শেশেষ দুপুরের
যাত্রী তরী তৈরি হয়েই আছে
আয়েসী কুসুম
দিদার পাশেই বসে।মন গগনে সফর শুরুর আনন্দ গান
আদিগন্ত জলে জলে বিস্ময় অফুরান।
একটি জীবন একান্তই দায়সারা এক দায়
একটি কুসুম পাপড়ি মেলার অপেক্ষায়।
সেই শেষ দুপুরের অবাধ ইচ্ছেডানা
মেলেছিল তার পাখা, যতদূর যায় দেখা।
তরী বেয়ে একটি বিকেল শেষে
মামাবাড়ি উঠবে গিয়ে হেসে খেলে।
আনন্দ আর বাধ মানে না তার
শুধু কি তার ? এ আনন্দ তরীর সবাকার।
গরিব ঘরের যাত্রী সবাই চলে আনন্দপুর
নাই বা থাকুক সাধ্য - সাধ আছে তো ভরপুর।
সূর্য তখন শেষ আকাশে ডুবু ডুবু পাটে
ক্রমশঃ হলুদ - সোনালী - লাল সাঁঝে।
হিজল ছায়া ম্লান হয়ে যায় চলে
খানিক আগেই সব ছিল চোখে চোখে।
আচমকা কোন দূর দিগন্ত ছেয়ে
মেঘলা হাওয়ায় ঢেউগুলি আসে ধেয়ে।
পানসি তরী খেই হারিয়ে দোলে বিষমে
যাত্রীরা সব ইষ্ট জপে হাহাকারে।
ভীত কুসুম দিদার কাছে ছুটে যায়
দু'হাত বাড়িয়ে দিদাও আজ অসহায়।
লহর নিনাদ ছাপিয়ে যায় রব সামাল সামাল
অসহায় মাঝি, যাত্রী সবাই তরীটি টালমাটাল।
অতল জলে ডুবিয়ে তরী বিধাতা হন ক্ষান্ত
অস্ফুটে হয় দিদাআআআ শব্দে একটি জীবনান্ত।
হারিয়ে গেছে কুসুমকলি সাথে নিয়ে সব হাসি
হারিয়ে গেছে বিলের জলে ছোট্ট মেয়ে - খুশি।
আনন্দপুর বিমর্ষ আজ শোক সাগরে ভেসে
খুশিকে জড়িয়ে দিদার লাশ বিলের জলে ভাসে।
একটি জীবন সুখ অবিহনে পরপারে দেয় পাড়ি
একটি জীবন জানলোই না জীবন মানে কী।
জলে হিজল দাঁড়িয়ে থাকে সাক্ষী ইতিহাস
অবোধ শিশু খুশির মতো একঝাঁক পাতিহাঁস।
আজো যখন শেষ বিকেলে সূর্য অস্তাচলে
পারঘাটাতে এক নিমিষে তাকাই বিলের জলে -
মনন জুড়ে দেখি তারে - ফুটফুটে ওই খুশি
অশ্রুধারায় ঝাপসা দেখি দেবশিশুটির হাসি।
১৬ জুন ২০২১
কিছু দিন আগে আমার জন্মভূমি সংলগ্ন এশিয়া খ্যাত শনবিলে এক মর্মান্তিক নৌকা দুর্ঘটনায় অকালেই এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় এক ফুটফুটে শিশু - খুশি দাস। নিদারুণ এক প্রহসনে পর্যবসিত হয় তার পার্থিব নাম।
তারই স্মৃতিতে আমার আত্মার সম্পর্কে থাকা শনবিলবাসীদের উদ্দেশে উৎসর্গীত এই কবিতাটি।
খুব সুন্দর লেখা।দারুন লাগল
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete