Skip to main content

আবির্ভাবেই সাড়া জাগিয়েছে ‘অক্ষরবিন্যাস’


পূর্ণিয়া, বিহার থেকে প্রকাশিতসাহিত্য সংস্কৃতি মননশীলতার সেতুবন্ধন’ - ‘অক্ষরবিন্যাস প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা বইমেলা ২০২৪- প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা সম্পাদক অজয় সান্যাল ও চৈতালী সান্যালঅক্ষরকে বিন্যস্ত করার এক ক্ষুদ্র প্রয়াসহিসেবেঅক্ষরবিন্যাস’-এর আবির্ভাবপর্বে প্রথম পাতার সম্পাদকীয়তে স্বভাবতই ধরা রয়েছে কিছু প্রেক্ষাপট, কিছু প্রত্যয় ও প্রত্যাশা - ‘অক্ষরবিন্যাস পত্রিকা প্রকাশ আমাদের দু-জনের পরিণত অপরাহ্নের ফসল আমাদের পত্রিকায় তাই আমরা চেয়েছি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ও বাইরের দেশেও যাঁরা বাংলা ভাষা সাহিত্যের নিরন্তর সৃজনশীল, কিছুটা হলেও তাঁদের লেখা সংগ্রহ করে এক মলাটের ভেতর সাজাতেবিহারে আমরা মাতৃভাষা চর্চা নিয়ে জন্মাবধি সচেষ্ট আমাদের চিন্তাভাবনায় সযত্নে লালিত হোক মাতৃভাষা আমাদের বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম যেন বাংলা ভাষাকে নিয়ে কাজ করে যেতে পারে এই প্রত্যাশা অক্ষরবিন্যাস-এর……
প্রথম প্রয়াসেই কতটা উৎকৃষ্ট হতে পারে একটি পত্রিকা, কতাটা নান্দনিকতাবোধের ছাপ পরিস্ফুট হতে পারে, কতটা যত্ন ও গরজের প্রকাশ পরিলক্ষিত হতে পারে - তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই প্রথম সংখ্যা - ‘অক্ষরবিন্যাস তলিয়ে দেখা যাক অন্দরে সম্পাদকীয়তেই আছে - ‘বিষয় বৈচিত্র্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে জায়গা পেয়েছে কবিতা, ছোটোগল্প, কল্পবিজ্ঞান নির্ভর লেখা, রম্য রচনা, নস্ট্যালজিক স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ ও চিত্রনাট্য সেই হিসেবে ধারাবাহিকতা মেনে এগোনো যেতে পারে আলোচনার পথে
লেখক সূচি বলা যায় আন্তর্জাতিক পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, দিল্লি, কানপুর, উত্তরপূর্ব তথা বিদেশ থেকেও সংগৃহীত হয়েছে লেখা প্রথমেই আছে স্মৃতিকথা ১ বিভাগ খ্যাতনামা পত্রিকাদিবারাত্রির কাব্য’-এর সম্পাদক আফিফ ফুয়াদ লিখছেনপূর্ণিয়া ও আমি পূর্ণিয়ার সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগের নস্টালজিক এবং সুললিত স্মৃতিচারণ পত্রিকাটির মান বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে প্রবন্ধ বিভাগে রয়েছে মোট ছয়টি প্রবন্ধ রণজিৎ কুমার মিত্র তাঁর প্রবন্ধভারতীয় কথাসাহিত্যের দুই স্বরশীর্ষক প্রবন্ধে তুলে এনেছেন পূর্ণিয়ার দুই স্বনামধন্য কথা সাহিত্যিককেঢোঁড়াই চরিতমানসখ্যাত সতীনাথ ভাদুড়ী ওময়লা আঁচলখ্যাত ফণীশ্বরনাথনাথ রেণু বিস্তৃত এই নিবন্ধটি নিশ্চিতভাবেই সুখপাঠ্য এবং অবশ্যপাঠ্যবিহারে বাংলা সাহিত্য - অতীত ও বর্তমানশিরোনামে বিদ্যুৎ পাল সেই ১৮৩৫ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান কালাবধি বিহারে বাংলা সাহিত্য চর্চার