Skip to main content

হালিচারা - কথা অমৃত সমান


একটি গ্রন্থের এত যে সার্থক নামাকরণ হতে পারে তা হাতে না এলে বুঝে ওঠা মুশকিল। হালিচারার কথাই বলছি। গল্পকার মঞ্জরী হীরামণি রায়-এর হালিচারা। সাড়ে চার বাই সাত ইঞ্চি সাইজের গল্পগ্রন্থ। অনায়াসে পাঞ্জাবির পকেটে পুরে হেঁটে চলা যায়। প্রথম যখন হাতে এলো স্বাভাবিক ভাবেই নজর কাড়েনি এই পুচকে সম্ভার। পেহলে দর্শনধারী ফির গুণ বিচারিগায়ে গতরে নাদুসনুদুস নাহলে কি আর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ? তাই হলো। পড়ে রইল অনাদরে বহুদিন। মাঝে যা এলো হাতে, সব পড়া হয়ে গেল এক এক করে। এবার নিতান্তই দায়সারা উৎসাহে হাতে নিয়েছি হালিচারাআর এর পরেই নাওয়া খাওয়া ভুলে যেন নেশায় পেয়ে বসেছে। উরিব্বাস !! এ কী পড়ছি ? থামতেই পারছি না যে। বলতে গেলে প্রায় এক নিঃশ্বাসেই সাবাড় ১০২ পৃষ্ঠা জোড়া ১২ টি অসাধারণ গল্প।

হালিচারা অর্থে - ফসলের জন্মভূমি। বেঁচে থাকার রসদের শৈশব থেকে বাল্যকালের রম্যভূমি। আকারে হালিচারাতাই সত্যিকার অর্থেই হালিচারা। কিন্তু এই আপাত পুস্তিকার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে আয়াসলব্ধ ফসলের যাবতীয় উপাদান।

কথা বিকল্প পরিবার-এর সৌজন্যে এবং সাহিত্যিক বিজয়া করসোম-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত এই গল্পগ্রন্থে রয়েছে একের পর এক মোট বারোটি অনবদ্য ছোটগল্প। টানটান বুনোটে, বাস্তবতার একেবারে গভীরে প্রবেশ করে সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে গল্পকার মঞ্জরী রায় প্রথম প্রয়াসেই গেঁথে রাখলেন অনবদ্য দক্ষতায় - চিনিয়ে দিলেন জাত। অনবদ্য সূচনা প্রতিটি গল্পের। শুরু করলে শেষ না করে নিস্তার নেই পাঠকের। একের পর এক গল্পের ভেতরে ঢেলে দিয়েছেন সমাজের পরতে পরতে প্রোথিত হয়ে থাকা অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহের স্পষ্ট সুর। ভিন্ন ধারার সমাজের গভীরে প্রবেশ করে সেই প্রেক্ষাপটে, সেইসব শব্দাবলি, রিচ্যুয়াল, নিয়মকানুন - সব সামনে থেকে অনুধাবন করে, কিছুটা অধ্যয়ন করেও তুলে ধরলেন অসামান্য মুন্সিয়ানায়। পটভূমিতে সেইসবই জানিয়েছেন সফল এই গল্পকার। গল্পগুলোর জন্মবৃত্তান্ত লেখিকার নিজের ভাষায় এরকম - ‘গত নয় বছর ধরে আমি কাজ করছি (স্কুলে) দুধপাতিল চৌধুরীপাড়ায়। ওখানকার সমাজ জীবন আমার মনন-চিন্তন ছুঁয়ে থাকে। গ্রামবাসীর সাহচর্যে আমি আত্মীয়তা টের পাই। কখনও অম্ল, কখনও মধুর। ওদের যাপন থেকে লেখার রসদ পাই। - - - - - আমি নতজানু ওই অঞ্চলের নদী-গাছ-মাটি-মানুষের কাছে। ধর্মীয় পরিচয়কে আমি গুরুত্ব দিই না। জমসূত্রে আমার যাপন হিন্দু সংস্কৃতিতে। খুব কাছ থেকে বাঙালি মুসলমান সমাজকে দেখা হয়নি। কর্মসূত্রে ওই গ্রামে যতটুকু দেখেছি সে থেকেই ওই প্রেক্ষাপটে গল্পগুলো লেখা।

প্রথম গল্প - ভোকাট্টা। সবেমাত্র ফাল্গুন শুরু হয়েছে। নদীর পারের শিমূল গাছটি লালে লাল। স্কুল পালানো রাজীব গাছটার নীচে বসে চোখ রেখেছিল আকাশে। হাতে লাটাই, তবে ঘুড়ি নেই। ভোকাট্টা হয়ে গেছে।‘ - স্কুলপালানো রাজীবের কল্পজগৎ থেকে কঠোর বাস্তবমুখী সংসার জীবনের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার এক অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত চিত্রকে এক অনাবিল মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনবদ্য মননকথায় চিত্রিত করেছেন গল্পকার।

