরে প্রচ্ছদের সৌজন্যে সুতপা নন্দী। পরবর্তীতে কাগজ, প্রচ্ছদ এবং বাঁধাইয়ের ব্যাপারে অধিকতর মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বানান ভুলের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য যদিও কিছু রচনায় ‘কি’ এবং ‘কী’-এর ভুল প্রয়োগ রয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে বরাবরের মতোই তার উৎকৃষ্টতা ধরে রাখতে একশোভাগ সফল হয়েছে ১১২ পৃষ্ঠাযুক্ত এ সংখ্যার ‘মানবী।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই পত্রিকার ডিসেম্বর ২০২২ - মার্চ ২০২৩ সংখ্যা (ষোড়শ ও সপ্তদশ বর্ষ, শীত-বসন্ত সংখ্যা)। ‘মানবী’ বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা না হলেও একটি অংশ বিষয়ভিত্তিক হয়ে থাকে সাধারণত। এবারের বিষয় ছিল ‘পুরাণ পাতা থেকে’। এই পত্রিকার সূচিপত্রের বিন্যাস বরাবরই ব্যতিক্রমী। যথারীতি অন্যথা হয়নি এ সংখ্যাতেও। প্রথমেই সম্পাদকীয়র পর আছে পুরাণ নির্ভর কিছু প্রবন্ধ-গল্প, অবশ্যই নতুন আঙ্গিকে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে।
‘মানবী’র চার নিয়মিত সম্পাদকের মধ্যে এবারের সম্পাদক হচ্ছেন দোলনচাঁপা দাসপাল। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে - ‘...... অতীতের সমস্ত অভিজ্ঞতাই তো ভবিষ্যৎ আলোর উৎস। এই অতীতকে বর্তমানের দৃষ্টি দিয়ে দেখার অভিপ্রায়ে এবার আমরা ফিরে তাকিয়েছি ভারত মহাদেশের স্বর্ণখনি পুরাণের দিকে। ... পুরাণের ইতিহাস প্রাচীন হলেও আজকের দিনে বড় প্রাসঙ্গিক।‘ যৌথ সংখ্যার প্রাসঙ্গিকতাও বলা হয়েছে সম্পাদকীয়তে - ‘২০২২ ইংরেজির চতুর্থ সংখ্যাটি প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে বের করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন কারণে। অতএব সময়কে করতলগত করার অভিপ্রায়ে এ সংখ্যাটিকে যৌথ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশ করলাম...।’
‘পুরাণ পাতা থেকে’ বিভাগে প্রথমেই রয়েছে চন্দ্রিমা দত্তের ‘প্রিয়বরেষু তারা, আপনার আলো ছুঁয়ে কিছুটা সময়’। ‘দেবতাদের পুরোহিত, আচার্য বৃহস্পতির স্ত্রী’ তারাকে উদ্দেশ করে লিখা এই নিবন্ধের এক জায়গায় প্রবন্ধকার লিখছেন - ‘পুরাণের পথে হাঁটতে হাঁটতে আপনার সাথে আমার এই কথোপকথন যেন নিজেকেই নানাভাবে খুঁজে ফেরা, আগুনকে স্পর্শ করে উজ্জীবিত হওয়া, প্রকৃত ইতিহাসকে যেন খুঁজে বের করা ...।’ সোম ও বৃহস্পতির টানাপোড়েনে প্রকৃত প্রেমের স্বরূপ উদঘাটনের এক নিগূঢ় অনুসন্ধান এই প্রবন্ধ। শেলী দাস চৌধুরী তিনটি কবিতা - অহল্যা, পুতনা ও মহিমার মাধ্যমে সন্ধান করেছেন নারী জীবনের অসহায়তার। প্রশ্ন রেখেছেন - ‘আর কত কাল ?’ শর্মিলা দত্তের নিবন্ধ ‘অথ ভারত মহাকথার ক্ষুদ্রাংশ’। নিবন্ধকার এখানে আধুনিকতার নিরিখে আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে কাঁটাছেঁড়া করেছেন ‘অপরিচিতা নামগোত্রহীন দাসী’ বিদুর জননী ও ‘যজ্ঞাগ্নিসম্ভূতা’ কৃষ্ণাকে। ‘প্রণমি তোমারে নাথ’ - দেবদত্ত চক্রবর্তীর ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে একটি তুলনাত্মক বিশ্লেষণ, যেখানে বিরোধ নয় সমন্বয়ই খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। ড. অজিত কুমার সিংহের প্রবন্ধ ‘যতীন্দ্রনাথের কাব্য-কবিতায় ‘শিব’ চরিত্রের নবরূপায়ণ - একটি বিশ্লেষণাত্মক পাঠ। শিরোনামের সঙ্গে মানানসই একটি তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। জয়িতা দাস লিখেছেন - ‘রাম স্পর্শ না করলে অহল্যারা শুদ্ধ হয় না’। গৌতম ও অহল্যার কাহিনির আধারে নারী চরিত্রের এক নির্মোহ বিশ্লেষণ। সম্ভবত পরিসরের সীমাবদ্ধতার জন্যই শেষটায় তড়িঘড়ি পরিলক্ষিত হয়েছে। খানিক বিস্তৃত হলে হয়ত অধিকতর সুখপাঠ্য হতো। শ্রীবরুণ-এর সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ - ‘ভীমের বস্ত্রহরণ : মহাভারতে যা লিপিবদ্ধ হয়নি’। যা লিপিবদ্ধ হয়নি তা নিয়ে অসাধারণ সুসংহত গদ্য। ব্যতিক্রমী চিন্তাধারায় স্বল্প কথায় বহু ভাবনার জন্ম দেয় পাঠক মনে। অপর্ণা দেব-এর পৃষ্ঠাজোড়া কবিতা ‘দেবী, আপনি নির্বাসিত’ প্রাচীন ও নতুনের বিশ্লেষণে একটি শ্লেষাত্মক কবিতা। মুক্ত গদ্যের আঙ্গিকে মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম-এর দীর্ঘ কবিতা ‘আত্মমর্যাদা’য় স্তরে স্তরে ঠিকরে পড়েছে নারীর প্রতি অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদী প্রকাশ। এ বিভাগের শেষ নিবেদন পুরাণের পাতা থেকে তুলে আনা মনসা ও বেহুলা চরিত্রের ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প ‘বিম্বিত কাল’। দোলনচাঁপা দাসপালের এই গল্প দীর্ঘ অধ্যবসায় ও গভীর অধ্যয়নের ফসল। সেকাল থেকে একালের নারীদের নানাবিধ যন্ত্রণার এক নির্মোহ বিশ্লেষণ। এই পুরো বিভাগটিই পত্রিকা নাম ‘মানবী’র সঙ্গে চমৎকার ভাবে মানানসই।
শ্রদ্ধার্ঘ্য বিভাগে তিমির দে’র প্রবন্ধ ‘রবীন্দ্রনাথ ও কবি নীলমণি ফুকন’ একটি সময়োচিত রচনা। ‘এই সময় : শিলচর’ বিভাগে ৯ম উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন সম্মেলন নিয়ে শর্মিলা দত্ত ও সুশান্ত কর-এর দু’টি প্রতিবেদনমূলক গদ্য প্রাসঙ্গিক হয়েছে।
‘গল্প-কথা’ বিভাগে রয়েছে দু’টি গল্প। দীপঙ্কর ঘোষ-এর গল্প ‘ব্ল্যাকমেলার’ চমৎকার বুনোটের একটি টানটান গল্প। এক পঠনে শেষ করতে হয়। শেষটায় এক নাটকীয় মোড় থাকে যা শিরোনামের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়। তবে গল্পের প্রথম পরিচ্ছদে একটি কারিগরি ভুল রয়ে গেছে। এ দেশে সাধারণত ড্রাইভারের সিট ডান দিকে থাকে। সেই অর্থে ‘শান্তিময়ের ডান পাশে বসা পাঞ্চালী …’র জায়গায় ‘বাম পাশে বসা’ হওয়া উচিত ছিল হয়ত। দোলনচাঁপার গল্প ‘বাৎসল্য’ বিষয়ে এবং বর্ণনায় একটি চমৎকার গল্প। মানানসই শিরোনাম।
কবিতা বিভাগে রয়েছে তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থের দু’টি কবিতা এবং চন্দ্রিমা দত্ত, শেলী দাস চৌধুরী ও অভীককুমার দে’র একটি করে কবিতা। প্রত্যেকেই আজকের দিনে প্রতিষ্ঠিত কবি এবং স্বভাবতই প্রতিটি কবিতা সুখপাঠ্য ও কাব্যগুণে নন্দিত। অনুবাদ বিভাগে রয়েছে রুমি লস্কর বরার অসমিয়া বড়গল্প ‘সময়’ এর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকৃত অনুবাদ এবং বিবেকা হাজরিকার অসমিয়া কবিতা ‘অদৃশ্য’-এর বাংলা অনুবাদ। অনুবাদক জয়িতা চক্রবর্তী। স্বচ্ছ, নিটোল অনুবাদ।
শেষ বিভাগ - ‘মুক্ত ভাবনা’। এই পর্বে গৌরী দত্তবিশ্বাস এর ‘আমার অনুভবে তিন প্রজন্মের মেয়েদের সামাজিক অবস্থান’ ব্যক্তিগত ভাবনার নিরিখে একটি বহুপরিচিত ভাবনার ইতস্তত প্রকাশ। ধর্মাধর্ম, নারী-পুরুষ ও স্বর্গ-নরকের প্রেক্ষাপটে একগুচ্ছ প্রশ্নের অবতারণা করেছেন ময়ূরী স্বামী তাঁর গদ্য ‘কে দেবে উত্তর’-এ। শেষ মুক্ত গদ্য দোলনচাঁপা দাসপাল-এর ‘রং যেন মোর মর্মে লাগে’। বসন্তের উপর একটি মনমাতানো লেখা।
সম্পাদক হিসেবে একই সংখ্যায় তিন-তিনটি লেখা না থাকলেই ভালো হতো যদিও পাঠক এক্ষেত্রে বঞ্চিতই হতেন এ কথা বলা যায়। ছাপাই এর মান যথাযথ হলেও কাগজের মান আশানুরূপ নয়। আটপৌরে প্রচ্ছদের সৌজন্যে সুতপা নন্দী। পরবর্তীতে কাগজ, প্রচ্ছদ এবং বাঁধাইয়ের ব্যাপারে অধিকতর মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বানান ভুলের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য যদিও কিছু রচনায় ‘কি’ এবং ‘কী’-এর ভুল প্রয়োগ রয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে বরাবরের মতোই তার উৎকৃষ্টতা ধরে রাখতে একশোভাগ সফল হয়েছে ১১২ পৃষ্ঠাযুক্ত এ সংখ্যার ‘মানবী।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
মূল্য - ৮০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪০১৩৭৭০৩০
Comments
Post a Comment