Skip to main content

সীমান্ত শহরের স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়োজন - ‘সীমান্তরশ্মি’


ছোট পত্রিকা না বলে একে সাহিত্য পত্রিকা কিংবা কবিতাপত্রও বলা যায় নিয়মিত একটি ছোট পত্রিকা প্রকাশ যে কতটা সমস্যার এবং কতটা গরজ থাকলে পরে তা সম্ভব তা একমাত্র এ কাজে নিয়োজিত সুজনদের পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব মানসিক, কায়িক এবং আর্থিক শ্রমের বিনিময়েই জন্ম হয় এক একটি ছোট পত্রিকার
সম্প্রতি বরাক উপত্যকার সীমান্ত শহর করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকাসীমান্তরশ্মিবন্যা শিলচর ২০২২সংখ্যাটি কবি, সাহিত্যিক নারায়ণ মোদক সম্পাদিত এই পত্রিকার এটি হচ্ছে তৃতীয় বর্ষ, প্রথম সংখ্যা - সর্বমোট চতুর্থ সংখ্যা জুলাই ২০২২- প্রকাশিত এই সংখ্যাটি আসামের বরাক উপত্যকার শহর শিলচরের ভয়াবহ বন্যার স্মরণে নামাঙ্কিত যদিও এটি কোনও বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা নয় এই সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছেসীমান্তরশ্মি উপদেষ্টা গল্পকার প্রফুল্ল কুমার দেব-এর স্মৃতিতে প্রকাশক সীমান্তরশ্মি সাহিত্য পত্রিকা পরিবার, মুদ্রণে স্কলার পাবলিকেশনস্‌, করিমগঞ্জ
অধিকাংশ কবিরাই বরাক উপত্যকার আছেন বাইরেরও কয়েকজন তবে পত্রিকার নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সীমান্ত শহরের সাহিত্যরশ্মিকে ছড়িয়ে দেওয়ার এক গরজময় প্রয়াস অনুভব করা যায় সূচিপত্রে চোখ বুলালেই
৫৬ পৃষ্ঠার এই পত্রিকা সংখ্যায় রয়েছে সব মিলিয়ে ৪৭ টি কবিতা এবং টি এক পাতার গদ্য নবীন থেকে প্রবীণ কবি লেখকদের উপযুক্ত পরিসর দেওয়া হয়েছে পত্রিকায় একটি বাদে সব কবিতাই এক পৃষ্ঠার কিছু কবিতা দাগ রেখে যায় পাঠক মনে, কিছু কবিতা সহজ, সরল, সপাট উচ্চারণে কাব্যময়তাকে ছাপিয়ে বিষয়ানুগ পথ ধরে হেঁটে যায় আপন খেয়ালে যেন কবিতার একযেমন খুশি সাজোপ্রতিযোগিতার মিছিল
সীমান্তে যেমন আলোর রশ্মি আছে, আছে প্রতিভার রশ্মি - তেমনি আছে গোলা বারুদ মিশাইলেরও রশ্মি প্রথম কবিতা - বিদগ্ধ কবি সুশান্ত ভট্টাচার্যেরএই অন্ধকার সময়েযুদ্ধের বিভীষিকাকে তুলে ধরে চোখের সামনে -
জীবন থমকে দাঁড়িয়ে দূর পৃথিবীতে - ইউক্রেনে
পৃথিবীর গভীরতর অসুখ এখন -
কোনো নতুন আলো কিংবা শান্তির বার্তা নেই কোথাও
…… আমার পৃথিবীতে
রাত্রি গাঢ় হয় - অন্ধকার প্রগাঢ় হয়
আমার চোখে ঘুম নেই
শুনি উদ্বাস্তুদের কান্না - নতুন উদ্বাস্তু শিবিরে…’
আরোও এক রশ্মির সন্ধান পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার আরেক বিদ্বজন কবির উচ্চারণে কবি জ্যোতির্ময় রায়ের কবিতাচারণপদ্য ’ -
নিশ্চুপ অন্ধকারে জেগে আছে রাত
রক্তমাখা তলোয়ারের রত্নময় খাপের মতো
অলিন্দে জোনাকিঝলক
রিক্ত সময়
মেঘে ঢাকা পূর্ণিমা গ্রহণবলয়
আলেয়াচমক …’
