Skip to main content

কুসুমে কুসুমে বসন্ত আগত দ্বারে


প্রকৃতির নিয়ম মেনে, কালের ধারায়, ঋতু বদলের পর্যায় মেনে আবার এসেছে বসন্ত এ নববসন্তের অর্ধেকটা পথ ইতোমধ্যেই পেরিয়ে এসেছি আমরা এই মধ্য বসন্তে চরাচর জুড়ে যে রঙিন আদল, যে প্রস্ফুটিত কুসুমের সুবাস, মনমাঝে যে উতলা আবহ এতে বোধ করি সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত হয় প্রেমিক মন আর কবির হৃদয় তাই তো বসন্তেই আসে বিশ্ব কবিতা দিবস কবির কলমে উৎসারিত হয় রঙের আভাস, প্রেমের আবেশ আর বিরহী হৃদয়ের আকুল আর্তি
সবাকার একান্ত নিজস্ব অনুভবে, ছন্দে - কথায় বসন্তের এই দোলা, এই আনন্দের বার্তাটুকুই এসে আজ ধরা দিয়েছে কবিমানসে - স্বতঃস্ফুর্ততায় ধরা দিয়েছে কবি নিশুতি মজুমদারের ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ কবিতায় -
 
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
নিশুতি মজুমদার
 
বসন্ত এসেছে আজ উন্মনা মন
চারিদিকে প্রকৃতির নব জাগরণ,
কোকিলের কুহুতান অমল প্রভাতে
কিশলয় গাছে গাছে ভ্রমরের সাথে
ফুলে ফুলে ভরে আছে বৃক্ষলতা যত
মন যেন উড়ু উড়ু সদা অবিরত
সব কিছু ঠিকঠাক, তবু মনে হয়
পলাশ, শিমূল আজ পরিপূর্ণ নয়
চারিদিকে মানুষের হীন আগ্রাসন
সুন্দরতা হারিয়েছে বন উপবন
চৈতন্যের দ্বার খুলে দাও ভগবান
আনন্দে প্লাবিত হোক সকলের প্রাণ
 
বসন্ত মানেই ফাগুন। চৈতি হাওয়ায় উড়ু উড়ু মন। ফাগুন মানেই আবির গুলাল। যে কবি-মন বসেই থাকে পথ চেয়ে আর কাল গুনে, সেই কবির সামনেই অধরা এসে ধরা দেয় ফাল্গুনে। আর সেই আবেশেই পরান ছুটে যায় নেশায় নেশায়, রঙের ছোঁয়ায় - কবি মধুমিতা দত্তের কবিতা ‘ফাগুন দোলা’য়...
 
ফাগুন দোলা
মধুমিতা দত্ত
 
আয়রে সবাই আয় ধেয়ে
পলাশ ফুলের রঙ ছেয়ে,
বুকের ভেতর ফাগুন দোলা
চল না সবাই করবো খেলা।
 
রঙের নেশায় মন মেতেছে
পলাশ ফুলে রঙ লেগেছে,
বসন্ত যে দাঁড়িয়ে দ্বারে
কোকিল ডাকছে ওই সুরে।
 
আগুন রাঙা ওই আকাশে
আবির গুলাল মন তিয়াসে,
ছুটলো পরান রঙের ছোঁয়ায়
চল না ছুটে ওই নেশায়।
 
এমন দিনে মনের কোণে
থাকব না তো বসে,
রঙের নায়ে ভেসে যাব
সাতরঙা ওই দেশে ।
 
ধূসর মলিন জীবনটাকে
পরাই রঙের সাজ,
পিচকারিতে রং ভরেছি
খেলব হোলি আজ
 
হে বসন্ত, হে ঋতুরাজ - কবিমন আজ তোমার আবাহনে আনমনা। এই প্রকৃতি, এই ধরাধাম তোমারই আগমন বার্তায় আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দেয় রং আর খুশির সুরেলা বাহার। তোমারই আবাহনে দিকে দিকে ধ্বনিত হয় কুহুরব, তরুশাখে পল্লবিত হয় নবকিশলয় বৃন্ত। ঝরা পাতার আবহেও নবরূপে সেজে ওঠে বনানী। তোমাকে স্বাগত জানাতে নিবেদন কবি সুস্মিতা মজুমদারের আগমনি কবিতা - ‘ঋতুরাজ’
 