দ্বিতীয় গল্প - ঊষর বন্ধন। চতুর্দশীর রাত। রূপালি জ্যোৎস্নায় মোহময়ী আবেদন। ঘুমহারা সোহাগ বিছানা ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে জানালার কাছে চলে আসা। পর্দা সরিয়ে দেয়। জ্যোৎস্নার বন্যায় বেডরুমটা ভেসে যায়ঘুমন্ত শহর। খুব কাছে রাতপাখি ডেকেই চলেছে। সোহাগ শরীরের সমস্ত ভার জানালার গ্রিলে ছেড়ে দেয়। পিরিওডের পরের এই কয়েকটা দিন তার কাছে বড় কষ্টের। সোহাগ জানে এই দিনগুলিতে মেয়েদের শরীর খুব ফার্টাইল হয়। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে মিলনের ইচ্ছা। সোহাগের শরীরের আনাচে কানাচে কামনার বহ্নি ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। দুহাত দিয়ে নিজের লম্বা চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে চায় সে।‘ - প্রচলিত অহেতুক জড়তাকে দুঃসাহসিক দৃঢ়তায় ভেঙে খান খান করে এগিয়ে যায় সোহাগের ছমাসের বিবাহিত জীবনের যাপন কথা। গেনিখিল নিজের অস্বাভাবিকতাকে লুকিয়ে বিয়ে করে সোহাগকে। তছনছ হয়ে যায় সোহাগের শারীরীক সম্বন্ধের অদেখা স্বপ্ন। নিখিল আগেই বলতে পারতো। কিন্তু পার্থিব লাভ লোকসানের অঙ্ক কষে বলেনি কিছুই। লেখিকার ভাষায় - ‘নিখিলরা সব পারে, পুরুষ কি না।এবার গল্পকারেরই হাত ধরে রাহুমুক্তি ঘটে সোহাগের। সোহাগের স্বপ্নপুরূষ স্বপ্নিলের ডাকে ছিন্ন করে সব বন্ধন। সোহাগ বিচলিত হয় না। আজ সে দৃঢ়মনা। - - শ্যাম্পুর ফেনায় ঘষে ঘষে পরিস্কার করে নেয় সিঁথির সিঁদুর। - - স্বপ্নিলের ডাকে সে সাড়া দেবেই। আগামী সূর্যাস্তের পরেই যে ভরা পূর্ণিমা।এভাবেই নারীমনের প্রচলিত অসহায়তাকে দৃঢ় চেতনায় গুড়িয়ে দিয়ে আগামীর সন্ধান দিয়েছেন গল্পকার।

তৃতীয় গল্প - কথা অমৃত সমান। এই গল্পটি সম্পর্কে পটভূমিতে লেখিকার নিজস্ব বয়ান এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। আমার একটি গল্প পড়ে লেখক শুভঙ্কর চন্দ স্যার একদিন ফোন করলেন। অনেক কথার সাথে এ-ও বললেন - তোমার মধ্যে গল্পকার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। আমার সেই গল্পটার নামকরণও তিনি করলেন - কথা অমৃত সমান। তাঁর সেই ফোন কল আমাকে শুধু অনুপ্রেরণাই যোগায়নি, সেদিনের তাঁর বলা কথাগুলো ছোটগল্প নির্মাণের গাইডলাইনও বটে।স্থানীয় ভাষার প্রয়োগে বরাক নদীর চর অঞ্চলের এবং পাশাপাশি এলাকার গ্রাম্য জীবন এবং একাধারে গল্পের নায়িকা - গরিব কুন্তলার জীবন সংগ্রামের এক অনবদ্য কাহিনি অঙ্কিত হয়েছে গল্পকারের কলমে। কঠোর বাস্তবের তাড়নায় মিথ্যে সমাজধারা আর স্বামী পীযূষের উপেক্ষাকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যায় কুন্তলা - ভরসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া রঞ্জনের সাথে, এক নতুন ভোরের দিকে।

উন্মূল - বন্যাতাড়িত মেয়ে শর্বরীর একা একা বেঁচে থাকার লড়াই আর বিদ্রোহী মনের কথকতা।

