Skip to main content

দুই বরেণ্য কবির কাব্য সংকলন - ‘স্বপ্ন দেখি নিরন্তর’


অতীন দাস ও কস্তুরী হোমচৌধুরী। বরাক উপত্যকার দুই বর্ষীয়ান কবি। অসংখ্য কবিতা লিখেছেন দুজনেই। প্রকাশিত হয়েছে দুজনেরই একগুচ্ছ করে কাব্যগ্রন্থ। এই কথাটিই ৬৪ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যসংকলন ‘স্বপ্ন দেখি নিরন্তর’-এ ব্লার্বের পরিবর্তে লিখা হয়েছে চতুর্থ পৃষ্ঠায়।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে বরাকেরই আরেক খ্যাতনামা কবি দীপক হোমচৌধুরীকে এবং গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন অন্যতম বিশিষ্ট কবি, সম্পাদক অশোক বার্মা। দুই পৃষ্ঠাজোড়া ভূমিকায় তিনি এই দুই কবির জীবন, লেখালেখি তথা সাহিত্যের প্রতি নিবেদনের বিস্তৃত তথ্য নিখুঁতভাবে পরিবেশন করেছেন - ‘কবি অতীন দাসের যেমন প্রকৃতি-প্রেম, সমাজ জীবনের নিখুঁত চিত্রাদি, রাজনৈতিক ডামাডোল, অন্যায়, অত্যাচার এবং দোষ-ত্রুটির প্রতি তীক্ষ্ণ ও তীর্যকভাবে প্রহার করার প্রবৃত্তি, অকুতোভয়তা লক্ষ করা যায় তাঁর রচনায় তেমনি কস্তুরী হোমচৌধুরীর রচনায় থাকে বরেণ্য মানুষের বন্দনা, স্তুতি, মাতা-পিতা, আত্মীয়স্বজনের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও প্রেম। সকলের প্রতি তাঁর অফুরন্ত ভালোবাসার উচ্ছ্বাস।’   
গ্রন্থে উভয় কবির কবিতাকে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কবিতাসমূহের আলাদা সূচিপত্র সহ। সেই অনুযায়ী দেখা যায় কবি অতীন দাসের মোট ২৬ টি কবিতা, এর মধ্যে ৫টি ছড়া এবং কবি কস্তুরী হোমচৌধুরীর মোট ২২টি কবিতা সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে এই স্বকৃত সংকলনে। উভয় কবির কবিতা সম্পর্কে ইতোমধ্যেই সার্বিক একটি প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন ভূমিকাকার। আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাসমূহ পাঠের মাধ্যমেও সেই একই ছবি আমরা প্রত্যক্ষ করি হুবহু। আমরা কিছু অমোঘ পঙক্তিকে এখানে তুলে ধরব এই ছবির সপক্ষে।
কবি অতীন দাস অপেক্ষাকৃত স্বল্প দৈর্ঘের কবিতায় স্বচ্ছন্দ। স্বল্প কথায় প্রকাশ করেন বৃহৎ ভাবনা। তাঁর কবিতায় আছে - ‘চেনা মুখ অচেনা হয়ে যাওয়া/ খুব ভালো কথা নয়/ ধুলোঝড়ে মাঝে মাঝে ঝাপসা হলে/ সন্তর্পনে ঝাড়পোছ করার শ্রম/ ফলদায়ী হয়...’। (কবিতা - জীবন ব্রত)। কিংবা ‘যতটুকু গিলেছি সব মধু/ বিরল প্রতীতি নিয়ে উচ্চারণ/ মধুবাতা ঋতায়তে...’। (কবিতা - জীবন সত্য)। অপরদিকে কবি কস্তুরী হোমচৌধুরী অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ কবিতায় অধিকতর স্বচ্ছন্দ। ‘আমার অবারিত পৃথিবী ফিরিয়ে দাও’ কবিতায় তিনি লিখছেন - ‘যখন অজস্র আম্রমুকুলে সুশোভিত বৃক্ষ/ আমি সেই মুকুলে দেখি,/ আমার প্রিয়তমের বক্ষ...।’ (কবিতা - প্রিয়তম)। কিংবা ‘যদি আমায় মনে পড়ে। আমার কাব্যের একখানি/ কবিতা খুলে পড়ো,/ হৃদয় দিয়ে...।’ (কবিতা - যদি মনে পড়ে)।
স্পষ্ট ছাপাই ও বাঁধাইযুক্ত এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক। স্বল্প সংখ্যক কবিতায় হয়তো তৃপ্তিসুখে ভরে উঠবে না পাঠক হৃদয় তবু এই দুই বর্ষীয়ান কবির কবিতার সঙ্গে সম্যক পরিচয় গড়ে উঠবে নবীন পাঠকের এই বা কম কীসে ?

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১০০ টাকা, যোগাযোগ - অনুল্লেখিত।

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...