ঋতুরাজ
সুস্মিতা মজুমদার
 
ঋতুরাজ তুমি চিরযৌবনের প্রতীক।
পলাশ শিমূল রক্তরাঙা সাজে
তোমায় বরণ করে,
কোকিল সুমধুর গান গেয়ে
তোমায় আনন্দিত করে।
আবিরের রঙে ধরাতল রঙিন হয়ে ওঠে,
বৃক্ষ তরুলতাও পুরাতন সাজ ছেড়ে
নতুন সাজে সেজে ওঠে।
বাতাসও বাঁধনছাড়া পাগলপারা উল্লাসে মাতে,
ফাগুনের উদাসী হাওয়ায় -
আপনজনকে কাছে পেতে
মন আকুলিবিকুলি করে।
 
ঋতুরাজ বসন্তের এই অনাবিল স্নিগ্ধ, শান্ত রূপের গভীরতায় কবি মন খুঁজে ফেরে শান্তির অনন্ত আবহ। মোহন বাঁশির ফাল্গুনি সুরে দূর হোক যত বিষণ্ণতা, যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে স্নিগ্ধ বসন্ত আসুক ঝেঁপে সৃষ্টিমগ্নতায় কবি সপ্তমিতা নাথ তাই তো আঁকেন বসন্তের আলপনা  
 
এল ফাগুন 
সপ্তমিতা নাথ
 
আঁকড়ে ধরা জড়সড় শীত শেষে,
কি যে মায়াবী মধুর কোকিল ডাকে,
শিশিরের গায়ে বসন্তের আলপনা,
টিমটিম আলোয় পদ্ম পাতায় জোনাকির বাসর।
 
দক্ষিণা হাওয়ায় বাজে মোহন বাঁশির সুর,
বসন্তের হাত ধরে এল ফাগুন,
ব্যথা-জড়ানো বিরহ ভরা স্বপ্ন ভোরে।
এ যে, বসন্ত আজি রঙিন কথা বলে।
 
রঙিন ফুলতটে  বসন্ত আজি গায় গান,
দিগবিদিক সুবাসিত, পথে পথে শিমুল পলাশ কাঠগোলাপ।
ধ্বংস হোক বিষণ্ণতা শান্তি আসুক পূর্ণিমার ফাগুনে,
দোলের আবিরে সাজুক, হাজার প্রেমের গল্প এই বসন্তে
 
বসন্ত মানেই নিত্য নতুন উদঘাটন কিছু আনমমা ভুল, পেয়ে হারানোর কিছু অকারণ ভয়, আর গোলাপি খামের চিঠি কবি ঋতা চন্দের উদঘাটনে আদ্যোপান্ত মধুময় হয়ে ওঠে এই আনচান বসন্ত, এই মধুমাস 
 
মধুমাস
ঋতা চন্দ
                     
বসন্ত মানেই অকারণ শিহরণ
বুকের ভেতর ভ্রমরের গুঞ্জন
শিমূল-পলাশ আর মাতাল হাওয়া
অকারণে বারবার শুধু পথ চাওয়া
 
বসন্ত মানে চাঁদ, ফুল আর কিছু ভুল
বসন্ত মানে প্লাবিত হৃদয়ের দুকূল
বসন্ত এলে জীবনে আসে জোয়ার
অকারণ ভয়, পেয়ে হারাবার
 
বসন্ত আনে যৌবনের চিঠি গোলাপি খামে
ফাগুয়ার রঙে ভালোবাসার বৃষ্টি নামে
আকুল প্রাণ ব্যাকুল করে কোকিলের কুহু
মধুমাস কাল হয়, পরানটা করে হু হু
 
