Skip to main content

আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্য চর্চার উৎকৃষ্ট নিদর্শন শারদীয় সংখ্যা - ‘জড়র টানে’


পত্রিকাটি হাতে নিলেই কেমন একটা টান অনুভূত হয়। প্রথমত মানস ভট্টাচার্যের চমৎকার একটি অ্যাবস্ট্র্যাক্ট চিত্র সম্বলিত প্রচ্ছদ এবং প্রাসঙ্গিক নামলিপি। এরপর পাতা ওল্টালেই অনবদ্য একটি সম্পাদকীয় পৃষ্ঠা। আধাআধি ভাগ করে নেওয়া পৃষ্ঠার একদিকে রয়েছে আকর্ষণীয় এবং আবেদনময় সম্পাদকীয় যেখানে সম্পাদক শমীক চৌধুরী (রোমেল) সবটুকু বলে নিয়েছেন স্বল্প কথায়, গুছিয়ে। অপর অর্ধে পত্রিকার ছবি এবং একটি উদ্ধৃতি - “ইবারর সংখ্যাত আছে - নানান স্বাদের গল্প (ভূতের গল্পও আছে), ঘুরাফিরার গল্প, বিজ্ঞানর সূত্র লইয়া কেরামতির গল্প, জমাখরচ নিয়া নিবন্ধ, ছড়া আর কবিতা। আছে আমরার সবের প্রিয় ‘সাহায্যের হাত’ নিয়া অনুভবের কথা”। এ উদ্ধৃতি যেন মূল খাদ্যের আগের ক্ষুধাবর্ধক স্টার্টার (আচমন)। খাবার স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়।
সর্বভারতীয় সিলেটি ফোরামের ৫ম সংখ্যা পত্রিকা ‘জড়র টানে’ এবার শারদীয় সংখ্যা হিসেবে ছাপা হয়ে বেরোল পুজোর আগেই। ব্যতিক্রমী নিঃসন্দেহে - যেহেতু পুরোটাই সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত। কোথাও ব্যত্যয় নেই। তা বলে শুধু যে ভাষা বৈচিত্রই সব কিছু এমন নয় মোটেও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি সব মিলিয়ে এক জমজমাট পত্রিকা। এগনো যাক সূচিপত্র অনুযায়ী। কবিতা ও ছড়া লিখেছেন দীপংকর শীল, শ্যামল কান্তি দত্ত, দেবযানী ভট্টাচার্য, প্রণব কুমার ভট্টাচার্য, বন্দনা ভট্টাচার্য, হিমাংশু দাস, মনোজিত দেব, জবা ভট্টাচার্য, দেবাশিস চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, মধুপা ভট্টাচার্য এবং রাজেশ দাস।
আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। লিখতে গিয়ে অনবধানতায় এসে পড়ে মান্য বাংলা ছন্দ। গদ্য এবং পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে অনেক জায়গায়। সংশ্লিষ্ট রচনাকাররা এবং সম্পাদকও ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আরোও বেশি সচেতন হবেন নিশ্চিত। বেশ কিছু রচনা পড়লে এমনটা মনে হয় যেন প্রথমে মান্য বাংলাতেই লিখা হয়েছে এবং পরে সিলেটিতে অনুবাদ করা হয়েছে। সরাসরি আঞ্চলিক ভাষায় রচনা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলেই হয়ত অনেকে এমন করেছেন। কিন্তু অনুবাদে সেই ছাপ থেকে যায় - অগোচরে। তাই এই পদ্ধতি পরিহারযোগ্য। সরাসরি আঞ্চলিক ভাষায় লিখলেই মৌলিকত্ব ফুটে ওঠে রচনায়।
কবিতা বিভাগ, গদ্য বিভাগের চাইতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল যদিও কিছু চমৎকার কবিতাও রয়েছে। দেবাশিস চক্রবর্তী, বন্দনা ভট্টাচার্য এবং সুশান্তমোহন ভট্টাচার্যের কবিতা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। মনোজিত দেব-এর ‘সিলেটি মনসা মঙ্গল’ এক কথায় অনবদ্য।
“চান্দে হঠাৎ শুনইন, লক্ষিন্দরে তানরে ডাকের,
বেহুলারে লগে লইয়া, বাড়ির উঠানো পাও রাখের;
চান্দর হয় না বিশ্বাস, কইন ইতা সম্ভব হইলো কিলা ?
বেহুলায় লইলা, ‘ইতা সব মা মনসার লীলা’।
চান্দে রাগে কইলা, ‘ই বেটির নামও লইয়ো না’,
বেহুলায় কইলা, ‘বাবা দুহাই আপনার, তানরে ইতা কইয়ো না’;
পাও ধরিয়া শ্বশুরর, বেহুলায় যখন কান্দে,
জিদ পারে না ধরিয়া রাখতে, শক্ত মনর চান্দে।
কৃষ্ণা একাদশীত, চান্দুয়ার নীচে, মনসা মূর্তিরূপে বইলা,
মুখ ঘুরাইয়া চান্দে, বাম হাত দিয়া পিছ দিকে, ফুল দুইটা থইলা;
মনসা হইলা খুশি, একজন দেবীর সম্মান পাইয়া,
চান্দর আগর ছয় পুয়াইনও আইলা, সব হারানি সম্পত্তি লইয়া। ……
হিমাংশু দাস-এর পরিবেশ বিষয়ক কবিতা ‘পৃথিবীর রাগ উঠছে’ও সুলিখিত কবিতা -
“কতো জাতর পশুপাখি মারিয়া করছইন শেষ,
উচিৎ মাতলে চেতো ধরে লাগি যায় বিদ্বেষ।
ই রঙ্গে দিন যাইতো নায় যেলা কররায় বধ,
এমনে চললে সামনে আছে ভয়ঙ্কর বিপদ”।
৭২ লাইনের দীর্ঘ এ কবিতায় একটি চমৎকার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মোট সাতটি গল্প - লিখেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, পঙ্কজ কর, মনোমোহন মিশ্র, পম্পা ভট্টাচার্য, অজন্তা মৈত্র, অনুপম দাস এবং রামময় ভট্টাচার্য। অজন্তা মৈত্রের গল্পকে অণুগল্পও বলা যায়। সুখপাঠ্য রচনা। প্রতিটি গল্পই বুনোটে, বিষয় বৈচিত্রে অনুপম। আলাদা করে নামোল্লেখ উচিৎ হবে না। তবে মনোমোহন মিশ্রের গল্প ‘ঠেলানাও’-এ কারুণ্যের আবহে হাস্যরসের সংমিশ্রণের ব্যাপারটা একেবারেই ব্যতিক্রমী। অনুপম এবং রামময়ও অনবদ্য।
৬০ পৃষ্ঠার এই শারদ সংখ্যায় প্রবন্ধ, অণুপ্রবন্ধ, আত্মকথামূলক নিবন্ধ ইত্যাদি সব মিলিয়ে আছে ১৩ টি রচনা। এর মধ্যে মিষ্টি দে ও করবী ভট্টাচার্য বাগচীর লিখা দু’টি ভ্রমণ কাহিনি। সম্ভবত পরিসরের কথা চিন্তা করেই উভয় ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেনি রচনাদু’টি। আরোও একটু বিস্তৃতির দাবি রাখে উভয় রচনাই। পৃষ্ঠাসংখ্যা আরোও একটু বাড়ানো যেত। তাহলে অক্ষর মাপ আরেকটু বড় হতো। ফন্ট সাইজ ছোট হওয়ায় পড়তে পড়তে লাইনের খেই হারিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটত না। প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখনে যাঁরা কলম ধরেছেন -
সুশিত দাস চৌধুরী লিখেছেন আত্মকথামূলক একটি ঘটনা, সুপ্রিয় পালের রম্য রচনার ভালো প্রয়াস, প্রসেনজিৎ ধর লিখেছেন ‘আমার ইস্কুল জীবন’। অতনু নাথ দীর্ঘ নিবন্ধে গল্পের ছলে সাজিয়েছেন বিজ্ঞানের গল্প। প্রসেনজিৎ দাসের পরিবেশ নিয়ে নিবন্ধ সময়োপযোগী। সুপর্ণা চক্রবর্তী ঝরঝরে ভাষায় লিখেছেন খুবই স্পষ্ট এবং মূল্যবান একটি নিবন্ধ ‘জ্ঞানরত্নাকরস্বরূপ বেদ উপনিষদ গীতা এক অবতরণিকা’। জয়ন্ত চৌধুরী লিখেছেন ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি রক্ষা আন্দোলনের অগ্রণী সেনানী স্বর্গীয় নলিনীকান্ত দাস-এর উপর একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ যা আরোও বিস্তৃতির দাবি রাখে। প্রিয়তনু গোস্বামী অর্থ সঞ্চয়ের বিভিন্ন সুলুক সন্ধান দিয়েছেন তাঁর সংক্ষিপ্ত রচনা ‘টেকা-পয়সা কই রাখতা, কেমনে রাখতা’তে। সেবিকা দাসের ‘মকা মাছের পাতুরি’র রেসিপিতে সামগ্রীর পরিমাণের উল্লেখ থাকলে পাঠকের হেঁসেলে সুবিধে হতো।
