বড়ই জটিল রসায়ন প্রেমের। যেমন এখানে
শুরু হয়ে গেছে একেবারে গ্রন্থনাম থেকেই। ‘গদ্যপদ্য’ শব্দটা গল্পকার যে তুলে দিলেন উন্মুখ
বা বলা ভালো প্রেমোন্মুখ পাঠকের দরবারে, এবার পৃষ্ঠা না ওলটানো অবধি একটা প্রশ্নই ঘুরপাক
খাবে অবশ্যম্ভাবী - গদ্য ? না পদ্য ? নাকি মিশ্র সম্ভার গদ্যও আবার পদ্যও - যদিও সচরাচর
হয় না তেমনটা। অবশেষে বই খুলে দেখা গেল কাব্যময়তার দাবি রেখে মুক্তোদানার
মতো নিটোল ১৪ টি প্রেমের গল্প সন্নিবিষ্ট আছে অন্দরে।
রসায়নের মতোই বড্ড জটিল প্রেমের অনুষঙ্গও। কারোও মতে বিচ্ছেদেই প্রেমের সার্থকতা, কারো ধারণায় আবার মিলনেই ফুটে ওঠে প্রেমের মাধুর্য। উভয় আঙ্গিকেই রচিত হয়েছে অজস্র কালজয়ী গদ্য ও পদ্য। প্রেমের পরিসর বিশাল। বিচিত্র তার গতি, বিস্তৃতি, প্রকার। প্রেমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বড়ো সহজ কথা নয়। সেইসব তর্ক-বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে এবার সরাসরি দেখা যাক এ অঞ্চলের নামি সাহিত্যিক তুষারকান্তি সাহা কীভাবে উপস্থাপন কিংবা বলা ভালো চোদ্দটি গল্পের মাধ্যমে সার্থকতা দান করছেন প্রেমকে। একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রেম চিরন্তন। তাই তো কবির ভাষায় - ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে……।’ গদ্যের তুলনায় পদ্যেই বোধকরি প্রেমকে ফুটিয়ে তোলা যায় অধিকতর অর্থবহ করে। সেই পদ্যের ভাবকে, পদ্যের আবহকে গদ্যের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার যে প্রচেষ্টা একেই বোধহয় গল্পকার বলতে চেয়েছেন - ‘গদ্যপদ্য’।
গ্রন্থে সব গল্পই মানব-মানবীর প্রেমের গল্প। তবে এসবের মধ্যেই ধরা আছে প্রেমের কিছু ব্যতিক্রমী ধরণ এবং অনুষঙ্গ। প্রথম গল্প গ্রন্থনাম অনুযায়ী - ‘প্রেমের গদ্যপদ্য’। একটি স্বল্পকালীন প্রেমের গভীরতার গল্প। দুই ভিন্ন আবহে গড়ে ওঠা প্রেমের বিয়োগাত্মক পরিণতি পাঠকমনে ছাপ ফেলবে নিশ্চিত। বিয়োগাত্মক এই গল্পটি বুনোট ও ভাষায় হয়তো গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ গল্প হয়ে উঠেছে। বস্তুত তুষারকান্তির লেখার সম্পদই হচ্ছে এই ভাষা ও বুনোটের যুগলবন্দি, যা পূর্ণমাত্রায় ধরা আছে সবক’টি গল্পে। ফলত পরিণতি যাই হোক না কেন পঠনসুখ ষোলোআনা অনুভূত হবে পাঠক মননে।
কিশোর-প্রেমের ফের এক বিয়োগাত্মক গল্প ‘তিন মাথার মোড়’। অনুভব আর অনুভূতির নান্দনিক উপস্থাপনা। দুই পৃষ্ঠার এই গল্পটিও বিয়োগাত্মক - ‘অতএব ওদের প্রেম রোমিও জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, শিরি-ফারহাদের মতোই নীরবে নিভৃতে অশ্রুস্বাক্ষর হয়ে বিচ্ছেদের পথে পরিণতি ঘটাল শেষ পর্যন্ত’। সেই ভাষা ও বুনোট বিষয়টি লক্ষণীয়। এর পর এক এক করে নানা অনুষঙ্গে, বৈচিত্র্যে প্রেম বিষয়ক পরপর পাঁচটি গল্প। অষ্টম গল্প ‘আমি, রূপা এবং ওরা’, নবম গল্প ‘হারজিত’ ও দশম গল্প ‘বৃষ্টি’ চমৎকারিত্বের দিকে এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই। ব্যতিক্রমী আঙ্গিক, ব্যতিক্রমী প্লট - স্বভাবতই উপরি পাওনা পাঠকের। তবে পাশাপাশি এখান থেকেই শুরু হয়েছে সূচিপত্রে ভুল পৃষ্ঠাসংখ্যার উল্লেখ।