বসন্তে জীবন খুঁজে পায় জীবনের মানে
মধুমাস মধুময় হয় মহুয়ার টানে
 
নাতিশীতোষ্ণ হাওয়ার পরশে একদিকে যেমন বুকের ভেতর বয়ে যায় দমকা দমকা বাউল বাতাস, অন্যদিকে আবার বনে বনে জেগে ওঠে শিমূল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়াপাশাপাশি আবার আবিরসিক্ত মনোবনে কুহু রবে অকারণে কবি মীনাক্ষি চক্রবর্তীর কবিতায় ফিরে ফিরে আসে মন-উচাটন  
 
আবিরসিক্ত বসন্তোচ্ছ্বাস
মীনাক্ষি চক্রবর্তী
 
অষ্টাদশী প্রকৃতি জুড়ে মুখর বসন্তের সঘন আন্দোলন  
শীতকাতর কুয়াশার হিমভরা অভিমান সরে গেছে কখন
ফাগুন হাওয়ায় মন উতলা
বুকের ভিতর বাউল বাতাস,
একতারাতে গুঞ্জনতান অনুরাগে ভরা
ফল্গুধারায় প্রেম বয়ে যায় দুর্দম
আবিরসিক্ত অলিন্দ ঘিরে বসন্তোচ্ছ্বাস টালমাটাল
প্রেমের ফাঁদ পেতেছে ঋতুরাজ ঘোর ফাল্গুনে
দিকে দিকান্তরে জ্বলে রংমশাল, হৃদয় ভাসে প্লাবনে
ভালোবাসার আসর বসে আগুনরাঙা, শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়া
দখিনা বাতাস দোল দিয়ে যায় মনোবনে, সঙ্গোপনে
গাইছে কোকিল কুহু কুহু, মন উচাটন অকারণে।।
 
কবি, কবিতা ও বসন্ত ফাগুন দোলায়, চৈতি হাওয়ায় শুধুই কি প্রেমের জয়জয়কার, ভালোবাসারই সংসার ? নিশ্চিতভাবেই নয় প্রেমেরই অনুষঙ্গ হয়ে সমান গরজে, সমান বিস্তৃতি, বিশালতা নিয়ে আসে বিরহ কুহু রবের আর্তি নিয়ে, পথ চেয়ে বিরহে আকুল হয় প্রেমিক মন কবি বিমলেন্দু চক্রবর্তীর কবিতার ক্যানভাসে উদভাসিত হয় পূর্ণিমার চাঁদ
 
বিরহে আকুল
বিমলেন্দু চক্রবর্তী
 
তুমি আসবে, তাইতো এত আয়োজন
আমের মুকুল ঝরে, ফোটে নাহরের ফুল
দক্ষিণ সমীরণে ওড়ে ভ্রমর, ভাসে ফাগুয়ার গান
এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে মাটি, ছাড়ে ঘ্রাণ
মৃত পাতাগুলো বড়ই ধূসর, মলিন সব পুরাতন
বিষাদের নৌকাগুলো ভেসে যাবে, নিয়ে সব অভিমান
বাউলের একতারায় সুরেলা বসন্তের গান, প্রেমের গান
তোমার আসার পথ চেয়ে পূর্ণিমা চাঁদ জাগে,
বিরহে আকুল।।
 
বহু না-বলা কথারা এসে সঙ্গোপনে বাসা বাঁধে এই পাতাঝরা বসন্তে। অনুচ্চারিত থেকে যায় খেলাপি কথার কথামালা। খেই হারিয়ে যায় বহু কথার। গোলাপ আর রজনীগন্ধায় বিভ্রম জাগে হৃদয়কুঠুরিতে।  উদভ্রান্ত যাপনে উথলে ওঠা কথারা জায়গা করে নেয় কবি মধুমিতা সেনগুপ্তের কবিতায় গভীর সন্তাপে। দমকা হাওয়ার উর্মিমালায় রচিত হয় বসন্ত-কথা...... 
 
