Skip to main content

ট্র্যানজিশন

পাশের বাড়ির মহুয়া বউদিকে রোজ ছাদে কাপড় মেলতে দেখে অমলেন্দু, সংক্ষেপে অমলপ্রথম প্রথম দেখতে না চাইলেও আপনাআপনিই ঘটে যায় ব্যাপারটাশাড়ি, ব্লাউজ এবং আরোও কিছু ঝুলতে থাকে ক্লিপের বাঁধনেসাথে সুরেলা কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতের কলিসাধারণত স্থায়ীটাই শুধুক্বচিৎ কখনো অন্তরার প্রথম লাইনস্পষ্ট শোনা যায় না কান পাতলেওদূরত্ব একটা ফ্যাক্টর বইকীএমন আবহে রবীন্দ্র সংগীত যেন ঠিক মানানসই মনে হয় না অমলেরক্যারে কিংবা লিপা হলে জমে উঠত পরিবেশকিন্তু কী আর করা ? মহুয়া বউদি প্রথম থেকেই রবীন্দ্র সংগীতের ফ্যান ফলোয়ার
তিন তলায় অমলের স্টাডি রুমের জানালা দিয়ে পাশের দোতলার ছাদ স্পষ্ট দেখা যায় বলেই এ দৃশ্য দেখতে হয় অমলকেগত কয়েক বছরে এ দৃশ্য দৃশ্যায়িত হচ্ছে নিয়মিত যদিও এ নিয়ে আলাদা রকমের কোনও উত্তেজনা কিংবা আদিখ্যেতা নেই অমলের হৃদয়েমহুয়া বউদিও তাকায় না অন্যদিকেএক মনে নিজের কাজ সেরে নেমে যায় সিঁড়ি ধরেতবু এই ব্যাপারটি এক নৈমিত্তিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে অমলেরকদাপি কোনোদিন, কখনও বউদি ছাদে না এলেও অনেকটা সময় ধরে জানালা দিয়ে অপলক তাকিয়ে থেকে অপেক্ষার প্রহর গোনে অমলনা এলে অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয় পরের দিন অবধিধীরে ধীরে এক সময় মহুয়া বউদির চেহারার, চলনবলনের আভিজাত্য জৌলুস যেনকোন সাগরের পার হতে আনে কোন সুদূরের ধনভেসে যেতে চায় মন   
গবেষণার ছাত্র অমল মহুয়া বউদিকে নতুন করে আবিষ্কার করে রোজঅমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া চেনা পরিচয় নেই, কথাবার্তা নেই, তবুসাইকোলজির ছাত্র অমল এক অনাবিল ট্র্যানজিশন দেখতে পায় মহুয়া বউদির জীবন চর্চায়মূল গবেষণার পাশাপাশি এক সমান্তরাল গবেষণায় মেতে ওঠে অমল একদিন, নিজেরই অজান্তে 
একদিন এমনও ছিলদিন পনেরো ধরে ছাদে আসেনি মহুয়া বউদিআসার কথাও ছিল নাসবে চল্লিশ পেরোনো বউদি অকস্মাৎ স্বামীহারা হয়ে আত্মগোপন করেছিল ঘরের অন্দর মহলেঅমলের মনে হয়েছিল বউদির জীবনটাও শেষ হয়ে গেলদাদার সঙ্গে প্রায়শ ঘোরাঘুরির ফাঁকে লক্ষ করত অমলউচ্ছল যৌবন জলধি তরঙ্গবাংলা বই আর রবীন্দ্র সংগীতের বিপরীতে হইহই আর লাল রংটাই সবচাইতে পছন্দের ছিল বউদিরমায়ের মুখ থেকেই সবটা শোনা এই বয়সে এমন সর্বনাশ - ভাবতে পারে না অমলইচ্ছে হয় গিয়ে একটুখানি সান্ত্বনায় ভরিয়ে দেয় বউদিকেকিন্তু ইচ্ছে হলেও সব কিছু মানায় নানিজের পরিধিকে ভাঙার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হয়যায়নি অমলতবু অন্তরে মহুয়া বউদির জন্য থেকে গেছে একরাশ সহমর্মিতা
এর পর থেকে কখনও বাইরে বেরোলে ছোট্ট ছেলেটাকে সঙ্গে করেই বেরিয়েছে বউদিঅনাড়ম্বর বেশসাজগোজের বালাই নেই বললেই চলেমাস খানেক ছাদেও ওঠেনি নিরাসক্ত বউদিপুরো ছাদ যেন দুপুরের নিস্তব্ধ থর
এর পর একদিন, এক মিঠে রোদের হৈমন্তী দুপুরে হঠাৎ করেই প্রাণের স্পন্দন টের পেল তৃষ্ণার্ত সেই ছাদখালি পায়ে ছিমছাম সাদা-কালো বউদি নিঃশব্দে এসে কাপড় মেলে দিল তারেশাড়ি, ব্লাউজনাইটিচলেও গেল নিঃশব্দেঅমল নব উদ্যমে বেরিয়ে গেল গবেষণার কাজেএর পর রোজছাদে আসে বউদিবদলাতে থাকে আবহটুং টাং সুর স্পন্দন তোলে কণ্ঠেগুনগুন থেকে ধীরে ধীরে অনেকটাই স্পষ্ট হতে থাকে কলিবছর গড়াতেই থীম বদলায় গানেরআছে দুঃখ আছে মৃত্যু’…… থেকে ধীরে ধীরেহেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী টিয়ে রং আর ময়ূরকণ্ঠী রঙের শাড়িতে আরোও অপরূপা হয় বউদিআজকাল বান্ধবীরা আসে বউদির ঘরেআড্ডা হয় জমজমাটশপিং-এ বেরিয়ে যায় বউদি - একলা একালাল রং ফিরে এসেছে জীবনেবিকল্প জীবনযাত্রায় মানিয়ে নিয়েছে মহুয়া বউদি। ভালো লাগে অমলেরগবেষণার কাজ এগোচ্ছে তরতরিয়ে মহুয়ায় মজেছে আজ মন তার
দুবছর বাদে গবেষণায় উঠে আসে অবিশ্বাস্য কিছু তথ্যবাস্তবের নিরিখে কেউ কারো জন্য অপরিহার্য নয়। সম্পর্ক নয়, ব্যক্তিসত্তাই মানুষের প্রধান সত্তা মানুষ নাকি বেড়ালেরই মতো এক সময় ভুলে যায় সব দুঃখ - সময়ের যাঁতাকলে, আমোদের নেশায়পাহাড়ি নদীর জলধারা নতুন পাথরে আছড়ে পড়ে ভুলে যায় পুরোনো পাথরের মায়াময় আলিঙ্গন

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়