বিশ্বজোড়া লক্ষ কোটি মানুষের মধ্যে
আমাদের চেনা মানুষের সংখ্যা কত ? কয়েক হাজার তো অন্তত হবেই। তাদের সবাইকে নিয়ে লিখতে গেলে পৃষ্ঠাসংখ্যায়
ছাড়িয়ে যাবে বিশ্বকোষকেও যা শুধু অসম্ভবই নয়, অকল্পনীয়ও। তাই বিশ্ব সাহিত্যে পছন্দের বা অতি
আপন মানুষজনদের নিয়ে গদ্য পদ্য গ্রন্থের বহু প্রকাশ যদিও সবই সীমাবদ্ধ বিশেষ কয়েকজনকে
নিয়ে।
সুতরাং দক্ষিণ ত্রিপুরার বাইখোড়ার বাসিন্দা তথা ‘অষ্টচরণ কবিতা’খ্যাত কবি অর্ধেন্দু ভৌমিক তাঁর ‘চেনা মানুষের কথা’ শীর্ষক সদ্য প্রকাশিত গদ্য সংকলনে সন্নিবিষ্ট করেছেন তাঁর একান্ত কাছের কয়েকজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের কথা। নিখাদ সরল গদ্য। এমন একটি ভাবনা, চিন্তাধারা নিয়েও যে গ্রন্থ প্রকাশ সম্ভব সেটাই করে দেখিয়েছেন গ্রন্থকার। এ নিয়ে ভূমিকায় ‘লেখকের কথা’ শিরোনামে গ্রন্থকার লিখছেন ‘সব অনুভূতি লেখা হয়ে ওঠে না। দিনের আলোতে কতো শত শত অনুভূতি অঙ্কুরিত হয়, আবার রাতের আঁধারে গ্রাসে মুদে যায়। কর্মজীবনের, মানুষের সাহচর্যের, পার্থিব সম্পদের, ভালো লাগার, চিন্তনের, মর্ম ঘটনার অনুভূতি কলমের টানে সাদা কাগজে হয়ে ওঠে প্রকাশিত…।’
৬০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মোট ৫৪ পৃষ্ঠা
জুড়ে রয়েছে ৪৩টি অধ্যায়। প্রতিটি অধ্যায়ে সাদাকালো হলেও প্রাসঙ্গিক ছবির সমাহার গ্রন্থটিকে
করে তুলেছে নান্দনিক। অধ্যায়গুলির শ্রীগণেশ হয়েছে কবির, গ্রন্থকারের আত্মজা
নীলাভির মাধ্যমে। কন্যার জন্মদিন পালনের আড়ালে যে কথাটি তাঁর মননে বাসা বেঁধেছে
তার প্রকাশ হয় এভাবে
- … এখনকার দিনে জন্মদিনের অন্যভূতি বাচ্চারা মহানন্দে উপভোগ করে। … এক একটা জন্মদিনে
পৃথিবীর কাছে ঋণী হতে চলেছে, এটা বোঝার সময় ওরা পায় কোথায়।’ এই ভাবনার পাশাপাশি
জন্মদিনের উপহার হিসেবে কন্যার প্রতি লিখেছেন এক অষ্টচরণ কবিতা - ‘নীল অভি’ -
কোলেপিঠে সোহাগ আদরে
কাছে আসা সম্পর্ক…
প্রহর বয় শীতনদীর ধারায়
স্বর্ণালোকে বড়ো হয় আমার কলি
বুকের কোণে জমানো অব্যক্ত ভাষায়...
খোলা আকাশ আমার,
শুধু তুমি বড়ো হও
মান-অভিমানহীন পাখির মতো...