বসন্ত কথা
মধুমিতা সেনগুপ্ত
 
সেদিনও ছিল সেই বসন্ত
যেদিন একগুচ্ছ রজনীগন্ধা না গোলাপ ?
বিষয়টা জড়িয়ে যাচ্ছিল বারবার
কিংবা পাতাঝরা অজস্র দমকা হাওয়ায়
এ কথা না ও-কথা ? সব কথারা
তরঙ্গে ছিল ভাসমান
 
আরো অনেক বসন্তে হেঁটেছি পথ
এভাবেই অর্থহীন শব্দের পিছু পিছু
বারবার কত শ্রম, যুদ্ধ, রক্তে ভেসে গেছে
যে পথ, সে পথেই এক অলীক বসন্ত খুঁজি
সেদিনও সেই বসন্ত ছিল,
যেদিন এক নতুন বসন্তে
কোথাও দূর তেপান্তরে
দেখা হবার কথা ছিল
কথা ছিল, সব কথা ফেলে
এক নতুন কথার বুনোনে
বাঁধা পড়ার, গভীর সন্তাপে
 
নীড়হারা পাখির আগমনের প্রতীক্ষায় প্রেমিক পক্ষী, সোহাগের দিব্যি দিয়ে তাকিয়ে থাকে পলাশপথেবিরহে কবিমন জুড়ে লেখা হয় ইতিহাস, সুখদিনের কড়চাকবি অতীন্দ্রবিজয় চৌধুরীর কলমে জীবন্ত হয়ে ওঠে বিরহে আকুল হয়ে প্রেমিকের প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা অনন্ত কালের সাতকাহন 
 
পলাশমন
অতীন্দ্রবিজয় চৌধুরী
 
একবুক কৃষ্ণচূড়া নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছি অনন্ত
ফিরে গেছে পাখিদের ঝাঁক
তোমার সুখের আশ্রয়ে
ঝরে যারা পড়েছিল
তোমার এলোচুল বেয়ে
আলতো চুম্বনে বাতাস
দিয়ে যায় -
কালকের সোহাগের দিব্যি
আমি তো তাদেরই দলে
পলাশ মাখা বিকেল
চেয়ে থাকি -
যদি ভরে দিয়ে যায়
আকাশের গল্পে আর গানে
তোমায় শেষ দেখার পরে
বদলে বদলে গেছে আশপাশ
ফিরে যদি আস -
জেনো তোমারই জন্য
দাঁড়িয়ে ছিলাম অনন্ত
 
উদাসী বাউল-বাতাসে কবির অন্তরের যাবতীয় ইচ্ছেরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় যত্রতত্র। কবিমন বাসন্তী হয়ে ওঠে, যখন পাথর-ভাঙা মেয়েটি হলুদ শাড়িতে নেচে ওঠে। পাখিদের গল্প-বিলাসী গোধূলিতে আর প্রতিবাদী মিছিলে কবি মুন চক্রবর্তী লিখে রাখেন শপথের গান - আজি এ বসন্তে......
 
আজি এ বসন্তে 
মুন চক্রবর্তী
 
জরাজীর্ণ ঝরে যাওয়া হলুদ পাতায় ইচ্ছে গুলোকে লিখে দিলাম
বসন্তের ফাগুন বাতাসে পলাশের রঙে রাঙানো ঋতুরাজ 
আমি আমের মকুলের কাছে হাত পেতে চেয়ে নেই  জীবন 
শুকিয়ে যাওয়া নদী সরোবরে উড়িয়ে বেড়াই ফসলের সুগন্ধ 
পাথর ভাঙা মেয়েটি যখন হলুদ শাড়িতে নেচে উঠে
আমি বাসন্তী হয়ে উঠি
অশত্থ গাছের ছায়ায় রাগ রাগিনী করে মন আনন্দে 
প্রতিবাদী মিছিলে আবির ছড়িয়ে শপথের গান শুনি 
পাখির গল্প বিলাসী গোধূলিতে হলুদ পাতায় প্রেম উপখ্যান লিখে রাখি
উদাসী বাউল বাতাসে একতারায় শুনি 
আজি এ বসন্তে’ - চৈতি আনন্দে  
 
