Skip to main content

একটি সকাল - মহাবাহুর বাহুডোরে

 

বাড়ির কাছে আরশিনগর সেথা পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে
 
বিপুলা এ পৃথিবীররূপ রস গন্ধে যখন অন্তরাত্মা হয়ে ওঠে রসসিক্ত, জুড়ায় দুনয়ন - তখন মোহাবিষ্ট মননে আমরা ছুটে বেড়াই হিল্লিদিল্লি, ছুটে চলি দূর থেকে দূরান্তে কাঁড়িকাঁড়ি টাকাপয়সা খরচ করে হলেও নিয়মিত বেরিয়ে পড়ি আমরা - ভ্রমণপিয়াসী হৃদয়টাকে হাতের মুঠোয় করে আমাদেরউচাটন মন - ঘরে রয় না যুগ থেকে যুগান্তর ধরে বাহির আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে - ‘বাহির হলেম আমি আপন ভিতর হতে, নীল আকাশে পাড়ি দেব খ্যাপা হাওয়ার স্রোতে
আজ বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, অতিমারীর করাল গ্রাসে ভ্রমণপিয়াসীদের হৃদ-নিকেতন হয়েছে ছন্নছাড়া গৃহবন্দি দিনযাপনে সঘনে উথলে উঠে হৃদয়পুর মন বিদ্রোহ করলেই ভেসে আসে ওই বজ্রনির্দেশ - ‘আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে এমনি আজ কাল পরশু করে করে দিন মাস বছর গড়িয়ে যায় তবু শান্ত হয় না পৃথিবী মনের অন্দরমহলে গুমোট মেঘ এসে বাঁধে বাসা ইচ্ছেডানা ছুটে ছুটে চলে দিকে দিকান্তরে বই পড়ে আর পত্র পত্রিকায় ভ্রমণ কাহিনি পড়ে কিংবা অনলাইনে ঘোরাঘুরি করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা চলে অবিরাম কিন্তু দিনশেষে সেই একই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা - ‘তবু ভরিল না চিত্ত, ঘুরিয়া ঘুরিয়া কত তীর্থ হেরিলাম
শেষমেশ অস্থির মননে কিছু একটা করার তাগিদে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছি ভাবনায় কচিকাঁচাদের অসহ্যকর জীবনযাত্রার বেদনা আমরা বড়দেরই যেখানে দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম সেখানে বাচ্চাকাচ্চাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয় আনচান মনে ত্রাতার ভূমিকায় উদয় হলেন প্রাণের পুরুষ - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ হঠাৎ করে এসে মনে পড়লো সেই অবিস্মরণীয় লাইন দুটি - ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু -ডুবন্ত যাত্রীর খড়কুটোর মতো একটি আশার আলো যেন দেখা যেতে লাগলো তিরতির করে খুশির বেনোজল যেন ভিজিয়ে দিচ্ছে সারা অঙ্গ যেমন ভাবা তেমনি শুরু হলো খোঁজখবর কোথায় আছে সেই আরিশিনগর - যেখানে ভোরের সূর্য এসে ধানের শিষে সৃষ্টি করে জাগতিক চিত্রকল্প ? ভরসা সেই নব প্রজন্মের সবজান্তা - গুগল খোঁজাখুজি করতেও বেরিয়ে এলো কিছু তথ্য চমকে দেওয়ারই মতো এক নয়, একাধিক আরশি নগরের সুলুক ততক্ষণে হাতের মুঠোয় সেখান থেকে বেছে নেওয়া হলো প্রাথমিক ভাবে একটি স্থান রাত পোহালেই রোববার সবাই তৈরি হাঙ্গামার জন্য এত এত দিন পর একটু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আয়োজন হোক না অতিমারীর বিরুদ্ধে সরকারি বিধি নিষেধ সব মেনেও তো হতেই পারে হুল্লোড়
কিশোর কিশোরী, যুবক যুবতী মিলিয়ে ছোটদের দলে মোট পাঁচটি প্রাণী বড়রাও পাঁচজন সব মিলিয়ে দশজনের দল সেজেগুজে তৈরি হয়ে বেরোতে বেরোতে সকাল দশটা তিনটি গাড়ি করে শেষমেশ বেরোনো গেল গন্তব্য গুয়াহাটি মহানগরের কেন্দ্রস্থল থেকে বিশ কিলোমিটার দূর ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত তামোলবাড়ি শিব মন্দির ও সংলগ্ন বেলাভূমি এহেন দিনেও ব্যস্ত মহানগরের যানজট ভেদ করে ছয় মাইল, নারেঙ্গী মুখ হয়ে তিনটি গাড়ি ছুটে চলে চন্দ্রপুর রোড ধরে গন্তব্যের পথে স্বল্পকালীন যাত্রাপথ দুর্ভোগের দিনে সরেজমিনে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাও যেহেতু নেই তাই খুব বেশি সময় যে কাটানো যাবে না তাও আগেভাগেই জানা সদ্য নির্মিত চন্দ্রপুর রোড এখন পর্যটকদের সঘন আনাগোণার পথ পথের ধারের দৃশ্যাবলিও নয়ন জুড়ানো সাধারণতঃ স্থানীয় অধিবাসীদের তা চোখে পড়ে না কিন্তু আমি যতবার সফরে যাই ওই রাস্তাটি ধরে ততবারই মোহিত হয়ে যাই দুপাশের নয়নলোভন দৃশ্যাবলি দেখে প্রাকৃতিক ভারতবর্ষের যেন একটি মিনি রেপ্লিকা পানিখাইতি রেল ক্রসিং পেরোলেই ডাইনে অনতিউচ্চ পাহাড়ের শীর্ষে ভাগ্য সদয় থাকলে শীতে কিংবা বর্ষা বাদলের দিনে দেখা মিলতেও পারে মেঘেদের এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য বাঁয়ে ধানের ক্ষেতের চোখ জুড়ানো সবুজিমা কিংবা সোনালিমা আজ বেশি সময় এই সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় পাওয়া গেল না আধঘন্টার মধ্যেই গাড়ি চন্দ্রপুর রোড থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো মহাবাহুর উদ্দেশে কংক্রিটের ব্লক বসানো এই রাস্তায় এক কিলোমিটার রাস্তা এগিয়ে আসতেই পৌঁছে গেলাম রাস্তার শেষটায় এইখানটায় দেখতে পাওয়া গেল আরোও তিন চারটে গাড়ি ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছে গেছে আমাদের তিনটি গাড়িও অপ্রশস্ত পার্কিং-এ দাঁড় করিয়ে সবাই নেমে এলাম একে একে এখানে ছোট্ট একটা পান দোকান দেখতে পেলাম শুধু আর জনাকয়েক স্থানীয় মানুষ এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে পেলাম সরু একটি গলির মতো রাস্তা চলে গেছে খানিকটা সামনে আমাদেরই মতো কিছু ভ্রমণপিয়াসীদের দেখলাম এদিক ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইতস্ততঃ ঘোরাঘুরি করছেন সরু রাস্তাটি ধরে এগোতেই সামনে নজরে পড়লো একটি সাইনবোর্ড - Brahmaputra Calling. বাঁদিকে একটি রিসর্টের হদিশ, কিন্তু বন্ধ হয়ে আছে বর্তমানে একটি বিশাল পার্কিং এরিয়াও নজরে এলো অর্থাৎ সাধারণ সময়ে এটি এক জমজমাট পর্যটনের স্থান কিন্তু বর্তমানে কোভিড কালে বলতে গেলে এক ভূতুড়ে স্থানে পর্যবসিত হয়ে আছে বিধ্বস্ত পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি বিধ্বস্ত অর্থনীতিরও এক করুণ দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়ে গেল অন্তর
সরু রাস্তাটি দিয়ে বড়জোর পঞ্চাশ পা এগোতেই হঠাৎ করে সামনে যেন সমুদ্র সৈকত সেই শৈশব থেকেই নদী আমাকে কাছে টানে অবিরত সামনেই বিশাল ব্রহ্মপুত্রকে দেখে তাই অভিভূত হয়ে গেছি আনন্দে দিশেহারা হওয়ার ঠিক সেই মুহূর্তেই ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি সবাই আমাকে ডাকছে ফিরে এলাম মনক্ষুণ্ণ হয়ে জানলাম যেখানটায় গাড়িগুলো সব পার্কিং করা আছে সেখান থেকে ডাইনে টিলার ঢাল বেয়ে যে পায়ে হাঁটা পথ চলেছে সেদিকেই নাকি তামোলবাড়ি শিব মন্দির তো সবাই চাইছে প্রথমে শিবমন্দির পরিদর্শন করে তার পর এদিকটায় আসা যাবে তীর্থময় ভারতবর্ষের এক ক্ষুদ্র রেপ্লিকা যেন এই অখ্যাত গ্রামের অসংরক্ষিত পর্যটনস্থান আর আমরা সবাই ধর্মপ্রাণ ভারতবাসীর এক এক জন স্থানীয় প্রতিভূ এমনিতেও গুগল ম্যাপে এই শিব মন্দিরের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই চমকপ্রদ তাই এমনিতেই আমার একটা আকর্ষণ ছিল সুতরাং আরোও কিছু ভিন্ন বয়সের পর্যটকের সঙে সঙে আমরা দশজনও এগোতে থাকলাম এক চিলতে ওই পথটি ধরে বড়জোর তিনশো মিটার হবে টিলাটিকে চক্রাকারে ঘুরে সেই পদপথটি যেন সটান হাজির হয়েছে বিশাল মহাবাহুর বুকে নদীস্তর থেকে প্রায় তিরিশ মিটার উঁচুতে স্থলভাগের শেষ প্রান্তে একটি অতি সাধারণ শিব মন্দির মেঝেতে টাইলস লাগানো থাকলেও পরিচর্যার কোনও চিহ্ন নজরে এলো না আমার দুচোখ জুড়ে তখন শুধু ব্রহ্মপুত্রের বিশাল সৌন্দর্য মন্দিরের ঠিক পেছনে সামান্য এক টুকরো মাটি - বেশি হলে পাঁচ বাই পাঁচ মিটার হবে সেই ঠাইটিই স্থলভাগের শেষ বিন্দু সেখানেই গাদাগাদি করে দুই চোখে প্রকৃতির অপার মায়াময় মোহে সবাই যেন মোহিত হয়ে আছে সামনে নিচেই মহাবাহুর জলধারা একটু দূরেই এক টুকরো স্থল্ভাগ যেন ছোট্ট একটি টিলার মতো জেগে রয়েছে তার বুকে একটি বড় গাছও দাঁড়িয়ে আছে জলধারার সাক্ষী হয়ে এখান থেকে অপূর্ব লাগছে সেই দৃশ্য ছবি তোলার হিড়িক লেগেছে
কিন্তু এই এক চিলতে উঁচু স্থান থেকে ফিরে আসতে রাজি নয় কেউ বিশেষ করে বাচ্চারা তাই সেই উঁচু স্থানের গা বেয়ে ঘুরপথে সবাই চলে এলাম নিচে একেবারে মহাবাহুর হাতের নাগালে আমার সারা অন্তরাত্মা জুড়ে যেন সহস্র প্রদীপের আলোর মতো আনন্দধারা হাতের কাছে ব্রহ্মপুত্রের বিশালতাকে উপলব্ধি করতে পেরে, একটু হাতের ছোঁয়ায় তার বহমান জলরাশিকে স্পর্শ করতে পেরে হৃদয়পুরে আমার এক নদী সুখ উপরে বিশাল আকাশ আর পাশেই অনন্ত প্রবাহিত জলধারায় আমি ততক্ষণে পৌঁছে গেছি কোনও এক কল্পিত স্বর্গরাজ্যে জলের উপরের একটি পাথরে বসে অনেকক্ষণ ধরে বুকে জড়িয়ে রাখলাম সেই অপরূপ স্বর্গীয় শোভাকে মন চাইছিল না উঠে আসি সেই অপার্থিব আসনটি ছেড়ে উজান ভাটি স্পষ্ট দৃশ্যমান সেখান থেকে এক পাশে একটি জলধারা ঢুকে গেছে খানিকটা ভেতরে সেদিকটা ঘুরে জলরাশি যেন দেবাদিদেব দর্শন সেরে কিছু ছড়ানো ছিটানো পাথরের গা ঘেঁষে মহানন্দে আছড়ে এসে পড়ছে আবার নিজের চলার পথে আমি অবাক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে রই
ঘোর কাটতেই দেখি সবাই ফেরার উদ্যোগ নিয়েছে বাধ্য হয়েই ঘুরে দাঁড়াই পার্থিব পথের দিশায় আবার সেই টিলার গায়ে গায়ে ঘুরন্ত পথ ধরে সবাই ফিরে আসি পার্কিং স্থানে ভীষণ ইচ্ছে করছিল এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে কিন্তু সে উপায় নেই মহাকাল এসে বন্ধ করে রেখেছে মানুষের মুখ তাই এবার সেই ছোট্ট গলিটি পেরিয়েই সোজা নদী সৈকতে ওপারের গাছপালাগুলোকে বাদ দিলে অবিকল সমুদ্র সৈকত তবে অন্তত নদীর বুকে অন্তত একশো মিটার দূর অবধি শুধুই হাঁটুজল এখানে দেখতে পেলাম স্থানীয় কিছু শিশু বালক আপন খুশিতে মত্ত হয়ে জলকেলি করছে বহু সময় ধরে আজকের করাল সময়ে বোধ করি এই তাদের বিনোদন কিংবা এই হয়তো তাদের জীবনের মহাসঙ্গীত - মহাবাহুর চিরসাথী
এদিক ওদিক মিলিয়ে অন্তত এক কিলোমিটার দূরত্ব এখানে দৃশ্যমান পেছনের দিকটায় সেই শিব মন্দির সংলগ্ন ছোট টিলাটি দেখা যায় স্পষ্ট দাঁড়িয়ে আছে মহীরুহকে বুকে নিয়ে - যেন দূর দেশ থেকে আগত বিস্মিত পর্যটককে পথ চিনিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে মহাবাহুর মায়ায় আবদ্ধ করে নিতে
ভাবছিলাম সাধারণ সময়ে এখানে তো নিত্য বসে বনভোজনের আসর প্রতিদিন ভুলুণ্ঠিত হয় নতীতটের সৌন্দর্য আজ এতদিন ধরে এসব বন্ধ থাকা সত্ত্বেও এদিক ওদিক তাকালেই নজরে আসে পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থ মানুষের এই অত্যাচারের বদলা নিতেই কি প্রকৃতি আজ এত হিংস্র ?
সময় ফুরিয়ে এলো এক সময় মহাবাহুকে বিদায় জানিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে আসার রাস্তায় পা বাড়ালাম      
- - - - - - - - - - - -

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়