মায়াছায়াতলে কুঁড়ি থেকো চিরকাল।
দ্বিতীয় অধ্যায়টি ত্রিপুরার অন্যতম বলিষ্ঠ তরুণ কবি তথা বাইখোড়ার গর্ব অভীককুমার দেকে নিয়ে। বোধ হয় নিজের পরিবার আত্মীয়ের বাইরে সব চাইতে প্রিয়, সবচাইতে কাছের স্বজন এই অভীক। ব্যতিক্রমীভাবে তাই তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়েছে তিন তিনটি পৃষ্ঠা।
নিজের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথিবীর হতে পারে মানুষ’টি গ্রন্থকার বিভিন্ন সময়ে তুলে দিয়েছেন সুজন, স্বজন তথা দেশের প্রান্তিক এই রাজ্যের বিভিন্ন গুণীজনদের হাতে। সেসবের সচিত্র বর্ণনা রয়েছে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে। পাঠকের প্রাপ্তি সেইসব মানুষের পরিচয়। এই সূত্রে পরিচয় মেলে পঞ্চম মান ক্লাসে পাঠরতা বালিকা অদ্রিতা দেবনাথের। অদ্রিজার প্রথম গ্রন্থ ‘মিরর অব মাই মাইন্ড’ প্রকাশিত হয়েছে এই বয়সেই। মেধাবী ছাত্র, খেলাধুলায় পারদর্শী সৈকত মজুমদার (পুলিন)কে নিয়ে গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে চমকে দিয়েছেন গ্রন্থকার। মেধা এমনও হতে পারে ? মৃত্যুফেরত পুলিন ২০০৬ সালে চলনক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন কবি অর্ধেন্দু - ‘রবিশস্যের বীজের মতো মাটির চাকা ভেদ করে উদভাবনী বলে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে লাগল। বই পড়া আর লিখাতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখল। ২০১৩ ইং শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হল প্রথম ছোটগল্প ‘আত্মগোপন’। ...... তার লেখনী থেকে উঠে আসতে থাকল সৃষ্টির উল্লাস। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি সম্মেলনে ডাক আসতে লাগল... তার কবিতায়, গল্পে প্রেমের প্রাধান্য লক্ষণীয়। ‘গোধূলি বেলায়’, ‘পত্রাঘাত’, ‘অপূর্ণ প্রেম’, ‘ক্ষণিকের অতিথি’, ‘তুমি নেই তাই’, ‘তারে ভোলা যায় না’ বইগুলো সাহিত্য জগতে প্রশংসিত দলিল হিসেবে যুক্ত হয়ে গেল।’
সরল গদ্যের এই সংকলনে চেনা মানুষের পরিধি যতই কম হোক না কেন অন্তরের ভালোবাসা ও মানুষের সঙ্গে গ্রন্থকারের হৃদ্যতাই প্রকট হয়ে উঠেছে বেশি করে। আমাদের হৃদয়ে প্রতিদিন নানাভাবে এসে হাজির হয় চেনা মানুষের মুখ, তাদের সান্নিধ্যের ছবি। আবার দৈনন্দিন ব্যস্ততায় হারিয়েও যায় নিমেষে। মনে হয় সেইসব কথা যদি লিখে রাখা যেত সাজিয়ে। সেই অমোঘ কাজটিই করেছেন কবি অর্ধেন্দু ভৌমিক।
কয়েকটি বানান-বিসংগতির বাইরে উদয়পুরের জ্ঞান বীক্ষণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ছাপা ও বাঁধাইয়ের মান যথেষ্ট উন্নত। অক্ষর, শব্দবিন্যাস যথাযথ। অলংকরণ নান্দনিক। মণিকণা উপাধায়ের প্রচ্ছদও প্রাসঙ্গিক ও নান্দনিক। গ্রন্থকার গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘স্নেহের কন্যা নীলাভি ভৌমিক ও শুভানুধ্যায়ীগণকে’। সব মিলিয়ে এক ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার গদ্য সংকলন ‘চেনা মানুষের কথা’।
সুতরাং দক্ষিণ ত্রিপুরার বাইখোড়ার বাসিন্দা তথা ‘অষ্টচরণ কবিতা’খ্যাত কবি অর্ধেন্দু ভৌমিক তাঁর ‘চেনা মানুষের কথা’ শীর্ষক সদ্য প্রকাশিত গদ্য সংকলনে সন্নিবিষ্ট করেছেন তাঁর একান্ত কাছের কয়েকজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের কথা। নিখাদ সরল গদ্য। এমন একটি ভাবনা, চিন্তাধারা নিয়েও যে গ্রন্থ প্রকাশ সম্ভব সেটাই করে দেখিয়েছেন গ্রন্থকার। এ নিয়ে ভূমিকায় ‘লেখকের কথা’ শিরোনামে গ্রন্থকার লিখছেন ‘সব অনুভূতি লেখা হয়ে ওঠে না। দিনের আলোতে কতো শত শত অনুভূতি অঙ্কুরিত হয়, আবার রাতের আঁধারে গ্রাসে মুদে যায়। কর্মজীবনের, মানুষের সাহচর্যের, পার্থিব সম্পদের, ভালো লাগার, চিন্তনের, মর্ম ঘটনার অনুভূতি কলমের টানে সাদা কাগজে হয়ে ওঠে প্রকাশিত…।’
কাছে আসা সম্পর্ক…
প্রহর বয় শীতনদীর ধারায়
স্বর্ণালোকে বড়ো হয় আমার কলি
বুকের কোণে জমানো অব্যক্ত ভাষায়...