ফাগুন এলেই বসন্ত আসে ঝেঁপে তাই উতলা হয় কবির অন্তর বসন্ত আর ফাগুন বন্দনায় মন হয় উদ্‌বেল কবি লিপি চক্রবর্তীর কবিতায় ফাগুন আসে, পুরো বসন্ত উঠে আসে পলাশ, শিমূল, কেতকী, কিংশুকের আবহে, রঙে রঙিন হয়ে -
 
এসেছে ফাগুন
লিপি চক্রবর্তী
 
এসেছে ফাগুন, রঙের আগুন
ঋতুরাজ বসন্ত এসেছে দ্বারে,
একমুঠো রঙ ছড়িয়ে দিয়ে
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ায় বাহারি রং ধরে
রক্তিম সাজে পলাশ শিমুল ডাক দেয় আবেশে
অশোক, কিংশুকে ভরা যৌবন
ফাগুনের রঙ মেখেছে
ভ্রমর গুঞ্জনে কেতকী আড়ালে
অনুরাগের ছোঁয়া লাগে
দখিনা হাওয়ার মর্মর ধ্বনি
বসন্ত বাহার জাগে
কোকিলের কুহু তানে পঞ্চম সুর
নব কিশলয়ে বসন্ত এসেছে
বলে দ্বার খোল দ্বার খোল
পলাশের রঙে রেঙেছে হৃদয়
অন্তরে কলরব
ছোটদের সাথে পিচকারি হাতে
ডাক দেয় শৈশব
মিলনের বাঁশি সুরের আকাশে
উচ্চ সপ্তকে বহমান
দিগন্ত রেখায় অধীর প্রতীক্ষা
ঋতুরাজ বসন্তে হোক তবে অবসান
 
সমাপ্তিরেখায় যখন পৌঁছে যায় বসন্ত, ফাগুন পেরিয়ে তখন চৈত্রবনে লাগে নতুন আর পুরাতনের টালমাটাল হাওয়া। বিগত বসন্তের শপথ আর বৈশাখী ঝড়ে ছিন্নভিন্ন অঙ্গীকার যাপন শেষে আবারও এক বিকেলে পাতাঝরা পথের পাশে মাথা তুলে দাঁড়ায় নাম না জানা পত্রবাহার। তখনই মনে হয় বসন্ত শুধুই ফাগুন নয়। এমনই চৈতি বসন্তে চরাচর জুড়ে লেখা হয় বসন্তগান। কবি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কবিতায় ধরা থাকে চৈতি গাথা আর বাসন্তী কথা   
 
হাজার বসন্ত শেষে
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
 
সেদিনও তো ছিল চৈত্র মাস
চোখে চোখে কথায় কথায়
হাজারজনের অথই সর্বনাশ
বসন্ত বাতাসে ওড়ে স্বপ্নতরীর পাল
ঝরা পাতার ফিসফিস কথামালা
একবুক ধুকপুক পা টালমাটাল।
কবে কোন বসন্তশেষের বেলা
শিমূল পলাশে জেগেছিল চরাচর
নভোনীলে ছিল সুখপাখির মেলা
 
এরপর এক বৈশাখে মন-বাতায়ন জুড়ে
অকালবোশেখির দাপাদাপি
বৈশাখী দামাল ঝড়ে কোথা গেল উড়ে উড়ে
রয়ে গেল শুধু মনখারাপি
এই পৃথিবীর বুকে হাজার বসন্ত শেষে
আছে শুধু বৈশাখী কথার খেলাপি
 
নতুনের আহ্বানে নিজেকে যে করে নিঃশেষ
ডেকে আনে নিজেরই বিনাশ
সে-ই তো বসন্ত, সে-ই তো চৈত্র মাস
 
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়