Skip to main content

দৃঢ়বন্ধন ‘শারদ অর্ঘ্য’


শতাধিক নির্বাচিত কবিতার অনবদ্য শারদ সংকলন - দৃঢ়বন্ধন ‘শারদ অর্ঘ্য’

অনেকেই কবিতা লিখেন, কবিতা পড়েন কিন্তু কবিতার গরজে প্রতি সপ্তাহে কবিদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে পত্রিকা প্রকাশ করে থাকেন - তাও নিয়মিত, বহু বছর ধরে - সেরকমটি কিন্তু সহজে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না অথচ আমাদেরবাড়ির কাছে আরশি নগরবরাক উপত্যকার হাইলাকান্দি থেকে পম্পা গুহ ঠাকুরতা এবং দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতার যৌথ সম্পাদনায় সাপ্তাহিক কবিতার অণুপত্রিকা হিসেবেদৃঢ়বন্ধনপ্রকাশিত হয়ে আসছে নিয়মিত
সম্প্রতি শারদ সংখ্যা হিসেবে দুই বাঁধাই মলাটের ভেতর মোট ১০৬টি কবিতার সমাহারে প্রকাশিত হলো দৃঢ়বন্ধন-এর ‘শারদ অর্ঘ্য’। ‘পহলে দর্শনধারী ফির গুণ বিচারি’ - শারদ অর্ঘ্য-এর প্রচ্ছদ এক নজরে প্রথমেই পাঠকের চিত্ত আকর্ষণ করে নিতে সক্ষম। ভেতরের মণিমুক্তোগুলোকে নাড়াচাড়া করার খিদে চাগিয়ে দেয়, অথচ কী আশ্চর্য, কোথাও প্রচ্ছদ শিল্পীর নামোল্লেখ নেই।
ব্যতিক্রমী এই বিশাল সম্ভারের সম্পাদনায় উপরোক্ত দুই জনের সঙ্গে রয়েছেন আরোও তিনজন স্বনামধন্য কবি - সুপ্রদীপ দত্তরায়, সুশান্ত ভট্টাচার্য এবং গোপাল চক্রবর্তী। স্বভাবতই চমৎকার একটি সম্পাদকীয় রয়েছে - যার কিয়দংশ এখানে তুলে ধরার লোভ সম্বরণ করা গেল না। - ‘ভোরের আকাশে ফুটফুটে রোদ, ফাঁকে ফাঁকে টুকরো টুকরো পেঁজা তুলোর মতো সাদা শিশু মেঘ, পায়ের তলায় ঘাসের ডগায় ছোট্ট ছোট্ট অগুনতি মুক্তোদানা, পায়ে পায়ে অসংখ্য শিউলি ফুল - কার না মনে সাধ জাগে একটা মালা গাঁথি। বাঙালি মন, কবিতার ভুবন। - - - - দু’মলাটের বই চোখের সামনে উজ্জ্বল, কাজে অকাজে আশেপাশে থেকে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সামনে দাঁড়িয়ে আদর পেতে চায়। তার পাতায় পাতায় মায়াবী গন্ধ মনে জাগায় অসংখ্য টুকরো স্মৃতি - মান, অভিমান, ভালো লাগা আর ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল। আর ঠিক এখানেই দু’মলাটের বই ই-বুক থেকে দু’কদম আগে দাঁড়িয়ে।’ - আহা কী অনুপম সম্পাদকীয়।
আরোও আছে কিছু কথা, শেষ মলাটে - ‘দৃঢ়বন্ধনের যাত্রাপথের কথা, ভাবনা ও গরজের কথা, দু’মলাটের ভেতর রঙ বেরঙের ফুলের সমারোহে ইকেবানা সাজিয়ে দিয়ে চোখ জুড়ানো রূপে তাকে উপস্থাপন করার প্রয়াসের কথা - অনবদ্য সাহিত্য সুষমায়।
বিন্যস্ত সূচিপত্রে বর্ণমালা অনুযায়ী কবিদের নাম। প্রতি পৃষ্ঠায় একটি করে কবিতা। অর্থাৎ ১০৬ পৃষ্ঠার এই সংকলন প্রকাশের ক্ষেত্রে সম্পাদকমণ্ডলীর অশেষ যত্নের পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন আঙ্গিকে। প্রথমতঃ প্রতিটি কবিতার শিরোনামের পাশেই রয়েছে কবির ছবি। দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি কবিতার প্রতিটি সারির বিন্যাস, স্থাপনা একেবারে যথাযথ। অক্ষর ও কবিতার আকার আগাগোড়া বজায় থেকেছে একই ধারায়। তাছাড়া এত বিশাল সংকলনে বানান ভুল নেই খুঁজতে হলে আতসকাঁচ হাতে নিয়েই বসতে হবে বৈকি।