বস্তুত অষ্টম গল্প থেকেই যেন বিশেষভাবে জমে ওঠেছে গল্পগুলো। এই ক্রমে শেষ চারটি গল্পে - ‘সেই সকাল এই সন্ধ্যা’, ‘শুভদৃষ্টির পরে’, ‘রঙের মিছিল’ ও ‘ঝড় বাদলের কাব্য’ চূড়ান্ত মুনশিয়ানায় লেখক যেন জীবন্ত করে তুলেছেন ভিন্ন ভিন্ন আবহে, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের প্রেমকে। কিছু উদ্ধৃতি অপ্রাসঙ্গিক হবে না মোটেও - ‘কী সুন্দর ঝুমু-র সে হাসি। অমন পরিতৃপ্তি ও বিশ্বাসের হাসি গত দু’বছরের মধ্যে একটিবারের জন্যও ওর মুখে দেখিনি। আমার হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল। আমার মনে হল, প্রেমের মূল্য এইবার আমি দিতে পেরেছি। প্রেম মানে তো নিস্বার্থপরতা। আমি ঝুমুকে পাইনি, পাব না - তার জন্য একরত্তি দুঃখ নেই। ও যে খুশি হবে, হাসি-খুশিতে ওর জীবন মধুর হবে, সেটাই আমার পূর্ণ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় আনন্দ, সবচাইতে বড় শান্তি।’ শেষটায় - ‘বিরাট এক সান্ত্বনায় আমার শূন্য বুকটা জুড়িয়ে গেল। ঝুমু আমার কাছে থাকবে না। আমার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হবে না। কিন্তু আমার কাছে না থেকেও সে থাকবে হৃদয়ের মণিকোঠায়। আর আমিও বেঁচে থাকব ঝুমুর সুখ-স্বপ্নের গভীরতায়, প্রতিদিন কাজের ফাঁকে, নিরলস মুহূর্তে।’
প্রতিটি গল্পই বাস্তব প্রেক্ষিতে লেখা। কল্পনা কোথাও বাস্তবকে ছাড়িয়ে যায়নি। সব গল্পই নাতিদীর্ঘ অর্থাৎ পাঠক-বান্ধব বলা যায়। স্বল্প অবসরেও পড়ে ফেলা যাবে গল্প।
স্বচ্ছ, স্পষ্ট ছাপা। কাগজের মান তথা বাঁধাই উন্নত মানের। দীপঙ্কর করের প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ অনন্য মর্যাদা প্রদান করেছে গ্রন্থটিকে। ‘চোখের নেশার ভালোবাসা’ যেন প্রকট হয়ে উঠেছে প্রচ্ছদচিত্রে - কিংবা বলা যায় চোখে চোখে ভালোবাসার নেশা। ১০৩ পৃষ্ঠার পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত এই সংস্করণের প্রকাশক মজলিশ বইঘর, গুয়াহাটি। কিছু ছাপার ভুল থাকলেও বানানের শুদ্ধতা নান্দনিক করে তুলেছে গ্রন্থটিকে। গল্পকার গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন ‘মরমীকে’। সব মিলিয়ে সরল পাঠের এক নিটোল প্রেমের গল্প সংকলন - ‘প্রেমের গদ্যপদ্য’।
রসায়নের মতোই বড্ড জটিল প্রেমের অনুষঙ্গও। কারোও মতে বিচ্ছেদেই প্রেমের সার্থকতা, কারো ধারণায় আবার মিলনেই ফুটে ওঠে প্রেমের মাধুর্য। উভয় আঙ্গিকেই রচিত হয়েছে অজস্র কালজয়ী গদ্য ও পদ্য। প্রেমের পরিসর বিশাল। বিচিত্র তার গতি, বিস্তৃতি, প্রকার। প্রেমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বড়ো সহজ কথা নয়। সেইসব তর্ক-বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে এবার সরাসরি দেখা যাক এ অঞ্চলের নামি সাহিত্যিক তুষারকান্তি সাহা কীভাবে উপস্থাপন কিংবা বলা ভালো চোদ্দটি গল্পের মাধ্যমে সার্থকতা দান করছেন প্রেমকে। একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রেম চিরন্তন। তাই তো কবির ভাষায় - ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে……।’ গদ্যের তুলনায় পদ্যেই বোধকরি প্রেমকে ফুটিয়ে তোলা যায় অধিকতর অর্থবহ করে। সেই পদ্যের ভাবকে, পদ্যের আবহকে গদ্যের মধ্যে ফুটিয়ে তোলার যে প্রচেষ্টা একেই বোধহয় গল্পকার বলতে চেয়েছেন - ‘গদ্যপদ্য’।
গ্রন্থে সব গল্পই মানব-মানবীর প্রেমের গল্প। তবে এসবের মধ্যেই ধরা আছে প্রেমের কিছু ব্যতিক্রমী ধরণ এবং অনুষঙ্গ। প্রথম গল্প গ্রন্থনাম অনুযায়ী - ‘প্রেমের গদ্যপদ্য’। একটি স্বল্পকালীন প্রেমের গভীরতার গল্প। দুই ভিন্ন আবহে গড়ে ওঠা প্রেমের বিয়োগাত্মক পরিণতি পাঠকমনে ছাপ ফেলবে নিশ্চিত। বিয়োগাত্মক এই গল্পটি বুনোট ও ভাষায় হয়তো গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ গল্প হয়ে উঠেছে। বস্তুত তুষারকান্তির লেখার সম্পদই হচ্ছে এই ভাষা ও বুনোটের যুগলবন্দি, যা পূর্ণমাত্রায় ধরা আছে সবক’টি গল্পে। ফলত পরিণতি যাই হোক না কেন পঠনসুখ ষোলোআনা অনুভূত হবে পাঠক মননে।
