Skip to main content

‘বরাক নন্দিনী’র ২২তম কৃষ্ণচূড়া উৎসব সংখ্যা - ২০২২ প্রকাশিত


বার্ষিক পত্রিকা স্বভাবতই গায়ে গতরে ডাগর হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং হয়েছেও তাই A4 সাইজের ঢাউস আয়তনের বিজ্ঞাপন আদি নিয়ে একশো পৃষ্ঠার পত্রিকা বরাক উপত্যকা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের ২২তম কৃষ্ণচূড়া উৎসব সংখ্যা প্রকাশ কাল জুন ২০২২ প্রচ্ছদ পরিকল্পনা এবং সম্পাদনায় পাঠচক্রের করিমগঞ্জ শাখার সহ সম্পাদক বনানী চৌধুরী প্রথমেই চমৎকার লেখার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা রয়েছে ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে পাঠচক্রের কেন্দ্রীয় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা রিজিয়ার তরফ থেকে পরবর্তী সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন শিলিগুড়ি ফুলেশ্বরী নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সভাপতি সুহাস বসু
দুপৃষ্ঠা জোড়া সূচিপত্রের পর আছে দুপৃষ্ঠা জোড়া সম্পাদকীয় বহু কথা আছে এই সম্পাদকীয়তে - নন্দিনীদের নিয়ে, শাখা নিয়ে, বার্ষিক মুখপত্র নিয়ে এবং অতিমারি সময়ের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে নন্দিনীদের স্বমহিমায় ফিরে আসার কথা নন্দিনী সম্পর্কিত বহু গুণী ব্যক্তিদের ইহলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুরুতেই রয়েছে আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি সদ্য প্রয়াত কবি, প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর একটি অপ্রকাশিত কবিতা পত্রিকাটির মান বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ করিমগঞ্জ শাখার প্রাণবন্ত সদস্য নিবেদিতা মুখার্জির অকাল প্রয়াণে তাঁকে নিয়েই কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন কার্যকরী সদস্য তথা মাতৃ - কবি গীতা মুখার্জি
প্রেম ও ভালোবাসা বিলিয়ে গেছে 
কবিতা ও গানে হৃদয় ভরিয়েছে
ভ্রাতৃত্বের বার্তা, শান্তির বার্তা
ছড়িয়ে দিত তার গান ও কবিতা
আর কোনদিনও কথা বলবে না
আমার মণিমালা মা নিবেদিতাঅত্যন্ত মর্মান্তিক এই শ্রদ্ধাঞ্জলি
প্রচ্ছদকথায় স্মরণ করা হয়েছে পূর্বমাতৃকাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী অগ্নিকন্যা বিলঙ্গময়ী করকে নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ নজরকাড়া নিঃসন্দেহে এবং প্রাসঙ্গিক ও যথার্থ নিবেদনও এরপর কৃষ্ণচূড়া উৎসব উপলক্ষে শাখা সদস্যদের প্রাপ্ত বিভিন্ন সম্মাননার সচিত্র খবরাখবরের পর মুখ্য উপদেষ্টা পরিতোষ পালচৌধুরী লিপিবদ্ধ করেছেন নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র সম্পর্কে অতীতের পৃষ্ঠা থেকেদু-চারটি কথা ২৭ তম পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে লেখালেখির পালা
সংক্ষিপ্ত বয়ানে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে তথ্যবহুল সুরম্য নিবন্ধ লিখেছেন গীতা সাহা। আছে নারীমুক্তি নিয়ে ঝরঝরে ভাষায় শতরূপা ভট্টাচার্যের একটি নিবন্ধও। প্রাবন্ধিক, গবেষক সুশান্ত কর লিখেছেন - ‘ডিব্রুগড়-তিনসুকিয়া জেলার ছোট কাগজের অতি সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত’। সাড়ে চার পৃষ্ঠার এই ‘অতি সংক্ষিপ্ত’ ইতিবৃত্ত নিঃসন্দেহে এক সংগ্রহযোগ্য দলিল। ‘আমার জীবনের বাস্তব ঘটনা’ শিরোনামে এক পৃষ্ঠার স্মৃতিচারণা লিখেছেন স্বর্ণালী দত্ত। বাস্তব পরাবাস্তবের মিশেলে সুলিখিত গদ্য কিন্তু একগাদা বানান ভুল এর গরিমা হনন করেছে নিশ্চিত। আছে মুক্তি দাস-এরও একটি স্মৃতিচারণামূলক নিবন্ধ। বরাকের গর্ব শনবিলের উপর প্রতিমা শুক্লবৈদ্যের ভ্রমণ বিষয়ক গদ্য যথাযথ এবং সুলিখিত। এখানেও বানান/ছাপার ভুল রয়ে গেছে প্রচুর।