কবিদের ভৌগোলিক গণ্ডির কোনও বাধা নেই এখানে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই বরাক পারের কবিদেরই আধিপত্য। কারা আছেন এই সংকলনে ? খ্যাতনামা, পরিচিত কবিদের পাশাপাশি উঠতি, নব প্রজন্মের কবিদেরও উপযুক্ত স্থান দেওয়া হয়েছে। এবং বর্ণমালা অনুযায়ী নামের আদ্যক্ষর হিসেবে সবাই নিজস্ব জায়গায় দাঁড়িয়ে। সাধু সিদ্ধান্ত। একবার চোখ বুলানো যাক কবিদের তালিকায় - অরূপরতন আচার্য, অনুপ কুমার বনিক, অয়নাভ পুরকায়স্থ, অভিজিৎ পাল, অভিজিৎ চক্রবর্তী, অভিজিৎ মিত্র, অভিষেক সেন, অনন্যা ভট্টাচার্য, আশুতোষ দাস, আফরোজা অদিতি, আদিমা মজুমদার, ইশরাত জাহান, আব্দুল মতিন খোকন, ঋতা চন্দ, ঋতুপর্ণা সোম পাল, কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী, কুন্তলা দে, ডঃ কাত্যায়নী দত্ত চৌধুরী, কাজল দেমতা, কল্যাণ দাস, কবিতা দাস, গোপাল চক্রবর্তী, গীতশ্রী ভট্টাচার্য, চন্দ্রিমা দত্ত, চন্দন ঘোষ, চান্দ্রেয়ী দেব, চৈতালি ভট্টাচার্য, চন্দ্রানী মিত্র বোস, জিতেন্দ্র নাথ, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, তপন কুমার দেব, তমাল ভট্টাচার্য, দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা, দীপাঞ্জলি চৌধুরী, দেবদত্ত চক্রবর্তী, দেবপ্রসাদ দেব, দেবাশিস সায়ন, দীপক সেনগুপ্ত, দোলনচাঁপা দাসপাল, শ্রীমতী ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ, নিরুপম শর্মা চৌধুরী, নিরুপম পাল, নন্দিতা নাথ, নবেন্দু দত্ত, পম্পা ভট্টাচার্য, পূরবী মান্না তন্নী, পূরবী দাস, পরিতোষ চন্দ্র দত্ত, পারমিতা দাস, পৌলমী পাল, পৌলমী ভৌমিক, প্রসেনজিত সেনগুপ্ত, পূরবী নাথ, পঙ্কজ কান্তি মালাকার, বর্ণশ্রী বকসী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, বৈশাখী সেন দাস, বিনয় পাল, বনানী দে, বনানী চৌধুরী, বিপ্লব গোস্বামী, বিষ্ণু চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ সোম, বিভাস মণ্ডল, বরেণ্য গোস্বামী, ভাস্কর দাস, মাণিক চক্রবর্তী, মীনাক্ষী চক্রবর্তী (সোম), মেঘমালা দে মহন্ত, মমতা চক্রবর্তী, মধুমিতা ভট্টাচার্য, মঞ্জরী হীরামণি রায়, মিনারা চৌধুরী, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য, রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য, রফি আহমেদ মজুমদার, রাজীব ঘোষ, রিয়াজ আহমদ, শম্পা দেব কানুনগো নাগ, শতদল আচার্য, শিপ্রা দাশ, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), ডঃ শমিতা ভট্টাচার্য, শ্যামলী কর ভাওয়াল, শৌভিক চ্যাটার্জী, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, শর্বরী পাল, শঙ্করী চক্রবর্তী (পুরকায়স্থ), শঙ্করী চৌধুরী, সুপ্রদীপ দত্তরায়, সুশান্ত ভট্টাচার্য, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা সেনগুপ্ত, সুস্মিতা দাস, সুস্মিতা অধিকারী, স্বাগতা হোম চৌধুরী, স্নিগ্ধা নাথ, সঞ্চয়িতা চৌধুরী, সীমা পুরকায়স্থ, সুজাতা চৌধুরী, সুব্রত পুরকায়স্থ, সুদীপ ভট্টাচার্য, সৌম্যকান্তি ভট্টাচার্য, হিমু লস্কর, হৃষিকেশ চক্রবর্তী এবং হ্যাপি নাথ।
অধিকাংশ কবিতাই কবিতাময়তায় ভরপুর। এত বিশাল সংখ্যক কবিদের কবিতায় স্বভাবতই কিছু কবিতা হয়তো প্রতিজন পাঠকের মন জয়ে ব্যর্থ হবে। কিন্তু এ তো পাঠকের ব্যাপার। কবি কিংবা সম্পাদকমণ্ডলীর দায়বদ্ধতা কিংবা গরজটুকুই কিন্তু এই সংগ্রহযোগ্য সংকলনের নির্যাস এবং সারকথা।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘দৃঢ়বন্ধন শারদ অর্ঘ্য’
মূল্য - ২০০ টাকা।
যোগাযোগ - ৯৪০১৪৩২৩২৩, ৯৪৩৫৩৭৯৭৮০

Comments

  1. খুব সুন্দর এবং সমৃদ্ধ আলোচনাটি। দৃঢ়বন্ধনের দীর্ঘায়ু কামনা করি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়