কিশোর-প্রেমের ফের এক বিয়োগাত্মক গল্প ‘তিন মাথার মোড়’। অনুভব আর অনুভূতির নান্দনিক উপস্থাপনা। দুই পৃষ্ঠার এই গল্পটিও বিয়োগাত্মক - ‘অতএব ওদের প্রেম রোমিও জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, শিরি-ফারহাদের মতোই নীরবে নিভৃতে অশ্রুস্বাক্ষর হয়ে বিচ্ছেদের পথে পরিণতি ঘটাল শেষ পর্যন্ত’। সেই ভাষা ও বুনোট বিষয়টি লক্ষণীয়। এর পর এক এক করে নানা অনুষঙ্গে, বৈচিত্র্যে প্রেম বিষয়ক পরপর পাঁচটি গল্প। অষ্টম গল্প ‘আমি, রূপা এবং ওরা’, নবম গল্প ‘হারজিত’ ও দশম গল্প ‘বৃষ্টি’ চমৎকারিত্বের দিকে এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই। ব্যতিক্রমী আঙ্গিক, ব্যতিক্রমী প্লট - স্বভাবতই উপরি পাওনা পাঠকের। তবে পাশাপাশি এখান থেকেই শুরু হয়েছে সূচিপত্রে ভুল পৃষ্ঠাসংখ্যার উল্লেখ।
বস্তুত অষ্টম গল্প থেকেই যেন বিশেষভাবে জমে ওঠেছে গল্পগুলো। এই ক্রমে শেষ চারটি গল্পে - ‘সেই সকাল এই সন্ধ্যা’, ‘শুভদৃষ্টির পরে’, ‘রঙের মিছিল’ ও ‘ঝড় বাদলের কাব্য’ চূড়ান্ত মুনশিয়ানায় লেখক যেন জীবন্ত করে তুলেছেন ভিন্ন ভিন্ন আবহে, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের প্রেমকে। কিছু উদ্ধৃতি অপ্রাসঙ্গিক হবে না মোটেও - ‘কী সুন্দর ঝুমু-র সে হাসি। অমন পরিতৃপ্তি ও বিশ্বাসের হাসি গত দু’বছরের মধ্যে একটিবারের জন্যও ওর মুখে দেখিনি। আমার হৃদয়টা জুড়িয়ে গেল। আমার মনে হল, প্রেমের মূল্য এইবার আমি দিতে পেরেছি। প্রেম মানে তো নিস্বার্থপরতা। আমি ঝুমুকে পাইনি, পাব না - তার জন্য একরত্তি দুঃখ নেই। ও যে খুশি হবে, হাসি-খুশিতে ওর জীবন মধুর হবে, সেটাই আমার পূর্ণ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় আনন্দ, সবচাইতে বড় শান্তি।’ শেষটায় - ‘বিরাট এক সান্ত্বনায় আমার শূন্য বুকটা জুড়িয়ে গেল। ঝুমু আমার কাছে থাকবে না। আমার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হবে না। কিন্তু আমার কাছে না থেকেও সে থাকবে হৃদয়ের মণিকোঠায়। আর আমিও বেঁচে থাকব ঝুমুর সুখ-স্বপ্নের গভীরতায়, প্রতিদিন কাজের ফাঁকে, নিরলস মুহূর্তে।’
প্রতিটি গল্পই বাস্তব প্রেক্ষিতে লেখা। কল্পনা কোথাও বাস্তবকে ছাড়িয়ে যায়নি। সব গল্পই নাতিদীর্ঘ অর্থাৎ পাঠক-বান্ধব বলা যায়। স্বল্প অবসরেও পড়ে ফেলা যাবে গল্প।
স্বচ্ছ, স্পষ্ট ছাপা। কাগজের মান তথা বাঁধাই উন্নত মানের। দীপঙ্কর করের প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ অনন্য মর্যাদা প্রদান করেছে গ্রন্থটিকে। ‘চোখের নেশার ভালোবাসা’ যেন প্রকট হয়ে উঠেছে প্রচ্ছদচিত্রে - কিংবা বলা যায় চোখে চোখে ভালোবাসার নেশা। ১০৩ পৃষ্ঠার পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত এই সংস্করণের প্রকাশক মজলিশ বইঘর, গুয়াহাটি। কিছু ছাপার ভুল থাকলেও বানানের শুদ্ধতা নান্দনিক করে তুলেছে গ্রন্থটিকে। গল্পকার গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন ‘মরমীকে’। সব মিলিয়ে সরল পাঠের এক নিটোল প্রেমের গল্প সংকলন - ‘প্রেমের গদ্যপদ্য’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০৬৬৯৯৪
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০৬৬৯৯৪
Comments
Post a Comment