ভেতরের শেষ প্রচ্ছদে রত্নদীপ দাশ-এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই ফোরামের অন্যতম শাখা ‘সাহায্যের হাত’ এর ব্যাপারে বিশদে লিখেছেন অপর্ণা পাল, যা ফোরামের এক লোকহিতকর প্রয়াস। ফোরামের এ ধরণের প্রয়াসের এক বিস্তৃত প্রতিবেদন এখানে সন্নিবিষ্ট করা যেত। সম্পাদক শমীক চৌধুরী তাঁর ধারাবাহিক রচনা ‘বদ্রীনাথের পথে পঞ্চপ্রয়াগ’ এর শেষাংশ লিপিবিদ্ধ করেছেন। সম্পাদকের কলম থেকে সম্পাদকীয়ের বাইরেও অন্তত একটি রচনা কাম্য ছিল।
সব মিলিয়ে এক কমপ্লিট প্যাকেজ যেন এই শারদীয় সংখ্যা। ফন্ট সাইজের ক্ষুদ্রতার বাইরে অমর রায়ের অক্ষর বিন্যাস এবং করিমগঞ্জের শ্রীদুর্গা প্রেস-এর মুদ্রণ ও অঙ্গসজ্জা যথাযথ। নামকরণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কিছু উল্লেখযোগ্য সিলেটি শব্দ পাওয়া যায় বিভিন্ন রচনায় যা উল্লেখের দাবি রাখে। যেমন - বিকিরতামি, লেটাইভক্ত, পাকাইতাম, লাব্দালুব্দা, মাড়ইল, চন্না, মতিন, ডাট্টা, সলই, আন্দু, আরেক-আরা, বেনালে, কুদাম ইত্যাদি। এ ধরণের উদ্যোগ আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্য চর্চাকে উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করে একে বাঁচিয়ে রাখার যে প্রয়াস করে তা অনস্বীকার্য এবং সাধুবাদের উপযুক্ত তথা ধন্যবাদার্হ।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘জড়র টানে’
প্রকাশক - সর্বভারতীয় সিলেটি ফোরাম
সম্পাদক - শমীক চৌধুরী (রোমেল)
মূল্য - ১৫০ টাকা।
যোগাযোগ - ৮১৩৩৯৫১৫২২, ৯১০১৫৫৩১৭৯

Comments

  1. শারদীয় সংকলনটি না পড়লেও, পাঠপ্রতিক্রিয়ার ঋদ্ধ আলোচনায় সামগ্রিক বিষয়ে আংশিক পাঠ নেওয়া অনেকখানি হয়ে গেছে বলতে পারি। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে চাই, আমার এক বিদগ্ধ বন্ধু সিলটিতে অতি সংক্ষিপ্তভাবে মহাভারত রচনা করেছেন। সুযোগ পেলে তাঁর রচনাশৈলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এখানে কমেন্টগুলো আসে কিন্তু প্রেরকের নাম আসে না। তাই আপনার পরিচয় আমার কাছে অধরা। তবু আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। এবং একটি অনুরোধ - এই সিলেটি মহাভারতের ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনুগ্রহ করে আমার হোয়াটসএপ নম্বর 9435598718 এ যোগাযোগ করার জন্য বিনম্র অনুরোধ করছি।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়