খোলা আকাশ আমার,
শুধু তুমি বড়ো হও
মান-অভিমানহীন পাখির মতো...
মায়াছায়াতলে কুঁড়ি থেকো চিরকাল।
দ্বিতীয় অধ্যায়টি ত্রিপুরার অন্যতম বলিষ্ঠ তরুণ কবি তথা বাইখোড়ার গর্ব অভীককুমার দেকে নিয়ে। বোধ হয় নিজের পরিবার আত্মীয়ের বাইরে সব চাইতে প্রিয়, সবচাইতে কাছের স্বজন এই অভীক। ব্যতিক্রমীভাবে তাই তাঁর জন্য বরাদ্দ হয়েছে তিন তিনটি পৃষ্ঠা।
নিজের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথিবীর হতে পারে মানুষ’টি গ্রন্থকার বিভিন্ন সময়ে তুলে দিয়েছেন সুজন, স্বজন তথা দেশের প্রান্তিক এই রাজ্যের বিভিন্ন গুণীজনদের হাতে। সেসবের সচিত্র বর্ণনা রয়েছে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে। পাঠকের প্রাপ্তি সেইসব মানুষের পরিচয়। এই সূত্রে পরিচয় মেলে পঞ্চম মান ক্লাসে পাঠরতা বালিকা অদ্রিতা দেবনাথের। অদ্রিজার প্রথম গ্রন্থ ‘মিরর অব মাই মাইন্ড’ প্রকাশিত হয়েছে এই বয়সেই। মেধাবী ছাত্র, খেলাধুলায় পারদর্শী সৈকত মজুমদার (পুলিন)কে নিয়ে গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে চমকে দিয়েছেন গ্রন্থকার। মেধা এমনও হতে পারে ? মৃত্যুফেরত পুলিন ২০০৬ সালে চলনক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন কবি অর্ধেন্দু - ‘রবিশস্যের বীজের মতো মাটির চাকা ভেদ করে উদভাবনী বলে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে লাগল। বই পড়া আর লিখাতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখল। ২০১৩ ইং শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হল প্রথম ছোটগল্প ‘আত্মগোপন’। ...... তার লেখনী থেকে উঠে আসতে থাকল সৃষ্টির উল্লাস। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি সম্মেলনে ডাক আসতে লাগল... তার কবিতায়, গল্পে প্রেমের প্রাধান্য লক্ষণীয়। ‘গোধূলি বেলায়’, ‘পত্রাঘাত’, ‘অপূর্ণ প্রেম’, ‘ক্ষণিকের অতিথি’, ‘তুমি নেই তাই’, ‘তারে ভোলা যায় না’ বইগুলো সাহিত্য জগতে প্রশংসিত দলিল হিসেবে যুক্ত হয়ে গেল।’
সরল গদ্যের এই সংকলনে চেনা মানুষের পরিধি যতই কম হোক না কেন অন্তরের ভালোবাসা ও মানুষের সঙ্গে গ্রন্থকারের হৃদ্যতাই প্রকট হয়ে উঠেছে বেশি করে। আমাদের হৃদয়ে প্রতিদিন নানাভাবে এসে হাজির হয় চেনা মানুষের মুখ, তাদের সান্নিধ্যের ছবি। আবার দৈনন্দিন ব্যস্ততায় হারিয়েও যায় নিমেষে। মনে হয় সেইসব কথা যদি লিখে রাখা যেত সাজিয়ে। সেই অমোঘ কাজটিই করেছেন কবি অর্ধেন্দু ভৌমিক।
কয়েকটি বানান-বিসংগতির বাইরে উদয়পুরের জ্ঞান বীক্ষণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থের ছাপা ও বাঁধাইয়ের মান যথেষ্ট উন্নত। অক্ষর, শব্দবিন্যাস যথাযথ। অলংকরণ নান্দনিক। মণিকণা উপাধায়ের প্রচ্ছদও প্রাসঙ্গিক ও নান্দনিক। গ্রন্থকার গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর ‘স্নেহের কন্যা নীলাভি ভৌমিক ও শুভানুধ্যায়ীগণকে’। সব মিলিয়ে এক ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার গদ্য সংকলন ‘চেনা মানুষের কথা’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১৭৫ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৬১৩৬৩৫১
যোগাযোগ - ৯৪৩৬১৩৬৩৫১
Comments
Post a Comment