এক চালচিত্র নির্ধারিত পরিসরের মধ্যে সাবলীলভাব তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন বিবেকানন্দ বসাক লিখেছেন প্রবন্ধ - ‘এক বিস্ময়কর জনপদের নাম ডুয়ার্স কোনও ভ্রমণ কাহিনি নয়, এখানে তুলে ধরা হয়েছে ডুয়ার্স তথা আলিপুরদুয়ার জেলার জনবসতিগত পরিসংখ্যান এক ভিন্নতর বিষয় মনসামঙ্গল কাব্যধারার অন্যতম গ্রন্থপদ্মাপুরাণ’-এর রচয়িতা তথা জনপ্রিয়কবি বিজয় গুপ্তকে নিয়ে লিখেছেন ড. বাসুদেব রায় তথ্যভিত্তিক এক সুলিখিত সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ কালীপদ চক্রবর্তীরদিল্লির সুস্বাদু কিছু খাবারএবং তীর্থ দাশগুপ্তেরএক যে ছিল ট্রামএকাধারে তথ্যের আকর ও স্মৃতির বিষয়ভিত্তিক পরাকাষ্ঠা
স্মৃতিকথা ২ বিভাগে জয়শ্রী রায়েরমাম্মা নামা’, অভীককুমার দেএকটি সন্ধ্যা এবং জানালায় আকাশতথা আশীষ ঘোষেরনিঃসঙ্গ কবিশৈল্পিক ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নান্দনিক গদ্য
সুচয়িত, সুলিখিত কবিতায় রয়েছেন নির্বাচিত কবিবৃন্দ - উমা রায় (রচনাকাল ১৯৮৩), বিশ্বজিৎ রায় (রচনাকাল ১৯৭৬), শামীম আজাদ, বাপী চক্রবর্তী, নিশিকান্ত সিনহা, অপর্ণা দেব, গোবিন্দ ধর, সুশান্ত নন্দী, মনোজ পাইন, অঙ্কন রায়, প্রদীপ কুমার দে নীলু, গোপাল পোদ্দার, সুব্রত পোদ্দার, সুব্রত সেনগুপ্ত, কস্তুরী রায় চট্টোপাধ্যায় (পৃষ্ঠাসংখ্যা অনুল্লেখিত রয়ে গেছে সূচিপত্রে), সাগ্নিক, তন্ময় বীর ও অজয় সান্যাল
পাঁচটি ছোটোগল্পই পাঠকমনে রেখাপাত করবে নিশ্চিত বিশ্বিজিত রায়ের পুনঃপ্রকাশিত গল্পনিশ্চিন্তপুরের সহদেব’ - ব্যতিক্রমী বুনোট প্রয়াত গল্পকারের এই গল্পটি বাইশ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিলএই পরবাসপত্রিকায় জহর দেবনাথেরকাঞ্চনকন্যাটানটান গদ্যের সুখপাঠ্য গল্প কল্পবিজ্ঞানের গল্প মাল্যবান মিত্রেরউত্তরাধিকার ধ্বংসের আবহে সৃষ্টির কাহিনি এগিয়েছে তরতরিয়ে কিন্তু কিছু মুদ্রণ বিভ্রাট সরল পঠনের গতি ব্যাহত করেছে দুএকবার এছাড়াও রয়েছে তিনটি ভালো গল্প - আলো রায়েরদেবদারু’, মহিবুল আলমেরঅরণ্যের দিকে ফেরাও চৈতালী সান্যালেরঅরুলিয়া
সুভাষ সেনগুপ্তের চিত্রনাট্যসোনার ধানের গানপত্রিকার এক সম্পদ বললেও অত্যুক্তি হবার নয় সব মিলিয়ে এক জমজমাট সম্ভার প্রথম সংখ্যাঅক্ষরবিন্যাসযার কাগজের মান, ছাপার মান, বর্ণ, অক্ষর, শব্দ ও বাক্যবিন্যাস যথাযথ অনবদ্য প্রচ্ছদের চিত্রকলা ও পত্রিকানামের অঙ্কনসৌজন্যে যথাক্রমে ফয়সল অরফিয়াস ও আফিফ ফুয়াদ ফাঁক গলে দুএকটি পুরোনো থেকে গেলেও আধুনিক বানানের যথাযথ প্রয়োগ সংখ্যাটিকে প্রদান করেছে ভিন্ন মর্যাদা শেষে যে কথাটি বলা যায় নির্দ্বিধায় তা হল প্রথম প্রকাশেই মন কেড়েছেঅক্ষরবিন্যাস লিটিল ম্যাগাজিনের ভিড়েও আপন স্বাতন্ত্র্যে পাঠকসমাজে সমাদৃত হবে নিঃসন্দেহে

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৮০০২৮৩৮২৩৩ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়