আলোআঁধারির এই যাপনবিশ্বে কবিতায় কবিতায় জেগে উঠেছে আপন আপন কবিতাবিশ্ব প্রেম, ভালোবাসা, দেশ, ভাষা নিয়ে জেগেছে গরজ কবি মমতা চক্রবর্তীর শব্দচমকে ভেসে আসে ভাষা জননীর আকুল আহ্বান -
এক - একটি জীবন
আকণ্ঠ ঋণী
কদম, কামিনী
আকন্দের কাছে
এক -একটি জীবন
আজন্ম ঋণী
মায়ের ভাষার কাছে…’
আবার গল্পকার, কবি আদিমা মজুমদার লিখছেন -
কে বলতে পারে
কী আছে
কৃষকের কপালে
মুখোশ ছাড়া এই মুখ
গোপনে আমাকে কাঁদায়, পুষ্টিহীন জীর্ণ শরীর
সারাক্ষণ আমাকে ভাবায়
যুদ্ধের দামামা বারুদের গন্ধ
বুক ভরে যায় বেদনায়
কত কথার কথকতায় এভাবেই ভরে ওঠে কবিতাপত্র যাঁদের কবিতার কথা বলতে হয় বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে আছেন - শতদল আচার্য, মন্টু দাস, সুদীপ ভট্টাচার্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী (যদিও তাঁর কবিতার তৃতীয় স্তবকটি যদি শেষ স্তবক হতো তাহলে যথাযথ হতো), ঋতা চন্দ, রতন চন্দ, নারায়ণ মোদক, অনামিকা শর্মা, শিপ্রা দাশ, বনশ্রী চৌধুরী
ছাড়াও ভালো কবিতা লিখেছেন সঞ্জিতা দাস লস্কর, শিখা দাশগুপ্ত, দিলীপ কান্তি লস্কর, ছন্দা দাম, অমিত চট্টোপাধ্যায়, জহর দেবনাথ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, শিপ্রা শর্মা মহন্ত, শিবানী গুপ্ত, অরুণ চট্টোপাধ্যায়, সুচরিতা সিংহ, শঙ্করী চক্রবর্তী, অনুপ কুমার বণিক, আশুতোষ দাস, মৌসুমী চক্রবর্তী, সুবল চক্রবর্তী, নাসরিন গীতি, শাশ্বতী ভট্টাচার্য, শ্রাবণী সরকার, দীপক হোম চৌধুরী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, গৌতম চৌধুরী, পূরবী নাথ, কস্তুরী হোম চৌধুরী, পরিমল কর্মকার, পূর্ণিমা রানী দে, ধ্রুবজ্যোতি দাস, প্রতিমা পাল ভট্টাচার্য, সঞ্জীব বৈদ্য, গীতা সাহা, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, শুক্লা চন্দ এবং সন্তোষ কুমার দত্ত
শেষের পাতায় মুক্ত গদ্য লিখেছেন শহরের নবপ্রজন্মের গদ্য-পদ্যকার চান্দ্রেয়ী দেব তরতরিয়ে এগিয়ে গেছে গদ্য প্রথম প্যারাগ্রাফেই সমাপ্তিরেখা টেনে বাকিটুকু পাঠকের কাছে ছেড়ে দেওয়া যেত তবু পরবর্তী প্যারাগ্রাফও মানিয়ে গেছে কিন্তু এখানেই শেষ হলে গদ্যধর্ম পুরোপুরি বজায় থাকত শেষের দুলাইন আত্মকথন নির্মল গদ্যে মিশে গিয়ে বড্ড তাড়াতাড়ি পাঠককে আকাট বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে এল
প্রচ্ছদ, ছাপাই, শব্দ-অক্ষর বিন্যাস যথাযথ সূচিপত্র আরোও একটু সুবিন্যস্ত করার পরিসর ছিল যদিও তা করা হয়নি সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান একটি সম্পাদকীয় - বিজ্ঞাপনহীন এই সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে নিশ্চিত সব মিলিয়ে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়োজন এ সংখ্যারসীমান্তরশ্মি

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

সীমান্তরশ্মি
সম্পাদক - নারায়ণ মোদক
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়