বাঁক - কাছের বন্ধুও যখন পুরুষ বলেই মেঘালীর মতো বন্ধুকে শরীরী সম্পর্কের প্রস্তাব দেয় তখন গল্পকারের কলমে ফুটে ওঠে তীব্র শ্লেষ। তাই মেঘালী বলে - ‘স্নেহ, প্রেম ভালোবাসা, শরীর এসবের বাইরেও কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলোর কোনও নাম থাকে না। বড় মিষ্টি অনুভূতির এই সম্পর্ক। কিন্তু সবাই কি তা ফিল করতে পারে ? অন্তত তুই পারিস না। মেয়েরা একটু খোলামেলা গল্প বা ফিলিংস শেয়র করলে কেন তোদের মতো মানুষ এটাকে বিছানা পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বুঝতে পারি না। - - - জানিস তো,  কীটপতঙ্গ থাকেই, যারা সবুজ শস্যের ক্ষতি করতে চায় তবে শ্যামলিমাকে একেবারে বিনাশ করে দিতে পারে কি ?’

ছয় নম্বর গল্প - কুহক। টানটান একটি ভূতের গল্প। মানসিক ভীতির ফলে জন্ম নেয় এক কল্পজগৎ। কিন্তু শেষটায় নায়িকা বসুন্ধরার বাস্তব শিক্ষিত মনের পরিচয়টি ধরা দেয় লেখিকার বয়ানে।

কুরবানি - নায়িকা সাবিনা ও নায়ক ফিরোজকে নিয়ে সমকামিতার উপর লিখা একটি অসাধারণ গল্প যার পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে নারীমনের ব্যাকুলতা, দ্বন্দ ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার এক অদম্য স্পৃহা।

ঘূর্ণিবাত - সমসাময়িক কিছু বাস্তব ঘটনা একএকটি গরিব সংসারে কেমন মিশ্রপ্রভাবের জন্ম দেয় তারই এক সুন্দর বর্ণনা লিপিবদ্ধ হয়েছে এই গল্পে।

বরাত পাঁচালি - গ্রাম বাংলাই হোক কিংবা গ্রাম বরাক, অশিক্ষা এবং ধর্মীয় কুপ্রথার জেরে এক একটি নারীর প্রতি যে নিষ্ঠুর মানসিক অত্যাচার হয়ে থাকে তারই এক জমজমাট বুননে গ্রথিত গল্প। সন্তান না হওয়ার জন্য সাকিনাকে বঞ্চিত করে নৌরীনকে বিয়ে করে জাকির। অথচ শেষমেশ ত্রুটি ধরা পড়ে জাকিরেরই দেহে। কিন্তু ততক্ষণে বিধ্বস্ত সাকিনার জীবনে নেমে আসে পাথর চাপা দুঃখ। ঘটনার ঘনঘটা দুর্দান্ত বুনোটে এগিয়ে নিয়ে গেছেন গল্পকার যা লিখে বুঝানো যায় না।

স্যাটেলাইট - প্রকৃতিকে কাছে পেয়ে পার্থিব সুখকে কীভাবে অনায়াসে দূরে ঠেলে দেওয়া যায় তারই এক মনমাতানো কাহিনি এই স্যাটেলাইট। সকালবেলার পাখির কিচিরমিচির আর সবুজ শ্যামলিমাকে হাতের কাছে পেয়ে গল্পের নায়িকা বলে ওঠে - ‘প্রমোশন আটকে থাকুক। নো পরোয়া। ট্রান্সফার আমি নেবো না। ড্যাডকে মেনেজ করা যাবে। মেয়েকে কাছে রাখতে পেয়ে মম খুশিই হবেন। বাকি রইল রোহন (ভালোবাসার বন্ধু)। ও ঠিক নতুন বন্ধু পেয়ে যাবে। ভুলেও যাবে আমাকে। কিন্তু আমার পক্ষে স্যাটুকে (একটি কাকের নাম) ভুলে থাকা একদম-ই অসম্ভব।‘

ঝিঁকা - তিন তালাকের মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে লিখা এই গল্পটি হয়তো বা এই গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ গল্প হতে পারে। শিক্ষিত সেলিম আর নাজমিনের সুখের সংসারেও ক্ষণিকের ভুল বোঝাবুঝির ফলে ঘটে যাওয়া তালাক এবং পরবর্তীতে তার প্রভাব নিয়ে অনাবিল ঘটনাপ্রবাহে গ্রন্থিত এই গল্পটির মাধ্যমে সাহসী গল্পকার ছড়িয়ে দিয়েছেন কুপ্রথার বিরুদ্ধে তাঁর জোরালো দায়বদ্ধতার বাণী। একই গল্পে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও খুলেছেন মুখ। বিধর্মী উত্তম যে সেলিমের কত কাছের তা বারবার উচ্চারিত হয়েছে সেলিমের মুখ থেকে।

শেষ গল্প - হালিচারা। ‘সারা রাত ঝরেও আকাশের মেঘ ফুরোয়নিফাতিমাবিবির মনে পড়ে শৈশবের ওই ছড়ার লাইনটি - আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী খরধারা। কবেকার কথা। ছড়ায় সুরের ছন্দে ভিড় করে পাঠশালার বান্ধবীদের মুখ। সাথে নুরুলও। - - - দুজনেই দুজনের জন্য এক গভীর টান অনুভব করত। বুকের ভিতর কি এখনো একটু চিনচিন করে ওঠে না সিরাজের বিবির ? ক-রে।‘ অনেকটা ‘ওস্তাদের মার শেষ রাত’-এর মতোই অসংখ্য কুপ্রথা আর স্বার্থপরতার বলি - গ্রামের মুসলমান রমণী ফাতিমার জীবন যুদ্ধের এক অকৃত্রিম ছবি এঁকেছেন গল্পকার। জীবনজোড়া সংগ্রামের শেষে তাঁর বিদ্রোহী মননের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই যবনিকা ঘটেছে এই গ্রন্থের। অশিক্ষিত গ্রাম্য সমাজে মুসলমান নারী যে শুধু সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র নয়, নয় শুধুই এক ‘হালিচারা’ মাত্র সেই বার্তাটি স্পষ্ট বক্তব্যে ব্যক্ত হয়েছে কথাশেষে। ‘ধারাবর্ষণে পুরো গ্রাম ভিজে জবজবে। বাঁশের ছাতা মাথায় চাষীরা হালিচারা তুলছে নতুন জমিতে রোপণ করবে বলেফাতিমাও আজ নতুন চারা বুনতে চলেছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই সে চলেছে গ্রামের হাসপাতালের দিকে। শুধুমাত্র সিরাজের অনুমতি পায়নি বলে এতদিন ধরে এ এন এম দিদির যে পরামর্শগুলো মানেনি, বছরে বছরে জন্ম দিয়েছে সন্তান, নিজের শরীর স্বাস্থ্যের কথা না ভেবেই, আজ তা-ই গ্রহণ করার জন্য ফাতিমা পা বাড়ালো গ্রামের হাসপাতালের দিকে। বিদ্রোহের এই প্রথম পদক্ষেপে কাউকে সাথী পেল না ঠিকই, কিন্তু মনের মধ্যে তৈরি হলো এক অন্য অনুভূতি। ছোট্ট চারাগাছ মহীরুহ হয়ে ওঠার স্বপ্নে শ্রাবণধারায় সিক্ত হতে থাকে ফাতিমার ভিতর ও বাহির।‘

এভাবেই একের পর এক অপ্রতিরোধ্য বার্তাসমৃদ্ধ গল্পমালায় গড়ে উঠেছে হালিচারাপ্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ এঁকেছেন সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়। অক্ষর বিন্যাস ও অলঙ্করণ - করুণা সিনহা। গ্রন্থের অধিকাংশ গল্পই ইতিমধ্যে ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। তার মধ্যে আছে রংমশাল, মানবী, কথা, তৃতীয় ভুবনের গল্প, ইচ্ছেডানা, ঈশান, যাপন কথা, শনিবারের কথা ইত্যাদি। প্রতিটি গল্পের সূচনায় প্রকৃতির অপরূপ বর্ণনা, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্যঞ্জনায় খেই ধরিয়ে দিয়েছেন মূল কথার। থেমে থাকার জো নেই পাঠকের। বানান ভুল খুঁজতে হলে আতস কাঁচের দরকার। গ্রন্থের আকারজনিত জড়তা কাটিয়ে উঠলেই সন্ধান পাওয়া যায় অনবদ্য গল্পময়তার আস্বাদ। সাথে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার আওয়াজ। ক্ষুদ্র ‘হালিচারা’য় প্রোথিত হয়ে রয়েছে বিশাল ভবিষ্যৎ। গল্পকারের কলম নিশ্চিতই উৎপাদন করবে এবং করছেও আরোও অগণিত গল্প-ফসল। অধিকাংশ গল্পে স্থানীয় ভাষার প্রক্ষেপণে ‘হালিচারা’ হয়ে উঠেছে আরোও প্রাসঙ্গিক, আরোও কাছের। তারই সূত্র ধরে অনায়াসে বলা যায় -  ক্ষুদ্রাকৃতি ‘হালিচারা’ এক কথায় - ‘গুল্লি’।

 

‘হালিচারা’

মূল্য - ৬৫ টাকা

যোগাযোগ - ৯৯৫৭৮৩২৯৪২, smonojjal@gmail.com

 

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়