নারী দিবসের প্রেক্ষাপটে লোকগাথার উল্লেখে দেবযানী ভট্টাচার্যের গল্প যথেষ্ট সুপাঠ্য। তবে আরোও খানিকটা বিস্তৃতির প্রয়োজন ছিল। মঞ্জরী হীরামণি রায় তাঁর গল্পে স্বভাবসিদ্ধ লিখনশৈলীতে কাঁটাছেড়া করেছেন নারী-পুরুষের সম্পর্কের ধরণকে। এক সুপাঠ্য মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণও বটে তাঁর বড় গল্প ‘দ্বিতীয় বাঁক’। শর্মিলী দেব কানুনগোর গল্প ‘মুক্তির আলো’। কাহিনি ও বুনোটে অসাধারণ একটি গল্প। সুখপাঠ্য, ব্যতিক্রমী। এরপর ভাষা ও বিষয়ের উৎকৃষ্ট মেলবন্ধনে একটি আত্মকথা পর্যায়ের গল্প - অনন্দিতা চক্রবর্তীর ‘জীবন রূপকথা’। শেষটা যেন কিছু অগোছালো হয়ে পড়েছে মূলত এখানেও একগাদা বানান/ছাপার ভুলের জন্য। শিবানী গুপ্তের ‘গৌরীবালার নকশিকাঁথা’ গল্পচ্ছলে এক আবেগময় গদ্য। মানবজীবনের ধারাবাহিকতার কথা। আছে লীনা নাথের একটি মানবিক অণুগল্প ‘একান্ত আপন’। প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যের চুটকি সম্ভবত যতি চিহ্ন ঘটিত দোষে অবোধ্য ঠেকেছে এবং পত্রিকার মানের সঙ্গে খাপ খায়নি তাই।
শুক্লা চন্দের অণুগল্প বর্ণনানির্ভর। প্লট ভালো ছিল। একটি গল্প হয়ে উঠতে পারত। ‘খুশি’ এবং ‘বাড়ি’ শব্দ দু’টি আদ্যন্ত ভুল।
কবিতার বিভাগ বিশাল। যাঁদের কবিতা বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে তাঁরা হলেন - চন্দ্রিমা দত্ত, কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য, ডঃ মীনা মুখার্জী, স্মৃতি দাস, মমতা চক্রবর্তী, অখিল চন্দ্র পাল, কুন্তলা দে, কণিকা দাস, অভিজিৎ পাল, সুপ্রদীপ দত্তরায়, বন্দনা সেনগুপ্ত, সুদীপ ভট্টাচার্য। নারী বিষয়ক কবিতা লিখেছেন সুলতানা রিজিয়া, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ্তা বিশ্বাস, জয়শ্রী কর, ছন্দা দাম এবং বনানী চৌধুরী। এছাড়াও যাঁরা কবিতা লিখেছেন তাঁরা হলেন বরুণ চক্রবর্তী, কমললতা নূর, মিনতি রাণী রায়, গৌতম চৌধুরী, কস্তুরী হোম চৌধুরী, জয়ন্তী নাথ, শ্রাবণী সরকার, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, প্রতিমা পাল, সুরঞ্জনা ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা রাণী চন্দ, জয়া ভাওয়াল, সুদেষ্ণা সিনহা, পুস্পিতা নাথ, চান্দ্রেয়ী দেব, সুমিতা দাস গোস্বামী, টিংকু রায় এবং পিয়ালি ঘোষ চৌধুরী।
প্রথম প্রচ্ছদের মতোই শেষ প্রচ্ছদও হয়েছে আকর্ষণীয়। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে লিপিবদ্ধ হয়েছে বীর সেনানীদের প্রতি বরাক নন্দিনী পরিবারের সশ্রদ্ধ নমন। পত্রিকা মূল্য বিস্ময়কর ভাবে ন্যূনতম। ছাপাই স্পষ্ট। এক কথায় এক বিশাল আয়োজন এবারের এই সংখ্যাটি। স্বভাবতই একশো ভাগ ত্রুটিমুক্ত হওয়া অসম্ভব। পরবর্তীতে বানানের ব্যাপারটাতে আরোও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া প্রবন্ধ বিভাগেও একাধিক মানসম্পন্ন লেখা সন্নিবিষ্ট করতে হবে। নন্দিনীদের এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বরাকের তথা এই সমগ্র উত্তর পূর্বের সাহিত্যাকাশে নিঃসন্দেহে এক অমূল্য সংযোজন।

- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

‘বরাক নন্দিনী’
সম্পাদক - বনানী চৌধুরী
মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৭৬৭৬৩২৫১

Comments

  1. Ami patok hothe chai doya kore janaben... transportation charges dibo

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেখার নীচে ফোন নম্বর দেওয়া আছে। যোগাযোগ করুন।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...